আনিয়া সেটি আন্ডারসন | |
---|---|
জন্ম | হার্শলম, ডেনমার্ক | ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫
জাতীয়তা | দানিশ |
মাতৃশিক্ষায়তন | কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | মহাজাগতিক ধূলিকণা, নীহারিকা ও গ্রহের উৎপত্তি বিষয়ক গবেষণা। |
পুরস্কার | ডেসকার্টস পুরস্কার ম্যাথিল্ডা পুরস্কার অ্যালান ম্যাকিনটোস পুরস্কার |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, অধ্যাপনা। |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় নীলস্ বোর ইনস্টিটিউট |
আনিয়া সেটি আন্ডারসন (জন্মঃ ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫) ডেনমার্ক-এর হার্শলমের একজন জ্যোতির্বিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার স্কুল থেকে বিখ্যাত দানিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী উফি গ্রে জর্জেনসেনের[১] কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তখন থেকেই আনিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানে উৎসাহ জাগে। তিনি কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক, ১৯৯৫ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল মহাজাগতিক ধুলিকনা এবং নক্ষত্রসমূহ। তার ডক্টরেট পরবর্তী গবেষণায় যারা অর্থ সাহায্য করেছিল তাদের মধ্যে কার্লসবার্গ প্রতিষ্ঠান অন্যতম। প্রথমদিকে উপ্পাসলা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং নভোবিজ্ঞান বিভাগে তিনি তার গবেষণার কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান শাখার মানমন্দিরে তিনি তার গবেষণার কাজ সম্পূর্ণ করেন। এর পরে তিনি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থসাহায্য পান এবং বিজ্ঞান অনুষদ থেকে উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষণ অনুশীলনে ডিপ্লোমা অর্জন করেন।[২] বর্তমানে তিনি তার ছোটবেলার জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্রেরণা দানকারী উফি গ্রে জর্জেনসেনের সঙ্গেই কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় রত আছেন। [১] তার তিন সন্তান আছে যাদের নাম জুলি, সিসিলি এবং জ্যাকব।
তার গবেষণার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল মহাজাগতিক ধূলিকনা; জটিল আণবিক গঠন, গ্রহ এবং নক্ষত্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ও তাদের উৎপত্তিতে এই মহাজাগতিক ধূলিকণার অবদান। [৩] তিনি বর্তমানে কোপেনহেগেনে অবস্থিত নীলস্ বোর ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালনা সমিতির সদস্য। এই প্রতিষ্ঠানেরই অন্তর্গত মহাবিশ্বতত্ত্ব কেন্দ্রে (ডার্ক কসমোলজি সেন্টার) তিনি গবেষণায় লিপ্ত আছেন। পদার্থবিদ্যায় তার কার্যক্ষেত্র সম্পর্কীয় বহু গবেষণাপত্র তিনি প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি বহু বই রচনা করেছেন। তার গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম সেরা প্রভাষক হিসাবে পরিচিত। আনিয়া সেটি আন্ডারসনের গবেষণা শুধুমাত্র পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই বরং রসায়ন, ভুতত্ত্ব এবং জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার আছে। উল্কাপিণ্ড থেকে পাওয়া প্রাক-সৌরমণ্ডলীয় ধুলিকনা ছিল তার প্রথম গবেষণার বিষয়বস্তু। ২০০৩ সালে সুসান হোফনারের সাথে তার গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে বিশেষ এ বি জি শ্রেনির নক্ষত্রের ভর হ্রাস পাওয়ার পরিমান নির্ধারণের জন্য ধুলিকনার আণবিক গঠনের বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুর ধুলিকনার গতিপ্রকৃতি ও প্রভাব বোঝার জন্য হোফনারের সঙ্গে তিনি তার গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। মহাজাগতিক ধুলিকনাসমূহ যখন কোন নক্ষত্র থেকে বিছিন্ন হয়ে মহাবিশ্বে বিচরন করতে শুরু করে তখন তার আলোকীয় ধর্মের কিরূপ পরিবর্তন ঘটে এই বিষয়ে গবেষণা করার জন্য তিনি উপ্পাসলার গবেষকদের সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেন। [৪] গ্রহের গঠনে মহাজাগতিক ধূলিকণার অবদান বিষয়ে গবেষণা করার সাথে সাথে তিনি অ্যামিনো অ্যাসিড ও শর্করা জাতীয় উপাদানের মাধ্যমে কীভাবে পৃথিবীতে প্রানের উৎপত্তি হয়েছে এই বিষয়েও গবেষণা করেছিলেন। [৩] তার কাজ করার পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত স্বতন্ত্র এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ। একবার তার সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, তার বেশিরভাগ সময় ব্যতীত হয় গবেষণাগারে, যেখানে তিনি উল্কাপিণ্ডের রাসায়নিক গঠন পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত থাকেন যার সাহায্যে সৌরজগৎ উৎপত্তির রহস্যে আলোকপাত করা সম্ভব। [৫]
তিনি একজন লেখক হিসাবেও সুপরিচিত, সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সম্প্রচার করার জন্য ডেন পিটার ক্লাউসেনের সাথে বহু বই রচনা করেছেন। [৬] তিনি মনে করেন যে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক গবেষণা সম্পরকে ওয়াকিবহাল রাখা অত্যন্ত জরুরী।[৫] তিনি শিশু ও অল্পবয়স্কদের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক বই রচনা করেছেন। তিনি বিজ্ঞানের গবেষণায় গুরত্বপূর্ণ পদে মহিলাদের নিয়োগ ও সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে সচেতনতার প্রচার করেছেন। ২০০৭ সালে তার এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন যে, মহিলা হিসাবে শীর্ষ পদে নির্বাচিত হয়ে তিনি তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে পিছপা হবেননা। [৭] মহাজাগতিক ধুলিকনা, কৃষ্ণ বস্তু (ডার্ক ম্যাটার) এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার গবেষণা নিয়ে একটি শিক্ষামূলক ভিডিও প্রকাশ করেছেন। [৮][৯] তার নামে একটি গ্রহের নামকরন হয়েছে ৮৮২০-আন্ডারসন।[১০]
বর্তমানে তিনি ডেনমার্কের বিশিষ্ট মহিলা পদার্থবিদ হিসাবে পরিচিত।[১১] এবং নর্ডিক ইন্সিটিউট সহ আরও সম্মানীয় প্রতিস্থানের সঙ্গে যুক্ত। [১২]