যুক্তির বিপক্ষে পর্যাপ্ত প্রতিযুক্তির অভাবে বা প্রতিযুক্তি না দিয়ে আবেগের দ্বারস্থ হওয়া হলো আবেগপ্রবণতার কুযুক্তি বা Appeal to emotion।[১][২] এই ধরনের কুযুক্তি argumentum ad passiones নামেও পরিচিত। ভয়, হিংসা, বিদ্বেষ, করুণা, অহঙ্কার ইত্যাদি আবেগপ্রবণতার কুযুক্তির কারণ হতে পারে।[৩][৪]
এধরনের তর্কে বিতার্কিক প্রতিপক্ষের পয়েন্টগুলো শণাক্ত করে না, সেই পয়েন্টগুলোর সংলগ্নতা কিংবা স্ববিরোধীতা খুঁজে বের করার চেষ্টাটা করে না। শ্রোতার আবেগ যে দিকে বইবে, বিতার্কিক সে দিকেই পাল তুলেন, আবেগের জোরেই তার কুতর্কের বহিত্র শ্রোতার অন্তরে নোঙর ফেলেন। মানুষ যেহেতু আবেগপ্রবণ প্রাণী, তাই তার যুক্তিবৃত্তির মাঝে আবেগের তন্তু থাকতেই পারে।
ধর্মানুভূতি নিয়ে হালের আলাপ-আলোচনা এরকম একটা উদাহরণ। ধর্মের সমালোচনা করা যাবে না কেন প্রতিপাদন করতে গিয়ে বলা হয়,
কারো বাবা-মাকে কেউ গালি দিলে নিশ্চয়ই কেউ বসে রবে না? এজন্যই আমাদের ধর্মগুরু বা দেবতার বিরুদ্ধে কিছু বললে তার শাস্তি হবে।'
বাঙালি সংস্কৃতিতে বাবা-মা যেহেতু একটু বেশিই সংবেদনশীল স্থানে আসীন, তাই যেকোন ব্যক্তি বা মতাদর্শকে বাবা-মায়ের সমতুল্য ঘোষণা করলে তা যাবতীয় আকাম হতে ইনডেমনিটি পেয়ে যায়। বলাই বাহুল্য, বাবা-মাও সমালোচনার ঊর্ধ্বে না। বাবা-মা তাদের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনাকে ঐশী অধিকারবলে রাষ্ট্রযন্ত্রে কিংবা সমাজে চাপিয়ে দিতে চাইলে আর দশটা রাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা পাবলিক ব্যক্তিত্বের মতোই তাদেরকে সমালোচনার শিকার হতে হবে। কিন্তু কোন মতাদর্শ বা মতাদর্শ-প্রচারককে নিজের বাবা-মা'র সাথ তুলনা করে ধর্মীয় হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেওয়া যায় না।