আবদুল হাই শিকদার (জন্ম: ১৯৫৭ সাল) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক,রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক।[১] সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রায় সব অঙ্গনে তার রয়েছে সরব পদচারণা। তবে কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। মানবতা, স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক এই কবির মুখে সবসময় ধ্বনিত হয়েছে প্রেম, প্রকৃতি, বিশ্বমানবতা, শোষণমুক্ত সমাজ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কথা। এজন্য ১৯৯৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে কবি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলেও মানবমুক্তির স্বপ্ন, মুক্তচিন্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তিনি আছেন আপোষহীন। তার লেখনীতে বাংলাদেশের জাতিসত্তা ও বিশ্বমানবতার কথা প্রকাশ পাওয়ায় কবি আবদুল হাই শিকদারকে 'জাতিসত্ত্বার কবি'ও বলা হয়ে থাকে।[২] জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুসন্ধানেও গণমাধ্যমে তিনি পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত তার শিকড় সন্ধানী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "কথামালা" তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এছাড়াও তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[৩]
আবদুল হাই শিকদার প্রথম জীবনের লেখাপড়া শেষ করেন গ্রামের স্কুল, ভুরুঙ্গামারী হাই স্কুল, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ-এ। তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে ১৯৭৯ সালে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন।[৪] তারপর দীর্ঘ বিরতির পর শান্ত মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে বাংলা সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন।
কবি আবদুল হাই শিকদার সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি সরকারি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমেও যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সাথে তিনি যুক্ত । তিনি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের আজীবন সদস্য, উপদেষ্টা, সহ-সভাপতি, সভাপতি ও সদস্য সচিব হিসেবে যুক্ত আছেন। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, শত নাগরিক জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, জাতীয় নজরুল সমাজ, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ইত্যাদি সংগঠনের অন্যতম সংগঠক। তিনি বাংলা একাডেমীর একজন ফেলো; । তিনি নজরুল ইনস্টিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।[৪] দৈনিক আমার দেশ-এর সিনিয়র সহকারী সম্পাদক ও ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (UODA) এর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নাগরিক সমাজের জাতীয় সংগঠন "শত নাগরিক" জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।এছাড়াও তিনি বর্তমান বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (BIU)-এ অধ্যাপনা করছেন।
কবি আবদুল হাই শিকদার পড়াশোনা সম্পন্ন করার পরপরই পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বেছে নেন। তিনি ছাত্র অবস্থাতেই ১৯৭৭ সালে 'শাব্দিক সাহিত্যপত্র' নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে যুক্ত ছিলেন। সূদীর্ঘ ৪৪ বছরের সাংবাদিকতার পরিক্রমায় প্রতিবেদক, সহকারী সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সবই যুক্ত হয়েছে তার নামের সাথে। সাপ্তাহিক সচিত্র স্বদেশ দিয়ে ১৯৮১ সালে তার পেশাগত সাংবাদিকতার জীবন শুরু। পর্যায়ক্রমে মাসিক এখন (৮৬-৮৭), দৈনিক মিল্লাত (১৯৮৭-১৯৯৪), সাপ্তাহিক বিচিত্রা (১৯৯৪-১৯৯৭), দৈনিক ইনকিলাব (১৯৯৭-২০০৪), পত্রিকার সাথে যুক্ত হন। ২০০৪-২০০৫ তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ফিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।[৪] ২০০৭ সাল থেকে তিনি দৈনিক আমার দেশ- এর সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি ২০১৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ২ টার্মে টানা চার বছর (২০১৩-১০১৬) সফলতার সাথে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনা ইত্যাদি সাহিত্যের সব শাখাতেই আবদুল হাই শিকদার রেখেছেন তার অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর। এছাড়াও তিনি নজরুল বিষয়ক গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন, কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনের সাথেও তিনি যুক্ত। এ যাবৎ তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ১২০টি।[৫] নিম্নে তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের তালিকা দেওয়া হলঃ[৪][৬]
আবদুল হাই শিকদার একজন ভালো আলোকচিত্রীও। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ ও পলাশী কেন্দ্রিক আলোকচিত্রসমূহ নিয়ে ৩টি প্রদর্শনী হয় ঢাকায় এবং সুধী মহল দ্বারা প্রশংসিত হয়।
আর কোন পলাশী নয়, একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ১৯৯৭ (উদ্বোধন করেন তৎকালনি বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া)।
আর কোন পলাশী নয়, একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী- ১৯৯৫
আর কোন পলাশী নয়, একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী-১৯৯৪ (পলাশী, মুর্শিদাবাদ এবং নবাব সিরাজদৌলার উপর বাংলাদেশে এই ধরনের প্রদর্শণী প্রথম)।