আফ্রিকায়িত মৌমাছি | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
শ্রেণী: | Insecta |
বর্গ: | Hymenoptera |
উপবর্গ: | Apocrita |
উপপরিবার: | Apinae |
গোত্র: | Apini |
গণ: | Apis |
প্রজাতি: | Apis mellifera |
Subspecies | |
HYBRID (see text) |
আফ্রিকায়িত মৌমাছি, আফ্রিকায়িত মধুমক্ষী হিসেবে পরিচিত। তবে প্রচলিত ভাষায় "খুনি মৌমাছি" হিসেবেও এটি পরিচিত। এটি পশ্চিমা মৌমাছি (Apis mellifera) প্রজাতির সংকর। এর মুল সংকর প্রজনন ঘটানো হয়েছে আফ্রিকায়িত মৌমাছি (A. m. scutellata), ও বিভিন্ন ইউরোপীয় মৌমাছির মধ্যে। এরকম কিছু ইউরোপীয় মৌমাছির মধ্যে আছে ইতালীয় A. m. ligustica ও আইবেরীয় A. m. iberiensis সহ নানারকম প্রজাতির মৌমাছি।
১৯৫৬ সালে মধুর উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে, কিছু আফ্রিকার মৌমাছির কলোনী ব্রাজিলে নিয়ে আসা হয়, যাতে করে ব্রাজিলের স্থানীয় মৌমাছির মধ্যে সংকর প্রজনন করা যায়। কিন্তু ১৯৫৭ সালে ২৬ টা রানী মৌমাছি তার ঝাঁক নিয়ে পালিয়ে যায়। এর ফলে ১৯৮৫ সালের মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত এই প্রজাতি ছড়িয়ে পরে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ টেক্সাসে ১৯৯০ তে মৌচাক পাওয়া যায়।[১]
আফ্রিকায়িত মৌমাছি অন্যান্য প্রজাতির মৌমাছির তুলনায় বেশি প্রতিরক্ষাপ্রবণ, এবং একটু বিরক্ত হলেই আক্রমণ করে। তাদের এই আক্রমণের ক্ষিপ্রতা ইউরোপীয় মৌমাছিকে ছাড়িয়ে গেছে। তারা এক চতুর্থাংশ মাইল (৪০০ মিটার) বেগে ব্যক্তিকে ধাওয়া করতে পারে। তারা একহাজারের কাছাকাছি মানুষ মেরেছে, ইউরোপীয় মৌমাছির তুলনায় আফ্রিকায়িত মৌমাছির হুলে মানুষ দশগুণ বেশি আক্রান্ত হয়েছে।[২] তারা ঘোড়া এবং অন্যান্য প্রাণীও মেরেছে, এমন উদাহরণও দেখা গিয়েছে।[৩]
আফ্রিকায়িত মৌমাছির খাদ্য সংগ্রহের জন্য আচরনের একটা সেট দেখা যায়। আফ্রিকায়িত মৌমাছি তরুণ বয়সেই খাদ্য সংগ্রহ শুরু করে এবং ইউরোপীয় মৌমাছির (Apis mellifera) ন্যায় প্রচুর পরিমাণ পরাগ রেণু সংগ্রহ করে। আফ্রিকায়িত মৌমাছির উচ্চহারের প্রজননের সাথে এটা সম্ভবত সংযুক্ত; কারণ উচ্চ প্রজননের হারের জন্য লার্ভাকে প্রচুর পরাগরেণু খেতে হয়।[৪] আফ্রিকায়িত মৌমাছি নিম্ন ঘনমাত্রার সুক্রোজের প্রতি কম সংবেদনশীল। এই অভিযোজনের কারণে তারা কম ঘনমাত্রার উৎস সংগ্রহ করে। এখানে থাকে পানি, পরাগরেণু, কমঘনমাত্রার মধু। ফিল্যেল এবং বারট্রাম ২০০২ সালে A. m. scutellata এবং A. m. ligustica এর উপর তুলনামুলক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়, এই দুই প্রজাতির মধ্যে পরিবেশগত কারণে আচরণগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।[৫]
কিছু মৌমাছি কম ঘন সুক্রোজের ঘনমাত্রার প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়, আবার কিছু মৌমাছি বেশি ঘন সুক্রোজের প্রতি সংবেদনশীল। মৌমাছির কেন এরকম প্রতিক্রিয়া হয় তা তুণ্ডের বর্ধিত অংশ নির্ধারণ করে। যা পিএইয়ার বা তুণ্ড বর্ধন প্রতিক্রিয়া (চিনির দ্রবণ পেলে তুণ্ড সেই দ্রবণকে চোষণ করে, এটাই প্রতিক্রিয়া) নামে পরিচিত। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মৌমাছি সুক্রোজের ঘনমাত্রার উপর নির্ভর করে খাদ্য সন্ধানের ভিন্ন ভিন্ন আচরণ দেখায়। যা তাদের তুণ্ড বর্ধন প্রতিক্রিয়াকে প্রকাশ করে।[৬]
উদাহরণস্বরুপ, ইউরোপীয় মৌমাছি (Apis mellifera) বৃদ্ধ বয়সে খাবার সন্ধান করে, তারা কম পরাগ রেণু ও অধিক ঘনমাত্রার মধু সংগ্রহ করে। এজন্য ইউরোপীয় মৌমাছি অধিক ঘন উৎসের প্রতি সংবেদনশীল।[৭]
মধুমক্ষির বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আচরণগত পার্থক্য দেখা যায়। এ আচরণগত পার্থক্য দিক অভিমুখী নির্বাচনের ফল।[৭] মৌমাছির প্রাকৃতিক জনগোষ্ঠীতে নির্বাচন থেকে দেখা যায়, তরুণ বয়সে কম ঘনমাত্রার সুক্রোজের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং কম ঘনমাত্রার সুক্রোজ সংগ্রহের সাথে; সংবেদনশীলতার ইতিবাচক নির্বাচনের সংযোগ আছে। বৃদ্ধ বয়সে অধিক ঘনমাত্রার সুক্রোজের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং অধিক ঘনমাত্রার সুক্রোজ সংগ্রহের সাথে; সংবেদনশীলতার ইতিবাচক নির্বাচনের সংযোগ আছে।[৭] অধিকন্তু একটা বিষয় হলো, "আচরণের একটা উপাদানে পরিবর্তন হলে সমগ্র উপাদানে পরিবর্তন হয়।"[৭]
মৌমাছির খাদ্য অন্বেষণী আচরণ প্রসঙ্গে অনেক গুলো উপায় আছে দিক-অভিমুখী নির্বাচনের কারণকে বিবেচনা করার। একটি প্রত্যক্ষ কারণ হলো জীবের ক্রমবিকাশ এবং তার সমগ্র জীবনজুড়ে আচরনে প্রভাব [৮] স্নায়ুবিক এবং ক্রমবিকাশগত পার্থক্য দিক-অভিমুখী নির্বাচনকে নের্তৃত্ব দেয় এবং মৌমাছির প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তার খাদ্য অনুসন্ধানী আচরনে পার্থক্য গড়ে দেয়। অক্টোপামিনের (একটি রাসায়নিক উপাদান) পরিমান এরকমই ক্রমবিকাশে প্রভাব রাখা একটি ফ্যাক্টর।[৭]
বিবর্তনের দীর্ঘসুত্রিতায় জীব এই আচরণ থেকে সুবিধা পায়।[৮] তুণ্ড বৃদ্ধি প্রতিক্রিয়া একটি জিনগত বৈশিষ্ট্য; যেখানে সুক্রোজের ঘনমাত্রা দেখে জিনই নির্ধারণ করে, কোন প্রতিক্রিয়া প্রদর্শিত হবে। প্রাকৃতিক নির্বাচন; জিনকে মৌমাছির জনগোষ্ঠীতে বিতরণের মাধ্যমে পরিচালনা করে আচরণগত স্বভাবকে সরাসরি স্থানান্তরে সক্ষম।[৭]
যখন আফ্রিকায়িত আবাসস্থলে উৎসের ঘাটতি দেখা যেতে শুরু করলো, তখন মৌমাছিদের টিকে থাকতে প্রচুর পরিমাণে উৎস সংগ্রহ করা প্রয়োজন হয়ে পরে। এরকম পরিবেশে যেসব মৌমাছির তুণ্ড জিনগতভাবে সুক্রোজের প্রাচুর্যতার প্রতি সংবেদনশীলতা দেখায়, যারা ঘন মধু খেয়ে অভ্যস্ত তারা এ প্রতিকুল পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে না। আফ্রিকায়িত মৌমাছি কম ঘনমাত্রার প্রতি সংবেদনশীলতার কারণ সম্ভবত, তাদেরকে এরকম বিরুপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। সেখানে যেসব মৌমাছি কম ঘনমাত্রার প্রতি সংবেদনশীল ছিল, তারাই টিকে থেকে বংশবিস্তার করতে পেরেছে।[৯]