আনারকলির সমাধি

আনারকলির সমাধি
مقبرہ انارکلی
আনারকলির সমাধি
আনারকলির সমাধি লাহোর-এ অবস্থিত
আনারকলির সমাধি
লাহোরে অবস্থান
আনারকলির সমাধি পাকিস্তান-এ অবস্থিত
আনারকলির সমাধি
লাহোরে অবস্থান
মানচিত্র
স্থানাঙ্ক৩১°৩৪′০৩″ উত্তর ৭৪°১৮′০২″ পূর্ব / ৩১.৫৬৭৫০° উত্তর ৭৪.৩০০৫৬° পূর্ব / 31.56750; 74.30056
অবস্থানলাহোর, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
ধরনসমাধি
উপাদানইট
সম্পূর্ণতা তারিখ১৫৯৯, অথবা ১৬১৫
নিবেদিতআনারকলি


আনারকলির সমাধি ( مقبره انارکلی ) হল একটি অষ্টকোণাকৃতি ষোড়শ শতাব্দীর মুঘল স্মৃতিস্তম্ভ। এটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে অবস্থিত।

অবস্থান

[সম্পাদনা]

আনারকলির সমাধি লাহোরের পাঞ্জাব সিভিল সেক্রেটারিয়েট কমপ্লেক্সের চত্বরে অবস্থিত। এটি ব্রিটিশ আমলের মলের কাছাকাছি, লাহোরের প্রাচীরঘেরা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এই সমাধিকে এখনও টিকে থাকা প্রথমদিকের মুঘল সমাধিগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয় এবং এটি প্রাথমিক মুঘল যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন বলে বিবেচিত। [] [] বর্তমানে এই ভবনটি পাঞ্জাব সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত। []

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

সমাধিটির নির্মাণকাল ১৫৯৯ বা ১৬১৫ সালের মধ্যে বলে মনে করা হয়। []

এই সমাধি মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর তার প্রেমিকা আনারকলির জন্য নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। সমকালীন ভ্রমণ বৃত্তান্তে তার নাম উল্লেখ রয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে, সম্রাট আকবর সন্দেহ করেছিলেন যে আনারকলির সঙ্গে যুবরাজ সেলিম (পরবর্তী সম্রাট জাহাঙ্গীর)-এর সম্পর্ক রয়েছে। [] তবে আনারকলির অস্তিত্বের ঐতিহাসিক প্রমাণ সমকালীন পশ্চিমা পর্যটকদের বিবরণ ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। এই বিবরণও স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। বাকি অংশসমূহ কিছু পণ্ডিতদের অনুমান, বা পরবর্তীকালে সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে তার চরিত্রের কাল্পনিক রূপায়ণ।

শিখ সাম্রাজ্যের শাসনকালে, এই সমাধি খড়ক সিং দখল করেছিলেন। [] এরবর্তীতে এটি আরও অবমানিত হয়, যখন এটি রঞ্জিত সিং-এর সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত জেনারেল জ্যাঁ-ব্যাপটিস্ট ভেঞ্চুরার স্ত্রীর বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। [] ব্রিটিশ শাসনের সময় ১৮৪৭ সালে সমাধিটি দাপ্তরিক কার্যালয়ে রূপান্তরিত হয় এবং ১৮৫১ সালে এটি অ্যাংলিকান সেন্ট জেমস চার্চে রূপান্তরিত হয়। এই চার্চকে লাহোরের "প্রোটেস্ট্যান্ট ক্যাথেড্রাল" বলে বিবেচনা করা হতো [] ১৮৯১ সালে, গির্জার ধর্মসভাকে স্থানান্তরিত করা হয়, এবং সমাধিটিকে পাঞ্জাব রেকর্ড অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। []

সমাধিটি যখন চার্চে রূপান্তরিত হয়েছিল, তখন এর ভিতরে থাকা সমাধিফলক সরিয়ে ফেলা হয়। পরে যখন এটি আর চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি, তখন সমাধিফলকটি চার্চের পূর্বতন বেদির স্থানে স্থাপন করা হয়। তবে এটি মূল সমাধিফলকের অবস্থানে নয়।[]

স্থাপত্য

[সম্পাদনা]
আনারকলির সমাধির একটি ভিন্ন দৃশ্য

এই স্থাপনার ভিত্তি অষ্টভুজ আকৃতির। এর প্রতিটি পাশের দৈর্ঘ্য পর্যায়ক্রমে ৪৪ ফুট এবং ৩০ ফুট, এবং প্রতিটি কোণে আধা-অষ্টভুজ আকৃতির মিনার রয়েছে। স্থাপনাটি একটি দ্বিগুণ গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত, যা মুঘল যুগের প্রথম দিকের এমন গম্বুজগুলির মধ্যে অন্যতম। গম্বুজটি আটটি খিলানের ওপর স্থাপিত, যেগুলির প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১২ ফুট ৩ ইঞ্চি। []

ভবনের পার্শ্বে বড় বড় খিলান রয়েছে, যা মুঘল ঐতিহ্য অনুযায়ী একসময় খোলা ছিল। তবে এগুলি ব্রিটিশ শাসনকালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। []

বর্তমানে ভবনটি সাদা রঙের প্লাস্টারে আচ্ছাদিত। জানা যায়, একসময় এটি একটি বাগান দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল [] বর্তমানে এই ভবনটি পাঞ্জাব সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত। []

সমাধিফলক

[সম্পাদনা]
সাদা মার্বেলে তৈরি সমাধিফলকটি সূক্ষ্ম খোদাই দ্বারা সজ্জিত।

এই সাদা মার্বেলের সমাধিফলকে আল্লাহর ৯৯টি নাম নাম খোদাই করা রয়েছে। ১৯শ শতকের ঐতিহাসিকেরা এটিকে "বিশ্বের অন্যতম সেরা খোদাই করা শিল্পকর্ম" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। []

শিলালিপি
সমাধিফলকে খোদাই করা শিলালিপি
সমাধিফলকে খোদাই করা আল্লাহর ৯৯টি নাম

সমাধিফলকে আল্লাহর ৯৯টি নামের পাশাপাশি একজন ফারসি কবি সাদির একটি কবিতা খোদাই করা হয়েছে। সাদি[] গজলটি নিম্নরূপ:

آه گر من بازبینم روی یار خویش را
تا قیامت شکر گویم کردگار خویش را
আহ গর মান বাজ বিনম রুই ইয়ার খবিশ রা,
তা কিয়ামত শোকর গুইম কার্দেগার খবিশ রা
"আহ! যদি আমি আবার আমার প্রিয়জনের মুখ দেখতে পেতাম,
তাহলে পুনরুত্থান পর্যন্ত আমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতাম।"

সংরক্ষণ

[সম্পাদনা]

এই সমাধি পাঞ্জাব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিস্তম্ভগুলির তালিকাভুক্ত। []

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

[সম্পাদনা]

আনারকলি সমাধি শোয়েব মনসুরের "সুপ্রিম ইশক" গানে আনারকলির শুটিং লোকেশন হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Anarkali's Tomb"Lahore Sites। ২৫ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৬ 
  2. Khalid, Haroon (১৭ আগস্ট ২০১৮)। "Humble Origins (First 3 pages of Chapter 8)"। Imagining Lahore : the city that is, the city that was। Penguin Random House India Private Limited। আইএসবিএন 978-93-5305-199-0ওসিএলসি 1051299628 
  3. "Legend: Anarkali: myth, mystery and history"। Dawn। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৬ 
  4. "Anarkali's Tomb"Asian Historical Architecture। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৬ 
  5. Glover, William (জানুয়ারি ২০০৭)। Making Lahore Modern, Constructing and Imagining a Colonial City। Univ Of Minnesota Press। আইএসবিএন 978-0816650224 
  6. Eastwick, Edward Backhouse (১৮৮৩)। Handbook of the Punjab, Western Rajputana, Kashmir, and Upper Sindh। John Murray, Albemarle Street। 
  7. Saadi ghazal 31 line 1
  8. Pakistan Environmental Protection Agency। "Guidelines for Critical and Sensitive Areas" (পিডিএফ)। Government of Pakistan। পৃষ্ঠা 12, 47, 48। ১৪ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১৩