আরতি ভট্টাচার্য | |
---|---|
জন্ম | হুগলি (চুঁচুড়া) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | অভিনয়শিল্পী |
দাম্পত্য সঙ্গী | কুণাল সিং[১][২] |
সন্তান | আকাশ সিং (ছেলে) [৩] |
আরতি ভট্টাচার্য[৪] একজন ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী, লেখক এবং পরিচালক।[৫] তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তাঁর বিভিন্ন কাজের জন্য স্বীকৃত। পর্দায় উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, এবং অনিল চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে তাঁর জুটি জনপ্রিয় ছিল। পরে তিনি হিন্দি এবং তারপরে ভোজপুরি চলচ্চিত্র জগতে একজন সফল চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে পরিচত হন।
আরতি ভট্টাচার্য ভারতের জামশেদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ডিএম মদন গার্লস হাই স্কুলে থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর তিনি জামসেদপুর মহিলা কলেজে যোগ দেন। কিন্তু তিনি পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।
১৯৭১ সালে আরতি প্রথমবারের মতো ক্যামেরার মুখোমুখি হন, তিনি একটি হিন্দি চলচ্চিত্র রেওয়াজ-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নির্বাচিত হন, কিন্তু চলচ্চিত্রটি মাঝপথে পরিত্যক্ত হয় এবং কখনই দিনের আলো দেখতে পায়নি। ১৯৭২ সালে, পরিচালক মৃণাল সেন নিজের হিন্দি ছবি 'এক আধুরি কাহানি'র জন্য তাঁকে বেছে নেন। একই বছরে, আরেকটি চলচ্চিত্র, 'পিকনিক'ও মুক্তি পায়। তিনি নিজের সতেজ চেহারা এবং অভিনয়শৈলী ও সেই সঙ্গে আচার-ব্যবহারমুক্ত অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্র দর্শকদের মন জয় করেছিলেন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে নিজের জন্য একটি পৃথক সত্তা তৈরি করেছিলেন এবং পুরো সত্তরের দশক ধরে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর কর্মজীবনের-রেখচিত্র (গ্রাফ) ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে এবং তিনি ৮০র দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করে গেছেন। তারপরে তিনি বিয়ে করেন এবং বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে রাজত্ব করা সত্ত্বেও নিজের কর্মজীবন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন।[৬]
চলচ্চিত্রের সঙ্গে আরতির সম্পর্ক কিন্তু শেষ হয়নি। তিনি ভোজপুরি চলচ্চিত্রে নির্দেশনা এবং চিত্রনাট্য লেখা সহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি অন্বেষণ করতে চলে যান। সেখানে তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং জনপ্রিয় ভোজপুরি চলচ্চিত্র শিল্পে একজন বিশেষ চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে গণ্য।[৬]
চলচ্চিত্র কর্মজীবনে, আরতি তাঁর সময়ের সেরা কিছু পরিচালক এবং অভিনেতাদের সাথে কাজ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত কত্থক নৃত্যশিল্পী। তিনি সত্যজিৎ রায়ের সাথে 'জন অরণ্য' ছবিতে কাজ করেছিলেন।[৬]
আরতির অভিনয় জীবন দেড় দশক ধরে বিস্তৃত ছিল, কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যে, তিনি বাংলায় ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার মনোনীত হয়েছিলেন এবং 'আমি সে ও সখা' (১৯৭৬) ছবিতে অভিনয়ের জন্য মর্যাদাপূর্ণ বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছিলেন।[৬]
গণমাধ্যমে আলাপচারিতায় আরতি বলেছিলেন: “সত্যজিৎ রায় আমাকে 'ঘরে বাইরে' ছবিতে নিখিলেশের বৌদির চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে একটি শর্ত ছিল যে আমাকে মাথা ন্যাড়া করতে হবে কারণ এটি একটি বিধবা চরিত্র এবং এটি তখনকার বিধবাদের মধ্যে প্রথা ছিল। এমনকি আমি সত্যজিৎকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমি এই ভূমিকার জন্য একটি পরচুলা (ন্যাড়া দেখানোর জন্য ব্যবহৃত) ব্যবহার করতে পারি কিনা কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।”[৭] “আমি তখন পাঁচটি ছবিতে কাজ করছিলাম, যার মধ্যে দুটি ছিল উত্তম কুমারের সঙ্গে। আমার পক্ষে মাথা মুণ্ডন করা সম্ভব ছিল না কারণ তাহলে অন্যান্য প্রকল্পগুলিকে প্রভাবিত হত। তাই সুযোগটা ছেড়ে দিতে হলো,” বললেন আরতি ভট্টাচার্য।[৭] পরে, সত্যজিৎ সেই চরিত্রটিকে ন্যাড়া না দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরিবর্তে, চরিত্রটির চুল ছোট করে কাটা ছিল এবং ভূমিকাটি গোপা আইচকে দেওয়া হয়েছিল।[৭]
তাঁর অভিনীত বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে একটি হল স্ত্রী। এছাড়াও তিনি ১৯৭৬ সালে আনন্দমেলা চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবে কণ্ঠ দেন। [৮][৯] তিনি কয়েকটি হিন্দি এবং ভোজপুরি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন।
ভোজপুরি অভিনেতা এবং রাজনীতিবিদ কুনাল সিংকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। অভিনেতা আকাশ সিং তাঁদের ছেলে।