আপাতগ্রাহ্য একটি আইনি পরিভাষা যা দিয়ে বোঝায় যে প্রাথমিক পরীক্ষণের পরে কোনও মামলার পক্ষে যথেষ্ট পরিমাণে সমর্থক সাক্ষ্যপ্রমাণ আপাতদৃষ্টিতে বিদ্যমান। এর কিছু সমার্থক পরিভাষা হল প্রথম দর্শনে, প্রথম দৃষ্টিতে, দৃষ্টত, দৃশ্যত, আপাত, আপাতদৃষ্টিতে, আপাতদৃষ্টে, প্রাথমিক, প্রাথমিকভাবে, প্রথমলব্ধ, প্রথমলব্ধ ধারণাভিত্তিক ও তদন্তপূর্ব। "আপাতগ্রাহ্য" পরিভাষাটিকে ইংরেজিতে "প্রাইমা ফেশি" বা "প্রাইমা ফেশা" (Prima facie) নামক লাতিন পদবন্ধটি দিয়ে নির্দেশ করা হয়।
ইংরেজ প্রচলিত আইন (কমন ল) নামক আইনের এখতিয়ার বা অধিক্ষেত্রে প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ বলতে এমন সব সাক্ষ্যপ্রমাণকে বোঝায়, যেগুলিকে খণ্ডন না করা হলে কোনও প্রতিজ্ঞা বা তথ্যকে প্রমাণ করার জন্য সেগুলি যথেষ্ট হিসেবে গণ্য হবে।[১] সিংহভাগ আইনি অধিক্ষেত্রের বেশির ভাগ আইনি কার্যধারাতে একটি আপাতগ্রাহ্য মামলা বিদ্যমান থাকা আবশ্যক, যার পরে আইনি কার্যধারা শুরু হয় ও মামলাটিকে পরীক্ষা করা হয় এবং একটি সিদ্ধান্ত বা বিনির্দেশ দেয়া হয়।[১] উচ্চশিক্ষায়তনিক দর্শনশাস্ত্রেও পরিভাষাটির অনুরূপ ব্যবহার বিদ্যমান।[২]
বেশিরভাগ আইনি কার্যধারাতে একটি পক্ষের উপর প্রমাণের আইনি দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে, ফলে তাকে আবশ্যকীয়ভাবে দায়েরকৃত মামলার সমস্ত মূল তথ্যগুলির পক্ষে প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে হয়। যদি পক্ষটি তা না করতে পারে, তাহলে তার দাবি অন্য পক্ষের কোনও প্রত্যুত্তরের প্রয়োজন ছাড়াই নাকচ করা যেতে পারে।[৩] একটি আপাতগ্রাহ্য মামলা নিজ থেকে প্রতিষ্ঠিত বা নাকচ হতে পারে না। যদি কোনও বিরুদ্ধ (বিবাদী) পক্ষ অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করে বা সক্রিয়ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন (affirmative defense) করে, তাহলে কেবল একটি পূর্ণ বিচারের মাধ্যমে সেটির নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। কখনও কখনও আপাতগ্রাহ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে মামলা প্রস্তুত/নির্মাণ করা (making a case বা building a case) বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ফৌজদারি আইনের অধীনে বিচারে বিবাদীর বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে, সেই অপরাধের প্রতিটি উপাদানের জন্য আপাতগ্রাহ্য প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের দায়িত্ব বাদীর উপর বর্তায়। একটি খুনের মামলায় এই ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণের মধ্যে ভুক্তভোগী যে প্রকৃতপক্ষেই মারা গেছে, অভিযুক্ত বিবাদীর কাজের কারণেই যে সে মারা গেছে এবং বিবাদী যে বিদ্বেষপূর্ণ কাজের পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে, এসব সম্পর্কে সাক্ষ্যপ্রমাণ অন্তুর্ভুক্ত থাকতে হয়। যদি কোনও পক্ষ নতুন কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন না করে, তাহলে প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির কারণে মামলাটি হয় টিকে যায় বা নাকচ হয়ে যায়।
প্রাথমিক আপাতগ্রাহ্য সাক্ষ্যপ্রমাণের চূড়ান্ত বা অখণ্ডনীয় হবার দরকার নেই। এই ধাপে মামলার অভিযোগ খণ্ডনকারী সাক্ষ্যপ্রমাণ ধর্তব্যে নেওয়া হয় না, কেবল কোনও পক্ষের মামলা একটি পূর্ণ বিচার পাওয়ার সামর্থ্য রাখে কি না, তা বিবেচনা করা হয়।
প্রচলিত আইনের (কমন ল) এখতিয়ার বা অধিক্ষেত্রে (যেমন যুক্তরাজ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) কোনও ফৌজদারি মামলার বিচারের বাদীকে অবশ্যই সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণকে বিবাদীর কাছে উন্মোচন করতে হয়, যার মধ্যে প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণও অন্তর্ভুক্ত।
প্রাথমিক বা আপাতগ্রাহ্য সাক্ষ্যপ্রমাণের মতবাদটির একটি উদ্দেশ্য হল মামলাকারীদেরকে এমন সব মেকী বা কৃত্রিম অভিযোগ আনা থেকে বিরত করা, যেগুলির কারণে সমস্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষের সময় নষ্ট হয়।
"আপাতগ্রাহ্য" পরিভাষাটির সাথে প্রায়শই "ঘটনা নিজেই কথা বলে" (res ipsa loquitur) এই পরিভাষাটিকে গুলিয়ে ফেলা হয়। এটি প্রচলিত আইনের একটি মতবাদ, যা অনুযায়ী যখন বাস্তব তথ্যগুলি থেকে কোনও পক্ষের অবহেলা বা অন্য কোনও দায়িত্ব স্বতঃপ্রমাণিত হয়, তখন বিস্তারিত খুঁটিনাটি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, কেননা যেকোনও যুক্তিপরায়ণ ব্যক্তি মামলার অভিযোগ সম্পর্কে সাথে সাথে বাস্তব তথ্য খুঁজে পাবে।
ঘটনা নিজেই কথা বলে-র সাথে আপাতগ্রাহ্য পরিভাষাটির পার্থক্য হল এই যে আপাতগ্রাহ্য বা প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ বলতে বোঝায় যে একটি মামলা শুরু করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সাক্ষ্যপ্রমাণ যোগাড় হয়েছে। অন্যদিকে ঘটনা নিজেই কথা বলে বলতে বোঝায় যে বাস্তব তথ্যগুলি এতটাই নিশ্চিত যে বাদী পক্ষের এগুলি ব্যাখ্যা করার দরকার নেই।
কানাডীয় চুক্তি-বহির্ভূত অপরাধ (টর্ট) আইনে এই মতবাদটিকে সাধারণ অবহেলা আইনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়েছে।[৪]
"আপাতগ্রাহ্য" পরিভাষাটি উচ্চশিক্ষায়তনিক দর্শনেও ব্যবহার করা হয়। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত ডব্লিউ ডি রসের রচিত দ্য রাইট অ্যান্ড দ্য গুড শীর্ষক গ্রন্থে প্রস্তাবিত নৈতিকতার তত্ত্বটিতে এটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার করা হয়েছিল, যেখানে আপাতগ্রাহ্য কর্তব্যের নৈতিকতা ধারণাটির আলোচনা করা হয়। এছাড়া জ্ঞানতত্ত্বেও ধারণাটির ব্যবহার আছে, যেমন রবার্ট আউডি-র রচনায়। সাধারণত এটিকে কোনও অবশ্যকরণীয় কাজের প্রেক্ষিতে ব্যবহার করা হয়। যেমন বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করার ব্যাপারে কোনও ব্যক্তির জন্য আপাতগ্রাহ্যভাবে অবশ্যকরণীয় হতে পারে, কিন্তু আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বা জরুরি কর্তব্যের কারণে সেটির আবশ্যকীয়তা নাকচ হতে পারে।
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; reamer
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি