আবুল কাসিম আম্মার ইবনে আলি আল মাওসিলি أبو القاسم عمار بن علي الموصلي | |
---|---|
জন্ম | ৯৯৬ খ্রি. |
মৃত্যু | ১০২০ খ্রি. |
জাতীয়তা | আরব |
নাগরিকত্ব | আব্বাসীয় খিলাফত, ফাতিমীয় খিলাফত |
পেশা | চিকিৎসক, লেখক |
কর্মজীবন | আব্বাসীয় খিলাফত, ফাতিমীয় খিলাফত |
উচ্চশিক্ষায়তনিক কর্ম | |
বিষয় | চিকিৎসাবিজ্ঞান |
উপ-বিষয় | চক্ষুরোগবিজ্ঞান |
উল্লেখযোগ্য কাজ |
|
উল্লেখযোগ্য ধারণা | চোখের ছানি অপারেশন |
আবুল কাসিম আম্মার বিন আলী আল–মাওসিলি (আরবি: أبو القاسم عمار بن علي الموصلي )[১] ছিলেন একাদশ শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ আরব মুসলিম চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ। তার জীবন বা শিক্ষা সম্পর্কে খুব কম জানা থাকা সত্ত্বেও তাকে সমস্ত আরব চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[১]
তার নিসবা নির্দেশ করে যে, আম্মার মসুলে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার পরে মিশরে চলে যান, যেখানে তিনি ফাতেমীয় খলিফা ইমাম আল হাকিম বি-আমরিল্লাহর শাসনামলে বসতি স্থাপন করেন, যার সময়ে তিনি তার একমাত্র রচনা লিখেছিলেন, যা কিতাব আল-মুন্তাখাব ফি ইলম আল উইউন ("চক্ষুবিদ্যায় নির্বাচিত বই")।
তবে তিনি একটি হাইপোডার্মিক সিরিঞ্জের উদ্ভাবনের জন্য অধিক পরিচিত, যা তিনি অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ ছানি দূর করতে ব্যবহার করেছিলেন।[২]
তার উদ্ভাবন সম্পর্কে তিনি নিম্নলিখিত লিখেছেন:
... তারপরে আমি একটি ফাঁপা সুই তৈরি করেছিলাম, কিন্তু টাইবেরিয়াসে আসার আগে আমি এটি দিয়ে কারো উপর পরীক্ষা চালাইনি। সেখানে অপারেশন করার জন্য একজন লোক এসে আমাকে বলল যে: তুমি আমার সাথে যা খুশি করো, শুধু আমি নিজের পিঠে যেন শুয়ে থাকতে পারি। তারপর আমি ফাঁপা সুই দিয়ে তার অপারেশন করে তার চোখের ছানি বের করেছিলাম এবং তিনি অবিলম্বে দেখতে পেয়েছিলেন। মিথ্যা বলার কোনো প্রয়োজন নেই; কিন্তু তিনি নিজের পছন্দ মত ঘুমিয়েছিলেন। শুধু আমি সাত দিন তার চোখে ব্যান্ডেজ করে রেখেছিলাম। এই সুই দিয়ে আমার আগে কেউ পরীক্ষা করেনি। আমি মিশরে এর সাহায্যে অনেক অপারেশন করেছি।[৩]
তিনি ছিলেন বিখ্যাত চক্ষু চিকিৎসাবিদ আলি ইবনে ঈসার সমসাময়িক।
আল–মাওসিলি মূলত ইরাকের মসুল শহরের বাসিন্দা ছিলেন। তবে তিনি তৎকালীন ফাতেমীয় খিলাফতের অধীনে মিশরে বসবাস করতেন। চক্ষুচিকিৎসাবিজ্ঞান এবং চোখের অসুস্থতা ও তার চিকিৎসার উপর তিনি "কিতাব আল-মুনতাখাব ফি ইলমিল উইউন" লেখেন এবং তা'সহ নিজের আরো অনেক বইয়ের জন্য তিনি বিখ্যাত। যার একটি অনুলিপি বর্তমান রাবাতে পাওয়া যায়। এটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল এবং সেখানে মুদ্রিত হয়েছিল এবং ১৯৯১ সালে তা আরবি ভাষায় মুদ্রিত হয়েছিল, যা দাফের আল-ওয়াফাই এবং মুহাম্মাদ রওয়াস কালাজি দ্বারা নিরীক্ষণ করা হয়।[৪][৫]
চক্ষুচিকিৎসাবিজ্ঞানে আম্মার আল-মুসলির কৃতিত্বের মধ্যে রয়েছে:
একজন শল্যচিকিৎসক হিসাবে তিনি চোখ সার্জারির জন্য প্রথম অস্ত্রোপচার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যে রোগ বর্তমান ছানি নামে পরিচিত।
আল মাওসিলি চোখের নরম ছানি চুষে ফেলার জন্য ফাঁপা কাপের নকশাও উদ্ভাবন করেন। এটি একটি ফাঁপা সুই আকারের একটি কাপ, যার ফলে চোখের কোন বিপদ হয় না এবং নরম ছানি চুষে নেওয়ার তার সেই পদ্ধতিটি এখনও চলমান রয়েছে।
তিনি সুস্থ চোখ ঢেকে শিশুদের স্ট্র্যাবিসমাসের ফলে সৃষ্ট ঝাপ্সা দৃষ্টির চিকিৎসার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। আল-মাওসিলি এই পদ্ধতিতে হাজার বছর আগে অন্যান্য আন্তর্জাতিক চিকিৎসকদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।[৪]
তার বইগুলির মধ্যে চক্ষুবিদ্যার উপর শুধুমাত্র একটি বই বর্তমান প্রচলিত রয়েছে, যা "আল মুনখাতাব ফি ইলাজ আমরাদিল উইউন" ("চক্ষুরোগের চিকিৎসায় নির্বাচিত গ্রন্থ") নামে পরিচিত।
বইটি ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের যন্ত্রের সাহায্যে চোখের রোগের চিকিৎসার একটি বই। এই বইটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কার্যসম্পাদনের ব্যবহারিক পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত আছে। এটি চোখের অস্ত্রোপচার ও তার শারীরস্থানের একটি ব্যাখ্যা, যা ১২৫টি অধ্যায়ে বিস্তৃত একটি গ্রন্থ। এতে আল মাওসিলি একটি সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন এবং মধ্যযুগে তাঁর পরে আসা মুসলিম ডাক্তারগণ তার এই পদ্ধতি অনুসরণ করে উপকৃত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে গাফিকি, ইয়াকুত ইবনে আব্দুল্লাহ ও আল-কাফতারাবি উল্লেখযোগ্য।