আরতি ভট্টাচার্য

আরতি ভট্টাচার্য
কুণাল সিং ও আরতি ভট্টাচার্যের বিয়েতে সত্যজিৎ রায়
জন্ম
হুগলি (চুঁচুড়া)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাঅভিনয়শিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গীকুণাল সিং[][]
সন্তানআকাশ সিং (ছেলে) []

আরতি ভট্টাচার্য[] একজন ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী, লেখক এবং পরিচালক।[] তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তাঁর বিভিন্ন কাজের জন্য স্বীকৃত। পর্দায় উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, এবং অনিল চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে তাঁর জুটি জনপ্রিয় ছিল। পরে তিনি হিন্দি এবং তারপরে ভোজপুরি চলচ্চিত্র জগতে একজন সফল চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে পরিচত হন।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

[সম্পাদনা]

আরতি ভট্টাচার্য ভারতের জামশেদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ডিএম মদন গার্লস হাই স্কুলে থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর তিনি জামসেদপুর মহিলা কলেজে যোগ দেন। কিন্তু তিনি পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে আরতি প্রথমবারের মতো ক্যামেরার মুখোমুখি হন, তিনি একটি হিন্দি চলচ্চিত্র রেওয়াজ-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নির্বাচিত হন, কিন্তু চলচ্চিত্রটি মাঝপথে পরিত্যক্ত হয় এবং কখনই দিনের আলো দেখতে পায়নি। ১৯৭২ সালে, পরিচালক মৃণাল সেন নিজের হিন্দি ছবি 'এক আধুরি কাহানি'র জন্য তাঁকে বেছে নেন। একই বছরে, আরেকটি চলচ্চিত্র, 'পিকনিক'ও মুক্তি পায়। তিনি নিজের সতেজ চেহারা এবং অভিনয়শৈলী ও সেই সঙ্গে আচার-ব্যবহারমুক্ত অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্র দর্শকদের মন জয় করেছিলেন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে নিজের জন্য একটি পৃথক সত্তা তৈরি করেছিলেন এবং পুরো সত্তরের দশক ধরে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর কর্মজীবনের-রেখচিত্র (গ্রাফ) ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে এবং তিনি ৮০র দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করে গেছেন। তারপরে তিনি বিয়ে করেন এবং বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে রাজত্ব করা সত্ত্বেও নিজের কর্মজীবন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন।[]

চলচ্চিত্রের সঙ্গে আরতির সম্পর্ক কিন্তু শেষ হয়নি। তিনি ভোজপুরি চলচ্চিত্রে নির্দেশনা এবং চিত্রনাট্য লেখা সহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি অন্বেষণ করতে চলে যান। সেখানে তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং জনপ্রিয় ভোজপুরি চলচ্চিত্র শিল্পে একজন বিশেষ চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে গণ্য।[]

চলচ্চিত্র কর্মজীবনে, আরতি তাঁর সময়ের সেরা কিছু পরিচালক এবং অভিনেতাদের সাথে কাজ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত কত্থক নৃত্যশিল্পী। তিনি সত্যজিৎ রায়ের সাথে 'জন অরণ্য' ছবিতে কাজ করেছিলেন।[]

আরতির অভিনয় জীবন দেড় দশক ধরে বিস্তৃত ছিল, কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যে, তিনি বাংলায় ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার মনোনীত হয়েছিলেন এবং 'আমি সে ও সখা' (১৯৭৬) ছবিতে অভিনয়ের জন্য মর্যাদাপূর্ণ বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছিলেন।[]

গণমাধ্যমে আলাপচারিতায় আরতি বলেছিলেন: “সত্যজিৎ রায় আমাকে 'ঘরে বাইরে' ছবিতে নিখিলেশের বৌদির চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে একটি শর্ত ছিল যে আমাকে মাথা ন্যাড়া করতে হবে কারণ এটি একটি বিধবা চরিত্র এবং এটি তখনকার বিধবাদের মধ্যে প্রথা ছিল। এমনকি আমি সত্যজিৎকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমি এই ভূমিকার জন্য একটি পরচুলা (ন্যাড়া দেখানোর জন্য ব্যবহৃত) ব্যবহার করতে পারি কিনা কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।”[] “আমি তখন পাঁচটি ছবিতে কাজ করছিলাম, যার মধ্যে দুটি ছিল উত্তম কুমারের সঙ্গে। আমার পক্ষে মাথা মুণ্ডন করা সম্ভব ছিল না কারণ তাহলে অন্যান্য প্রকল্পগুলিকে প্রভাবিত হত। তাই সুযোগটা ছেড়ে দিতে হলো,” বললেন আরতি ভট্টাচার্য।[] পরে, সত্যজিৎ সেই চরিত্রটিকে ন্যাড়া না দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরিবর্তে, চরিত্রটির চুল ছোট করে কাটা ছিল এবং ভূমিকাটি গোপা আইচকে দেওয়া হয়েছিল।[]

তাঁর অভিনীত বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে একটি হল স্ত্রী। এছাড়াও তিনি ১৯৭৬ সালে আনন্দমেলা চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবে কণ্ঠ দেন। [][] তিনি কয়েকটি হিন্দি এবং ভোজপুরি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

ভোজপুরি অভিনেতা এবং রাজনীতিবিদ কুনাল সিংকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। অভিনেতা আকাশ সিং তাঁদের ছেলে।

পুরস্কার

[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রের তালিকা

[সম্পাদনা]

অভিনেতা হিসেবে

[সম্পাদনা]
  1. রেওয়াজ (অপ্রকাশিত)
  2. এক আধুরি কাহানি (একটি অসমাপ্ত গল্প) (১৯৭২)
  3. পিকনিক (১৯৭২)
  4. স্ত্রী (১৯৭২)
  5. জীবনটাই নাটক
  6. আলো আঁধারে (১৯৭৩)
  7. প্রেমের ফাঁদে (১৯৭৪)
  8. রাজা (১৯৭৪)
  9. হারমোনিয়াম (১৯৭৫)
  10. আমি-সে-ও-সখা (১৯৭৫)
  11. হারানো-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশ (১৯৭৫)
  12. আনন্দমেলা
  13. জন অরণ্য (১৯৭৬) মিসেস গাঙ্গুলী চরিত্রে
  14. নন্দিতা (১৯৭৬)
  15. আসাধারন (১৯৭৭)
  16. গোলাপ বউ (১৯৭৭)
  17. জাল সন্ন্যাসী (১৯৭৭)
  18. প্রতিশ্রুতি (১৯৭৭)
  19. রাজবংশ (১৯৭৭)
  20. নিশান (১৯৭৮)
  21. ময়না (১৯৭৮)
  22. পরিচয় (১৯৭৮)
  23. স্ট্রাইকার (১৯৭৮)
  24. জোব চার্নকের বিবি (১৯৭৮)
  25. জীবনে যে রকম (১৯৭৯)
  26. পম্পা (১৯৭৯)
  27. ন্যায় অন্যায় (১৯৮১)
  28. সূর্য তৃষ্ণা (১৯৮৪)
  29. আমার পৃথিবী (১৯৮৫)
  30. প্রেয়সী (১৯৮৬)
  31. কাল হামারা হ্যায় (১৯৮০) (হিন্দি)

পরিচালক হিসেবে

[সম্পাদনা]
  1. মাশুকা (১৯৮৭)(হিন্দি)
  2. দাগাবাজ বালমা (১৯৮৮) (ভোজপুরি)

চিত্রনাট্য লেখক

[সম্পাদনা]
  1. ব্লাডি ইশক (হিন্দি) (২০১৩)
  2. চোর পুলিশ (ভোজপুরি) (২০১৯)

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Kunal Singh's son to make debut in Bollywood - Times of India"The Times of India 
  2. "What wives of politicians do during poll season"। ৩০ মার্চ ২০১৪। 
  3. "Biography of Akash Singh: son of Bhojpuri actor Kunal singh, hero of Bloody Isshq film"socialvillage.in। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ২ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  4. "Arati Bhattacharya missed the chance to work in Satyajit Ray's 'Ghawre Bairey' - Times of India"The Times of India 
  5. Arunachalam, Param (১৪ এপ্রিল ২০২০)। BollySwar: 1981 - 1990। Mavrix Infotech Private Limited। আইএসবিএন 9788193848227 – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  6. "Remembering silver screen's Arati Bhattacharya"। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  7. "Arati Bhattacharya missed the chance to work in Satyajit Ray's 'Ghawre Bairey'"। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  8. "Boy nextdoor awaits big Bollywood break - Son of Bhojpuri matinee idol to be seen in exotic Thailand locales on silver screen"www.telegraphindia.com 
  9. "waiting-for-a-doyen-s-glance-arati-bhattacharya"cinemaazi.com 
  10. "arati-bhattacharya-interview-5286"aajkaal.in [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]