হাউস্টনের একটি বিমানবন্দরের আকাশ থেকে ধারণকৃত ছবি।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমস এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সুবিধা সম্পন্ন একটি বিমানবন্দর, যা দেশগুলোর মধ্যে ভ্রমণ বা যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের সহায়তা করে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাধারণত অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের তুলনায় বড় হয় এবং যাতে প্রায়শ দৈর্ঘ্য রানওয়ে থাকে এবং সাধারণত আন্তর্জাতিক ও মহাদেশীয় ভ্রমণের জন্য ভারী এয়ার ক্রাফট উঠানামার সুবিধা থাকে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলি প্রায়শই অভ্যন্তরীণ বিমানগুলিও নিয়ন্ত্রণ করে।
বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে যখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমানগুলোর জন্য অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেছিল, তখন থেকে ভবন, কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা ক্রমবর্ধভাবে অত্যাধুনিক হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সামঞ্জস্য প্রদানের জন্য নিরাপত্তা ও সাধারণ কোডিং সিস্টেমগুলো নিশ্চিত করার জন্য বিস্তারিত প্রযুক্তিগত মান উন্নত করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিগত যাত্রী এবং ফ্লাইট পরিবেশন করে এমন শারীরিক কাঠামো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে জটিল এবং আবদ্ধ। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে, বিশ্বে ১,২০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল এবং বছরে প্রায় দুশো কোটি আন্তর্জাতিক যাত্রী এবং তার সাথে ৫০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য বহন করেছে।
১৯১৯ সালে, ইংল্যান্ডের লন্ডনে হউনস্লো হিথ বিমানঘাঁটি ছিল প্রথম বিমানবন্দর যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক পরিসেবা প্রদানের জন্য নির্ধারিত ছিল। ১৯২০ সালের মার্চ মাসে এটি বন্ধ এবং ক্রয়েডন বিমানবন্দর দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়েছিল।[১][২] ১৯২৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ডগলাস পৌর বিমানবন্দরটি আমেরিকার প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।[৩]
বিমানবন্দরগুলোর নামকরণের অন্যতম সাধারণ উৎস হল টপোনিমি। তাদের নিকটবর্তী বেশ কয়েকটি অঞ্চল তাদের নাম ধার দেয়, যার মধ্যে রয়েছে, গ্রাম, এস্টেট, শহর, জেলা, ঐতিহাসিক এলাকা ও অঞ্চল, দ্বীপপুঞ্জ এমনকি জলপ্রপাত। ক্যাটরাতস ডেল ইগুয়াসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ফোজ দো ইগুয়াসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম আর্জেন্টিনার ইগুয়াসু জলপ্রপাতের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। দোমোদেদোভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম দোমোদেদোভো শহরের নাম থেকে এসেছে। কখনও কখনও টপোনামটি একত্রিত করা হয় বা নাম পরিবর্তন করে অন্য উৎস থেকে অন্য নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেমন নিচের যেকোনো একটি থেকে:
ক্রীড়াবিদ, লুইসভ্যালি মুহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
এভিয়েটর, পাইলট (সিভিল ও সামরিক) এবং অন্যান্য যারা বিমান চলাচলের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে। সিডনি বিমানবন্দর কিংসফোর্ট স্মিথ বিমানবন্দর নামে পরিচিত যা চার্লস কিংসফোর্ট স্মিথের নামে নামকরণ করা হয়েছে এবং চিলির কোমোডোরো আর্তুরো মেরিনো বেনেটেজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নাম আর্তুরো মেরিনো বেনেটেজের নামে রাখা হয়েছে।[৪]
সাংস্কৃতিক নেতা (কবি, লেখক, শিল্পী, গায়ক), কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরের নাম বাংলা ভাষার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে নামকরণ করা হয়েছে, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি – ফিয়ামিকিনো বিমানবন্দরটি লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নামে নামকরণ করা হয়েছে; বিটলসের সদস্য এবং লিভারপুলের স্থানীয় বাসিন্দা জন লেননের নামানুসারে লিভারপুল জন লেনন বিমানবন্দর; রিও ডি জেনিরোতে টম জোবিম বিমানবন্দরটির নামকরণ করেছে সুরকার আন্তোনিও কার্লোস জোবিম এর নামে; লাজ আর্মস্ট্রং নিউ অরলিন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, জাজ সংগীতশিল্পী লুই আর্মস্ট্রংয়ের নামে নামকরণ হয়েছে; ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা আনার জন ওয়েইন বিমানবন্দরটির নাম অভিনেতা জন ওয়েনের নামে; ক্যালিফোর্নিয়ার বারব্যাঙ্কের বব হোপ বিমানবন্দরটি কৌতুক অভিনেতা বব হোপের নামে নামকরণ করেছে। ভ্যাক্লাভ হাভেল বিমানবন্দর প্রাগ এর নাম লেখক/দার্শনিক/রাজনীতিবিদ ভ্যাক্লাভ হ্যাভেলের নামানুসারে হয়েছে।
জাতিগত গ্রুপ, ইন্দোনেশিয়ার পাদাংয়ের মিনাঙ্গাকাব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম মিনাঙ্গাকাব জাতিগোষ্ঠীর থেকে নামকরণ করা হয়েছে।
আদর্শ, শীর্ষস্থানীয় টপোনামের সাথে সমন্বয়, যেমন নিউক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
পূরান ও ধর্ম, রুপকথা বা পৌরাণিক কাহিনীর বীর, ধর্মীয় নেতা, ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে নামকরণ করা হয়; যেমন কিরঘিস্তানের মানাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম হয়েছে কিরঘিজ জাতীয় মহাকাব্যের মানাস চরিত্র থেকে।[৫]
রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রীয় ব্যক্তি, রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, দলীয় নেতার নামে নামকরণ করা হয়। যেমন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের ডাক নামে নামকরণ করা হয়েছিল। নিউইর্য়কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম রাষ্ট্রপতির নামানুসারে করা হয়েছে। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নামের করা হয়েছে। জার্কাতার সুকর্ণ হাত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি সুকর্ণ ও হাত্তার নাম একত্রিত করে করা হয়েছে।
জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, (উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ক্রীড়াব্যক্তিত্ব) যেমন জর্জ বেস্ট বেলফাস্ট সিটি বিমানবন্দর, ফুটবলার জর্জ বেস্টের নামানুসারে করা হয়েছে, যে এই শহরের বাসিন্দা ছিল।
রাজকীয় রাজা বা বাদশাদের নামানুসারে যেমন কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
বিজ্ঞানী যেমন বোলোনা গুগলিয়েলমো মার্কোনি বিমানবন্দর, গুগলিয়েলমো মার্কোনি নামানুসারে[৬] এবং বেলগ্রেড নিকোলা টেসলা বিমানবন্দরের নাম নিকোলা টেসলার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বিশ্বের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর ৪৪ শতাংশ টপোনেমি অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে, এর মধ্যে; রাজনীতিবিদ (ত্রিশ শতাংশ), বিমানবিদ (সাত শতাংশ), পৌরাণিক কাহিনী ও ধর্ম (তিন শতাংশ), জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব (দুই শতাংশ), বিজ্ঞানী (দুই শতাংশ) এবং অন্যান্য (এক শতাংশ)।[৭]
বিমানবন্দরগুলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম সংক্ষেপে প্রকাশ করতে আইএটিএ-৩ সংখ্যার কোড ব্যবহার করে।
↑Bluffield, Robert (২০০৯)। Imperial Airways: the birth of the British airline industry 1914–1940। Hersham [England]: Ian Allan। আইএসবিএন978-1-906537-07-4।
↑Learmonth, Bob; Cluett, Douglas; Nash, Joanna (১৯৭৭), A history of Croydon Airport, Sutton Libraries and Arts Servicesউদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)