আফ্রিকান হাতি সময়গত পরিসীমা: আদি প্লিওসিন – বর্তমান | |
---|---|
আফ্রিকান হাতি, মিকুমি জাতীয় উদ্যান, তানজানিয়া | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | স্তন্যপায়ী |
বর্গ: | Proboscidea |
পরিবার: | Elephantidae |
গণ: | Loxodonta |
আফ্রিকান হাতির বিস্তৃতি |
আফ্রিকান হাতি (গণ: লক্সোডন্টা ইংরেজি: Loxodonta গ্রিক ভাষায় অর্থ "তেরছা দাঁত")[১] হল আফ্রিকা মহাদেশের হাতিগুলোর দুটি প্রজাতির নাম - আফ্রিকান ঝাড় হাতি (লক্সোডন্টা আফ্রিকানা) আর আফ্রিকান বন হাতি (লক্সোডন্টা সাইক্লোটিস)। লক্সোডন্টা গণের জীবাশ্ম কেবল আফ্রিকায় পাওয়া গেছে, প্লাইস্টোসিন যুগের পর্যন্ত।
আফ্রিকান ঝাড় হাতি স্থলজ প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বন হাতি হল তৃতীয় সবচেয়ে বড় প্রাণী। তাদের মোটা শরীরের তলায়স্তম্ভের মত পা আছে। অ্যালেনের তত্ত্ব অনুযায়ী উষ্ণ অঞ্চলে থাকার দরুণ আফ্রিকান হাতির কান তুলনামূলক ভাবে বড় হয়। এই কানের সাহায্যেই তারা তীব্র গরম থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে। মৃদু ভাবে কান দোলাতে দোলাতে উষ্ণ রক্ত থেকে শুষে নেওয়া তাপ বাইরে বিকিরণ করে।[২] উপরের ঠোঁট আর নাক জুড়েই শুঁড় হয়। শুঁড় এক হাতের মত কাজ করে, ধ্বনি বাড়ায়, আর স্পর্শ করতে সাহায্য় করে। আফ্রিকান হাতির শুঁড়ে দুটি ঠোঁট থাকে, আর এশীয় হাতির শুঁড়ে মাত্র একটি। ঝাড় হাতির পুরুষের উচ্চতা ৩.২-৪.০ মিটার আর ওজন ৪৭০০-৬০৪৮ কিলো আর স্ত্রীদের উচ্চতা ২.২-২.৬ মিটার অর ওজন ২১৬০-৩২৩২ কেজি[৩] বন্য হাতির উচ্চতা মাত্র ২.৫ মিটার পর্যন্ত।[৪] আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় হাতির উচ্চতার হল ৪ মিটার আর ওজন ১০,০০০ কেজি।[৫]
হাতিদের চার পেষক দাঁত থাকে; এক-একের ওজন ৫ কেজি (১১ পা) আর মাপ ৩০ সেমি (১২ ইঞ্চি)। সামনের দাঁত নষ্ট হাওয়ার পর পেছনের দাঁত এগিয়ে আসে আর পেছনে নতুন পেষক উৎপন্ন হয়। ৪০-৬০ বছরের আয়ুতে হাতির অন্তিম পেষক দাঁত হারিয়ে যায়, যার পার হাতি অনাহারে মারা যায়। এশীয় হাথীদের থেকে আফ্রিকান হাতিদের কম এনামেল প্লেট আছে।[৬]
হাতির গজদন্ত শিকড় খুঁড়তে, গাছের বাকল ছিঁড়তে, প্রজনন কালে যুদ্ধ করতে আর শিকারীদের থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়। তাদের ওজন ২৩–৪৫ কেজি (৫১–৯৯ পা) আর পরিমাণ ১.৫–২.৪ মি (৪ ফু ১১ ইঞ্চি – ৭ ফু ১০ ইঞ্চি) হতে পারে। পুরুষ আর স্ত্রী আফ্রিকান হাতিদের গজদন্ত থাকে।[৭] তারা আগের দিকে তেরছা থাকে আর সারাজীবন বাড়তে থাকে। [৮]
আফ্রিকান হাতিরা সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা [৯] , ঘন বনে, মোপানে আর মিয়োম্বো কাষ্ঠভূমি, সহিলের ঝাড় আর মরুভূমিতে পাওয়া যায়।[১০]
আফ্রিকান হাতিদের সমাজ পারিবারিক এককে বিভাজিত। একটি পারিবারিক এককে দশটি স্ত্রী হাতি আর তাদের বাছুর থাকে যাদের নেত্রিত্ব এক মাতৃশাষক করে। আলাদা পারিবারিক এককের বন্ধন হলে তাদের একটি সমূহ তৈরি হয়। বয়ঃসন্ধির পর পুরুষ হাতিরা অন্য পুরুষদের সঙ্গে মৈত্রী গঠন করে।
হাতিরা ২৫ আর ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রজনন যোগ্য থাকে। বাছুররা প্রায় ২ বছরের গর্ভকালের পর জন্মগ্রহণ করে। তাদের লালন পালন তাদের মা আর সমূহের অন্য স্ত্রীরা করে।
খাওয়ার সময় হাতিরা তাদের শুঁড় দিয়ে পাতা আর গজদন্ত দিয়ে বাকল উপড়ে খায়, হাতি গাছের জন্য ক্ষতিকর। হাতির একটি পাল এত গাছপাতা খেতে পারে যে অন্য শাকাহারী প্রাণীদের জন্য কিছুই না বাঁচে। একটি হাতি এক দিনে ৪৫০ কেজি (৯৯২ পা) খেতে পারে, কিন্তু তাদের পরিপাক তন্ত্রের দক্ষতা কম - মাত্র ৪০% খাদ্য-ই পুরোপুরি পরিপাক হয়।[১১]
আফ্রিকান হাতিরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান,[১২] আর তাদের মস্তিষ্কের নিওকর্টেক্স-টা বড় আর বেশি সংবর্ত, মানুষ, নরবানর আর কিছু ডলফিন প্রজাতির মত। তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে এক। তাদের মস্তিষ্কের ওজন ৫ কেজি, যা স্থলজ প্রাণীদের মধ্যে সব থেকে বড়। তিমি মাছের ওজন হাতির ওজনের ২০ গুণ ভারী, কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক মাত্র দুই গুণ। হাতির মস্তিষ্কের গঠন আর জটিলতা মানুষের মস্তিষ্কের সমান। হাতির সেরিব্রাল কর্টেক্স-এ মানুষের সমান স্নায়ুকোষ আছে,[১৩] যেটা অভিসারী বিবর্তনের লক্ষণ।[১৪]
হাতিরা আনেক ধরনের ব্যবহার প্রদর্শীত করে যেমনঃ শোক, শিক্ষা, পালন, অনুকরণ, শিল্প, খেলা, হাস্য়, নিঃস্বার্থতা, সরঞ্জামের ব্যবহার, দয়া, সহযোগ,[১৫] আত্ম-অবগতি, স্মৃতি, আর সম্ভবত ভাষা।[১৬] এ সব হাতির বুদ্ধিমত্তার প্রদর্শিত করে, যা তিমিগণ[১৭][১৮][১৯][২০] আর প্রাইমেটদের সমান।[২১]
আফ্রিকান হাতিরা ২০ বছর আয়ুতে যৌন দ্বিরূপতা প্রদর্শিত করে, যার কারণ পুরুষদের শীঘ্র বৃদ্ধি। ২৫ বছর পর্যন্ত পুরুষরা স্ত্রীদের দুইগুণ ওজনী। তাহলেও, হাতিরা সারাজীবন বাড়তে থাকে।
স্ত্রী হাতিরা ১০-১২ আয়ুতে প্রজনন করতে পারে।[২২] প্রজননের কনো বিশেষ সময় নেই; তাহলেও খরা কালে প্রজননের সম্ভাবনা কম। হাতির গর্ভকাল হল ২২ মাস আর স্ত্রীরা প্রতি ৩-৬ বছরে জন্ম দায়, তাহলে ৫০ বছরের জীবনে প্রায় ৭ শিশু জন্ম দায়। স্ত্রীদের জন্য পুরুষদের মধ্যে ভীষণ প্রতিদ্বন্দিতা থাকে।
বন্দিশায় হাতিদের সামাজিক ব্যবহার বনের মত। স্ত্রীরা অন্য স্ত্রীদের সাথে থাকে, আর পুরুষরা পৃথক থাকে। পুরুষ আর স্ত্রীদেরকে শুধুমাত্র প্রজননের জন্য দেখা করতে দেওয়া হয়। [২৩]
বিংশ শতাব্দিতে চোরাশিকারের কারণে আফ্রিকান হাতির সংখ্যা কিছু এলাকায় অনেক কমে গেছে। বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিল-এর অনুমানে ১৯৩০-১৯৪০ দশকেও ৩০-৫০ লাখ আফ্রিকান হাতি ছিল।[২৪] ১৯৮০-১৯৯০ ভিতরে তাদের সংখ্যা ১৩ লাখ থেকে কম হয়ে ৬ লাখ হয়ে গেল।[২৫][২৬] কেনিয়ায় ১৯৭৩ আর ১৯৮৯ মধ্যে হাতিদের সংখ্যা ৮৫% কমে গেল। চাদ-এ হাতির সংখ্যা ৪০০,০০০ থেকে কম হয়ে ২০০৬ সালে মাত্র ১০,০০০ পৌঁছেছিল। তানজানিয়ার সেলুস অভয়ারণ্যে হাতির সংখ্যা ১৯৭৬-এ ১,০৯,০০০ থেকে ২০১৩-এ ১৩,০০০ হয়ে গেল। তানজানিয়া সরকার অনুমান করে ২০০৯ আর ২০১৪ সালের মধ্যে ৮৫,০০০ হাতির শিকার হয়।[২৭]
১৯৮৯ বছরে সাইটস (বন্য প্রাণী এবং উদ্ভিদের বিপিন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্মেলন) গজদন্তের বাণিজ্য প্রতিবন্ধ করল। অনেক বড় গজদন্ত বাজার বন্ধ করা হল। তার ফলে আফ্রিকান হাতির শিকার কম হল, আর সংখ্যায় বৃদ্ধি হল। আর পরও কিছু এলাকায় চোরাশিকার একটি বড় সমস্যা।
বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিল আনুযায়ী ২০১৪ সালে আফ্রিকান হাতির সংখ্যা ৭,০০,০০০ আর এশীয় হাতির সংখ্যা ৩২,০০০। বতসোয়ানায় ২,০০,০০০ আর জিম্বাবুয়ে-এ ৮০,০০০ হাতি। রক্ষণশীল আনুমান কি ২০১৩ সালে ২৩,০০০ হাতির শিকার হয়[২৮] আর আফ্রিকান হাতির আবাসের মাত্র ২০% এলাকা আধিকারিক সংরক্ষণে আছে।[২৯] প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক সংঘ সেপ্টেম্বর ২০১৬এ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যার আনুযায়ী আফ্রিকার জাতির সংখ্যা হল ৪১৫,০০০।[৩০]
আফ্রিকান হাতির সংরক্ষণ একটি বহু বছরের উচ্চ পদস্ত অভিযান। ১৯৮৯ সালে কেনিয়ার বন্যপ্রাণী সেবা গজদন্তের ভণ্ডার পুড়ে প্রতিবাদ করেছিল।[৩১] তাহলেও, হাতির সংখ্যা চোরাশিকারে ফলে বিধ্বস্ত হতে পারে,[৩২] আর কিছু দেশে খেলা শিকার বৈধ। ২০১২ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস গজদন্তের জন্য শিকারে বৃদ্ধি রিপোর্ট করে, যার ৭০% মাল চীনে বিক্রী হয়।[৩৩]
চীন চোরাশিকারের গজদন্তের সব থেকে বড় বাজার ছিল। ২০১৫ সালে ঘোষণা করল যে তারা গজদন্তের বিক্রয় আর উৎপাদন প্রতিবন্ধ করবে।[৩৪]
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)|title=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)|title=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)|title=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)|title=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)