এই নিবন্ধে ব্যবহৃত কিছু তথ্যসূত্র নির্ভরযোগ্য নয়। (ফেব্রুয়ারি ২০২১) |
আত্মসংবৃতি বা আত্মলীনতা (অটিজম নামেও পরিচিত) বলতে একটি মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ততাকে বোঝায়, যা বয়স তিন বছর হবার পূর্বেই প্রকাশ পায়।[১] আত্মসংবৃত শিশুরা (যাদেরকে আত্মসংবৃত, আত্মলীন বা ইংরেজি পরিভাষায় অটিস্টিক বলা হয়) সামাজিক আচরণে দুর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম সক্ষম হয়। মানসিক সীমাবদ্ধতা ও একই কাজ বারবার করার প্রবণতা থেকে এদের শনাক্ত করা যায়।
আত্মসংবৃতির কারণ সর্ম্পকে এখনও কোনও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে বংশাণুগত কারণে এটি হয় বলে প্রমাণ আছে। এর কারণ হিসেবে পারিপার্শ্বিক ঝুঁকির (যেমন: টিকা নেবার সীমাবদ্ধতা) কথা বলা হলেও কোনও গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এক-দুই বছর বয়সে শিশুর আচরণে এর লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। অভিভাবকরাই সাধারণত প্রথমে লক্ষণ বুঝতে শুরু করেন। লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি। আত্মসংবৃতি নির্ণয়ে মূলত শিশুর সম্পূর্ণ আচরণের ইতিহাস এবং স্নায়ুতাত্ত্বিক গণনার হিসাব বিবেচনা করা হয়। শিশুর পরিচর্যা করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আচরণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরিচর্যা বা এপ্লায়িড বিহেভিয়ার এন্যালিসিসের সাহায্যে চিকিৎসা করাই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং কার্যকরী। অত্মসংবৃতির মাত্রা অত্যধিক বেশি হলেস্বাধীন জীবনযাপনের সম্ভাবনা খুব কম থাকে তবে কম মাত্রার বেলায় এ ক্ষেত্রে পূর্ণ বয়সে সফলতা আসার সম্ভাবনা বেশি। তবে একে জীবনযাপনের একটি বিশেষত্ব মনে করে চিকিৎসা করাই ভাল।
অত্মসংবৃতির প্রকাশ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন হারে ঘটে। আধুনিক গবেষণা মতে, প্রতি হাজারে ১-২ জন অত্মসংবৃতিতে এবং এক হাজারে ৬ জনের এএসডি থাকতে পারে। বিশেষ করে ১৯৮০ সালের পর থেকে জানা গেছে এমন আত্মসংবৃত নির্ণয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে এর পিছনে উন্নত নির্ণয় পদ্ধতি এবং সচেতনতা বৃদ্ধিই মূল কারণ বলে বিবেচিত হয়।
আত্মসংবৃত শিশুরা অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে বা আকাঙ্ক্ষিত আচরণ করতে অক্ষম হতে পারে। নির্দিষ্ট বয়সে স্বাভাবিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও পরবর্তীকালে তা হারিয়ে যেতে পারে। আবার নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরিতেও সাধারণ ব্যবহারগুলোর দেখা যেতে পারে। এই বিকাশমূলক বিলম্বতার মাত্রা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সকল চিকিৎসকেরা একই সিদ্ধান্তে নাও আসতে পারেন।
সবচেয়ে প্রচলিত মতামত অনুসারে নতুন জন্মগ্রহণকারী প্রতি ১০,০০০ জীবিত শিশুর মধ্যে ৪.৫ জন আত্মসংবৃতিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অবশ্য এটি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পরিচালিত জরিপের ফলে প্রাপ্ত একটি পরিসংখ্যান। বর্তমানকালের পরিসাংখ্যিক গবেষণার ভিত্তিতে মোট জনসংখ্যা .২৫% থেকে .৫০% পর্যন্ত এ ধরনের রোগে আক্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ ধরনের রোগ বলতে আত্মসংবৃতি, অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ এবং পিডিডি-সমূহকে বোঝানো হয়।
আত্মসংবৃতি শব্দটি মূলত ইংরেজি Autism শব্দের পারিভাষিক প্রতিশব্দ। Autism শব্দটি প্রথম ইংরেজি ভাষায় ব্যবহৃত হয়। এটি প্রথম ব্যবহার করেন সুইস মনঃচিকিৎসক অয়গেন ব্লয়লার (Eugen Bleuler)। তিনি American Journal of Insanityতে প্রকাশিত তার একটি নিবন্ধে অস্বাভাবিকরকম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। এটি গ্রিক শব্দ αυτος (আউতোস্ অর্থাৎ "আত্ম", "নিজ") থেকে এসেছে। ব্লয়লার একান্তভাবে ভগ্নমনস্ক (Schizophrenic) মানুষ, যারা অন্য লোকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে না তাদের বোঝাতে এই শব্দের প্রচলন করেন। বর্তমান পরিভাষায় ভগ্নমনস্কতা সম্পূর্ণ আলাদা রোগ। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এদের পৃথক করা কঠিন হতে পারে।
তবে আত্মসংবৃতির চিকিৎসা শাস্ত্রগত শ্রেণিবিন্যাস ১৯৪৩ সালের আগে হয় নি। ১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোরে অবস্থিত জন হপকিন্স হাসাপাতালের মনঃচিকিৎসক ডঃ লিও ক্যানার সর্বপ্রথম ১১ টি মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত শিশুর আক্রমণাত্মক ব্যবহারের সামঞ্জস্যতা লক্ষ করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করেন এবং এ ধরনের ব্যাধির নাম দেন "early infantile autism"। শিশুরা অন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন বা যোগাযোগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে, এই রোগটিকে তিনি অটিজ্ম নামে চিহ্নিত করেন। এ বিষয়ে তার প্রথম প্রবন্ধ The Nervous Child নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল। তার বর্ণনার অনেক কিছুই এখনো আত্মসংবৃত শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োগ করা হয়।
প্রায় একই সময়ে অস্ট্রীয় বিজ্ঞানী ডঃ হ্যান্স অ্যাসপারগার একই ধরনের পর্যবেক্ষণ করেন। তবে তার পর্যবেক্ষণটি বেশ উঁচুমাত্রার এবং একটু অন্য ধরনের বৈশিষ্ট্যাবলীর জন্য প্রয়োগ করা হয়। এই বিষয়টির নাম অ্যাসপারগারের লক্ষণ বা Asperger's syndrome। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার প্রবন্ধগুলো ইংরেজিতে অনূদিত না হওয়ার কারণে তার পর্যবেক্ষণগুলো অনেকদিন কোন স্বীকৃতি পায় নি। ১৯৯৭ সালে তার প্রবন্ধগুলো স্বীকৃতি পায় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
আত্মসংবৃতি এবং অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ বর্তমানকালে পাঁচটি পরিব্যাপক বিকাশমূলক ব্যাধির (pervasive developmental disorder - PDD) দুইটি হিসেবে DSM-IV-TR (Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders) -এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই দুটিকে আত্মসংবৃত পরিসর ব্যাধি (Autism spectrum disorders - ASD)-ও বলা হয়ে থাকে। যোগাযোগ দক্ষতা, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং মানবীয় ব্যবহার-এর ত্রুটির বিভিন্ন মাত্রার উপর ভিত্তি করে এই রোগের শর্তগুলোকে আরও শ্রেণীবিভক্ত করা হয়।
আত্মসংবৃতিতে আক্রান্তদের আচার-ব্যবহার এবং সংবেদন পদ্ধতি অন্যদের চেয়ে অনেক আলাদা হয় এবং আক্রান্তদের মধ্যেও থাকে অনেক পার্থক্য। শব্দ, আলো, স্পর্শ ইত্যাদি ছদ্মরুপগুলোর প্রতি আত্মসংবৃতদের আচরণ সাধারণদের থেকে বেশ পৃথক ও অদ্ভুত। শারীরিক দিক দিয়ে আত্মসংবৃতদের সাথে সাধারণদের কোন পার্থক্য করা যায় না। অবশ্য মাঝে মাঝে শারীরিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সাথে আত্মসংবৃতি একসাথে আসে, সেক্ষেত্রও পার্থক্যগুলো হবে আপাত; কারণ দৈহিক পার্থক্য থাকলেও তার উপর আত্মসংবৃতি খুব একটা নির্ভর করে না। আত্মসংবৃতদের মস্তিষ্কের আকৃতি সাধারণের চেয়ে বড় হয়ে থাকে, তবে এর প্রভাব সম্বন্ধে এখনও সঠিক কিছু জানা যায় নি।[২]
ASC is a 'spectrum condition' meaning that, while all people with autism share certain difficulties, their condition affects them in different ways.