আজমির ধর্ষণ মামলা


আজমির সিরিয়াল গ্যাং রেপ অ্যান্ড ব্ল্যাকমেইলিং কেস ১৯৯২ সালে ভারতের জোরপূর্বক যৌন শোষণের অন্যতম ঘটনা।[] ঘটনাটি রাজস্থান রাজ্যের একটি শহর আজমিরে ঘটেছিল। এ ঘটনায় শত শত তরুণী, কিছু কলেজ শিক্ষার্থী, এমনকি বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনকারী শিক্ষার্থী এর শিকার হয়। একটি স্থানীয় কাগজের প্রকাশিত হওয়ার পরে এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে যায়, 'নবজ্যোতি' কিছু নগ্ন ছবি এবং একটি গল্প প্রকাশ করে, যা স্কুলের ছাত্রীদের স্থানীয় গ্যাং দ্বারা ব্ল্যাকমেইল করার কথা বলে।[]

প্রধান অভিযুক্ত আজমির শাইরফ দরগাহের খাদিমদের অন্তর্গত ফারুক চিশতী আজমির ইন্ডিয়ান ইয়ুথ কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ায় পুলিশ কর্তৃক পরিচালনা করা মামলার তদন্ত রাজনৈতিক চাপে আটকে যায়।[] অবশেষে, ১৮ জন সিরিয়াল অপরাধীদের আদালতে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে ৪ জনকে ২০০১ সালে খালাস দেওয়া হয়েছিল।[]

রাজস্থানের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিপি ওমেন্দ্র ভরদ্বাজ বলছিলেন- "অভিযুক্তরা সামাজিক ও আর্থিকভাবে প্রভাবশালী অবস্থানে ছিল, এবং এর ফলে মেয়েদের এগিয়ে আসা এবং জবানবন্দী দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছিল", যিনি তখন আজমির পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পদে ছিলেন।[] সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় উল্লেখ করেছে, "দুর্ভাগ্যবশত সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত অনেক ভুক্তভোগী শত্রুতার শিকার হয়ে পড়েছিল এবং তারা আপিলকারীদের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিতে চায়নি, কারণ এটি তাদের পরিচয় ও উন্মোচিত করত এবং তাদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলত ভবিষ্যতে। "[] এই মামলাটিকে রাদারহ্যাম শিশু যৌন শোষণ কেলেঙ্কারির সাথে তুলনা করা হয়েছে।

ব্ল্যাকমেইল কার্যক্রমটি ধারাবাহিকভাবে অপরাধীদের দ্বারা ঘটিত একটি শৃঙ্খলা হিসেবে আবিষ্কৃত হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী পুরুষদের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী অল্পবয়সী মেয়েদের টার্গেট করেছিল। প্রথমে ফারুক চিশতী আজমীরের সোফিয়া সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের একটি মেয়েকে আটকে রেখে তার অশ্লীল ছবি তোলে।[] এরপর অভিযুক্ত মেয়েটিকে তার সহপাঠী ও বন্ধুদের কাছে ছবি পাঠানোর কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে। এভাবে ভয় দেখিয়ে অন্য মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়, যৌন শোষণ করা হয় ও তাদের ছবি একটি খামারবাড়িতে তোলা হয়।[] চক্রটি এভাবে চলতে থাকে। গ্যাং তার কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে থাকে এবং ক্রমবর্ধমান মেয়েদের শিকার করে। তারা আপত্তিকর অবস্থানে মেয়েদের ছবি তোলে, ছবিগুলি ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের শোষণ করতে।[]

তদন্ত

[সম্পাদনা]

নবজ্যোতির সম্পাদক দীনবন্ধু চৌধুরী স্বীকার করেছিলেন, যে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ প্রায় এক বছর আগে থেকেই এই কাণ্ড সম্পর্কে অবগত ছিল। কিন্তু তারা স্থানীয় রাজনীতিবিদদের চাপে তদন্ত বন্ধ করতে দিয়েছিল।[]

ভুক্তভোগী

[সম্পাদনা]

নিহতদের অধিকাংশই হিন্দু পরিবার থেকে ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন আইএএস এবং আইপিএস অফিসারের মেয়ে ছিল।[] এই ভয়াবহ মামলার সবচেয়ে খারাপ অংশ হচ্ছে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি। ধর্ষণের পর বেশিরভাগ ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারে হয়রানি এবং হুমকির সম্মুখীন হয়। পুলিশ তদন্ত অনুসারে প্রায় ৬ জন ভুক্তভোগী আত্মহত্যা করে। আজমীর মহিলা সামোহ যারা ভুক্তভোগীদের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল তারা হুমকি পেয়ে সরে যায়। স্বল্পকালীন ট্যাবলয়েডগুলি সে সময় আজমিরের এই ভুক্তভোগীদের কথা ফলাও করে তুলে ধরে। শত শত মেয়ের গণশোষন শহরের বিবেককে আঘাত করার পরেও অনেক ভুক্তভোগীকে এই ট্যাবলয়েড এবং স্থানীয় কাগজপত্র দ্বারা আরও ব্ল্যাকমেইল করা হয়। মেয়েদের সুস্পষ্ট ছবি তাদের কাছে ছিল। এই সব ট্যাবলয়েড এবং স্থানীয় কাগজপত্রের মালিক এবং প্রকাশকরা মেয়েদের পরিবারের কাছে ছবি প্রকাশ না করার বিনিময়ে টাকা চেয়েছিল।

পরিণাম

[সম্পাদনা]

ঘটনাটি গোটা দেশকে হতবাক করে। মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।[] তিনদিনের বনধ পালন করা হয় এবং ব্যাপকভাবে শোষণ ও ব্ল্যাকমেইলের খবর আসতে শুরু করে।[১০] চলমান যৌন নিপীড়নের তথ্য থাকার পরও পুলিশ কাজ না করায় সমালোচিত হয়। মামলাটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে স্থগিত হয়। স্থানীয় রাজনীতিবিদরা এর কারণ হিসেবে বলে যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেবে।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. IANS Date: 2012-01-04 Place: Jaipur (২০১২-০১-০৪)। "Accused in 1992 Ajmer sex scandal case arrested"। Mid-day.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-১৩ 
  2. "Main accused in Ajmer sex scandal surrenders after 26 years"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১২ 
  3. December 26, VIJAY KRANTI; October 15, 2012 ISSUE DATE। "Murder of Ajmer daily editor exposes sordid sex scandal involving criminals, politicians"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০২ 
  4. "Almost three decades after a rape, blackmail case rocked Ajmer, surrender of an accused opens old wounds"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০২-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১২ 
  5. Mukherjee, Deep (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। "Almost three decades after a rape, blackmail case rocked Ajmer, surrender of an accused opens old wounds"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮ 
  6. "एक-एक कर फार्महाउस पर बुलाया, 100 लड़कियों का रेप किया"LallanTop - News with most viral and Social Sharing Indian content on the web in Hindi (হিন্দি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-২৫ 
  7. "Ajmer Sex Scandal: Accused Nabbed After 19 Years"। news.outlookindia.com। ২০১৩-০৬-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-১৩ 
  8. "Murder of Ajmer daily editor exposes sordid sex scandal involving criminals, politicians"India Today 
  9. "एक-एक कर फार्महाउस पर बुलाया, 100 लड़कियों का रेप किया"LallanTop - News with most viral and Social Sharing Indian content on the web in Hindi (হিন্দি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-২১ 
  10. Kranti, Vijay (জুলাই ৩০, ২০১৩)। "Murder of Ajmer daily editor exposes sordid sex scandal involving criminals, politicians"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১২  অজানা প্যারামিটার |orig-date= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]