'আমর বিন আল-আস (রা.) | |
---|---|
মিসরের গভর্নর | |
কাজের মেয়াদ ৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ – ৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দ | |
সার্বভৌম শাসক | প্রথম মুয়াবিয়া |
পূর্বসূরী | মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর |
উত্তরসূরী | উতবা ইবনে আবি সুফিয়ান |
কাজের মেয়াদ ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দ – ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ | |
পূর্বসূরী | নেই (বাইজাইন্টাইনদের থেকে মুসলিমদের মিসর বিজয়) |
উত্তরসূরী | আবদুল্লাহ ইবনে সাদ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৪ ফেব্রুয়ারি ৫৮৫ মক্কা, আরব উপদ্বীপ |
মৃত্যু | ৬৬৪ মিসর |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | রাশিদুন খিলাফত উমাইয়া খিলাফত |
শাখা | রাশিদুন সেনাবাহিনী উমাইয়া সেনাবাহিনী |
কাজের মেয়াদ | ৬৩৪–৬৩৬ |
পদ | সেনাপতি মিসরের গভর্নর (৬৪২–৬৪৪), (৬৫৭–৬৬৪) |
কমান্ড | ফিলিস্তিন বিজয় মিসর জয়, প্রথম ফিতনা |
আমর ইবনে আল আস ছিলেন আরব সেনাবাহিনীর একজন সেনাপ্রধান, যিনি ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে মিশরে মুসলিম বিজয়ের জন্য সর্বাধিক পরিচিত| তিনি নবী মুহাম্মাদ-এর সমসাময়িক একজন লোক এবং সাহাবী, যিনি ৮ম হিজরিতে (৬২৯ সাল) ইসলাম গ্রহণ করার পর মুসলিম সমাজ কর্তৃক দ্রুত উপরে উঠে আসেন| তিনি মিশরীয় রাজধানী "ফুসতাতের" গোড়াপত্তন করেন এবং এর কেন্দ্রে বিখ্যাত আমর ইবনে আস মসজিদ নির্মাণ করেন|
আমর ইবনুল আস মক্কার কুরাইশ বংশের বনু সাহম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন|[১] ধারণা করা হয়, মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮০ বছর, সেই হিসেবে তিনি ৫৯২ সালের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং মিশরে মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি আল-আস ইবনে ওয়াইল ও "লায়লা বিনতে হারমালা" ওরফে "আল-নাবিঘাহ" এর পুত্র ছিলেন|[২]
অন্যসকল কুরাইশ নেতাদের মতো তিনিও খুব দ্রুত ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করেন। তাকে দূত হিসেবে আবিসিনিয়ায় পাঠানো হয়, যাতে সেখানকার শাসনকর্তা ‘আসামা ইবন আবজার’কে রাজি করানো যায় তার দেশে বসবাসরত মুসলমানদের পুনরায় মক্কায় কুরাইশদের হাতে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু অামর ইবনুল আস তার কাজে বিফল হন। মুহম্মদ মদিনায় হিজরতের পর আমর ইবনুল আস মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুরাইশদের হয়ে সকল যুদ্ধে অংশ নেন এবং উহুদের যুদ্ধে কুরাইশদের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি ‘উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা’-কে বিয়ে করেছিলেন; কিন্তু তিনি তাকে তালাক প্রদান করেন, যখন তিনি জানতে পারেন যে তার স্ত্রী তার অজান্তেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এর কয়েক সপ্তাহ পরেই আবু বকর ও উমর-এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ও পরবর্তীকালে রাশিদুনের খলিফাগণের দ্বারা ‘গভর্নর’ এর দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত হন।
নবী মোহাম্মদ-এর মৃত্যুর পরে আবু বকর প্রথম খলিফা হন। আমর ইবনুল আস মুসলিম সেনাবাহিনীতে যোগদান করে প্যালেস্টাইন অভিযানে প্রেরিত হন। এটা বিশ্বাস করা হতো যে তিনি সৈন্যবাহিনীকে খুব ভালোভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হতেন এবং তিনি এটা করে দেখিয়েছিলেন ‘আজন্দাইয়ান’ এবং ‘ইয়ারমুক’ এর যুদ্ধে এবং ‘দামেস্ক’ অবরোধে। তার সাফল্য অব্যহত ছিল সিরিয়ায়-বাজেন্টাইনেও। আমর ইবনুল আস উমরকে পরামর্শ দিলেন মিসরে অভিযানের জন্য এবং উমর তাতে রাজি ছিলেন।
৬৩৯ সনের শেষের দিকে আমর ইবনুল আস ‘সিনাই উপত্যকা’ পাড়ি দিলেন তার ৩,৫০০-৪,০০০ সৈন্যের সাথে। তিনি তার প্রথম সাফল্য-উৎসব উৎযাপন করলেন ১২ ডিসেম্বর ৬৪০ সনে ‘আরিশ’ এর ‘পিলগ্রিমাগা’য় । কিন্তু খুব দ্রুত তিনি পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়লেন। বিলবিসের নিকট থেকে বাজেন্টাইনরা ‘টাউন অফ পেলসিয়াম’ বা আল-ফারামায় আমর ইবনুল আসের উপরে আক্রমণ চালায়। আমর ইবনুল আস সিরিয়াবাসীদের নিকট থেকে সাহায্য পেলেন। তার সৈনবাহিনীতে ৬-ই জুন ৬৪০ এ সিরিয়া হতে ১২ হাজার সৈন্য যোগ দিল। তিনি ‘আলেকজান্দ্রিয়া’ ‘মেম্ফিস’ ‘হেলিপোলিস’ জয় করলেন । ৬৪১ সনে তার লক্ষ্য পূরণে পুরোপুরি সফল হলেন।
পুরো নতুন এই রাজ্যে শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন রাজধানীর প্রয়োজন ছিল। আমর ইবনুল আস খলিফা উমরের কাছে প্রস্তাব পাঠালেন। অবশেষে ‘ব্যাবিলন দুর্গ’ এর কাছে আমর ইবনুল আস একটি নতুন শহর তৈরি করেন এবং সেখানে মিসরের প্রথম মসজিদ ‘মসজিদে আমর ইবনুল আস’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজো পুরনো কায়রোতে বিদ্যমান রয়েছে।
মিসর বিজয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল।
জীবনের শেষ দিনগুলিতে তিনি অতীতের ভুলের জন্য অনুশোচনায় ভীষণ দগ্ধিভূত হন। যখন তিনি মৃত্যু শয্যায় তখন ইবনে আব্বাস তাকে দেখতে আসেন। সালাম বিনিময়ের পর জিজ্ঞেস করলেন, আবু আবদিল্লাহ, কেমন অবস্থা? আমর জবাব দিলেন, "আপনি কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করছেন? আমার দুনিয়া তৈরি হয়েছে, কিন্তু দ্বীন বিনষ্ট হয়েছে। যদি এমন না হয়ে এর বিপরীত হতো, তাহলে আমার নিশ্চিত বিশ্বাস আমি সফলকাম হতাম। যদি শেষ জীবনের চাওয়া ফলপ্রসূ হতো তাহলে অবশ্যই চাইতাম। যদি পালিয়ে বাঁচার পথ থাকতো, পালাতাম। কিন্তু মিনজিনিকের আমি এখন আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় আছি। হাতের সাহায্যে না উপরে উঠতে পারছি, না পায়ের সাহায্যে নীচে নামতে পারছি। ভাতিজা, আমার উপকারে আসে এমন কিছু নসীয়ত আমাকে কর"। ইবনে আব্বাস বললেন, " আফসুস! সে সময় আর কোথায়! এখন তো ভাতিজা বৃদ্ধ হয়ে আপনার ভাই হয়ে গেছে। এখন যদি আপনি আমাকে কাঁদতে বলেন, কাঁদতে পারি।" আমর বললেন, " এখন আমার বয়স আশি বছরেরও কিছু বেশি। এখন তুমি আমাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করছো। হে আল্লাহ, এই ইবনে আব্বাস আমাকে তোমার রহমত থেকে নিরাশ করছে। তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাও এমন শাস্তি তুমি এখনই আমাকে দাও"। ইবনে আব্বাস বললেন, " আবু আবদিল্লাহ, যে জিনিস আপনি নিয়ে ছিলেন তাতো নতুন আর যা দিচ্ছেন তাতো পুরাতন "। আমর বললেন, " ইবনে আব্বাস, তোমার কি হয়েছে, আমি যা বলছি, তুমি তার উল্টা বলছো? (আল ইসতিয়াব)
আবদুর রহমান ইবনে শাম্মাসা বলেন, তিনি আমর ইবনুল আস কে মৃত্যু শয্যায় দেখতে যান। আমর দেওয়ালের দিকে মুখ করে কাঁদতে শুরু করলেন। তার ছেলে আবদুল্লাহ বললেন, " আব্বা কাঁদছেন কেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কি আপনাকে অমুক অমুক বাশারাত বা সুসংবাদ দাননি" ? তিনি জবাব দিলেন, " আমার সর্বোত্তম সম্পদ - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ - এর শাহাদাত বা সাক্ষ্য। আমার জীবনে তিনটি পর্ব অতিক্রান্ত হয়েছে। একটি পর্ব এমন গেছে যখন আমি ছিলাম কট্টর দুশমন। আমার চরম বাসনা ছিলো, যে কোনোভাবেই রাসুলুল্লাহকে (সাঃ) হত্যা করা। তারপর আমার জীবনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু। রাসুলুল্লাহর (সাঃ) হাতে বাইয়াত করে ইসলাম কবুল করলাম। তখন আমার এমন অবস্থা যে, রাসুলুল্লাহর (সাঃ) চেয়ে আর কোনো ব্যাক্তি আমার নিকট অধিকতর প্রিয় বা সম্মানী বলে মনে হয়নি। অতিরিক্ত সম্মান ও ভীতির কারণে তার প্রতি আমি ভালো করে চোখব তুলে তাকাতে পারিনি। কেউ যদি এখন আমাকে তার চেহারা মুবারক কেমন ছিলো জিজ্ঞেস করে, আমি তাকে কোনো কিছুই বলতে পারিনে। তখন যদি আমার মরণ হতো, জান্নাতের আশা ছিলো। এরপর আমার জীবনের তৃতীয় পর্ব। এ সময় আমি নানা রকম কাজ করেছি। আমি জানিনে এখন আমার কি অবস্থা হবে। আমার মৃত্যু হলে বিলাপকারীরা যেন আমার জানাযার সাথে না যায়। দাফনের সময় ধীরে ধীরে মাটি চাপা দেবে। দাফনের পর একটি জন্তু জবেহ করে তার গোশত ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়া যায়৷ এতটুকু সময় কবরের কাছে থাকবে। যাতে আমি তোমাদের উপস্থিতিতেই কবরের সাথে পরিচিত হয়ে উঠতে পারি এবং আল্লাহর দূতের প্রশ্ন সমূহের জবাব ঠিক করে নিতে পারি। (মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ঈমান)
তিনি তার পুত্র আবদুল্লাহকে মৃত্যুর পর তাঁকে কীভাবে দাফন করতে হবে সে সম্পর্কে অসীয়াত করলেন। তারপর জিকিরে মশগুল হলেন। বলতে লাগলেন, " হে আল্লাহ, তুমি নির্দেশ দিয়েছিলে, আমি তা অমান্য করেছি, তুমি নিষেধ করেছিলে, আমি নাফরমানী করেছি। আমি নির্দোষ নি যে, ওজর পেশ করবো, আমি শক্তিমানও নই যে, বিজয়ী হবো। " তারপর 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' পড়তে পড়তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। হিজরি ৪৩ সনের ১লা শাওয়াল ঈদুল ফিতরের নামাযের পর তার পুত্র আবদুল্লাহ জানাযার নামায পড়ান। মিসরের 'মাকতাম' নামক স্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার নিজ হাতে তৈরী মিসরের প্রথম মসজিদ 'জামে আমর ইবনুল আস' - এর পাশে তার কবরটি আজও চিহ্নিত রয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল নব্বই বছর।
মিশরে আমর ইবনুল আসের খুব বড় রকমের জনসমর্থন ছিলো, কপ্টিক খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর থেকে।
অনুবাদ বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |