অ্যাডোরেশন অব ম্যাজাই | |
---|---|
![]() | |
শিল্পী | সান্দ্রো বত্তিচেল্লি |
বছর | আনু. ১৪৭৫–১৪৭৬ |
মাধ্যম | Tempera on panel |
আয়তন | 111 cm × 134 cm (৪৪ ইঞ্চি × ৫৩ ইঞ্চি) |
অবস্থান | উফফিৎজি, ফ্লোরেন্স |
অ্যাডোরাজিওনে দেই ম্যাজাই (বাংলায়: ম্যাজাইদের আদর) হচ্ছে ইতালীয় রেনেসা যুগের চিত্রশিল্পী সান্দ্রো বত্তিচেল্লি দ্বারা নির্মিত একটি চিত্রকলা। বত্তিচেল্লি সান্তা মারিয়া নোভেলা গীর্জায় অবস্থিত গাস্পার দি জানোবি ডেল লামার প্রার্থনা জায়গার (চ্যাপেল) পুজোর বেদির জন্য ১৪৭৫ সালের দিকে এই চিত্রকর্মটি অঙ্কন করেন।[১][২] এই চিত্রকর্মটি বাইবেলে বর্ণিত তিনজন ম্যাজাইয়ের নক্ষত্রের পথ অনুসরণ করে শিশু যীশুকে খুঁজে পাওয়ার আখ্যানকে কেন্দ্র করে অঙ্কিত হয়েছে। এই চিত্রকলাটিতে ঠিক মাঝখানে কুমারী মেরি তার নবজাতক সন্তান যীশুকে নিয়ে বসে আছেন। ঠিক পিছনেই আছেন সাধু জোসেফ। তাদের সামনে আছেন তিনজন রাজা যাদের নতুন নিয়মে ম্যাজাইদের আদর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই রাজাগন শিশু যিশুর আরাধনা করেন এবং তাকে স্বর্ণ, লোবান এবং গন্ধরস উপহার হিসেবে অর্পণ করেন। এছাড়াও এই পবিত্র পরিবারকে সেসব মানুষ ঘিরে রয়েছে যারা মনে করেন এই শিশু ঈশ্বরের পুত্র। [৩]
১৪৭৫ খ্রিস্টাব্দে ব্যাংকার ও ব্রোকার গাস্পার দি জানোবি দেল লামা সান্দ্রো বত্তিচেল্লিকে এডোরেশন অব মেজাই অঙ্কনের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করেন।[৪] ফ্লোরেন্সের বাহিরে এমপলি নামক একটি ছোট্ট শহরে নাপিত পিতার সন্তান হিসেবে জন্মেছিলেন গাস্পার দি জানোবি।[৪][৫] গাস্পারের মৃত্যুর পর সান্তা মারিয়া নোভেলা নামক গীর্জায় তার জন্য প্রার্থনার বেদীতে (চ্যাপেল) এই চিত্রকর্মটি রাখা হয়েছিল।[১][২][৪][৫]
চ্যাপেল এবং এরপর চিত্রকর্মটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।[২][৪][৫] এই চিত্রকর্মটিতে বাইবেলের গল্প মেজাইদের আদর কে তুলে ধরা হয়েছে এবং চিত্রকর্মটিতে মেদিচি পরিবারের বিখ্যাত সদস্যদের স্থান দেওয়া হয়েছে। চিত্রকর্মটির পৃষ্ঠপোষক গ্যাসপারকে (তার নাম ইতালীয় ভাষায় ক্যাসপার হিসেবে উচ্চারিত হবে; যা তিনজন মেজাইয়ের মধ্যে একজনের নামের সাথে মিলে যায়। এখান থেকে অনুমিত হয়, নামের মিলের কারণেই পৃষ্ঠপোষক গ্যাসপার এই চিত্রকর্মটি অঙ্কন করানোর প্রতি আগ্রহী হয়েছিলেন)[৪][৫][৬] মুল চিত্রের কেন্দ্রের ডানপাশে মানুষের দলের মধ্যখানে দেখা যাচ্ছে। তাকে নীল রংয়ের ঢিলা জামা (গাউন) পরিহিত অবস্থায় সাদা-কালো চুলের এক বৃদ্ধ হিসেবে চিত্রকর্মটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যিনি দর্শকের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছেন।[৬] এই দলটিরই যিনি সবচেয়ে ডানপাশে হলুদ এবং সোনালী রং মিশ্রিত আলখেল্লা পরে দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি বত্তিচেল্লির নিজেরই একটি আত্মপ্রতিকৃতি। [৪][৫][৬]
গাসপার দি জানবি দেল লামার বংশধরদের কাছে চিত্রকলাটির মালিকানা স্থানান্তরিত করা হয়। পরবর্তী ১০০ বছর ধরে চিত্রকলাটি তার মুল জায়গায় সংরক্ষিত ছিল।[১] এরপর ১৫২২ খ্রিষ্টাব্দে ফেদিনী পরিবারের কাছে এর কর্তৃত্ব স্থানান্তরিত হয়।[১] এরপর নানা হাত ঘুরে[১] ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে ইতালীর ফ্লোরেন্সের উফফিৎজি জাদুঘরে এটি পৌছায়। তখন থেকেই এটি এখনো সেখানেই আছে। ২০২২/২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রদর্শনীর জন্য চিত্রকর্মটি মিনিয়াপোলিস ইন্সটিটিউট অব আর্টে রাখা হয়েছিল।[১][৭]
বত্তিচেল্লির চিত্রকর্মটিতে যেসব ভূদৃশ্য স্থান পেয়েছে তার মধ্যে ধ্রুপদী সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ অন্যতম। ছবিটির মাঝখান থেকে বামে তাকালে দেখা যায় তোরণের ধ্বংসাবশেষ যা গ্রিক রোমান সভ্যতার বিদায়ঘণ্টাকে নির্দেশ করে। খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস অনুসারে যীশুর জন্ম হয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য পাত্রে (জাবনাপাত্র)। চিত্রকর্মটিতে বত্তিচেল্লি ধ্রুপদকালে নির্মিত স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের মাঝে এরকমই এক জাবনাপাত্রে সতী মেরি, সাধু জোসেফ এবং শিশু যীশুকে উপবেসন অবস্থায় অঙ্কন করেছেন। যার মাধ্যমে বত্তিচেল্লি ধ্বংসাবশেষের গর্ভ থেকে নবজাগরণের পথিকৃৎকে কল্পনা করেছেন। তার কল্পনাকে তিনি আরো অর্থবহ করে তুলেছেন ধ্বংসাবশেষের ফাঁকে ফাঁকে সবুজের মাথা তুলে তাকানোকে স্থান দিয়ে। যা সতেজতার প্রতীক। একইসাথে বত্তিচেল্লি প্রাকৃতিক সজীবতার পাশাপাশি প্রাণের স্পন্দন হিসেবে ডানদিকে ময়ুরের আর্বিভাবকে দেখিয়েছেন। সোনালি কিরণ বিকিরিত করা বেথেলহামের নক্ষত্রকে ছবির সবচেয়ে উপরিভাগে এমনভাবে আঁকা হয়েছে যা মেরী এবং শিশুকে আলোকিত করছে এবং যার মাধ্যমে বত্তিচেল্লি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শুভ শক্তির আবির্ভাবকে ফুটিয়ে তুলেছেন।[৬]
আদোরাসিওনে দেই মাজি চিত্রকর্মে বত্তিচেল্লি সুষ্পষ্ট ভাবে তার চরিত্রগুলোকে অঙ্কন করেছেন। এই চিত্রকর্মে তিনি উজ্জ্বল রং বিশেষত লাল রংয়ের ব্যবহার বেশি করেছেন।[১] সন্ধ্যার পর আলো কমে গেলে ছবিটি যদি দেখা না যায় এবং ছবির ফ্রেম অত্যন্ত চমকপ্রদ হওয়ায় দর্শক যেন শুধু ফ্রেমকেই দর্শন না করে; এসব বিষয় মাথায় রেখেই বত্তিচেল্লি চিত্রকর্মটিতে গাঢ় রংয়ের ব্যবহার করেছেন, যাতে তার সৃষ্ট চিত্র সুষ্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়।[১] চিত্রকলা কোন সময়ে অবলোকন করা হবে, তা বিবেচনায় নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুর্যাস্তের পর যেহেতু তৎকালীন মানুষ শুধুমাত্র মোমবাতি জ্বালিয়ে ছবি দেখতে পারত, তাই বত্তিচেল্লি চিত্রকর্মটিতে লাল রংয়ের ব্যবহার বেশী করেছেন, যাতে মোমের আলোয় ছবিটি জ্বলজ্বল করে।[১] এই ঔজ্বল্য ভাব বর্তমানে দেখা যায় না, কারণ এখন কৃত্রিম আলোয় মানুষ ছবিকে প্রদর্শন করে।[১]
১৪০০ খ্রিস্টাব্দে মেদিচি পরিবার ইতালীতে অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবার ছিল।[৮] ১৪৭০ খ্রিষ্টাব্দে, সান্দ্রো বত্তিচেল্লি মেদিচি পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেন।[৯] ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে মেদিচি পরিবার বত্তিচেল্লির অসংখ্য চিত্রকর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।[৯]