আতর হল ভেষজ উৎস থেকে উৎপাদিত সুগন্ধী বিশেষ। আতর শব্দটি পারসি শব্দ ইতির থেকে এসেছে, যার অর্থ সুগন্ধি।[১] আতর হলো মুসলমানদের ব্যবহৃত সুগন্ধি দ্রব্য। যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বা নামাজে যাবার আগে আতর ব্যবহার করা হয়। পুরুষদের জন্য একমাত্র হালাল সুগন্ধি হল আতর। আর মৃতের একমাত্র প্রসাধনও আতর।
প্রাচীনকালে মিশরীয়রা সুগন্ধি তৈরীতে প্রসিদ্ধ ছিল।
২৪০০ বছর আগে আরবে সুগন্ধী তৈরী শিল্পের তথ্য পাওয়া যায় হিরোডোটাস এর লেখা দি হিস্টোরি অব হিরোডটাস বইয়ে।[২]
বিভিন্ন গাছপালা এবং ফুল থেকে নির্য়াস সংগ্রহ করে বিভিন্ন তেলের সাথে মিশিয়ে আতর তৈরি করা হত। পরবর্তীতে বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসক আল শেখ আল-রইস নানরকম সুগন্ধি তৈরীর প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবন করেন।[৩] পাতন পদ্ধতির সাহায্যে সুগন্ধি তৈরীতে তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ।[৪]
ইবনে আল-বাইতার একজন আল-আন্দালুসিয়ান (মুসলিম ইবেরিয়া) চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট এবং রসায়নবিদ (১১৮৮-১২৪৮) ,অত্যাবশ্যকীয় তেল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত কৌশল এবং পদ্ধতির উল্লেখ লিপিবদ্ধ করেন।
ইয়েমেনে, ইয়েমেনের রানী আরওয়া আল-সুলাইহি একটি বিশেষ জাতের আতর প্রবর্তন কর। এই ধরনের আতর পাহাড়ি ফুল থেকে প্রস্তুত করা হতো এবং আরবের রাজাদের উপহার হিসেবে দেওয়া হতো।
ফাইজির মতে আকবরের সময়ে যে ছালগুলি ব্যবহার করা হত, সেগুলো ছিল ঘৃতকুমারী, চন্দন এবং দারুচিনি। গন্ধরস এবং লোবানের মতো রজন, কস্তুরী এবং আনবরের মতো প্রাণীজ পদার্থ, বিশেষ গাছের শিকড় এবং আরও কয়েকটি মশলা সহ ব্যবহৃত হত। আওধের শাসক গাজী-উদ-দীন হায়দার শাহ তার শোবার ঘরের চারপাশে আতরের ফোয়ারা তৈরি করেন।
আগর-আতর একটি প্রাকৃতিক সুগন্ধি পণ্য। এ আগর-আতর শিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশ সরকারের এক জেলা এক পণ্য হিসেবে মৌলভীবাজার জেলায় একে বেছে নেয়া হয়েছে। এখানে রয়েছে প্রায় ২০০টির মতো ছোট-বড় কারখানা। এখানকার উৎপাদিত আগর-আতর শতভাগ বিদেশে রপ্তানি হয় এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।[৫][৬][৭] সিলেট বিভাগের পাহাড়ে এখনো আতরের চাষ হয়। স্থানীয়রা ওইসব পাহাড়কে আতর পাহাড় বলে ডাকেন। আতর পাহাড়ে সারি সারি আগর গাছ। বয়স্ক গাছে দা দিয়ে কুপিয়ে রেখে দিলে সেখান থেকে রক্তের মতো ঘনরস পড়ে। গাছের সেই রস থেকেই পরে তৈরি হয় আতর।[৮]