আনারকলি (উর্দু: انارکلی অনারকলী; অর্থঃ-দাড়িম্ব কুঁড়ি}}), ইতিহাসের এক অবদ্ধ নাম। বলা হয় ষোড়শ শতাব্দির মুঘল শাহজাদা সেলিম, তথা সম্রাট জাহাঙ্গীর, তার "ওলিয়ে এহেদ" থাকাবস্থায় এই নারীর সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছু বর্ণনা অনুযায়ী আনারকলি ছিল নাদিরা বেগম বা শরফুন্নিসা নামক একজন নর্তকীর উপাধি,[১][২] যদিও পণ্ডিতেরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত ধারণ করে থাকেন.[৩][৪]
অনুমানমূলক এবং কাল্পনিক বিবরণ অনুসারে, আনারকলির সেলিমের সাথে একটি বেআইনী সম্পর্ক ছিল, যার পিতা মুঘল সম্রাট আকবর তাকে দেয়ালচাপা দিয়ে হত্যা করেছিলেন। এই চরিত্রটি বিভিন্ন সময়ে চলচ্চিত্র, বই এবং ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যে স্থান পেয়ে থাকে; ১৯৬০ সালের বলিউড চলচ্চিত্র মুঘল-ই-আজম-এ আনারকলিকে চিত্রিত করা হয়েছে, যেখানে শিল্পী মধুবালা তার চরিত্রে অভিনয় করেন।[৫]
আনারকলির কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করা হয় ইংরেজ পর্যটক এবং ব্যবসায়ী উইলিয়াম ফিঞ্চ-এর জার্নালে, যিনি ২৪ আগস্ট ১৬০৮ সালে মুঘল সাম্রাজ্য পরিদর্শন করতে এসেছিলেন।[৬]
ধারণা করা হয় যে, আনারকলি কোনো এক বণিক বহরের সাথে ইরান থেকে পাঞ্জাব অঞ্চলের লাহোরে (বর্তমান পাকিস্তান) অভিবাসিত হয়েছিলেন।[৭] কিংবদন্তি মতে, আনারকলিকে মুঘল আমলে শাহজাদা সেলিমের সাথে যিনি পরবর্তীতে (সম্রাট জাহাঙ্গীর) হয়েছিলেন অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের অপরাধে মোগল সম্রাট আকবরের নির্দেশে দুটি ইটের দালানের মধ্যখানে জীবন্ত কবরস্থ করা হয়েছিল। তবে কোনো বিশেষ প্রমাণ বা তথ্যসূত্র না থাকায় এবং আনারকলির কোনো সমাধির সন্ধান না পাওয়াতে এই ঘটনা অধিকাংশের নিকট মিথ্যা প্রতীয়মান হয়। আনারকলির উপাখ্যান আকবরনামা অথবা তুজক-ই-জাহাঙ্গীরীর কোথাও উল্লেখিত হয়নি। আনারকলির সম্বন্ধে প্রথম জানা যায় ইংরেজ পর্যটক ও বণিক উইলিয়াম ফিঞ্চের সাময়িকী থেকে, যিনি আগস্ট ২৪, ১৬০৮ সালে ভারত ভ্রমণ করেছিলেন।[৮][৯]
প্রথম সার্থক আনারকলি গল্প লেখেন ভারতীয় লেখক আব্দুল হালিম শারার, যিনি তাঁর বইয়ের প্রথম পাতায় পরিষ্কারভাবে একে কথাসাহিত্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর গল্পই পরবর্তিতে সাহিত্যে, চিত্রকলায় ও চলচ্চিত্রে বিভিন্ন সময় অভিযোজিত হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সেলিম এবং আনারকলির মধ্যে যৌন সম্পর্ক সম্পর্কে প্রাচীনতম পশ্চিমা বিবরণগুলি লেখা হয় ব্রিটিশ ভ্রমণকারী উইলিয়াম ফিঞ্চ এবং এডওয়ার্ড টেরির জার্নালে। আনারকলির মৃত্যুর ১১ বছর পর, ১৬১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিঞ্চ লাহোরে পৌঁছান, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর পক্ষ থেকে বায়নায় কেনা নীল বিক্রি করতে। তাঁর বিবরণ, যা ১৭ শতকের প্রথম দিকে ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল, সেগুলো নিম্নলিখিত তথ্য দেয়।[১০] এটি ডন শা তার মা, আকবর তার স্ত্রীদের একজন, যার সাথে সেলিমকে করতে হয়েছিল বলে জানা যায় (তার নাম ছিল ইমেক কেলে, বা পমগ্রানেট কার্নেল); যা দেখে বাদশা [আকাবর] তাকে তার মহলের একটি প্রাচীরের মধ্যে দ্রুত আটকে দেন, যেখানে সে রঞ্জিত হয় এবং রাজা [জাহাঙ্গীর] তার ভালবাসার চিহ্নস্বরূপ তার মাঝখানে পাথরের একটি দুর্দান্ত সমাধি নির্মাণের নির্দেশ দেন। চার বর্গাকার বাগানটি প্রাচীর ঘেরা, যার উপরে একটি গেট এবং বিভিন্ন কক্ষ রয়েছে। সমাধিটির উত্তলতা তিনি সোনার কাজ করে তৈরি করতে চেয়েছিলেন একটি বড় ফেয়ার জাউন্টার সহ - মাথার উপরে কক্ষ...
... এই সুন্দর স্মৃতিস্তম্ভ তাহার মাতৃ দনশাহ— আকবরের একজন দাসীর, যাহার সহিত ইহা কথিত হইয়া থাকে যে শাহ সেলিমের কিছু হইয়াছিল (তাহার নাম ইমেক কেলে কিংবা Pomgranate kernell); যাহা ঠাহর করিতে পারিয়া সম্রাট আকবর আপন মহলের এক প্রাচীর দেয়ালের ভেতর তড়িত বন্দী করিয়া রাখেন, যেখানে সে মৃত্যু বরণ করিয়াছিল। ভালোবাসার চিহ্নস্বরূপ তাহার উপরে চার বর্গাকৃতির বাগানের মাঝে বিশাল প্রাচীরঘেরা, একটি তোড়ণ ও বিভিন্ন কক্ষবিশিষ্ট প্রস্তরনির্মিত দুর্দান্ত সমাধি নির্মাণের ফরমান জারি করেন। বাদশাহ নামদার সমাধিটির উত্তলতাটিতে কবরের মস্তকের উপরে একটি বৃহৎ নৈসর্গিক যুগ্মকক্ষবিশিষ্ট স্থাপনা স্বর্ণ দিয়ে কাজ করাইবার মনোবাসনা করিয়াছিলেন... (sic) ~ উইলিয়াম ফিঞ্চ.[nb ১]
এডওয়ার্ড টেরি যিনি উইলিয়াম ফিঞ্ছের কয়েক বছর পর ভ্রমণে এসেছিলেন তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন যে সম্রাট আকবর পুত্র সেলিমকে তার প্রিয়তম স্ত্রী আনারকলির সাথে সম্পর্কের কারণে ত্যাজ্য করবার হুমকিও দিয়েছিলেন, কিন্তু মৃত্যুশয্যায় তার হুমকি ফিরিয়ে নেন।[১২][১৩] কিন্তু আনারকলি সম্রাট আকবরের স্ত্রী ছিল না। এক্ষেত্রে ইংরেজী ইতিহাস রচয়িতাদের প্রচুর ইতিহাস বিকৃতি, তথ্যস্বল্পতা এবং তথ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে অনীহা ও খামখেয়ালীর যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "nb" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="nb"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি