আনন্দ

হাসিমুখ হল আনন্দের একটি সুপরিচিত প্রতীক।

পরিতোষ, প্রেম, পূর্ণতা, পুলক, উল্লাস, আহ্লাদ ইত্যাদির একক, একাধিক বা সম্মিলিত অণুভুতিকে আনন্দ/সুখ বলে[]। জীববিদ্যা, মনঃস্তত্ত, ধর্ম ও দর্শন আনন্দের অর্থ ও উৎস উন্মোচনের বহুকালব্যাপী প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে। যদিও আনন্দ পরিমাপ করা বেশ কঠিন কাজ, বিজ্ঞানীরা নানা উপায়ে এই দুঃসাধ্য সাধন করেছেন। অক্সফোর্ডে আনন্দ বিষয়ক গবেষণায় বহুসংখ্যক বৈশিষ্টের সাথে আনন্দের সরাসরি সংযোগ শনাক্ত করা হয়েছে। যেমন- সামাজিক ক্রিয়াকর্ম ও সম্পর্ক, দাম্পত্য অবস্থান, কার্যক্ষেত্র, স্বাস্থ্য, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা, আশাবাদ, এনডরফিন, ধর্মীয় সম্পৃক্ততা, আয় এবং সুন্দর সান্নিধ্য।

দার্শনিক ও আধাত্মিক সংজ্ঞা অনুযায়ী আনন্দ সেই পন্থা যা অবলম্বনে উপযুক্ত ও উন্নত জীবনযাপন করা যায়।

সংজ্ঞা

[সম্পাদনা]

দর্শনশাস্ত্র এবং ধর্মীয় চিন্তাবিদরা প্রায়ই আবেগের পরিবর্তে একটি ভালো জীবন বা সমৃদ্ধশালী জীবনধারণের ক্ষেত্রকে সুখ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন । এই অর্থে সুখকে অনুবাদ করার জন্য গ্রিক eudaimonia ব্যবহৃত হতো, এবং এখনও নৈতিকতার নীতিতে ব্যবহার করা হয়। সময়ের সাথে সাথে একটি পরিবর্তন হয়েছে যেখানে গুনের সাথে সুখের সম্পর্কের চেয়ে সুখের সাথে গুনের সম্পর্কের উপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে । সহস্রাব্দ ঘুরে আসার পর থেকে, বিশেষ করে অমর্ত্য সেনের মানবিক বিকাশের পদ্ধতিটি উন্নত হয়েছে তার ফলে মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের উপর আগ্রহ বেড়ে গেছে । বিশেষত মার্টিন সেলিগম্যান, এড ডায়নার এবং রুউৎ ভেনহোভেনের কাজ, এবং পল আনন্দ এর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং চিকিৎসা গবেষণায় ব্যাপক অবদানের ফলে এই বিষয়ের গুরুত্ব বেড়ে যায় ।

১৭৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থমাস জেফারসন দ্বারা লিখিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি ব্যাপকভাবে আলোচিত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ছিল কারণ তিনি উল্লেখ করেছিলেন, "সুখের অনুধাবন করা" একটি সর্বজনীন অধিকার । মনে হচ্ছে এটি একটি বিষয়ভিত্তিক ব্যাখ্যা করার কথা বলে তারপরেও তা একাই আবেগ অতিক্রম করে । আসলে, এই আলোচনাটি প্রায়শই সহজ ধারণার উপর ভিত্তি করে চলতেছে যে সুখ শব্দটি একই জিনিস বোঝায় যা ১৯৭৬ সালে ছিল এবং আজও তাই আছে । প্রকৃতপক্ষে, অষ্টাদশ শতকে সুখ বলতে বুঝাতো "সমৃদ্ধি, উন্নতি এবং সুস্থতা"।

আজকাল সুখ একটি ঝাপসা ধারণা এবং ভিন্ন ভিন্ন লোকের কাছে তার অর্থ ভিন্ন মনে হতে পারে । সুখের বিজ্ঞান একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল সুখ নিয়ে বিভিন্ন ধারণা চিহ্নিত করা এবং যেখানে প্রযোজ্য সেই অনুযায়ী তাদের উপাদানগুলিকে বিভক্ত করা । প্রাসঙ্গিক ধারণাগুলি হচ্ছে সুস্থতা, জীবনের মান এবং সমৃদ্ধি । অন্তত একজন লেখক সুখকে তুষ্টি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন । কিছু ভাষ্যকার আনন্দবাদী ঐতিহ্যের মাধ্যমে সুখকে অনুসন্ধান এবং অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতাগুলোকে অবজ্ঞা করার মাধ্যমে ইউডামোনিক উপায়ে জীবনকে পুরোপুরি এবং গভীরভাবে ও পরিতৃপ্তির সাথে উপভোগ করার উপর বেশি জোর দেন।

২০১২ সালের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যক্তিগত কল্যাণমূলক পদক্ষেপে, প্রাথমিক বিশুদ্ধতম জীবনের মূল্যায়ন এবং মানসিক প্রতিবেদনগুলির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা । সুখকে উভয় জীবন মূল্যায়নে ব্যবহার করা হয়, যেমন "মোটের উপর আপনি আপনার জীবনে কতটা সুখী?" এবং মানসিক প্রতিবেদনে, "এখন আপনি কতটা সুখী?" এবং লোকেরা এই ধরনের মৌখিক contexts এ সুখকে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে পারে বলে মনে হয়। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস প্রতিবেদনগুলি এই পরিমাপ পদ্ধতিগুলির মাধমে সুখের সর্বোচ্চ স্তরের দেশগুলিকে চিহ্নিত করে ।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

[সম্পাদনা]

জীববিদ্যা

[সম্পাদনা]

বিবর্তনীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আনন্দ অথবা উন্নত জীবনের গুণমান ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। সংক্ষেপে- যেসব প্রশ্ন সদুত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলো হলো: মস্তিষ্কের কোন বৈশিষ্টের দ্বারা মানুষ ইতিবাচক ও নেতিবাচক অণুভূতিগুলোকে পৃথক করতে সক্ষম হয়, এবং এটি কীভাবে মানুষের জীবনের গুণমান ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে? এই ব্যাপারে ডারউইনিয়ান হ্যাপিনেস নামক গ্রন্থে বিশদ বর্ণনা রয়েছে।

অন্যান্য গবেষণা

[সম্পাদনা]

ডেভিড লায়কেন ও অন্যান্য কিছু গবেষকরা দাবি করেন যে মানুষের আনন্দ ৫০% নির্ভর করে তার জিনের উপর। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা যমজ সন্তানদের নিরীক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন। ১০% থেকে ১৫% নির্ভর করে বিভিন্ন প্রকারের পরিস্থিতির উপর। যেমন:- আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বৈবাহিক অবস্থা, স্বাস্থ্য, আয়, যৌন-জীবন ইত্যাদি। অবশিষ্ট ৪০% ব্যক্তি নিজের মনের আনন্দে যা করে থাকে এবং অন্যান্য অনেক অনির্দিষ্ট ধ্রুবক দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে।

মাইকেল আরগাইল অক্সফোর্ড আনন্দ পরিমাপক প্রশ্নাবলী (ইংরেজি: Oxford Happiness Questionnaire) নামক একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি তৈরি করেছেন। সমালোচকদের মতে- এটি আত্মমর্যাদা, সংকল্প, পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক সংমিশ্রণ, কৌতুক প্রবণতা এবং শিল্প ও সৌন্দর্যের মূল্যায়নের একটি পরিমাপক মাত্র।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "ক্যাম্ব্রিজ ডিকশোনারি"। ৫ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১০ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  1. আনন্দের ইতিহাস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ এপ্রিল ২০১০ তারিখে
  2. The Stanford Encyclopedia of Philosophy entry "Pleasure"
  3. বিশ্বে আনন্দের পরিসংখ্যান

টেমপ্লেট:Emotion-footer