কিতবুগা كتبغا | |||||
---|---|---|---|---|---|
মিশর ও শামের সুলতান | |||||
রাজত্ব | ডিসেম্বর ১২৯৪ – ৭ ডিসেম্বর ১২৯৬ | ||||
পূর্বসূরি | নাসির মুহাম্মাদ | ||||
উত্তরসূরি | লাজিন | ||||
জন্ম | অজ্ঞাত | ||||
মৃত্যু | ১৩০৩ হামা | ||||
| |||||
রাজবংশ | বাহরি |
কিতবুগা (আরবি: كتبغا), রাজকীয় নাম: মালিকুল আদিল যাইনুদ্দিন কিতবুগা বিন আব্দুল্লাহ মানসুরি তুর্কি মুঘলি; আরবি: الملك العادل زين الدين كتبغا بن عبد الله المنصورى التركى المغلى) (মৃত্যু ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দ) ১২৯৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ১২৯৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মিশরের দশম মামলুক সুলতান ছিলেন।
তিনি মূলত হালাকু খানের ইলখানিদ সেনাবাহিনীর একজন মঙ্গোল (তুর্কি মুগলি) সৈনিক ছিলেন। ১২৬০ সালে হিমসের প্রথম যুদ্ধের সময়[১] বন্দী হন। তাকে কালাউন ক্রয় করেছিলেন এবং তার মামলুকদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরে কালাউন তাকে মুক্ত করেন এবং তাকে আমির পদমর্যাদা দেন।[২]
কালাউনের পুত্র সুলতান আশরাফ খলিলের শাসনামলে, তিনি গ্রেফতার হন এবং মুক্তি পান।[৩] ১২৯৩ সালে আশরাফ খলিলের হত্যার পর, কিতবুগা সুলতান নাসির মুহাম্মাদের নায়েবে-সুলতান এবং সহশাসক হন। নাসির মুহাম্মাদ মাত্র ৯ বছর বয়সের বালক হওয়ায় আমির 'আলমুদ্দিন সানজার শুজায়ী মানসুরি' ( عَلَمُ الدِّينِ سَنْجَرُ الشُّجَاعِيُّ المَنْصُورِيُّ) ও তিনি কার্যকরভাবে মিশরের শাসক ছিলেন।[১][৪] কিন্তু কিতবুগা নাসিরের উজির শুজায়ীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং তাদের সম্পর্ক খারাপ ছিল। শুজায়ী বুর্জি মামলুকদের সমর্থনে কিতবুগাকে গ্রেপ্তার করার এবং তার আমিরদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু কিতবুগাকে শুজায়ীর পরিকল্পনা সম্পর্কে কুনহার নামক একজন তাতার অবহিত করে। চেঙ্গিস-খানীয় এবং শাহরজুরি কুর্দিদের সমর্থনে কিতবুগা দুর্গ অবরোধ করেন।[১][৫] যাইহোক, তিনি বুর্জি মামলুকদের কাছে পরাজিত হন এবং তাকে বিলবায়ে পালিয়ে যেতে হয়।[৬] পরে তিনি আবার কায়রোতে ফিরে আসেন এবং তার আমিররা বুর্জিদের পরাজিত করার পর আবার দুর্গ অবরোধ করেন। সুলতানি মামলুক এবং শুজায়ী সমর্থকদের সাথে প্রতিদিনের সংঘর্ষের মধ্যে কিতবুঘার দুর্গের অবরোধ সাত দিন ধরে চলে। শুজায়ীর অনেক আমির কিতবুঘার দিকে চলে যান। কিতবুগার আমিররা সুলতান নাসির মুহাম্মাদের মাকে জানিয়েছিলেন যে, বিবাদটি তাদের এবং শুজায়ীর মধ্যে ছিল এবং তার ছেলের সাথে নয়। তাই তিনি শুজায়ীকে দুর্গের বাইরে তার বাড়িতে আটকে রেখে দুর্গের দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর তার অন্যান্য আরও আমিররা তাকে ত্যাগ করে কিতবুগার দিকে চলে যান। শুজায়ী মিশরীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন না।[১] তিনি বিরোধ নিয়ে আলোচনা করার জন্য দুর্গে যাওয়ার পথে নিহত হন। দুর্গের গেট খুলে দিলে কিতবুগা এবং তার আমিররা ভিতরে চলে যান। কিতবুগার যেসব অনুসারী শুজায়ী কর্তৃক বন্দী ছিল তাদের মুক্ত করা হয় এবং শুজায়ীকে সমর্থনকারী অনেক বুর্জি মামলুককে হয় গ্রেফতার করা হয়েছিল বা দুর্গ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। লেভান্তে শুজায়ীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং সেখানে তার সহকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।[৭]
প্রায় ৩০০ বুর্জি মামলুক যাদেরকে কিতবুগা দুর্গ থেকে অপসারণ করেছিল তারা বিদ্রোহ করেছিল এবং কায়রোতে তাণ্ডব চালিয়েছিল। মামালিকুল আশরাফিয়া খলিল (আশরাফ খলিলের মামলুক) নামে পরিচিত এই মামলুকরা ক্ষুব্ধ হয়েছিল। কারণ তাদের হিতৈষী সুলতান আশরাফ খলিলকে হত্যার সাথে জড়িত হুসামুদ্দিন লাজিন কায়রোতে এসেছিলেন। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বা শাস্তি দেয়া হয়নি।[১] মামালিকুল আশরাফিয়া খলিলরা পরাজিত হয় এবং তাদের অনেককে হত্যা ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।[৮]
কিতবুগা মিশরের সহশাসক এবং প্রকৃত শাসক হিসাবে থেকে গিয়েছিলেন। নাসির মুহাম্মাদ বাল্যকালে শুধুমাত্র নামমাত্র সুলতান ছিলেম। উজির শুজায়ীর হত্যার পর, কিতবুগা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তখন লাজিন তাকে সতর্ক করেন যে, আশরাফ খলিল এবং সুলতান নাসির মুহাম্মাদের মামলুকরা সুলতান খলিলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চাইবে। তাই তার নাসিরকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং সম্পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করা উচিত।[৯][১০] বিদ্রোহী বুর্জি মামলুকদের পরাজয়ের পর, কিতবুগা তার অফিসে আমিরদের একত্রিত করেন এবং তাদের বলেন: "রাজ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। সুলতান নাসির কমবয়স্ক হওয়ায় তাকে সুলতান হিসেবে রাখা যায়না"। আমিররা সম্মত হন এবং তারা নাসির মুহাম্মাদকে কিতবুঘার সাথে প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। নাসির মুহাম্মাদকে তার মায়ের সাথে প্রাসাদের অন্য অংশে এবং পরে কারাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিতবুগা সুলতান হিসেবে সিংহাসনে আসীন হন এবং রাজকীয় নাম ধারণ করেন - মালিকুল আদিক। তিনি লাজিনকে তার নায়েবে সুলতান বানিয়েছিলেন।[১১]
১২৯৬ সালে ওইরাতদের একটি বড় দল[১২][১৩] মঙ্গোল উদ্বাস্তু হিসেবে লেভান্তে আসে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন হালাকু খানের জামাতা তুরগাই।[১৪][১৫] তারা গাজানের হাত থেকে লেভান্তে পালিয়ে গিয়েছিল। ওইরাত গোষ্ঠীর কিছু লোককে কিতবুগা কায়রোতে সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছিল এবং তারপরে তারা হিসিনিয়ার কায়রিন জেলায় বসবাস করেছিল,[১৬] অন্যরা লেভান্তের উপকূলীয় শহরগুলোতে আশ্রয় পেয়েছিল। ওইরাতরা মুসলিম ছিল না, কিন্তু তারা মিশরীয় আমিরদের সাথে এবং পরে মিশরীয় সাধারণদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং মিশরীয় সমাজে মিশে যায়।[১৭][১৮] যাইহোক, কিতবুগা নিজে মঙ্গোল বংশোদ্ভূত হওয়ায় ওইরাতদের প্রতি তার অসাধারণ উদারতা অনেক আমিরকে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহজনক করে তুলেছিল।[১৯][২০] এটি এমন একটি কারণ যা পরবর্তীতে তার পতনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।[২১]
পরবর্তীতে কিতবুগার শাসনামলে মিশর এবং লেভান্ত একটি মহামারীতে আক্রান্ত হয় এবং পানি ও খাদ্যের ঘাটতির সম্মুখীন হয়; যা মিশরে অনেক লোকের মৃত্যু ঘটায়।[২২][২৩] কিতবুগা মিশরীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল না। তারা তাকে অশুভের বাহক হিসাবে বিবেচনা করেছিল।[২৪] এছাড়াও, মিশরীয়রা অমুসলিম ওইরাতদের প্রতি কিতবুগার উদারতা দেখে সন্তুষ্ট ছিল না। এছাড়াও মিশরীয়রা খাদ্যের উচ্চ মূল্য এবং অর্থনৈতিক কষ্টে ভুগছিল।
কিতবুগা যখন দামেস্কে ছিলেন তখন আমিররা তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেন। আমিররা কিতবুগার কাছে গিয়েছিলেন এবং মিশর যাওয়ার পথে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন। বিসারি নামের একজন বিশিষ্ট আমির তার বিরুদ্ধে মঙ্গোলদের সাথে যোগাযোগের অভিযোগ আনেন। কিতবুগা বিসারির উপর ক্ষুব্ধ হন। কিতবুগা বিসারিকে গ্রেপ্তার করবে এই ভয়ে, লাজিনসহ আমিররা অস্ত্র বহন করে কিতবুঘার দিহলিজে[২৫][২৬] যান এবং তার মামলুকদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন।[২৭] কিতবুগার মামলুকদের কয়েকজন নিহত বা আহত হয়। কিতবুগা দিহলিজ ছেড়ে একটি পিছনের পথ দিয়ে তার পাঁচজন মামলুকের সাথে দামেস্কে পালিয়ে যান। আমিররা তাকে ধরতে পারেনি। লাজিনকে মিশরের নতুন সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসানো হয়।
কিতবুগা দামেস্কের দুর্গের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করেন এবং লাজিনকে নতুন সুলতান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন: "সুলতানুল মালিকুল মানসুর (লাজিন) আমার খুশদাশিয়ার একজন।[২৮] আমি তাঁর সেবা করি এবং তাঁর আনুগত্য করি। যতক্ষণ না সুলতান আমার সাথে কী করবেন তা সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত আমি দুর্গের ভিতরেই থাকব।" সালখাদে শাসন করার জন্য কিতবুগা দামেস্ক ত্যাগ করেন।[২৯] তিনি সেখানে দুই বছর ১৭ দিন রাজত্ব করেন।[৩০]
১২৯৯ সালে সুলতান নাসির মুহাম্মাদ যখন মাহমুদ গাজানের আক্রমণের মুখোমুখি হওয়ার জন্য মিশরীয় সেনাবাহিনীর সাথে সিরিয়ায় যাচ্ছিলেন, তখন কিছু ওইরাত সুলতানের কিছু মামলুকের সাথে মিশরের প্রকৃত শাসক নায়েবে-সুলতান সালার এবং ওস্তাদার বাইবার্স জাশনাকিরকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল,[৩১] তারা কিতবুঘাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল, কিন্তু প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ষড়যন্ত্রকারী ওইরাতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। ওয়াদিউল খাজানদারের যুদ্ধে নাসির মুহাম্মাদের সেনাবাহিনীর পরাজয়ের পর কিতবুঘা মিশরে পালিয়ে যান এবং সালারের সেবায় আসেন। গাজান সিরিয়া ত্যাগ করার পর কিতবুগা হামাতে সুলতান নাসির মুহাম্মাদের সহকারী হন,[৩২][৩৩] যেখানে তিনি ১৩০৩ সালের জুলাই মাসে মারা যান।
১২৯৫ সালে সুলতান কিতবুগার শাসনামলে মিশরে প্রথমবারের মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে পণ্য বা পরিষেবার বিনিময়ের আগে মুদ্রাগুলোকে ওজন করতে হবে। সুতরাং মুদ্রার মূল্য তাদের ওজনের উপর ভিত্তি করে ছিল, তাদের পরিমাণের উপর নয়।[৩৪]
আদিল কিতবুগা মামলুক সালতানাত এর ক্যাডেট শাখা জন্ম: ? মৃত্যু: ১৩০৩
| ||
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী নাসির মুহাম্মাদ |
মিশর ও সিরিয়ার সুলতান ডিসেম্বর ১২৯৪ – ৭ ডিসেম্বর ১২৯৬ |
উত্তরসূরী হুসামুদ্দিন লাজিন |