আনন্দমার্গ বা আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ (আনন্দের পথের প্রচারের সংস্থা) হল একটি বিশ্বব্যাপী সামাজিক-আধ্যাত্মিক সংগঠন। এটি ১৯৫৫ সালের ভারতের বিহারের জামালপুরে প্রভাতরঞ্জন সরকার (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি) কর্ত্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই সংঘটনটি বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশে সক্রিয় আছে।[১][২] এর মূলমন্ত্র হল "আত্মমোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ" অর্থাৎ আত্মার মোক্ষপ্রাপ্তি ও জগতের কল্যাণ সাধন করা।[২]
প্রভাতরঞ্জন সরকার দ্বারা ব্যাখ্যা করা তন্ত্র যোগ আনন্দমার্গের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। তাঁর শিক্ষা অনুসারে, তন্ত্র মানে মনের প্রসারণের মাধ্যমে অন্ধকার থেকে মুক্তি। ধ্যান হল এই তান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রধান আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা অনুশীলনকারীকে দুর্বলতা এবং অপূর্ণতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। আনন্দ মার্গে মুক্তির পথ ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, কৃত্রিম সামাজিক বাধা এবং আচার-অনুষ্ঠান থেকে মুক্ত। আনন্দ মার্গ আধ্যাত্মিকতা এবং মুক্তিকে জাতি, বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিক অবস্থা বা বিশ্বাস ব্যবস্থা নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্মগত অধিকার হিসাবে স্বীকৃত করে।
আনন্দ মার্গ অনুশীলনের ভিত্তি হল 'ষোড়শ বিধি' নামক নিয়মের একটি সেট দ্বারা আচ্ছাদিত। যা অনুশীলনকারীকে আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক উভয় দিকেই গাইড করে। এতে যোগাসন, মুদ্রা, বাঁধা, প্রাণায়াম, স্ব-ম্যাসেজ এবং দুটি নির্দিষ্ট নৃত্য (কৌষিকী এবং তান্ডব) রয়েছে । ল্যাক্টো- ভেজিটেরিয়ান ডায়েট এবং উপবাসও যোগিক অনুশীলনের একটি মৌলিক অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। আনন্দ মার্গের লক্ষ্য হল " আত্ম-উপলব্ধি এবং সকলের কল্যাণ"।
আনন্দমার্গের আদর্শ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – গুরু, গুরু সকাশ, নমস্কার, যোগসাধনা ও সাধনাক্রম, দীক্ষা, প্রভাত সঙ্গীত, পাঞ্চজন্য, কীর্ত্তন (বাবা নাম কেবলম্), চরম নির্দেশ, ধর্মচক্র, ধর্মমহাচক্র, ধর্ম-মহাসম্মেলন, সেমিনার, তত্ত্বসভা, স্বাধ্যায়, প্রতীক, পতাকা, মার্গীয় অনুশাসন, স্নান-বিধি, উপবাস বিধি, যম-নিয়ম,আসন, প্রাণায়াম, কৌষিকী নৃত্য, তান্ডব নৃত্য, ষোড়শ-বিধি, পঞ্চদশ শীল, সকল প্রকার জীবের সেবা ও ত্রাণকার্য, শিক্ষা, সাহিত্য, সমাজ আন্দোলন, নিজস্ব বিধিতে কুসংস্কারমুক্ত সমস্ত ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান পালন, পণবিহীন বৈপ্লবিক বিবাহ, এক মানবসমাজ, মানবধর্ম, কৃষি গবেষণা, ইত্যাদি।
প্রভাত রঞ্জন সরকার বা শ্রী শ্রী আনন্দমূর্তি ভারতের বিহারের জামালপুরে ১লা জানুয়ারি ১৯৫৫-এ আনন্দ মার্গ প্রতিষ্ঠা করেন।[৩][৪][৫] এর বিবৃত উদ্দেশ্য হল "আত্মমুক্তি এবং জগৎকল্যাণ"।[৬][৪]
সমগ্র বিশ্বে সর্বাত্মক সেবামূলক কাজ চালিয়ে যাবার জন্য আনন্দমার্গের ৯টি প্রধান সেক্টর বা হেডকোয়ার্টার রয়েছে।এগুলো হলো – দিল্লি সেক্টর, হংকং সেক্টর, ম্যানিলা সেক্টর, নিউইয়র্ক সেক্টর, জর্জটাউন সেক্টর, সুবা সেক্টর, কায়রো সেক্টর, নাইরোবি সেক্টর এবং বার্লিন সেক্টর। বিশাল কর্মযজ্ঞকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য আনন্দমার্গের মোট ২৮টি বিভাগ রয়েছে। এই বিভাগগুলোর আবার উপবিভাগও রয়েছে।
১৯৬৭ – বহির্ভারতে ধর্ম প্রচারের জন্য প্রথম সন্ন্যাসীর যাত্রা। ৫-ই মার্চ আনন্দনগরে কমিউনিস্টরা পাঁচজন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীকে হত্যা করে।
১৯৭১ – বারাণসী ধর্মমহাচক্রে যাবার প্রাক্কালে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজীকে পাটনায় গ্রেপ্তার (মিথ্যা অজুহাত ও বলপূর্বক)।
১৯৭৩ – ১২ই ফেব্রুয়ারি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজীকে পাটনায় বাঁকীপুর কেন্দ্রীয় কারায় ওষুধের নামে বিষপ্রয়োগ করা হয়। ১লা এপ্রিল থেকে তিনি রেকর্ড সৃষ্টিকারী অনশন শুরু করেন।
১৯৭৮ – পাটনা হাইকোর্টের রায়ে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নির্দোষ প্রমাণিত হন। ৫ বৎসর ৪ মাস ২ দিন ব্যাপী ম্যারাথন অনশন করার পর ২রা আগস্ট জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৮২ – নব্যমানবতাবাদ (Neohumanism) দর্শন প্রদান। প্রভাত সঙ্গীত-এর রচনা শুরু। কলকাতার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে ৩০শে এপ্রিল মার্কসবাদী কমিউনিস্টদের ভাড়াটে গুন্ডারা সংঘের ১৭ জন সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে।
১৯৮৭ – শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী জড় ও চেতনের সংযোগকারী সত্তা মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব দেন।
১৯৯০ – ৭-ই মে কলকাতা হাইকোর্ট তান্ডব নৃত্যকে আনন্দমার্গীদের অপরিহার্য ধর্মীয় অনুশীলন হিসেবে মান্যতা দেন। ২১ অক্টোবর শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজীর মহাপ্রয়াণ ঘটে।
১৯৯১ – UNO দ্বারা AMURT-কে আন্তর্জাতিক NGO-র স্বীকৃতি প্রদান।
১৯৯৬ – ভারতের সুপ্রিমকোর্ট আনন্দ মার্গ প্রচারক সংঘকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
Fukui, Haruhiro (১৯৮৫), Political Parties of Asia and the Pacific, Greenwood Press, পৃষ্ঠা 357, আইএসবিএন0-313-21350-Xউদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Hatley, Shaman; Inayatullah, Sohail (1999), "Karma Samnyasa: Sarkar’s reconceptualization of Indian ascetism", in K. Ishwaran, ed., Ascetic culture: renunciation and worldly engagement. Leiden, Brill, Vol. 73, International Studies in Sociology and Social Anthropology. pp. 139–152.
Jones, Constance A.; Ryan, James D. (২০০৭a)। "Ananda Marga Yoga Society"। Encyclopedia of Hinduism। Encyclopedia of World Religions. J. Gordon Melton, Series Editor। New York: Facts On File। পৃষ্ঠা 30–31। আইএসবিএন978-0-8160-5458-9। Archived from the original on ২০২২-১০-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
Jones, Constance A.; Ryan, James D. (২০০৭b)। "Sri Anandamurti"। Encyclopedia of Hinduism। Encyclopedia of World Religions. J. Gordon Melton, Series Editor। New York: Facts On File। পৃষ্ঠা 34–35। আইএসবিএন978-0-8160-5458-9। Archived from the original on ২০২২-১০-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
Maggipinto, Antonello (২০০০), "Multilanguage Acquisition, New Technologies, Education and Global Citizenship", American Association for Italian Studies, Academic journal article from Italian Culture, 18–2, New York: AAIS, পৃষ্ঠা 147, ৩ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Anandamurti, Shrii Shrii (১৯৫৯)। Tantra and its Effect on Society। Bhagalpur: Ananda Marga Pubs।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Dharmavedananda, Ác. (১৯৯৯)। Travel with the Mystic Master। Singapore: Ananda Marga Publications। আইএসবিএন981-04-0864-1।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)