আল বারা ইবনে মালিক হলেন মুহাম্মাদ (স:)|মুহাম্মদ (স:) এর একজন সাহাবী। তিনি দীর্ঘদিন মুহাম্মদ এর সংস্পর্শে ছিলেন। কিন্তু তারপরও তিনি খুব সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিলেন মূলত একজন যোদ্ধা সাহাবী।[১]
আবু হাতেমের মতে, মুহাম্মাদ (স:) এর সেবক আনাস ইবনে মালিকের বৈমাত্রেয় ভাই হলেন আল বারা ইবনে মালিক । তবে সা’দের মতে তিনি ইবনে মালিকের আপন ভাই। তাদের মায়ের নাম উম্মু সুলাইম। ইবনে হাজার বলেছেন, ‘শুরাইক ইবনে সামহার জীবনীতে দেখা যায়, তিনি আল বারা ইবনে মালিকের বৈমাত্রেয় ভাই। তাঁদের উভয়ের মায়ের নাম সামহা। পক্ষান্তরে আনাস ইবনে মালিকের মা যে উম্মু সুলাইম এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।'[১]
আল বারা ইবনে মালিক কখন ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। তবে মুহাম্মাদ মদীনায় হিজরত করার পর কোন এক সময়ে তিনি মুসলিম হয়েছিলেন।
শুধুমাত্র বদর যুদ্ধ ছাড়া আল বারা ইবনে মালিক অন্যান্য সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়েও উপস্থিত ছিলেন।
মসায়লামা আল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে ইয়ামামার প্রান্তরে ইয়ামামার যুদ্ধ হয়েছিলো। সে যুদ্ধে আল বারা ইবনে মালিক বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন সেনাপতি। যুদ্ধের এক পর্যায়ে আল বারা ইবনে মালিক চিৎকার করে বলে উঠেন, “হে মদীনার অধিবাসীগণ, আজ তোমরা অন্তর থেকে মদীনার চিন্তা মুছে ফেলো, আজ তোমাদের অন্তরে শুধু আল্লাহ ও জান্নাতের স্মরণ বিদ্যমান থাকাই বাঞ্ছনীয়।”
আল বারা ইবনে মালিক মুসায়লামার বাহিনীকে প্রতিরোধ করেন এবং তাদের কোণঠাসা করে ফেলেন। তারা পালিয়ে প্রাচীরবেষ্টিত বাগানের ভেতরে চলে যায় এবং প্রধান দরজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করে। কথিত আছে এই সময় আল বারা ইবনে মালিক কে প্রাচীরে ওপারে ছুড়ে ফেলা হয়। তিনি বাগানে প্রবেশ করে দরজা খুলে দিলে মুসলিম বাহিনী ভেতরে প্রবেশ করে এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে। এই যুদ্ধে তার দেহে ৮০টি ক্ষত তৈরী হয়েছিলো বিভিন্ন তরবারী, তীর ও বর্শার আঘাতে।[২]
আল বারা ইবনে মালিক ইরাকের হীরক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই যুদ্ধেও তিনি অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে আনাস দুর্গের প্রাচীর টপকানোর সময় শিকলে আটকে পড়েন। দুর্গবাসীরা তাকে দুর্গের ভেতরে টেনে নেওয়ার সময় আল বারা ইবনে মালিক তাকে উদ্ধার করেন। শিকল এত গরম ছিলো যে আল বারা ইবনে মালিক এর হাতের মাংস পুড়ে হাড় বেরিয়ে যায়।
আল বারা ইবনে মালিক পারস্য তথা বর্তমান ইরানের তুসতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই যুদ্ধে তিনি আবু মূসা আল আশআরীর বাহিনীর ডান ভাগের অধিনায়ক ছিলেন। কথিত আছে তিনি এই যুদ্ধে শতাধিক সৈন্যকে হত্যা করেন।
হিজরী ১৭ সালে উমার বসরার ওয়ালী মুগীরা ইবনে শু’বাকে অপসারণ করেন এবং তার স্থানে আবু মূসা আল আশআরীকে নিয়োগ প্রদান করে। আবু মূসা মদীনা থেকে বসরা যাওয়ার সময় ২৯ জন ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে যান, আল বারা ইবনে মালিক ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।
আল বারা ইবনে মালিক গান গাইতে পছন্দ করতেন। তিনি সাহাবীদেরকে উট চরানোর গান গেয়ে শোনাতেন। তিনি মুহাম্মাদ (স:) সাথে ভ্রমণ অবস্থায় গান গাওয়া শুরু করলে মুহাম্মাদ বলেন, ‘মহিলাদের কথা একটু মনে রেখো।’ এই কথা শুনে তিনি চুপ হয়ে যান।[৩]
তুসতারের যুদ্ধের সময় হরমুজান নামক এক সৈন্যের সাথে যুদ্ধ করার সময় আল বারা ইবনে মালিক মারা যান। তার অস্ত্র-শস্ত্র এবং যুদ্ধের পোশাক ৩০ হাজার মুদ্রায় বিক্রি করা হয়।[৩]