গ্রেট এশিয়ান হাইওয়ে নামে পরিচিত আন্তঃএশিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা বা এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক (এএইচ) এশিয়া ও ইউরোপের দেশসমূহ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (ইউএন-এসক্যাপ) এর একটি সহযোগী প্রকল্প। এর উদ্দেশ্য ছিল এশিয়ার মহাসড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন। এটি এশিয়ান ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট (এএলটিআইডি) প্রকল্পের তিনটি স্তম্ভের একটি, এটি ১৯৯২ সালে এসক্যাপ কমিশনের ৪৮তম অধিবেশনে অনুমোদিত হয়, এশিয়ান হাইওয়ে, আন্তঃএশিয়া রেল যোগাযোগ প্রকল্প বা ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) এবং ভূপরিস্থ পরিবহন ব্যবস্থা প্রকল্পের সুবিধা সমন্বয়ে এটি প্রণয়ন করা হয়।
মহাদেশ অতিক্রম করে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত মহাসড়কটি অনুমোদন করতে ৩২ টি দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করে। হাইওয়ে প্রকল্পে অংশ নেওয়া কয়েকটি দেশ হ'ল ভারত (লুক-ইস্ট সংযোগ প্রকল্প), শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, চীন, ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশ।[১] বেশিরভাগ তহবিল জাপান, ভারত, নেপাল, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীন পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আসে।
তবে, ২০০০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে কিছু পরিবহন বিশেষজ্ঞ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উভয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেন।[১]
আন্তঃএশিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ২ টি প্রকল্প গ্রহণ করতে চলেছে, একটি হলো এএইচ ৪৫ এবং অন্যটি হলো নতুন এএইচ ৪৫এ। টোঙ্গুয়া থেকে সানা পর্যন্ত পুরো এশিয়া জুড়ে ৪৫এ হলো নতুন হাইওয়ে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (ইউএন-এসক্যাপ) ১৯৫৯ সালে এ বিষয়ে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে (১৯৬০–১৯৭০) প্রকল্পটি যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করে, তবে ১৯৭৫ সালে আর্থিক সহায়তা স্থগিত হলে অগ্রগতি হ্রাস পায়।
এসক্যাপ ১৯৯২ সালে এএলটিআইডি এর অনুমোদনের পরে পর্যায়ক্রমে এএইচ সদস্য দেশগুলির সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প পরিচালনা করেছে।
এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের (আইজিএ) আন্তঃসরকার চুক্তিটি ১৮ নভেম্বর, ২০০৩ সালে আন্তঃসরকার সভায় গৃহীত হয়; আইজিএ-তে অ্যানেক্স-এক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা প্রায় ১৪০,০০০ কিলোমিটার (৮৭,৫০০ মাইল), এবং এবং অ্যানেক্স-দুই "শ্রেণিবদ্ধতা এবং নকশার মান" হিসাবে ৩২ সদস্য দেশগুলির মধ্যে ৫৫ এএইচ সড়ক শনাক্ত করে। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে চীনের সাংহাইয়ে এসক্যাপ কমিশনের ৬০ তম অধিবেশনের সময়, আইজিএ চুক্তিটি ২৩ টি দেশ স্বাক্ষর করে। ২০১৩ সালের মধ্যে ২৯ টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করে।[২]
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যক্তিগত যোগাযোগ, প্রকল্পের মূলধন, পরিবহন পয়েন্টগুলির সাথে বড় কনটেইনার টার্মিনালের সংযোগ এবং নতুন সড়কপথ দিয়ে পর্যটন উন্নয়ন সহ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বৃহত্তর বাণিজ্য ও সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া সরবরাহ করবে।[১]
ওম প্রকাশের মতে, "এসক্যাপ কর্তৃক এশীয় সমস্ত দেশকে এক মুকুটের অধীনে জড়ো করার জন্য এটি একটি দুর্দান্ত পদক্ষেপ তবে এই প্রকল্পের সমস্যা হলো কয়েকটি দেশের বিশেষত পাকিস্তান এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকল্পটি বিলম্বিত করছে"।
রুট এএইচ১ টোকিও থেকে উভয় কোরিয়া, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব, মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইস্তাম্বুল এবং এডির্নের পশ্চিমে বুলগেরিয়ার সীমানা পর্যন্ত প্রসারিত হওয়ার কথা। করিডোরটি পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ, ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সংযোগের উন্নতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রুটটি সম্পূর্ণ করতে বিদ্যমান রাস্তাগুলির উন্নয়ন করা হবে এবং নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য নতুন রাস্তা তৈরি করা হবে। ২০০৭ সালের হিসাব মতে ২৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় বা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, সাথে ২৬,০০০ কিলোমিটার হাইওয়ের উন্নতি এবং উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত ১৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার প্রয়োজন।[৩]
প্রকল্পের নতুন হাইওয়ে রুটের নম্বরগুলি "এশিয়ান হাইওয়ে" এর জন্য "এএইচ" দিয়ে শুরু হয়, তার পরে এক, দুই বা তিন অঙ্ক বিশিষ্ট সংখ্যা হয়।[৪] ১ থেকে ৯ এর একক-অঙ্কের রুট নম্বরগুলি প্রধান আন্তঃএশিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থার রুটগুলিতে প্রধান করা হয় যা একাধিক উপঅঞ্চল অতিক্রম করে।[৪] দুই এবং তিন-অঙ্কের রুট নম্বরগুলি প্রতিবেশী অঞ্চলগুলিতে সংযুক্ত এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে স্ব-অন্তর্ভুক্ত হাইওয়ে রুটগুলি সহ উপঅঞ্চলের অভ্যন্তরের রুটগুলি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।[৪] রুট নম্বরগুলি লাতিন লিপি এবং হিন্দি-আরবি সংখ্যায় মুদ্রিত এবং ই-রোড নেটওয়ার্কের মতো বিদ্যমান চিহ্নগুলিতে কেবল যোগ করা যেতে পারে।[৪]
সংকেতগুলির আসল নকশা মানক করা হয়নি, কেবলমাত্র অক্ষর এবং অঙ্কগুলি সাদা বা কালো রঙের হয় তবে সংকেতের রঙ, আকার এবং আকৃতি সম্পূর্ণ নমনীয়। বেশিরভাগ উদাহরণগুলিতে একটি নীল আয়তক্ষেত্রাকার ঢাল রয়েছে যাতে সাদা রঙে লেখা (জার্মান অটোবাহন সংকেতের অনুরূপ) সহ সবুজ আয়তক্ষেত্রাকার ঢালের উপর সাদা এবং সাদা আয়তক্ষেত্রাকার ঢালের উপর কালো লেখার আরও উদাহরণ রয়েছে।[১][৪][৫]
নতুন আন্তঃএশিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিসরের (পূর্ব থেকে পশ্চিম) ২০০৭ সালে ব্রিটেনস রিচার্ড মেরিডিথ এবং ফিল কলি একটি অ্যাসটন মার্টিন চালিয়ে যান, এটিকেই প্রথম গাড়ি পারাপার বলে মনে করা হয়।
এএইচ১ এবং এএচ৫ অনুসরণ করে টোকিও (হাইওয়ে গ্রিডের পূর্ব দিকে সবচেয়ে দূরের) থেকে ইস্তাম্বুল (সবচেয়ে পশ্চিমে) পর্যন্ত তারা ইউরোপীয় মোটরওয়ে নেটওয়ার্কে যোগ দেওয়ার জন্য লন্ডনের পথে আরও ৩২৫৯ কিমি (২০২৫ মাইল) পাড়ি দেওয়ার আগে তারা মোট ১২০৮৯ কিমি (৭৫১২ মাইল) পথ অতিক্রম করেন।
ফেরি ভ্রমণ এবং শুল্ক ছাড়পত্রের বিলম্ব সহ যাত্রাপথটি সম্পন্ন করতে ৪৯ দিন সময় নিয়েছেন এবং ১৮ টি দেশ অতিক্রম করেছেন।
সমাপ্ত রুটটি অ্যাসটন মার্টিন[৬] এবং ব্যাঙ্ককে অবস্থিত জাতিসংঘের এশীয় কমিশন (ইউএনইএসসিএপি) দ্বারা যাচাই করা হয়েছিল, এর পরিবহন ও পর্যটন পরিচালক ব্যারি কেবল নিশ্চিত করেছেন "আমি নিশ্চিত যে, আমার জানা মতে এটি প্রথম গাড়ি যা এটি অতিক্রম করেছে"।[৭][৮]
লন্ডনে অবস্থিত ইউরোওয়াচ স্যাটেলাইট থেকে অবস্থানের প্রতিবেদন থেকে গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করে এবং পুরো যাত্রা জুড়ে গাড়ির অবস্থান প্লট করে স্বাধীনভাবে নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।[৯][১০]
দূরপাল্লার রেসিং ইভেন্টের একজন অভিজ্ঞ ও ভ্রমণ সাহিত্য লেখক মেরিডিথ ৪ জুলাই, ২০০৫-এ ব্যাংককে এশিয়ান হাইওয়ে চুক্তির "কার্যকর হওয়া" অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরে এই প্রচেষ্টাটি চালাতে সম্মত হন।
তাকে অ্যাস্টন মার্টিন ভি৮ ভ্যানটেজ দেওয়া হয় যা এর আগে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ডাঃ উলরিচ বেজের ব্যক্তিগত পরিবহন ছিল এবং দক্ষিণ লন্ডনের কেনিংটনের ভাষাবিদ ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ ফিল কলিকে তার সহ-চালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সংস্থাটি গাড়িটিকে টোকিওতে পাঠিয়ে দেয় এবং তারা ২৫ শে জুন যাত্রা শুরু করে।[১১]
যদিও ইউএনইএসসিএপি তার সদস্য দেশগুলির মাধ্যমে এই সফরটি সহজতর করেছিল, তবুও চীনে বলবত অবরুদ্ধকরণ এবং অন্তর্বর্তী শুল্ক ছাড়পত্র বিলম্ব, কাজাখস্তানের গর্তময় রাস্তা এবং উজবেকিস্তানে জ্বালানীসমস্যা সহ আরও অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়।[১২] জর্জিয়ার তিবিলিসিতে হ্যান্ডব্রেকটি অনিরাপদ অবস্থায় পাহাড়ের পাশে ছেড়ে যাওয়ার পরে ট্র্যাভেল কারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল।
রেকর্ড গড়ার পর গাড়িটি ফিরে এলে[১৩][১৪] লন্ডনের পার্ক লেন হোটেলে অ্যাসটন মার্টিন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং পরবর্তীতে মেরিডিথ তার নিজ শহর মিল্টন কেনেস থেকে নাগরিক পুরস্কার পান।[১৫][১৬][১৭]
গাড়িটি ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে বোনহামস নিলামে বিক্রি করা হয়[১৮][১৯] এবং এই অর্থ জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা, ইউনিসেফকে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের মার্চ মাসে বেইজিংয়ের রাস্তায় শিশু মৃত্যু কমানোর অভিযানের জন্য ইউনিসেফ চীনকে সংগ্রহিত মোট ৮৩,০০০ ইউরো সহায়তা দেয়।[২০]
পরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থাটির মোট দূরত্ব ১,৪০,৪৭৯ কিলোমিটার (৮৭,২৯০ মা).
দেশ | দূরত্ব কিলোমিটারে (মাইল) |
---|---|
আফগানিস্তান | ৪,২৪৭ কিমি (২,৬৩৯ মা) |
আর্মেনিয়া | ৯৫৮ কিমি (৫৯৫ মা) |
আজারবাইজান | ১,৪৪২ কিমি (৮৯৬ মা) |
বাংলাদেশ | ১,৮০৪ কিমি (১,১২১ মা) |
ভুটান | ১ কিমি (০.৬২ মা) |
কম্বোডিয়া | ১,৩৩৯ কিমি (৮৩২ মা) |
গণচীন | ২৫,৫৭৯ কিমি (১৫,৮৯৪ মা) |
উত্তর কোরিয়া | ১,৩২০ কিমি (৮২০ মা) |
জর্জিয়া | ১,১৫৪ কিমি (৭১৭ মা) |
হংকং | ৯১ কিমি (৫৭ মা) |
ভারত | ২৭,৯৮৭ কিমি (১৭,৩৯০ মা) |
ইন্দোনেশিয়া | ০৩,৯৮৯ কিমি (২,৪৭৯ মা) |
ইরান | ১১,১৫২ কিমি (৬,৯৩০ মা) |
জাপান | ১,২০০ কিমি (৭৫০ মা) |
কাজাখস্তান | ১৩,১৮৯ কিমি (৮,১৯৫ মা) |
কিরগিজিস্তান | ১,৬৯৫ কিমি (১,০৫৩ মা) |
লাওস | ২,২৯৭ কিমি (১,৪২৭ মা) |
মালয়েশিয়া | ৪,০০৬ কিমি (২,৪৮৯ মা) |
মঙ্গোলিয়া | ৪,২৮৬ কিমি (২,৬৬৩ মা) |
মিয়ানমার | ৩,০০৩ কিমি (১,৮৬৬ মা) |
নেপাল | ১,৩২১ কিমি (৮২১ মা) |
পাকিস্তান | ৫,৩৭৭ কিমি (৩,৩৪১ মা) |
ফিলিপাইন | ৩,৫১৭ কিমি (২,১৮৫ মা) |
প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া | ৯০৭ কিমি (৫৬৪ মা) |
রাশিয়া | ১৬,৮৬৯ কিমি (১০,৪৮২ মা) |
সিঙ্গাপুর | ১৯ কিমি (১২ মা) |
শ্রীলঙ্কা | ৬৫০ কিমি (৪০০ মা) |
তাজিকিস্তান | ১,৯২৫ কিমি (১,১৯৬ মা) |
থাইল্যান্ড | ৫,১১২ কিমি (৩,১৭৬ মা) |
তুরস্ক | ৫,২৫৪ কিমি (৩,২৬৫ মা) |
তুর্কমেনিস্তান | ২,২০৪ কিমি (১,৩৭০ মা) |
উজবেকিস্তান | ২,৯৬৬ কিমি (১,৮৪৩ মা) |
ভিয়েতনাম | ২,৬৭৮ কিমি (১,৬৬৪ মা) |