আরাকান | |
---|---|
বঙ্গোপসাগরের দিকে মিয়ানমারের পশ্চিম তীরে আরাকান অবস্থিত | |
অবস্থা | বৈশালী রাজ্য (৮ম-১০ম শতাব্দী) লেম্রো সময়কাল (১১শ শতাব্দী) বঙ্গের আশ্রিত রাজ্য (১৫শ শতাব্দী) ম্রাউক উ রাজ্য (১৫শ-১৮শ শতাব্দী) তৃতীয় বর্মী রাজ্যের অংশ (১৮শ শতাব্দী) ব্রিটিশ বার্মার বিভাগ (১৯শ শতাব্দী) মিয়ানমারের প্রদেশ (১৯৪৮–বর্তমান) |
রাজধানী | ধন্যবতী বৈশালী পিনসা পারেইন নারেইনজারা তোউঙ্গু লাউঙ্গেত (১২৫১–১৪২৯ ম্রাউক-উ (১৪৩০–১৭৮৫) সিতওয়ে (১৯শ শতাব্দী-বর্তমান) |
প্রচলিত ভাষা | আরাকানি, বর্মী, রোহিঙ্গা, বাংলা |
ধর্ম | বৌদ্ধ, হিন্দু, ইসলাম |
আরাকান (/ˈærəkæn/ বা /ˈɑːrəkɑːn/[১]) মিয়ানমারের (পূর্বে বার্মা) রাখাইন রাজ্যের ঐতিহাসিক ভৌগোলিক নাম। বর্মী সামরিক জান্তা ১৯৮৯ সালে এর নাম পরিবর্তন না করা পর্যন্ত এই অঞ্চলটিকে কয়েক শতাব্দী ধরে আরাকান বলা হত। এই অঞ্চলের মানুষ আরাকানি নামে পরিচিত ছিল।[২][৩][৪]
আরাকানের স্থাপিত প্রথমদিককার রাজ্যগুলোর ইতিহাস চতুর্থ শতাব্দী থেকে শুরু। আরাকান ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম ভারতীয়কৃত রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি বুদ্ধের পবিত্র মহামুণি ভাস্কর্যের ঠিকানা ছিল যা পরে ১৮শ শতাব্দীতে বর্মী বিজয়ীদের দ্বারা মান্দালয়ে স্থানান্তরিত হয়। ১৪২৮ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ৩৫৬ বছর ধরে আরাকান ম্রাউক উ শহর থেকে ম্রাউক উ রাজ্য দ্বারা শাসিত হয়। রাজ্যটি বাঙ্গালা সালতানাতের একটি আশ্রিত রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পরবর্তীতে নিজস্ব স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এবং এর রাজাদের জন্য মুসলিম উপাধি সহ বাঙ্গালা সালতানাতের রীতিনীতি গ্রহণ করে। আরাকান একটি জাতিগত ও ধর্মীয়ভাবে বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যার আবাসস্থল হয়ে ওঠে যেখানে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ও মুসলমানরা দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় তৈরি করে। এটি হিন্দু ও খ্রিস্টানদেরও বাসস্থান ছিল। পর্তুগিজরা এই অঞ্চলে সক্রিয় ছিল।[৩]
আরাকান বিভাগ ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি অংশ এবং পরে ব্রিটিশ বার্মার অধীনে পড়ে। ১৯ম থেকে ২০ শতাব্দীর প্রথম দিকে আরাকান ছিল বিশ্বের একটি প্রধান চাল রপ্তানিকারক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা অভিযানের অংশ হিসেবে মিত্র বাহিনীর দ্বারা জাপানিদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি আরাকান অভিযান পরিচালিত হয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার পর আরাকানে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন ঘটে। ১৯৬২ সালের বর্মী অভ্যুত্থানের পর দেশে মানবাধিকারের অবনতি ঘটে। ১৯৭৪ সালে একটি বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন প্রণীত হয়। ১৯৮২ সালে বেশিরভাগ আরাকানি মুসলমানদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। বার্মার সামরিক শাসকদের দ্বারা নাগরিকত্বের একটি পৃথক ব্যবস্থা চালু করা হয়। আরাকানি বৌদ্ধ ও মুসলমান উভয়ই ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদের অভিজ্ঞতা লাভ করে যাদের মধ্যে স্বাধিকারের আশা ছিল। ১৯৭৪ সালে বার্মার বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের পর, বৌদ্ধরা রাখাইন ও মুসলমানরা রোহিঙ্গা নামে পরিচিতি লাভ করে। এই অঞ্চলটি ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা গণহত্যার স্থান ছিল।