আজটেক সাম্রাজ্য ত্রৈধজোট Ēxcān Tlahtōlōyān | |||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৪২৮–১৫২১ | |||||||||||||||||||||||||
আজটেক ভেশিল্লোইদ-এর উদাহরণ
| |||||||||||||||||||||||||
আজটেক সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তার | |||||||||||||||||||||||||
অবস্থা | সাম্রাজ্য, জোট রাষ্ট্র | ||||||||||||||||||||||||
রাজধানী | মেক্সিকো-তেনোচতিৎলান (দে ফাক্তো) | ||||||||||||||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | নাওয়াৎল্ (প্রধান ভাষা), সঙ্গে ওতোমি, মাৎলাৎজিনকা, মাজাওয়া, মাজাতেক, ওয়াশতেক, তেপেওয়া, পপোলোকা, জোকান, ৎলাপানেক, মিশতেক, কুইকাতেক, ত্রিক, জাপোতেক, জোক, চচোতেক, চিনানতেক, ততোনাক, কুইৎলসতেক, পামে, মাম, তাপাচুলতেক, তারাসকান, এছাড়াও অন্যান্য | ||||||||||||||||||||||||
ধর্ম | আজটেক বহু-ঈশ্বরবাদ | ||||||||||||||||||||||||
সরকার | পূর্ণ রাজতান্ত্রিক সামরিক ও রাজনৈতিক যুক্তরাষ্ট্র | ||||||||||||||||||||||||
তেনোচতিৎলানের ওয়েওয়েৎলাতোয়ানি | |||||||||||||||||||||||||
• ১৪২৭–১৪৪০ | ইৎজ্কোয়াৎল্ (জোট প্রতিষ্ঠাতা) | ||||||||||||||||||||||||
• ১৫২৯–১৫২১ | কুয়াuhtémoc (শেষ) | ||||||||||||||||||||||||
তেশকোকোর ওয়েওয়েৎলাতোয়ানি | |||||||||||||||||||||||||
• ১৪৩১–১৪৪০ | নেজাওয়ালকোয়োৎল্ (জোট প্রতিষ্ঠাতা) | ||||||||||||||||||||||||
• ১৫১৬–১৫২০ | কাকামাৎজিন (শেষ) | ||||||||||||||||||||||||
ৎলাকোপানের ওয়েওয়েৎলাতোয়ানি | |||||||||||||||||||||||||
• ১৪০০–১৪৩০ | তোতোকিওয়াৎজিন (জোট প্রতিষ্ঠাতা) | ||||||||||||||||||||||||
• ১৫১৯–১৫২৪ | তেৎলেপানকেৎজালৎজিন (শেষ) | ||||||||||||||||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | প্রাক কলম্বিয়ান যুগ আবিস্কারের যুগ | ||||||||||||||||||||||||
• আজটেক মিত্রবাহিনী জোট[১] | ১৩ই মার্চ, ১৪২৮ | ||||||||||||||||||||||||
১৩ আগস্ট, ১৫২১ | |||||||||||||||||||||||||
আয়তন | |||||||||||||||||||||||||
১৫২০[২] | ২,২০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৮৫,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||||||||||||||||
মুদ্রা | |||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | মেক্সিকো |
আজটেক সাম্রাজ্য, বা আনুষ্ঠানিক নাম ত্রৈধজোট (ধ্রুপদী নাওয়াৎল্: Ēxcān Tlahtōlōyān, উচ্চারণ: ইয়েশ্কান্ ৎলা'লোতোলোইয়ান্ [ˈjéːʃkaːn̥ t͡ɬaʔtoːˈlóːjaːn̥]), সময়কাল: ১৪২৫-১৫২১), একটি প্রাক-কলম্বীয় মেসোআমেরিকান জোটরাষ্ট্র ছিল, যা তিনটি নাওয়া আলতেপেৎল্ নগররাষ্ট্র: মেক্সিকো-তেনোচতিৎলান, তেশকোকো ও তেলাকোপান নিয়ে গড়ে উঠেছিল। ১৪২৮ সালে এই তিনটি নগররাষ্ট্র মেক্সিকো উপত্যকা পর্যন্ত স্পেনীয় কনকিসতিদোর যৌথবাহিনী দখল করে নেয় এবং তাদের স্থানীয় মিত্রদের সাহায্য নিয়ে স্পেনীয় বিজেতা এর্নান কোর্তেস ১৫২১ সালে আজটেকদের পরাজিত করে।
আজটেক সাম্রাজ্য ছিল সমসাময়িককালের মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও ক্ষমতাধারী শক্তি। আমেরিকার আদিবাসীদের এই সাম্রাজ্য পশ্চিমে মেক্সিকো উপত্যকা থেকে পূর্বে মেক্সিকো উপসাগর এবং দক্ষিণে বর্তমান গুয়াতেমালা পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। মধ্য আমেরিকার মায়া সভ্যতা থেকে প্রায় পাঁচশ মাইল পশ্চিমে অ্যাজটেকবাসীরা নতুন সভ্যতার উন্মেষ ঘটায়। আজকের মেক্সিকো সিটি যেখানে অবস্থিত সেখানেই অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়। এরা মেক্সিকোর আরও উত্তরের জনগোষ্ঠী ছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তাঁরা মেক্সিকোর জলাশয়ের একটি দ্বীপে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে বসতি শুরু করে। তাদের প্রথম রাজার নাম তিতোন। তাদের রাজধানী ছিল তেনোচৎলান। ১৫২১ সালে স্পেনের নাবিক কোর্তেসের অধীনে স্পেনীয় ও স্থানীয় আজটেক বিদ্রোহীদের নিয়ে গঠিত যৌথবাহিনী দখল করে নিলে এই সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।
আজটেক জাতি ছিল সুসংহত, কৃষিপ্রধান ও ধর্মনিয়ন্ত্রিত। ১৩ শতকের প্রথম দিকে এরা উত্তর দিক থেকে এসে মেক্সিকো উপত্যকায় বসতি স্থাপন করে। মেক্সিকো উপত্যকা ও এর আশেপাশের অঞ্চলে এসে তাঁরা প্রথমে বেশ কয়েকটি স্বাধীন নগররাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে। এইসব ছোট ছোট নগররাষ্ট্রগুলো ছিল মূলত রাজতান্ত্রিক। এই অঞ্চলে আজটেক জাতির লোকেরা আসার আগে থেকেই যেসব শহর ও বসতি ছিল, ধীরে ধীরে তাঁরাও আজটেক সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যায়।
ধীরে ধীরে আজটেক জনসংখ্যা বাড়তে থাকে; ছোট গ্রাম থেকে তেনোচতিৎলান একটি বড় শহরে পরিণত হয়। আজটেকরা শক্তিশালী সেনাবাহিনীও গঠন করে। রাজধানী তেনোচতিৎলানই ছিল এ অঞ্চলের সকল ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। ওই সময় প্রায় ২০ লক্ষ অধিবাসী নিয়ে তেনোচতিৎলান শহর ছিল তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহরগুলোর মধ্যে একটি।
আজটেকরা প্রকৃতি পূজা করতো। তাঁরা ভূমি, বৃষ্টি ও সূর্যকে দেবতা মনে করতো এবং দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে নরবলি দেয়া অপরিহার্য মনে করতো। তাঁরা বিশ্বাস করতো সূর্যকে প্রতিদিন সন্তুষ্ট করতে না পারলে পরের দিন আর সূর্য উঠবে না। সাধারণত বলি হিসেবে যুদ্ধবন্দী ও দাসদের ব্যবহার করা হতো এবং আজটেক যাজকরাই এ কাজ সম্পন্ন করতো।
কৃষিকাজ ছিল আজটেক অর্থনীতির প্রধান চালিকা। পাঁচটি হ্রদের সংযোগস্থলে মেক্সিকো উপত্যকার অববাহিকা ছিল। অতি উর্বর ও চাষ উপযোগী হলেও যথেষ্ট পরিমাণ জমি এখানে ছিল না। আজটেকরা পাহাড়ের ঢাল কেটে সেখানে চাষাবাদ শুরু করে। জমির সর্বো্চ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে তাঁরা পানি সেচ ও সার দেয়া শুরু করে। তাদের সবচেয়ে বড় কৌশল ছিল ভাসমান কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ। তাঁরা খাগড়া বুনে বিশাল আস্তরণ তৈরি করে ও তার উপর মাটি স্তূপ করে এ কৃত্রিম দ্বীপ বানাতো। পরে এগুলো তাঁরা হ্রদের পানিতে ছেড়ে দিতো। এ কৃত্রিম দ্বীপে তাঁরা শস্য, শাকসবজি ইত্যাদি চাষ করতে সমর্থ হয়।
আজটেকদের কোনো চাকাযুক্ত বাহন কিংবা বহনকারী জন্তু ছিল না, তাঁরা কাঁধে করে বা ডিঙি নৌকায় করে মালপত্র আনা-নেওয়া করতো। বিপজ্জনক জায়গাগুলোতে বণিকবহরের সাথে সৈন্যবাহিনী থাকতো।
আজটেকদের সংস্কৃতিতে ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার প্রভাব ছিল। গাছের বাকল ও দেয়ালে তাঁরা চমৎকার রঙের চিত্রকর্মের মাধ্যমে ধর্মীয় আচার অণুষ্ঠান, দেবতাদের প্রকাশ করতো।
আজটেক দিনপঞ্জি বা আজটেক ক্যালেন্ডার আজটেক সাম্রাজ্যের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে। এই দিনপঞ্জি ছিল একটি সুবিশাল পাথরের উপর খোদাই করা যার ভর ২২ মেট্রিক টন এবং ব্যাস ৩.৭ মিটার (১২ ফুট)। এ দিনপঞ্জি দিয়ে তারা পুরো মহাবিশ্বের প্রতীক হিসেবে চিন্তা করতো, যার কেন্দ্রে ছিল সূর্য। সূর্যের চারপাশে বিভিন্ন দিন ও বিভিন্ন স্বর্গ চক্রাকারে সাজানো।
আজটেকরা পিকটোগ্রাফ বা চিত্র দ্বারা ভাব প্রকাশ ও বাণিজ্য সম্পন্ন করতো। তাঁরা চিত্রের মাধ্যমেই গণনা করতো; যা ছিল সংখ্যা ‘২০’ কে ভিত্তি করে। একটি পতাকার ছবি দ্বারা কোনো কিছুর পরিমাণ ২০টি বা ২০ গুণ (১×২০=২০) বোঝানো হতো, একটি দেবদারু গাছের ছবি দ্বারা সেটার ২০ গুণ অর্থাৎ ৪০০ বোঝানো হতো, একটি থলের ছবি দ্বারা তারও ২০ গুণ অর্থাৎ ৮০০০ বোঝানো হতো।
আজটেকরা সাদামাটা হাতে তৈরি হাতিয়ার দিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতো। মহিলারা তুলা থেকে সূতা এবং সূতা দিয়ে তারা কাপড় বুনতে জানত। তারা কাপড়ে রঙ করে ও সেলাই করে বিভিন্ন নকশা অঙ্কন করতো। তাঁরা আগুনে পুড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের মাটির পাত্রও তৈরি করতে পারতো। পাত্রগুলো সাদা বা লাল রঙের হতো এবং এগুলোতে সাদা-কালো নকশা আঁকা হতো।
সমসাময়িক অন্যান্য জাতির লোকেরা লোহা ও ব্রোঞ্জের ব্যবহার জানলেও আজটেকরা এগুলো ব্যবহার জানতো না। কোনো কিছু কাটার কাজে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের ধারালো শিলা ব্যবহার করতো।
আজটেক সাম্রাজ্য সূচনা হবার অনেক আগে থেকেই মেক্সিকো উপত্যকা ছিল পূর্ণাঙ্গ সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র। উর্বর অববাহিকার এই উপত্যকা ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার উচ্চতায় এবং পাঁচটি হ্রদের সংযোগস্থলে। ১০০ থেকে ৬০০ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে তেওতিওয়াকানরা শাসন করে। তেওতিওয়াকানদের পতনের পর তোলতেক জাতি উত্তরাঞ্চল থেকে এসে মধ্য মেক্সিকোতে বসবাস শুরু করে। এ জাতি দশম ও একাদশ শতাব্দিতে ব্যাপক উন্নতি অর্জন করতে সমর্থ হয়। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নাহুতলভাষী মিত্রবাহিনী তাদের আক্রমণ করে এবং মেক্সিকো উপত্যকা দখল করে নেয়। এ মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বে ছিল মেক্সিকা জনগোষ্ঠী। নাহুতলভাষী এ জনগোষ্ঠীই পরবর্তীকালে "আজটেক" নামে পরিচিতি পায়।[৩]
কথিত আছে, আজটেকরা যখন মেক্সিকো উপত্যকায় আগমন করে তখন এক স্থানে এক ক্যাকটাসের উপর ঈগলের নখরবন্দি অবস্থায় একটি সাপ দেখতে পায়। ঐ স্থানেই তাঁরা সভ্যতার সূচনা করে যা পরবর্তীতে তেনোচতিৎলান শহরে পরিণত হয়। সাপ ও ঈগল এখনও আধুনিক মেক্সিকোর জাতীয় প্রতীক এবং জাতীয় পতাকা ও মুদ্রায় প্রতীকগুলো খুজেঁ পাওয়া যায়।
১৫১৯ সালে স্পেনীয় বিজেতা এর্নান কোর্তস প্রায় ৫০০ জনের এক স্পেনীয় বাহিনী নিয়ে স্বর্ণের সন্ধানে এ অঞ্চলে এসে পৌছায়। কোর্তেস আজটেকদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ৎলাশালান জাতির সাথে আঁতাত করে তেনোচতিৎলান প্রবেশ করার পরিকল্পনা করে। ৎলাশালান জাতির প্রায় ৪০০০ লোক স্প্যানিশ বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। আজটেক বাহিনীর তুলনায় এ সংখ্যা ছিল সামান্য। ৮ই নভেম্বর ১৫১৯ সালে আজটেক সম্রাট দ্বিতীয় মন্টেজুমা স্পেনীয় অভিপ্রায় জানার জন্য তাদেরকে আক্রমণ না করে অণুপ্রবেশ করার সুযোগ দেয়।
স্পেনীয়রা বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের খোঁজ পেয়ে এ অঞ্চল থেকে স্পেনে পাঠানো শুরু করে। শান্তিপূর্ণ অবস্থা স্বত্বেও এর্নান কোর্তেস বিশ্বাস করতো আজটেকরা এ অঞ্চল থেকে তাদেরকে একসময় বিতাড়িত করবে। তাই সাবধানতা হিসেবে তাঁরা আজটেক সম্রাট দ্বিতীয় মন্টেজুমাকে গোপনে আটক করে এবং স্পেনের রাজার বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করে। প্রায় ছয় মাস পর, এক ধর্মীয় সমাবেশে ২০০ জন গুরুত্বপূর্ণ আজটেক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। ফলশ্রুতিতে আজটেক সৈন্যবাহিনী স্পেনীয় তেনোচতিৎলান শহর থেকে বের করে দেয়ার জন্য লড়াই শুরু করে। তাঁরা শহরের সেতুগুলো ধ্বংস করে ও স্পেনীয়দের বিতাড়িত করে হ্রদের দিকে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত স্বর্ণের ভারে স্পেনীয় বাহিনীর নৌকা ডুবে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লোক মারা যায়।
এর্নান কোর্তেস পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। এর্নান কোর্তেস এরপর তাঁর বিপুল পরিমাণে আদিবাসী আমেরিকানদের আজটেকদের বিরূদ্ধে একত্রিত করে। এই যুদ্ধে আজটেকরা ধাতব অস্ত্র ও গোলাবারুদে সমৃদ্ধ স্পেনীয় বাহিনীর সাথে পেরে উঠে না। স্পেনীয়রা পুরো সাম্রাজ্য দখল করে নেয় এবং তেনোচতিৎলান শহরের পতন ঘটে।
তেনোচতিৎলান শহরের ধ্বংসাবশেষের উপরে স্পেনীয় মেক্সিকো সিটি তৈরি করে। বর্তমান মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ভবন মন্টেজুমার প্রাসাদের উপরই তৈরি হয়েছে।