আর্জেন্টিনা ডায়াজ লোজানো | |
---|---|
জন্ম | আর্জেন্টিনা বুসো মেজিয়া ১৫ ডিসেম্বর ১৯১২ |
মৃত্যু | ১৩ আগস্ট ১৯৯৯ তেগুসিগালপা, হন্ডুরাস | (বয়স ৮৬)
জাতীয়তা | হন্ডুরীয় |
পেশা | লেখিকা, নারী অধিকার কর্মী, ভোটাধিকার আন্দোলনকারী ও কূটনীতিবিদ |
কর্মজীবন | ১৯৪৩-১৯৯৯ |
আর্জেন্টিনা ডায়াজ লোজানো (স্পেনীয়: Argentina Díaz Lozano; জন্ম: ১৫ ডিসেম্বর, ১৯১২ - মৃত্যু: ১৩ আগস্ট, ১৯৯৯) তেগুসিগালপা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী হন্ডুরাসের বিশিষ্ট লেখিকা, নারী অধিকার কর্মী, নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনকারী ও কূটনীতিবিদ ছিলেন। আর্জেন্টিনা ‘ডায়াজ লোজানো’ তার ছদ্মনাম। জন্মকালীন তার নাম ছিল আর্জেন্টিনা বুসো মেজিয়া। তিনি মহিলা সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক ছিলেন। নারীবাদী বিষয়কে উপজীব্য করে আবেগপ্রবণ ধাঁচে উপন্যাস লিখতেন। তার সাহিত্যকর্মের জন্য অগণিত পুরস্কার লাভ করেছেন। তন্মধ্যে, গুয়াতেমালা থেকে গোল্ডেন কুয়েটজেল, হন্ডুরাসের জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার রামোন রোসা ও ব্রাজিল থেকে ‘অর্ডার ক্রুজিরো দো সাদ’ অন্যতম। একাডেমিয়া হন্ডুরেনা ডে লা লেঙ্গুয়ায় অধ্যয়ন করেছেন। একমাত্র মধ্য আমেরিকান নারী হিসেবে তার সাহিত্যকর্মের জন্য সরকারীভাবে নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।
আর্জেন্টিনা বুসো মেজিয়া’র জন্মসালরূপে ১৯০৯, ১৯১০[১] ও ১৯১৭ সালকে উল্লেখ করা হয়েছে।[২] তবে, ১৫ ডিসেম্বর, ১৯১২ তারিখকে তাঁর জন্মদিনরূপে সাধারণভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। ঐদিন তিনি সান্তা রোজা ডে কোপান এলাকায় বিশিষ্ট হন্ডুরীয় ব্যবসায়ী ম্যানুয়েল বুসো পিনেদা ও ত্রিনিদাদ মেজিয়া দম্পতির সন্তানরূপে পৃথিবীতে আসেন।[৩][৪][৫] ১৯২৫ থেকে ১৯২৮ সময়কালে তেগুসিগালপার কলিজিও মারিয়া অক্সিলিয়াদোরায় পড়াশোনা করেন। এরপর ফ্লোরিডার টাম্পায় হলি নেম একাডেমি থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপণ করেন।
১৯২৯ সালে তিনি পোরফিরিও ডায়াজ লোজানোর সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।[৬] তাঁর পারিবারিক নামকেই সাহিত্যকর্মে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেন।[৫] ইউনিভারসিডাড ডে স্যান কার্লোস ডে গুয়াতেমালা থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।[২]
১৯৫১ সালের মধ্যে তিনি তাঁর প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটান। তবে, তাঁর নামটি সযত্নে নিজের নামের সাথে রেখে দেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সালের কোন এক সময়ে গুয়েতমালীয় কূটনীতিবিদ ডারিও মোরালেস গার্সিয়া’র সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন।
গুয়াতেমালায় অধ্যয়নকালে সংবাদপত্রে লেখতে শুরু করেন। ‘ডায়ারিও ডে সেন্ট্রোআমেরিকা’, ‘লা হোরা’, ‘এল ইম্পার্সিয়াল’ ও ‘প্রেনসা লাইব্রেতে’ নিবন্ধ প্রকাশ করেন এবং এক পর্যায়ে বেশ কয়েকটি গুয়াতেমালীয় সংবাদপত্রের লেখা ধারণকারী ‘জুভেস লিটারারিয়াসে’ সাপ্তাহিক কলাম লিখতেন।[৫] তার প্রথম উপন্যাস ‘পারলাস ডে মি রোসারিও (কুনটস)’ ১৯৩০ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে পরবর্তী উপন্যাসগুলো প্রকাশ পায়। ১৯৪৪ সালে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করেন। ‘পেরেগ্রিনাজের’ জন্য প্রথম সাহিত্য পুরস্কার পান। লাতিন আমেরিকার এ প্রতিযোগিতাটি প্যান-আমেরিকান ইউনিয়ন ও ফারার এন্ড রাইনহার্ট প্রকাশনা সংস্থা যৌথভাবে পরিচালনা করে। এ পুরস্কার প্রাপ্তির ফলে তার বই চিলির সান্তিয়াগোতে স্পেনীয় ভাষায় ও ইংরেজিতে ফারার এন্ড রাইনহার্টের মাধ্যমে ‘এনরিকুয়েটা এন্ড আই’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি ইউরোপীয় স্বীকৃতি আদায়ে সক্ষমতা দেখায়।[২] ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫ সময়কালে ডায়াজ লোজানো স্যান কার্লোস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অ্যানথ্রোপোলজি ও ইতিহাস ইনস্টিটিউটের গ্রন্থাগারে কাজ করেন।[৭] এছাড়াও তিনি নারীবাদী ঘটনার সাথে জড়িত হতে থাকেন। প্রিমার কংগ্রেসো ইন্তারআমেরিকানো ডে মুজেরেসে স্যান পেড্রো সুলা ও তেগুসিগালপার কমিটেস প্রো পাজ ওয়াই লিবারটাডের পক্ষে অংশ নেন।
১৯৫৬ সালে ডায়াজ লোজানো মোরালেসের সাথে বেলজিয়ামে চলে যান।[৭] সেখানে মোরালেস তাকে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পে গুয়াতেমালার কনসাল পদে নিযুক্ত করেন। ইউরোপে থাকাকালে নেদারল্যান্ডসের আট্রেখট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন আর্টস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন ও ফরাসি ভাষায় বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার গ্রন্থ ‘ম্যানসিয়ন ইন লা ব্রুমা’ লিজিয়া বার্নাল ডে সামাওয়া নামে মঞ্চস্থ হয়। ১৯৬৪ সালে ঐ গ্রন্থটি গুয়াতেমালার গোল্ডেন কুয়েটজেল পুরস্কার জয় করে ও বর্ষসেরা পুস্তকের মর্যাদা পায়।[২] এরপর ডায়াজ লোজানো বেলজিয়াম থেকে ফিরে আসেন ও গুয়াতেমালায় হন্ডুরীয় দূতাবাসে কালচারাল অ্যাটাশিরূপে নিযুক্তি লাভ করেন।[৭]
১৯৬৭ ও ১৯৬৮ সালে গুয়াতেমালার উপ-রাষ্ট্রপতি ক্লিমেন্তে মারোকুইন রোজাসের সাথে একগুচ্ছ স্বাক্ষাৎকার পর্ব পরিচালনায় অগ্রসর হন। যদিও তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না,তবুও তিনি তাকে রাজনীতিতে জড়ানোর বিষয়টি দেখতে পান ও ব্যক্তিগতভাবে জানান। ১৯৬৮ সালে তার আত্মজীবনী প্রকাশ করেন ও হন্ডুরীয় জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার ‘রামোন রোজা’ লাভ করেন ও একাডেমিয়া হন্ডুরেনা ডে লা লেঙ্গুয়ায় অন্তর্ভুক্ত হন।[৭] পাশাপাশি ব্রাজিল সরকার কর্তৃক ‘অর্ডার ক্রুজিরো দো সাদ’ লাভ করেন।[২] ১৯৭১ সালে ‘রেভিস্তা ইস্তমেনা’ সাময়িকী প্রকাশ করেন ও ‘সুকি ইউতো’ ছদ্মনামে ‘সু হোরা’ উপন্যাসকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে থাকেন। ১৯৮৬ সালে ঐ উপন্যাসটি ‘কাওবা ওয়াই অর্কুইডিয়াস: নভেলা’ শিরোনামে প্রকাশ করেন। ১৯৭৩ সালে ‘আকুয়েল আনো রোজো: নভেলা’ প্রকাশ করেন এবং ঐ বছরের জুন মাসে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের জন্য ঘোষিত হন। তার প্রার্থীতা গৃহীত হয় ও ১৯৭৪ সালের পুরস্কার লাভের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেরণ করা হয়।[৭] এরফলে একমাত্র মধ্য আমেরিকান নারী হিসেবে তার সাহিত্যকর্মের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হবার গৌরব অর্জন করেন।[৮][৯]
১৯৭৬ সালে গুয়াতেমালায় ভূমিকম্প হলে অ্যান্টওয়ার্পে নিজ আবাস সরিয়ে নেন এবং ভ্রমণ শেষে বেলজিয়াম ও গুয়াতেমালা সফর করেন। ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত প্রকাশনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯ সালে নিজ জন্মভূমি হন্ডুরাস সফরের জন্য সিদ্ধান্ত নেন।[৭]
১৩ আগস্ট, ১৯৯৯ তারিখে ৮৬ বছর বয়সে হন্ডুরাসের তেগুসিগালপা এলাকায় তার দেহাবসান ঘটে।[১]