আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা বা ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (সংক্ষেপে আইসিপিসি) সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। আইসিপিসির নির্বাহী পরিচালক এবং বেইলর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. উইলিয়াম বি. পাউচার এই প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেন। আইসিপিসির সদর দপ্তর বেইলর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত এবং ছয়টি মহাদেশে এর স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল রয়েছে। ছয়টি মহাদেশে পৃথক প্রতিযোগিতার শীর্ষ প্রতিযোগিদের নিয়ে ফাইনাল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের আইসিপিসিতে ১১০ টি দেশের ৩,২৩৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২,৭০৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিল।
আইসিপিসি ফাউন্ডেশন এই প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং আইসিপিসি নীতি ও পদ্ধতি অনুসারে আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয় এবং অলাভজনক কিছু সংস্থার সাথে চুক্তির অধীনে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি (এসিএম) এর পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হতো এবং এটিকে এসিএম-আইসিপিসি হিসাবে উল্লেখ করা হতো।
আইসিপিসি বা আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অতিরিক্ত পাঠ্যক্রমিক ও প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং খেলা। আইসিপিসি প্রতিযোগিতা প্রতিভাধর শিক্ষার্থীদের তাদের টিমওয়ার্ক, প্রোগ্রামিং এবং সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ায় তাদের দক্ষতা প্রদর্শন ও অর্জন করার সুযোগ প্রদান করে।
আইসিপিসি দলীয় প্রতিযোগিতা। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দলে ৩ জন করে সদস্য থাকে। প্রতিযোগীদের অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা ছাত্রী হতে হবে, যারা প্রতিযোগিতার পূর্বে পাঁচ বছরের কম সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করেছে। যেসব প্রতিযোগী ইতিপূর্বে দু'বার ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অথবা পাঁচবার আঞ্চলিক ফাইনালে অংশগ্রহণ করেছে তারা পুনরায় প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারে না।[১][২]
প্রতিযোগিতার সময় প্রতিটি দলকে ৮ থেকে ১১টি সমস্যা দেয়া হয় (আঞ্চলিকে সাধারণত ৮টি এবং ফাইনালে ১০টি), যা ৫ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে সমাধান করতে হয়। এ সমস্যাগুলোর সমাধান সি, সি++ অথবা জাভার প্রোগ্রাম হিসেবে জমা দিতে হয়। প্রোগ্রামগুলো কিছু পরীক্ষামূলক ডাটা দ্বারা চালানো হয়। কোন প্রোগ্রাম সঠিক সমাধান দিতে ব্যর্থ হলে জমাদানকারী দলকে তা অবহিত করা হয় এবং তারা ভিন্ন সমাধান জমা দিতে পারে।
সর্বাধিকসংখ্যক সমস্যা সমাধানকারী দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। একাধিক দল সমান সংখ্যক সমস্যা সমাধান করলে তাদের মধ্যে রাংক নির্ধারণ করা হয়। এই রাংকিং এ কোন দলের স্থান নিম্নরূপে নির্ধারণ করা হয়: প্রতিটি সঠিক সমাধান জমা দেয়ার সময়ের যোগফল এবং প্রতিটি ভুল সমাধান জমা দেবার জন্যে (যাদের সঠিক সমাধান পরবর্তীকালে জমা দেয়া হয়েছে) ২০ মিনিট অতিরিক্ত গণনা করা হয়।
বছর | প্রতিষ্ঠান | দেশ |
---|---|---|
২০২২ | ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি | যুক্তরাষ্ট্র |
২০১৮ | মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় | রাশিয়া [৩] |
২০১৭ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেকানিক্স অ্যান্ড অপটিক্স | রাশিয়া |
২০১৬ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় | রাশিয়া |
২০১৫ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেকানিক্স অ্যান্ড অপটিক্স | রাশিয়া |
২০১৪ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় | রাশিয়া |
২০১৩ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেকানিক্স অ্যান্ড অপটিক্স | রাশিয়া |
২০১২ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেকানিক্স অ্যান্ড অপটিক্স | রাশিয়া |
২০১১ | চচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় | চীন |
২০১০ | সাংহাই জিয়ো টং বিশ্ববিদ্যালয় | চীন |
২০০৯ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেকানিক্স অ্যান্ড অপটিক্স | রাশিয়া |
২০০৮ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেকানিক্স অ্যান্ড অপটিক্স | রাশিয়া |
২০০৭ | ওয়ারস বিশ্ববিদ্যালয় | পোল্যান্ড |
২০০৬ | সারাটভ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় | রাশিয়া |
২০০৫ | সাংহাই জিয়ো টং বিশ্ববিদ্যালয় | চীন |
২০০৪ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেকানিক্স অ্যান্ড অপটিক্স | রাশিয়া |
২০০৩ | ওয়ারস বিশ্ববিদ্যালয় | পোল্যান্ড |
২০০২ | সাংহাই জিয়ো টং বিশ্ববিদ্যালয় | চীন |
২০০১ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় | রাশিয়া |
২০০০ | সেইন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় | রাশিয়া |
১৯৯৯ | ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় | কানাডা |
১৯৯৮ | চার্লস বিশ্ববিদ্যালয় | চেক প্রজাতন্ত্র |
১৯৯৭ | হার্ভে মাড কলেজ | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৯৬ | ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৯৫ | আলবার্ট লুডউইগ বিশ্ববিদ্যালয় | জার্মানি |
১৯৯৪ | ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় | কানাডা |
১৯৯৩ | হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৯২ | ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় | অস্ট্রেলিয়া |
১৯৯১ | স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৯০ | ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় | নিউজিল্যান্ড |
১৯৮৯ | ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮৮ | ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮৭ | স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮৬ | ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮৫ | স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮৪ | জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮৩ | নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮২ | বেইলোর বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮১ | মিসৌরি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮০ | ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ইন সেন্ট লুইস | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৮৯ | ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ইন সেন্ট লুইস | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৭৮ | ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি | যুক্তরাষ্ট্র |
১৯৭৭ | মিশিগান রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় | যুক্তরাষ্ট্র |
এসিএম আইসিপিসি ২০১৮ (এশিয়া ওয়েস্ট সাবকন্টিনেন্ট কনটেস্ট) ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির নিজস্ব ক্যাম্পাসে আয়োজিত হয়।[৪] এই রিজিওনাল কনটেস্টে জিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম রানার আপ হয় বুয়েট এবং দ্বিতীয় রানার আপ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।[৫]
২০২২ সালের আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ৪৫ তম আসরের আয়োজক দেশ হিসেবে ৮ মার্চ ২০২২ এ বাংলাদেশের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এ আসরের মূল আয়োজক বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, আন্তর্জাতিক আয়োজক আইসিপিসি ফাউন্ডেশন, অ্যাকাডেমিক হোস্ট ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এবং সহ আয়োজক বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। দক্ষিণ এশিয়ায় চীন, জাপান এবং থাইল্যান্ডের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতার আয়োজক হিসেবে কাজ করে। [৬][৭] ঢাকাতে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় ১৩৭ টি ইউনিভার্সিটি ৬৯ টি দেশ থেকে নির্বাচিত হয়ে ফাইনাল রাউন্ডে অংশ নেয় এবং কম সময়ে সর্বোচ্চ (১২টির মধ্যে ১১ টি) সমস্যা সমাধান করে ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT) প্রথম স্থান অধিকার করে গোল্ডেন মেডেল নিশ্চিত করে। [১]
সাবেক অনেক আইসিপিসি অংশগ্রহণকারীরই সফটওয়ার শিল্প ও গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ফেসবুকের সাবেক সিটিও এবং কোরার প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডাম ডি'অ্যাঙ্গেলো, টেলিগ্রাম মেসেঞ্জারের সহ-উদ্যোক্তা নিকোলাই ডুরভ, অ্যাপাচি স্পার্কের নির্মাতা মেটিআই যাহেইরিয়া, জ্যাপোজ এর সিইও ও বিনিয়োগকারী টনি শেই এবং গুগল এর প্রথম কর্মকর্তা ক্রেইগ সিলভারস্টাইন।