আফগানিস্তানে শিক্ষা কিন্ডারগার্টেন থেকে ১২তম শ্রেনি পরিচালনার জন্য আফগানিস্তান এর কাবুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় রয়েছে এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় রয়েছে। আফগানিস্তান এখন দেশব্যাপী পুনঃনির্মাণ এর কাজ চলছে,পিছুটান থাকার সত্বেও শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গুলো দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো নতুনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৩ নাগাদ ১০.৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থী আফগানিস্তানের স্কুল গুলোতে অংশগ্রহণ করে। দেশে জনসংখ্যা প্রায় ২৭.৫ মিলিয়ন।
কাবুলের হাবিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয় হল আফগানিস্তানের প্রাচীন্তম স্কুল গুলোর একটি, যা তৈরী হয়েছিল তৎকালীন রাজা হাবিবুল্লাহ খান এর দ্বারা এবং ১৯০৩ সাল থেকে এটি দেশের কিছু বাছাইকৃত শ্রেনির শিক্ষার্থীদের কেই শিক্ষা দিত।১৯২০ সালে, জার্মানরা আমানি উচ্চ বিদ্যালয় এর জন্য অর্থায়ন করে যা কাবুলে খোলা হয় এবং প্রায় এক দশক পরে দুইটি ফ্রান্স এর Lycée (মাধ্যমিক স্কুল) এইএফই ও Lycée Esteqlal নামে চালু করা হয়। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৩৩ এবং ১৯৭৩ সালের মধ্যে মুহাম্মদ জহির শাহ এর সময়ে শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন হয়,[১] ১২ বছরের চেয়ে কম বয়সের শিশুদের জন্য প্রথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরন এবং মাধ্যমিক ও কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় এর বিস্তৃতিকরন এর মাধ্যমে তিনি শিক্ষাকে চারিদিকে ছড়িয়ে দেন।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এর সময় পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ আফগানিস্তান (PDPA) শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে তোলে; সকল লিঙ্গের জন্য শিক্ষার জন্য জোর দেওয়া হয়। এবং সাক্ষরতার ব্যাপকতা রোধ করা হয়।[২] ১৯৭৮ সালে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় হতে ৪০% ডাক্তার এবং ৬০% শিক্ষক তাদের শিক্ষা শেষ করে। ৪৪০,০০০ ছাত্রী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং ৮০০০০ জন শিক্ষা কার্যক্রম এ ভর্তি হয়।[৩] এত উন্নতির সত্বেও দেশের বৃহৎ জনসংখা নিরক্ষর রয়ে গেছে।[১] ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের ফলে আফগানিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পুর্নরুপে ভেংগে পড়ে।[১] বেশিরভাগ শিক্ষক যুদ্ধের সময় অন্য দেশে পালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে তালিবান শাসকেরা মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করে দেয়।এবং মাদ্রাসা (মসজিদ, স্কুল) গুলো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক জ্ঞানচর্চার প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে।তালিবান দের সময়কালে প্রায় ১.২ মিলিয়ন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় যার মধ্যে মেয়েদের সংখা ছিল ৫০০০০ এর ও কম।[৪] ২০০১ সালে তালিবানদের পতনের পর কারজাই প্রশাসন শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়। ২০০৩ সালে ৩২ টির মধ্যে ২০ টি প্রদেশে ৭০০০ স্কুল পুনরায় খোলা হয় যেখানে ২৭০০০ শিক্ষক ৪.২ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করেন ( তারমধ্যে ১.২ মিলিয়ন ছাত্রী)। এই সংখার মধ্যে প্রায় ৩.৯ মিলিয়ন প্রাথমিক বিদ্যালয়। আনুমানিক ৫৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৮৬ শতাংশ নারী নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবী করে।দক্ষ ও শিক্ষিত কর্মী দেশের একটি প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যা হয়ে দাড়ায়।২০০২ সালে যখন কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় চালু করা হয় তখন ২৪০০ জন পুরুষ এবং মহিলা উচ্চ শিক্ষার জন্য এখানে ভর্তি হয়। এরই মধ্যে পাঁচটি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও পুনর্বাসিত হয়।পাবলিক স্কুল তাদের পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে, কিন্তু বিস্তারিত নির্দেশনা জন্য ধর্মীয় শিক্ষকদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
২০০৬ সালে প্রায় ৪ মিলিয়ন ছাত্র ও ছাত্রী আফগানিস্তানের বিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হয়।একই সময়ে, বিদ্যালয় এর সুযোগ সুবিধা ও লেখাপড়ার পদ্ধতির ও উন্নতি হয়। ২০০৬ সালে দ্য আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আফগানিস্তান (AUAF) কাবুলে প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও পুনঃনির্মাণ হচ্ছিল, যেমন দক্ষিণের কান্দাহার বিশ্ববিদ্যালয় নানগাহার বিশ্ববিদ্যালয় এবং পূর্বের খোষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমের হেরাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরের বালখ বিশ্ববিদ্যালয়।এই সাফল্যের সত্বেও, আফগানস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু উল্লেখযোগ্য বাধা ছিল,অনেক বিদ্যালয় অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরিকল্পিত শিক্ষাক্রম এবং স্কুল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর যথেষ্ট অর্থ ছিল না।কারণ বাজেট এর অর্থ বিদেশি সাহায্য থেকে পাওয়া যেত যার ফলে বার্ষিক বাজেট পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়ে।[৫]
আফগান মেয়েদের জন্য এই বাধাগুলো আরো বেশি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ২০০৭ সালে আফগানিস্তানের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মুহাম্মদ হানিফ আতমার বলেন ৬০% শিক্ষার্থী তাবুতে বাস করে অন্যরা অরক্ষিত অবকাঠামোতে থেকে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং কিছু অভিভাবক তাদের মেয়েদের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা থেকে দুরে রাখতে চেয়েছিল।[৫] মহিলা শিক্ষিকার অভাব ছিল অভিভাবকদের জন্য মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর আরেকটি বিশেষ সমস্যা, বিশেষ করে কিছু রক্ষণশীল এলাকায়।কিছু বাবা-মা চাইতেন না তাদের মেয়েদের কোনো শিক্ষক শিক্ষা দান করুক, কিন্তু এর থেকে বোঝা যায় যে তখন মেয়েদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়াটা গ্রহণযগ্য ছিল না, ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফার্ম কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী সে সময় আফগানের প্রায় এক চতুর্থাংশ শিক্ষক ছিলেন মহিলা।[৫] ২০০৯ সালে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় ছিল তালেবান কর্তৃক বিদ্যালয় ধ্বংস। বিশেষ করে নারীদের বিদ্যালয়। উক্ত কার্যক্রমে প্রতি বছর প্রায় ১৫০ টি বিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে যায়, এবং কিছু বাবা মা সরকারের ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে।
২০০০ সালের প্রথম দশকে নিম্নলিখিত অর্জন গুলো অর্জিত হয়।
ভর্তি কম: প্রতি প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের ভর্তির গড় হার ১৯৮৩ জন, যার মধ্যে ৩ টি প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংখা ২০০ জনেরও কম। উপরন্তু, যোগ্যতাসম্পন্ন অনুষদ সদস্যের অভাব: শুধুমাত্র ৪.৭% (৩৫২২ এর মধ্যে ১৬৬ জন) শিক্ষকের পি এইচ ডি ডিগ্রী ররয়েছে।এছাড়াও অপর্যাপ্ত সম্পদ, এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষণ কর্মীদের অভাব এবং দুর্নীতি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য প্রধান সমস্যা।
২০১০ সালে, আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লিঙ্কন লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা শুরু করে। তারা নানা ধরনের পরিবেশন যেমন: প্রোগ্রামিং প্ল্যাটফর্ম নৈবেদ্য, ইংরেজি ভাষা ক্লাস, লাইব্রেরী সুবিধা, প্রোগ্রামিং স্থানগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ, শিক্ষা এবং অন্যান্য কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করে।এই কার্যক্রম এর একটি লক্ষ ছিল আর তা হল প্রতি মাসে প্রতি যায়গা হতে ৪০০০ আফগানি নাগরিকদের শিক্ষা দান।[৬][৭]
মানব উন্নয়ন সূচক ২০১১ অনুযায়ী, আফগানিস্তান ছিল বিশ্বের স্বল্পোন্নত ১৫ দেশের একটি।
২০১১ সালের জুন মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আফগানিস্তানের শিক্ষামন্ত্রীর সংগে একটি যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষর করে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে ইউএসএআইডি এর পক্ষ থেকে শিক্ষা সম্প্রসারণ এর জন্য অর্থায়ন এর প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাঘছ-ই-সিমসিম (সেসামে স্ট্রীট এর আফগান সংস্করণ ) শিশুদের টেলিভিশন সিরিজ চালু করা হয়েছিল। এটি তৈরী করা হয় আফগানের প্রাক বিদ্যালয় এর শিশুদের শিক্ষাকে সহজ করে তোলার লক্ষে।[৮]
২০১৩ সালের মে মাসে এটি রিপোর্ট করা হয়েছিল যেখানে বলা হয় আফগানিস্তানে ১৬০০০ টি বিদ্যালয় আছে যেখানে ১০.৫ মিলিয়ন ছাত্র আছে। শিক্ষা মন্ত্রী ওয়ার্ডাক বলেন, যে ৩ মিলিয়ন শিশু শিক্ষা বঞ্চিত রয়ে গেছে এবং $৩ বিলিয়ন অর্থের জন্য অনুরোধ করেন পরবর্তি ২ বছরে অতিরিক্ত ৮০০০ বিদ্যালয় তৈরীর জন্য।
২০১৫ সালে এ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মাস্টার্স ডিগ্রী দেওয়া শুরু করা হয় জেন্ডার গবেষণায় এবং আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা শুরু হয়।
বিদ্যালয় এর সহিংসতার দিক থেকে আফগানিস্তান বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত,যেখানে ২০০৮ সালে ৬৭০ টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে বিদ্যালয়ে সহিংসতার ফলে ৫ মিলিয়ন আফগান ছাত্র বিদ্যালয় ত্যাগ করে।আফগানের মৃত্যুর হার অনুযায়ী ২০০৬-৯ এ ৪৩৯ জন শিক্ষক ও কর্মীদের মৃত্যুর সংখা জানা যায়,যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।[৯]
তালেবান শাসনের পতনের পর আফগান ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেখানের ইসলামি শিক্ষাকে অন্যান্য বিষয় এর সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করা হয়।এখনো সেখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর জন্য কোনো সঠিক পাঠ্যক্রম নেই, এবং উচ্চ শিক্ষার বই গুলোতে যথেষ্ট তথ্যের অভাব দেখা যায়।
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; NATO
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; asmp
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; AWN
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি