আরবি: الجامعة الإسلامية فتية | |
অন্যান্য নাম | পটিয়া মাদ্রাসা |
---|---|
প্রাক্তন নাম | জমিরিয়া কাসেমুল উলুম |
ধরন | কওমি মাদ্রাসা |
স্থাপিত | ১৯৩৮ |
প্রতিষ্ঠাতা | আজিজুল হক |
মূল প্রতিষ্ঠান | দারুল উলুম দেওবন্দ |
অধিভুক্তি | আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ |
ধর্মীয় অধিভুক্তি | ইসলাম |
সদরে মুহতামিম | আহমাদুল্লাহ |
মহাপরিচালক | আবু তাহের নদভী |
শায়খুল হাদিস | আহমাদুল্লাহ |
প্রধান মুফতি | আহমাদুল্লাহ |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ১৫০ |
শিক্ষার্থী | ৫০০০ |
অবস্থান | ২২°১৭′৪৫″ উত্তর ৯১°৫৯′০০″ পূর্ব / ২২.২৯৫৯২৯° উত্তর ৯১.৯৮৩২২৬° পূর্ব |
শিক্ষাঙ্গন | শহরতলি (২০ একর) |
মুখপত্র | মাসিক আত তাওহীদ |
ওয়েবসাইট | jamiahislamiahpatiya |
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া সংক্ষেপে পটিয়া মাদ্রাসা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি কওমি মাদ্রাসা। জমিরুদ্দিন আহমদের নির্দেশে আজিজুল হক ১৯৩৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। একটি আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেও এর পরিচিতি রয়েছে।[১] বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার, কওমি মাদ্রাসা সমূহকে এক সিলেবাসের অধীনে অন্তর্ভূক্তকরণ, আলেমদের আধুনিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এই মাদ্রাসার ভূমিকা রয়েছে।[১] একই ধরনের প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাটহাজারী মাদ্রাসার অনেক পরে প্রতিষ্ঠিত হলেও অনেকের মতে এটি অনেক ক্ষেত্রে হাটহাজারী মাদ্রাসাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই মাদ্রাসার তাজবীদ ও হিফজ বিভাগদ্বয় সমগ্র বাংলাদেশে দুটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়।[২] এটি আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের অধিভুক্ত। মাসিক আত তাওহীদ এই মাদ্রাসার মুখপত্র।
মাদ্রাসার প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন আজিজুল হক। বর্তমানে মাদ্রাসার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন আবু তাহের নদভী। মাদ্রাসার দ্বিতীয় মহাপরিচালক মুহাম্মদ ইউনুসের সময়ে মাদ্রাসার ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়। ১৯৪৫ সালে ইব্রাহিম বালিয়াভির মাধ্যমে এই মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস চালু করা হয়।[৩][৪] মাদ্রাসার বর্তমান শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি হিসেবে আছেন আহমাদুল্লাহ।[৩] ১৯৬০ সালে প্রণীত সংবিধানের ভিত্তিতে মাদ্রাসার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাদ্রাসাটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি এটি সমাজসেবা ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এজন্য মাদ্রাসার পরিচালিত সংস্থার মধ্যে রয়েছে: আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তাহফীজুল কুরআন সংস্থা, ইসলামি ত্রাণ কমিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামি সম্মেলন সংস্থা, নও মুসলিম ফাউন্ডেশন।
আধুনিক শিক্ষার জন্য পটিয়াতে বহু আগে ২টি মানসম্মত উচ্চ বিদ্যালয় এবং চারপাশে একই ধরনের বহু মহাবিদ্যালয়, প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই অঞ্চলে বহু মাজার থাকলেও ধর্মীয় শিক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ধর্মীয় শিক্ষার এই চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পূর্বে প্রায় ২৫ কি.মি. দূরে এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।[৫]
শাহ আহমদ হাসান শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর তার ইচ্ছা ছিল তিনি চট্টগ্রাম শহরে অথবা পটিয়া থানার পার্শ্বে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করবেন। পিতার একমাত্র পুত্র হওয়ায় বাড়ি থেকে দূরবর্তী স্থানে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার অনুমতি না পাওয়ায় বাড়ির নিকটবর্তী নিজস্ব জমিতে তিনি জিরি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।[৬] সাথে সাথে তার ইচ্ছা পূরণের প্রচেষ্টাও চালিয়ে যান। তার প্রচেষ্টার ফলে পটিয়া থানার বাসিন্দা মনুমিয়া দফাদার তার একটি অচল বিস্কুটের দোকান ফোরকানিয়া মাদ্রাসার জন্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। জায়গা পেয়ে শাহ আহমদ হাসান জিরি মাদ্রাসার ফান্ড থেকে বেতন নির্ধারিত করে কারী মুসলেমকে সেখানের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করে একটি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা চালু করেন। এভাবে দুই বছর চলার পর স্থানীয় লোকজন চাঁদার ভিত্তিতে তার সম্মানী নির্ধারণ করেন।[৭] ১৯৩৮ সালে জমিরুদ্দিন আহমদ তার শিষ্য ও জিরি মাদ্রাসার শিক্ষক আজিজুল হককে পটিয়াতে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
“ | দ্বীনের সূর্য উদয়ের মধ্যে পটিয়ার আকাশে ঘূর্ণায়মান খণ্ড খণ্ড কালো মেঘমালা বিদূরিত করতে সেখানে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করো। পটিয়া হলো কেন্দ্রীয় স্থান। এর মাধ্যমে বহু এলাকা আলোকিত হবে। | ” |
— [৮] |
নির্দেশ পেয়ে আজিজুল হক পটিয়ায় একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু করেন। তিনি তার শিষ্য জিরিস্থ আমজাদ আলী খানকে পটিয়ায় পাঠিয়ে দেন, যাতে আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা মাসউদের সাথে সাক্ষাত করে একটি মাদ্রাসা স্থাপনের জন্য কিছু জায়গার ব্যবস্থা করা যায়।[৯] জায়গার ব্যবস্থা না হওয়ায় মাওলানা মাসউদ আমজাদ আলী খানকে পূর্বে প্রতিষ্ঠিত শাহ আহমদ হাসানের ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় সহশিক্ষক হিসেবে পাঠদানের ব্যবস্থা করে দেন।[৯] কিছুদিন পর আজিজুল হক, শাহ আহমদ হাসান সহ প্রমুখ জিরি থেকে পটিয়ায় আগমন করেন।[১০] তাদের প্রচেষ্টার ফলে মনুমিয়া দফাদার মাদ্রাসার জন্য জায়গা দিতে সম্মত হলেন। জায়গা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর আপাতত ওয়াহেদ আলীর মসজিদে মাদ্রাসার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।[১১] উপরোক্ত সিদ্ধান্তমতে তারা এবং স্থানীয় কিছু লোক সেদিন ওয়াহেদ আলীর মসজিদে যোহরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে উক্ত মনীষীগণ ও উপস্থিত মুসল্লীগণের সমাবেশে তিনজন ছাত্রকে কুরআনের প্রথম পাঠ দেওয়া হয়। এটি পরিচালনা করেন হাটহাজারী মাদ্রাসার ভূতপূর্ব শায়খুল হাদিস জিরি নিবাসী মাওলানা এয়াকুব। মোনাজাত শেষে পূর্বের কারী মুসলিম ও আমজাদ আলী খানের সাথে নাইখাইন নিবাসী মাওলানা ঈসা ও বোয়ালখালী থানার অন্তর্গত মোহরা নিবাসী মাওলানা আহমদকে বিনাবেতনে পড়ানোর জন্য নিযুক্ত করা হয়। এই চারজনকে মাদ্রাসা পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আজিজুল হক সহ অন্যান্যরা জিরি মাদ্রাসায় চলে যান।[১১]
এভাবে এক মাস চালানোর পর মনুমিয়া দফাদার পূর্বের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বর্তমান পটিয়া মাদ্রাসার পশ্চিম গেইটের পূর্বপার্শ্বে আড়াই গণ্ডা জমি মাদ্রাসার জন্য দান করেন।[১২] সে জমির উপর সর্বপ্রথম ১৯ হাত লম্বা ৭ হাত প্রস্থ পশ্চিমমুখী দরজা করে একটি বাঁশের ঘর তৈরি করা হয়। অতঃপর তারা সে বাঁশের ঘরে শিক্ষাদান করা আরম্ভ করেন। এভাবে কিছুকাল অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত জমির পশ্চিম পার্শ্বে ২৭ হাত লম্বা ৭ হাত প্রস্থ করে পূর্বমুখী একটি মাটির ঘর তৈরি করা হয়। সে সময় তাদের সঙ্গে মাওলানা মাসউদকেও শিক্ষকতা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চতুর্দিক হতে বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্রদের সমাবেশ হয়। মাদ্রাসাটি জামাতে হাশতুম পর্যন্ত উন্নীত হয়।[১২] ইতিমধ্যে মাদ্রাসা পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যাপারে স্থানীয় মাদ্রাসার সাহায্যকারীদের মধ্যে কিছু মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। ফলে ১৯৪০ সালে জিরি মাদ্রাসা থেকে আজিজুল হক স্থায়ীভাবে পটিয়া মাদ্রাসায় চলে আসেন এবং মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি মাদ্রাসার নাম দিয়েছিলেন জমিরিয়া কাসেমুল উলুম। ৫/৬ বছরের মধ্যে মাদ্রাসাটি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার শেষ স্তর দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত চালু করতে সক্ষম হয়।[১৩]
মাদ্রাসার শুরু থেকে ইমাম আহমদ সদরুল মুদাররিস বা প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রায় ৫৭ বছর অধ্যাপনা করেছেন।[১৪] ১৩৬৬ হিজরিতে ইব্রাহিম বালিয়াভির মাধ্যমে মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস উদ্ভোদন করা হয়।[১৫] প্রতিকূল পরিবেশে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর বিরোধীরা মাদ্রাসাটি ধ্বংস করার জন্য আগুন লাগিয়ে দেয়।[১৬] এতে মাদ্রাসা ঘর ও কিতাব সমূহ পুড়ে যায়। ১৯৪৫ সালে আজিজুল হকের আহ্বানে হাজী মুহাম্মদ ইউনুস পটিয়া মাদ্রাসায় যোগদান করেন এবং ছাত্রাবাস পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১৭] ১৯৫৯ সালে আজিজুল হক তাকে মহাপরিচালক হিসেবে ঘোষণা দেন।[১৮] দায়িত্ব পেয়ে মুহাম্মদ ইউনুস সুষ্ঠুভাবে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য ১৯৬০ সালে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন।[১৯] তিনি মাদ্রাসার সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংযোজন বিয়োজন করে প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চালু করেন। স্নাতকোত্তর পরবর্তী বিশেষায়িত পড়াশোনার জন্য উচ্চতর তাফসির বিভাগ, উচ্চতর হাদিস বিভাগ, উচ্চতর ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ, বাংলা সাহিত্য ও ইসলামি গবেষণা বিভাগ, আরবি সাহিত্য ও ইসলামি গবেষণা বিভাগ, তাজবীদ ও কেরাত বিভাগ, ভাষা প্রশিক্ষণ বিভাগ, কাব্যচর্চা বিভাগ, দেয়ালিকা ও সাময়িকী প্রকাশনা বিভাগ, সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও বিতর্ক অনুশীলন বিভাগ, দাওয়াত ও তাবলীগ বিভাগ, ফতোয়া প্রদান বিভাগ, প্রশিক্ষণ বিভাগ চালু করেন।[২০] ১৯৬৬ সালে ছিদ্দিক আহমদ মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।[২১] এছাড়াও মুহাম্মদ ইউনুস মুফতি আব্দুর রহমান, উবায়দুল হক, সুলতান যওক নদভী, আব্দুল হালিম বুখারী প্রমুখকে মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।[২২] ১৯৭১ সালে তিনি মাদ্রাসার মুখপত্র হিসেবে মাসিক আত তাওহীদ প্রকাশ করেন।[২৩] এছাড়াও নওমুসলিম পুনর্বাসন কেন্দ্র, অভ্যন্তরীণ ডাক বিভাগ চালু করেন।[২৪] সাত তলা মিনার ও তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদ, শিক্ষাভবন, দারে জাদিদ এবং তৎসংলগ্ন ছোট মসজিদ, হিফজখানা ভবন, হাসপাতাল, কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, গভীর নলকূপ স্থাপন, পুকুর খনন, মাদ্রাসার অভ্যন্তরে ১টি সহ মোট পাঁচটি কোয়ার্টার নির্মাণ করে মাদ্রাসার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করেন।[২৫] তার সময়ে মুসলিম বিশ্বে মাদ্রাসার ব্যাপক পরিচিতি গড়ে উঠে। তার সময়ে মক্কার ইমাম আব্দুল্লাহ বিন সুবাইল, মদিনার ইমাম আবদুল্লাহ মুহাম্মদ জাহিম, আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী, ইউসুফ কারযাভী, কারী মুহাম্মদ তৈয়ব, শফি উসমানি, ইউসুফ বানুরী, জাফর আহমদ উসমানি, তাকি উসমানি প্রমুখ মাদ্রাসা পরিদর্শনে আসেন।[২৬] ১৯৭১ সালে তিনি এই মাদ্রাসার সাথে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাচুক্তি সম্পন্ন করেন।[২৭] বাংলাদেশের হিফজ মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য তিনি বাংলাদেশ তাহফীজুল কুরআন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[২৮] একটি ছোট্ট মাদ্রাসাকে তিনি জামিয়াতে পরিণত করেন। তার হাতে এটি একটি আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিয়েছিল।[২৯] ১৯৯২ সালে তার মৃত্যুর পর হারুন ইসলামাবাদী মাদ্রাসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[২৯] আর আলী আহমদ বোয়ালভী সদরে মুহতামিম বা উপদেষ্টা পরিচালক নির্বাচিত হন।[৩০] এসময় ইসহাক আল গাজী পুনরায় মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।[৩১] হারুন ইসলামাবাদী এই মাদ্রাসার সাথে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাচুক্তি সম্পন্ন করেন।[৩২] আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের আলেম হওয়ার সুযোগ প্রদানের নিমিত্তে ১৯৯৭ সালে তিনি শর্টকোর্স বিভাগের গোড়াপত্তন করেন।[৩৩] ২০০২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অকস্মাৎ মাদ্রাসায় হামলা করে মাদ্রাসার সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়।[৫] ২০০৩ সালে হারুন ইসলামাবাদী মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নির্মাণ করেন।[৩৪] এছাড়াও তিনি সাহিত্য সংগঠন আন নাদী আস সাকাফী এবং আরবি সাময়িকী বালাগুশ শরক চালু করেন।[৩৩] ২০০৩ সালে হারুন ইসলামাবাদীর মৃত্যুর পর নুরুল ইসলাম কাদীম মাদ্রাসার মহাপরিচালক নির্বাচিত হন।[২৯] ২০০৮ সালে মাদ্রাসার চতুর্থ মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুল হালিম বুখারী। তিনি তার তত্ত্বাবধানে পণ্ডিতদের নিয়ে ৪০ খণ্ডের একটি ফতোয়াকোষ প্রণয়নের বৃহৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন।[৩৫] বুখারীর মৃত্যুর পর ২০২২ সালে ওবায়দুল্লাহ হামযাহ মহাপরিচালক নির্বাচিত হন।[৩৬] একইসাথে সুলতান যওক নদভীকে প্রধান উপদেষ্টা, আমিনুল হককে সদরে মুহতামিম, আহমাদুল্লাহকে শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি এবং আবু তাহের নদভীকে সহকারী পরিচালক মনোনীত করা হয়।[৩৭][৩৮] ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'র দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের মতবিরোধ বাড়তে থাকে যা ২০২৩ সালের শেষ দিকে এসে বড় আকার ধারণ করে।[৩৯] ২০২৪ সালের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে মাদ্রাসার ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৪ আগস্ট মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মিছিল বের হলে সরকার সমর্থকদের সাথে সশস্ত্র সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন ২০ জন।[৪০] অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর সাবেক পলাতক সাংসদ মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সহ তার বাহিনীর ৩৭৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।[৪১]
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর এই বেতার কেন্দ্র পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। হামলার ভয়ে জিয়াউর রহমান সম্প্রচারকেন্দ্রটি রক্ষা করতে এই মাদ্রাসায় এসে আশ্রয় নেন। মাদ্রাসার মেহমানখানা তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে পুনরায় অস্থায়ী বেতারকেন্দ্রটি চালু করা হয়। তবে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ভয়ে তারা সেখান থেকে চলে যান। মাদ্রাসায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার খবর পাওয়ার পর পাকিস্তান বিমানবাহিনী মাদ্রাসায় বোমাবর্ষণ করে। এতে মাদ্রাসার জোষ্ঠ্য শিক্ষক আব্দুল মান্নান দানিশ ও আরেক শিক্ষক জেবুল হাসানের এক মেহমান নিহত এবং বহু লোক আহত হন। পুকুরপাড়ে অবস্থিত একটি ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। এই হামলায় সাহিত্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এদারাতুল মাআরিফের কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর পরিচালক হারুন ইসলামাবাদীর বহু পাণ্ডুলিপি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।[৪২][৪৩]
২০২২ সালে ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'র নিয়োগের পর থেকে তাকে নিয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা মজলিসে শূরার সভা আহ্বান করেন মাদ্রাসার সদরুল মুদাররিস আহমাদুল্লাহ ও সহকারী মহাপরিচালক আবু তাহের নদভী। ওবায়দুল্লাহ হামযাহ দেশের বাহিরে থাকায় সে সভায় সাড়া না দিয়ে মজলিসে শূরার সভাপতি সুলতান যওক নদভী পরবর্তীতে ওবায়দুল্লাহ হামযাহকে সাথে নিয়ে মজলিসে শূরার বৈঠকের আহ্বান করেন। ফলশ্রুতিতে ১১ অক্টোবরের সভাটি মুলতবি ঘোষিত হয়।[৪৪] যথাসময়ে মজলিসে শূরার সভা অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে ১৭ অক্টোবর ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন আহমাদুল্লাহ, আবু তাহের নদভী, শামসুদ্দিন জিয়া, একরাম হোসাইন এবং আব্দুল জলিল কাওকাব।[৪৫] একইদিন মহাপরিচালক ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'র পক্ষ থেকে ২ নভেম্বর শূরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ ক্লাস বর্জনের স্বীদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন।[৪৬] ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য শূরা বৈঠকের আগেই ২৮ অক্টোবর রাতে ওবায়দুল্লাহ হামযাহ বিরোধী ছাত্রদের বিক্ষোভ শুরু হয়। তাদের দাবি অনুযায়ী ওবায়দুল্লাহ হামযাহ মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে অসাদাচারণ, স্বেচ্ছাচারিতা, ছাত্রদের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাধা প্রদানের প্রেক্ষিতে তারা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'র পদত্যাগের এক দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এদিন রাতে তারা মাদ্রাসা অবরোধ করে মাদ্রাসার মাইকে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মহাপরিচালকের বাসভবনে ভাঙচুর চালায় এবং একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে মহাপরিচালককে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা মহাপরিচালকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত জাকারিয়াসহ বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে। এই বিক্ষোভের পর থেকে ওবায়দুল্লাহ হামযাহ বিরোধী ছাত্র-শিক্ষকরা মাদ্রাসাটি নিয়ন্ত্রণ করছে।[৪৭] তাদের নিয়ন্ত্রণে ২৯ অক্টোবর মজলিসে শূরার কিছু সদস্যদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মজলিসে শূরার প্রধান সুলতান যওক নদভী উপস্থিত ছিলেন না। বিপরীতে মজলিসে শূরার বাইরে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও খলিল আহমদ কাসেমী উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'র পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে স্বীদ্ধান্ত দিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পর্ষদ গঠন করা হয় যার আহ্বায়ক হন আবু তাহের নদভী। ২৯ অক্টোবরের বৈঠককে অবৈধ আখ্যা দেন ওবায়দুল্লাহ হামযাহ। তার দাবি অনুযায়ী, তার পদত্যাগপত্রটি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। কিছু বহিরাগত মুখোশ পরিহিত সন্ত্রাসীর সশস্ত্র হত্যার হুমকির মুখে জিম্মি করে পুরো পরিবারকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক এই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় তিনি ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৬০-৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় এজাহার দাখিল করেন।[৪৮] একইভাবে মজলিসে শূরার এই বৈঠকটিকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে বিবৃতি প্রদান করেন মজলিসে শূরার প্রধান সুলতান যওক নদভী। এই বিবৃতিতে তিনি এই বৈঠকে মাত্র তিনজন শূরা সদস্যের উপস্থিতি দেখিয়ে অচিরেই নতুন আরেকটি নিয়মতান্ত্রিক শূরা বৈঠকের প্রতিশ্রুতি দেন।[৪৯] প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩ নভেম্বর সুলতান যওক নদভীর উপস্থিতিতে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মাদ্রাসাটি ওবায়দুল্লাহ হামযাহ বিরোধী ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় মাদ্রাসা সংলগ্ন সরকারি ডাকবাংলোয়। এই বৈঠকে মজলিসে শূরার বাইরে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় এমপি সামশুল হক চৌধুরী, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পটিয়া সহকারী কমিশনার (ভুমি)। এতে ওবায়দুল্লাহ হামযাহকে স্বপদে বহাল রাখার স্বীদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং মাদ্রাসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।[৫০] ১৪ নভেম্বর ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'র পক্ষে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে শত শত ছাত্র-শিক্ষক পটিয়া কলেজ মাঠে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে ৩ নভেম্বরের মজলিসে শূরার স্বীদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানান।[৫১] ৫ ডিসেম্বর উভয়পক্ষের মধ্যে পুনরায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফলে ২৯ অক্টোবরে গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আহমদুল্লাহ ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে মহাপরিচালকের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে মর্মে প্রশাসনকে একটি লিখিত দেন এবং তা করতে ব্যর্থ হলে মাদ্রাসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।[৫২] ২৯ অক্টোবরে গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ ১০ ডিসেম্বর মজলিসে শূরার সভা আহ্বান করে। এতে মাদ্রাসার ১৭ সদস্য বিশিষ্ট মূল শূরা কমিটিকে বাদ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদের মনোনীতদের দিয়ে নতুন শূরা কমিটির বৈঠক আহ্বান করায় আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। মাদ্রাসার বাইরে ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'র সমর্থকদের অবস্থান গ্রহণের কারণে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী মাদ্রাসায় প্রবেশে ব্যর্থ হন। ফলশ্রুতিতে ১০ ডিসেম্বরে বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি হয় নি।[৫৩] ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর আগমনের ফলে পুনরায় উত্তেজনা দেখা যায়।[৫৪] এতে দেড় ঘণ্টা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।[৫৫] ৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ পুনরায় ১৪ ফেব্রুয়ারি মজলিসে শূরার বৈঠক আহ্বান করে। এই বৈঠকে পূর্বের শূরার ৮ জনের উপস্থিতি সহ বর্ধিত ১৯ সদস্যের শূরা সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে স্বীদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারির শূরা বৈঠকের স্বীদ্ধান্ত অনুযায়ী, আহমদুল্লাহকে সদরে মুহতামিম এবং আবু তাহের নদভীকে মহাপরিচালক ঘোষণা করা হয়।[৫৬] ১১ মার্চ সুলতান যওক নদভী ও ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'র উপস্থিতিতে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৪ ফেব্রুয়ারির বৈঠককে অসাংবিধানিক, নিয়মবহির্ভূত ও হাইকোর্টের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে সমস্যা সমাধানে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়।[৫৭] একইভাবে ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'কে সমর্থন করে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক-ছাত্রদের সমন্বয়ে পটিয়া মাদ্রাসা ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ গঠিত হয়। তারা ২৮ মার্চের সংবাদ সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারির শুরাকে অবৈধ আখ্যায়িত করে পটিয়া মাদ্রাসার ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার অভিযোগ করেন এবং পুনরায় বৈধ মজলিসে শূরার আহ্বান করেন।[৫৮]
হাজী মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৮৫ সালে এই ভবনটি নির্মাণ করেন। এই ভবনে তাজবীদ, মিজান, কাফিয়া, হিদায়াতুন্নাহু, শরহে জামী, শরহে বেকায়া, হিদায়া, মিশকাত ও দাওরায়ে হাদিসের জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সংবর্ধনা প্রদান, মাদ্রাসা ও বোর্ডের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার জন্য এখানে একটি হল আছে। ভবনের দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশে আছে শিক্ষা বিষয়ক অফিস এবং অধিবেশন কক্ষ।[৫৯]
মাদ্রাসার দ্বিতীয় মহাপরিচালক হাজী মুহাম্মদ ইউনুসের নামানুসারে এই ভবনের নামকরণ করা হয়েছে। এটি মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কর্ণারে অবস্থিত। এটি সম্পূর্ণই ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে এখানে তাখাসসুস ফিল লুগা আল আরাবিয়ার একটি শ্রেণীকক্ষ ছিল। এ ভবনটির মধ্যখানে মাদ্রাসার ছাত্রদের আয়রনমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পৌঁছাবার জন্য একটি ফিল্টার বসানো হয়েছে। নীচতলায় আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী ও শহীদ আব্দুল গফুর রহ. পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।[৬০] বর্তমানে হাজী ইউনুস রহ. হলের একাংশ সংস্কার করে জাদিদ মঞ্জিল নির্মিত হয়েছে।
হাজী মুহাম্মদ ইউনুস হিফজের জন্য তিনতলা বিশিষ্ট তাহফিজুল কুরআন হল নির্মাণ করেন। নীচ তলাতে নাজেরা বিভাগ, ২য় তলা হিফজ বিভাগের ছাত্রদের পাঠদান কক্ষ। তিন তলায় আছে ছাত্রদের পৃথক ছাত্রাবাস। তাছাড়া হিফজ বিভাগের পূর্ব পাশে একটি মাঠ রয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। আর পশ্চিম পাশে একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরটির চতুর্দিক পাকা।[৬০]
২০০৩ সালে চারতলা বিশিষ্ট মাদ্রাসার কেন্দ্রিয় লাইব্রেরি নির্মাণ করেন হারুন ইসলামাবাদী। এই লাইব্রেরিতে অনেক দুর্লভ গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়।[৬১]
দারে জাদিদ হলটি শুধুমাত্র দাওরায়ে হাদিসের ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত। চারতলা বিশিষ্ট বিশাল ভবনে ছোট ছোট কক্ষ নির্মাণ করে ছাত্রদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দারে জাদিদের ছাত্রদের জন্য পৃথক একটি মসজিদও রয়েছে।[৬১]
এ ভবনে মেহমানখানা, আন নাদী আস সাকাফী, ইসলামি ত্রাণ কমিটি, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, মোশাআরা দফতর, দারুল ইফতা, আন্তর্জাতিক তাহফিজুল কুরআন সংস্থার কার্যালয় অবস্থিত।[৬২]
তিনতলা বিশিষ্ট তিব্বিয়া ভবনটিতে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের জন্য একটি আধুনিক শর্টকোর্স বিভাগ চালু আছে। তাছাড়া ভবনের নীচ তলায় দাতব্য চিকিৎসালয় ও কমিনিউটি হেলথ ওয়ার্কার ট্রেনিং কোর্স চালু ছিল। এ ভবনটি মাদ্রাসার দক্ষিণ পূর্ব প্রান্ত ঘেঁষে অবস্থিত।[৬৩]
পুকুরের সোজা পশ্চিম পার্শ্বে এ ভবনটি অবস্থিত। এখানে মাদ্রাসার বাংলা বিভাগ, ইবতেদায়ী, মিযান, নাহবেমীর শ্রেণী কক্ষসহ পৃথক ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এ হলের নীচ তলায় মাসিক আত তাওহীদের অফিস রয়েছে।[৬৩]
টেকনিক্যালের ছাত্রদের জন্য মাদ্রাসার উত্তর-পূর্ব কোণায় এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। টেকনিক্যাল হলের পাশে আরেকটি পুকুর খনন করা হয়েছে। এর দক্ষিণ পাশে মাদ্রাসার মতবখখানা বা রান্নাঘর অবস্থিত।[৬৩]
মাদ্রাসার কর্মপরিধি বৃদ্ধির পর মাদ্রাসার দ্বিতীয় মহাপরিচালক হাজী মুহাম্মদ ইউনুস সুষ্ঠুভাবে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন, যা ১৯৬০ সালে মজলিশে শূরা কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও প্রকাশিত হয়। তখন থেকে এই সংবিধানের মাধ্যমে মাদ্রাসার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এই সংবিধানে মাদ্রাসার আদর্শ হিসেবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এবং পাঠ্যসূচী, শিক্ষাপদ্ধতি হিসেবে দারুল উলুম দেওবন্দকে গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া এই সংবিধানে মাদ্রাসার মৌলিক নীতিমালা, পরিচালনা কমিটি, মাদ্রাসা প্রধান, অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ আছে।[১৯]
মহাপরিচালকদের তালিকা | |||
---|---|---|---|
# | ছবি | নাম | কার্যকাল |
১ | মুফতি আজিজুল হক | ১৯৩৮ – ১৯৫৯ | |
২ | হাজী মুহাম্মদ ইউনুস | ১৯৫৯ – ১৯৯২ | |
৩ | হারুন ইসলামাবাদী | ১৯৯২ – ২০০৩ | |
৪ | নুরুল ইসলাম কদীম | ২০০৩ – ২০০৮ | |
৫ | আব্দুল হালিম বুখারী | ২০০৮ – ২০২২ | |
৬ | ওবায়দুল্লাহ হামযাহ | ২০২২ – ২০২৩ | |
৭ | আবু তাহের নদভী | ২০২৪ – বর্তমান |
মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি মজলিশে শুরা নামে পরিচিত। এটি মাদ্রাসার আভ্যন্তরীণ ও বাইরের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ স্বীদ্ধান্ত গ্রহণ ও অনুমোদন দেয়। যা দেশের কয়েকজন শীর্ষ আলেমদের নিয়ে গঠন করা হয়। এটি মাদ্রাসার সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করে। এছাড়াও নির্বাহী কমিটি (মজলিশে আমেলা), পরিচালনা কমিটি (মজলিশে এন্তেজামী) গঠনের জন্য এটি বাছাইপূর্বক সদস্য নিয়োগ দান করে।[৬৪]
মজলিসে শূরা কর্তৃক গৃহীত স্বীদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নের জন্য মজলিসে আমেলা বা নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। মজলিসে শূরা থেকে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। মাদ্রাসার যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ও নাজুক পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ গ্রহণের আইনি ক্ষমতা রয়েছে এই কমিটির।[৬৪]
মাদ্রাসার মহাপরিচালককে পরিচালনা কাজে সাহায্য করার জন্য মজলিশে এন্তেজামিয়া বা পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর সদস্য সংখ্যা মোট ৫ জন।[৬৪]
শিক্ষার মান উন্নয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ, পাঠ্যসূচী অনুসারে কিতাব বন্টন সহ মাদ্রাসার যাবতীয় একাডেমিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও জরুরী পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য মজলিশে ইলমী বা একাডেমিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি মাদ্রাসার অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীদের নিয়ে গঠিত।[৬৪]
মাদ্রাসার যাবতীয় কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যেসব বিভাগ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:[৫]
এটি আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের অধিভুক্ত। দাওরায়ে হাদিস সমাপনকারীদের আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হয়। প্রতি শিক্ষাবর্ষে মোট তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সফর মাসের ১ম সপ্তাহে ১ম সাময়িক, জমাদিউল আউয়ালের ১ম সপ্তাহে ২য় সাময়িক, শাবান মাসের ২য় সপ্তাহে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।[৬৫] মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষাবর্ষ ১৫টি এবং সেগুলো ৬ স্তরে বিভক্ত:[৬৬]
এছাড়াও আছে তাহফীজুল কুরআন বিভাগ – এ বিভাগে কিরাত ও তাজবীদ সহকারে শিক্ষার্থীদের কুরআন হিফজ করানো হয়, শর্টকোর্স বিভাগ – এস.এস.সি/সমমান পাশ ছাত্রদেরকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ছয় বছরে দাওরায়ে হাদিস পাশের সুযোগ দানের জন্য বিভাগটি খোলা হয়েছে, ইসলামি কারিগরী বিভাগ, ইসলামি চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিভাগ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং দারুল ইফতা বা ফতোয়া বিভাগ – এটি মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক সহ সকল সমস্যার কুরআন-হাদিস ভিত্তিক সমাধান দানের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ের উপর সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন এবং বিভিন্ন সংকলন প্রকাশ ও সম্পাদনার কাজও করা হয় ফতোয়া বিভাগে। এ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষে ইসলামি চিন্তাবিদ, বিশেষজ্ঞ ও আইনবিদগণের প্রকাশনা সংগ্রহ এবং প্রয়োজনে মুসলিম বিশ্বের বরেণ্য আলেমদের মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। মাদ্রাসার সাময়িক কার্যক্রম সমূহের মধ্যে রয়েছে: হেফজ প্রশিক্ষণ, তাজবিদ ও কেরাত প্রশিক্ষণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও নূরানী প্রশিক্ষণ।[৬৭]
তাখাচ্ছুছাত বা বিশেষ বিভাগসমূহ:[৫]
পাঠ্য বিষয় | ইসলাম শিক্ষা |
---|---|
ভাষা | বাংলা |
সম্পাদক | আ ফ ম খালিদ হোসেন |
প্রকাশনা বিবরণ | |
প্রকাশক | আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া (বাংলাদেশ) |
হ্যাঁ | |
সংযোগ | |
১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে মাসিক আত তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করেন হাজী মুহাম্মদ ইউনুস। আ ফ ম খালিদ হোসেন এই পত্রিকার সম্পাদক।[৬৮] ১৯৮৭ সালে এই মাদ্রাসার ইতিহাস, ঐতিহ্য, অবদান নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার নিয়মিত আয়োজনের মধ্যে রয়েছে: সম্পাদকীয়, সমকালীন, ধর্ম- দর্শন, মহাজীবন, সফরনামা, মহিলাঙ্গন, ইতিহাস ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক, নিয়মিত বিভাগ ও সীরাত।
পাঠ্য বিষয় | ইসলাম শিক্ষা |
---|---|
ভাষা | আরবি |
সম্পাদক | ওবায়দুল্লাহ হামযাহ |
প্রকাশনা বিবরণ | |
প্রকাশক | আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া (বাংলাদেশ) |
হ্যাঁ | |
সংযোগ | |
বালাগ আশ শারক্ব একটি আরবি সাহিত্য বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা।[৬৯] এর সম্পাদক ছিলেন ওবায়দুল্লাহ হামযাহ।
এছাড়া মাদ্রাসার অন্যান্য প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে: পাক্ষিক আল আজিজ (আরবি পত্রিকা), মাসিক অভিযাত্রী (বাংলা দেয়ালিকা), দ্রোহ (ছোট সাময়িকী), আন নাদী (আরবি ও বাংলা দেয়ালিকা), দর্পন (বাংলা দেয়ালিকা), বদর (বাংলা দেয়ালিকা), প্রত্যয় (ছড়া পত্রিকা)।[৬৯]
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আজিজুল হকের তত্ত্বাবধানে ১৯৫৯ সালে এই শিক্ষাবোর্ডটি গঠন করেন হাজী মুহাম্মদ ইউনুস।[৭০] এটি বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত ৬টি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অন্যতম।[৭১] এই বোর্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কওমি মাদ্রাসা সমূহের মধ্যে একাডেমিক ঐক্য তৈরি হয়েছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, এর তত্ত্বাবধানে ৫০০টি মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। বর্তমানে বোর্ডটি ৫টি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণ করে।[৫]
দেশব্যাপী বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য হিফজ মাদ্রাসাকে সুসংগঠিত করা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে মাদ্রাসার দ্বিতীয় মহাপরিচালক হাজী মুহাম্মদ ইউনুস এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৭২] এই সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবছর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। হিফজের মান উন্নয়ন ও প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে হিফজ মাদ্রাসাকে প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, দরিদ্র্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা, অগ্রগতি পরিদর্শন করা, কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণ করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ সহ নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।[৭৩]
ইসলামি শিক্ষার প্রচার প্রসারের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৬ সালে মাদ্রাসার দ্বিতীয় মহাপরিচালক হাজী মুহাম্মদ ইউনুস এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৫][৭৪] বর্তমানে সংস্থাটির সভাপতি খলিল আহমদ কাসেমী ও মহাসচিব আরশাদ রাহমানী, মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এর প্রধান উপদেষ্টা।[৭৫]
১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সংগঠিত ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়ের প্রেক্ষাপটে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। গরিব অসহায়দের জন্য ঘর ও মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণে এই কমিটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।[৭৬] এটি এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত।[৫]
পার্বত্য অঞ্চলে খ্রিস্টান মিশনারিদের তৎপরতা রোধ, ইসলাম প্রচার এবং ইসলাম গ্রহণকারী নওমুসলিমদের সবরকমের সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে মাদ্রাসার দ্বিতীয় মহাপরিচালক হাজী মুহাম্মদ ইউনুস নও মুসলিম পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সেটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া সম্ভব হয় নি। তার পরবর্তী মাদ্রাসার তৃতীয় মহাপরিচালক হারুন ইসলামাবাদী ১৯৯৮ সালে এই পুনর্বাসন কেন্দ্রের উত্তরসূরী হিসেবে নও মুসলিম ফাউন্ডেশনের আত্মপ্রকাশ ঘটান।[৭৭] এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নও মুসলিমদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের নামে জমি সংগ্রহ করা, ধর্মান্তরিতদের এফিডেভিট করণ, ক্ষেত্র বিশেষে আদালতে বিবাহের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, তাদের ধর্মীয় শিক্ষাদান, কর্মসংস্থান তৈরি সহ নও মুসলিমদের কল্যাণার্থে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।[৭৮]
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ইসলামি শিক্ষার প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে মুফতি আজিজুল হকের তত্ত্বাবধানে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম বগুড়া প্রতিষ্ঠা করা হয় যা জামিল মাদ্রাসা নামে সমধিক পরিচিত।[৭৯] ১৯৬৭ সালে এখানে দাওরায়ে হাদিস খোলা হয়।[৮০] ১৯৯৫ সালে জামিল মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি আব্দুর রহমান তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ গঠন করেন, যার অধীনে তিন সহস্র মাদ্রাসা রয়েছে।[৭৯]
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের জেলার হাটহাজারী থানার অর্ন্তগত ইছাপুরে ১৯৭৩ সালে মাদ্রাসার দ্বিতীয় মহাপরিচালক হাজী মুহাম্মদ ইউনুস এই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৮১] তিনি তার শিক্ষক মুফতি ফয়জুল্লাহর নামানুসারে এই মাদ্রাসার নামকরণ করেন ফয়জিয়া। মুফতি ফয়জুল্লাহ স্বয়ং মাদ্রাসাটি উদ্ভোদন করেন।[৮২]
মাদ্রাসার দাওয়াতি কর্মকাণ্ডের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বান্দরবানের ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র। ১৯৮৯ সালে হাজী মুহাম্মদ ইউনুস এই প্রকল্প শুরু করেন। এই প্রকল্পের অধীনে একটি ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র, একটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এবং একটি ত্রিতল বিশিষ্ট বড় জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।[৮৩][৮৪]
খ্রিস্টান মিশনারীদের তৎপরতা রোধে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানার অন্তর্গত সুখবিলাস এলাকায় ১৯৮৬ সালে মাদ্রাসার দ্বিতীয় মহাপরিচালক হাজী মুহাম্মদ ইউনুস একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন, যা ইসলামিক মিশনারী সেন্টার নামে পরিচিত। এই প্রকল্পের অধীনে একটি ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র যা সুখবিলাস মাদ্রাসা নামে পরিচিত, ৩০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, কৃষিখামার ও নও মুসলিম পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।[৮৫][৮৬]
মাদ্রাসায় মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০০০।[৮৭] মাদ্রাসার উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন: হারুন ইসলামাবাদী, আ ফ ম খালিদ হোসেন, আবু তাহের মিসবাহ, আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, আব্দুল মালেক হালিম, আব্দুল হালিম বুখারী, ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, মিজানুর রহমান সাঈদ, সরওয়ার কামাল আজিজী, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী প্রমুখ।