আলতাফ হোসেইন (সাংবাদিক) | |
---|---|
আলতাফ হোসেইন الطاف حسين | |
পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৭ আগস্ট ১৯৬৫ – ১৫ মে ১৯৬৮ | |
রাষ্ট্রপতি | ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান |
পূর্বসূরী | আবুল কাসেম খান |
উত্তরসূরী | ভাইস-এডমিরাল সৈয়দ এম. আহসান |
ডন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক | |
কাজের মেয়াদ ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ – ১৬ আগস্ট ১৯৬৫ | |
পূর্বসূরী | অফিস প্রতিষ্ঠিত হয় |
উত্তরসূরী | জিয়াউদ্দিন সুলেরি |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আলতাফ হুসাইন ২৬ জানুয়ারি ১৯০০ সিলেট, সিলেট জেলা, পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ২৫ মে ১৯৬৮ করাচি, সিন্ধু প্রদেশ, পাকিস্তান | (বয়স ৬৮)
সমাধিস্থল | মডেল কলোনি কবরস্থান |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ অধীনস্থ (১৯০০–৪৭) পাকিস্তান (১৯৪৭–৬৫) |
জাতীয়তা | পাকিস্তানি |
রাজনৈতিক দল | মুসলিম লীগ |
বাসস্থান | করাচি, সিন্ধু প্রদেশ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | সাংবাদিক |
আলতাফ হোসেইন (ইংরেজি: Altaf Husain, উর্দু: الطاف حسين; ২৬ জানুয়ারি ১৯০০ – ১৫ মে ১৯৬৮), ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, এবং পাকিস্তান আন্দোলন কর্মী। তিনি পাকিস্তানে প্রিন্ট সাংবাদিকতার একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এবং পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রধান ইংরেজি পত্রিকা ডনের প্রধান সম্পাদক ছিলেন, যেটাতে তিনি বিশ বছর দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন।
তাছাড়া, তিনি রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের শাসনামলে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত শারীরিক কারণে পদত্যাগ করার আগমুহূর্ত পর্যন্ত শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে পাকিস্তান আন্দোলনের একজন মুখ্য সক্রিয়-কর্মী হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ব্রিটিশ ভারত শাসনামলে ভারতীয় মুসলিমদের সমর্থনে তিনি বেশ কিছু সমালোচনামূলক গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ লিখেছেন।
আলতাফ হুসাইন ২৬ জানুয়ারি ১৯০০ সালে সিলেট, সিলেট জেলা, পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি মুসলিম বাঙ্গালী জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার পর তিনি কলকাতা গিয়ে ইংরেজি ভাষার উপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন।[১] কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজিতে বিএ ডিগ্রী গ্রহণ করেন এবং ঢাকা, পূর্ব বাংলায় চলে আসেন।[১] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হয়ে এখান থেকে তিনি ইংরেজি ভাষায় এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন।[১]
স্নাতকে পড়াকালীন সময়, তিনি কলকাতা পৌরসংস্থা সরকারে যোগদান করেন, যেখানে তিনি ১৯৪২ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত পাবলিক ইনিফরমেশনের পরিচালক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি প্রেস উপদেষ্টা হিসেবে ভারতীয় তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন। যদিও, তিনি ভারত সরকারের অধীনে কাজ করছিলেন, পরবর্তীতে স্টেটসম্যান পত্রিকা, কলকাতায় তিনি "থ্রো দ্য মুসলিম আই" নামে পাক্ষিক কলামে আইন-এল-মুল্ক ছদ্মনামে রাজনৈতিক নিবন্ধ লিখতে শুরু করেন, যেটাতে মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
খুব শীঘ্রই, তিনি ভারতীয় তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব ত্যাগ করেন এবং স্টেটসম্যান পত্রিকার একটি কলাম "দার-এল-ইসলাম" (আক্ষরিক অর্থে- "ইসলামের দরজা") এ লিখা শুরু করেন, তবে এটাতে ছদ্মনাম ছিল শহীদ। অল্প কিছুদিনের মধ্যে, তিনি কলকাতা-ভিত্তিক পত্রিকা "স্টার অব ইন্ডিয়ায়"ও কলাম লেখা শুরু করেন।[২] ঐসময়ে, তার তেজোদীপ্ত লেখনী মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর (কায়েদ-ই-আজম) কাছ থেকে মনোযোগ এবং স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। ফলে তিনি তাকে মুম্বাইয়ে তার বাসবভনে সাক্ষাতের সুযোগ দেন।[২] এমনকি, তিনি তাকে ডন পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের পদ নিতে প্রস্তাব করেন, যেটি জিন্নাহ ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।[২] তিনি দিল্লী অফিসের দায়িত্ব নেন এবং ডন পত্রিকায় মুদ্রণ আরম্ভ করেন।[২]
ডন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হিসেবে, তিনি সবার নজর কাড়েন, এবং জিন্নার অন্তরঙ্গ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান করে নেন। এই সক্ষমতায়, তিনি পাকিস্তান আন্দোলনকে ফলপ্রসূ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের জন্য স্বতন্ত্র দেশ গঠনে কাজ করে।[২] পাকিস্তান গঠনের পর, তিনি তার সিনিয়র স্টাফদের দিল্লী থেকে করাচিতে নিয়ে যান, যেখানে তিনি নিজেই ডন পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন এবং ১৯৪৭-৬৫ পর্যন্ত একই পদে ছিলেন।[৩] ডন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক হিসেবে তার প্রভাব, পাকিস্তান আন্দোলনে তার ভূমিকা এবং জিন্নাহর সাথে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক দ্বারা বুঝা যায় যে সরকার বিভাগের বাইরে তিনি সবথেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার রক্ষার্থে, পাকিস্তান থেকে একে আলাদা করতে তিনি খুব সক্রিয়ভাবে প্রানপন চেষ্টা করেছেন।[৩] কিছুদিনের জন্য, তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা অনুষদে শিক্ষাদানের জন্য যোগদান করেন এবং সাংবাদিকতা বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
১৯৫৯ সালে, তার কর্মকাণ্ডসমূহ পাকিস্তান সরকারের দ্বারা স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৫৯ সালের একটি সরকারি অনুষ্ঠানে তাকে হিলাল-এ-পাকিস্তান-এ ভূষিত করা হয়। ১৯৬৫ সালে, রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান তাকে সরকারের সাথে যোগদান করতে আমন্ত্রণ জানান, যা তিনি গ্রহণ করে সবাইকে বিস্মিত করে দেন।[৩] শেষপর্যন্ত, তিনি পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন এবং পাকিস্তানের দ্রুত শিল্পায়ন এবং বেসরকারিকরণে তত্ত্বাবধান করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে শারীরিক সমস্যার জন্য পদত্যাগ করার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।[৩]
আলতাফ হোসেইন মৃত্যুর ১০ দিন পূর্বে পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি ২৫ মে ১৯৬৮ সালে মারা যান এবং রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাকে মডেল কলোনি কবরস্থানে সমায়িত করা হয়। করাচির রাস্তায় যেখানে ডন প্রথম প্রকাশিত হয় তা বর্তমানে "আলতাফ হোসেইন রোড" নামে পরিচিত।
তরুণ লেখকদের আদর্শ হিসেবে তিনি ধর্মযোদ্ধার ভূমিকায় পারদর্শী ছিলেন। তার মৃত্যুর আট বছর পর ডৌন এভাবে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করে:
আলতাফ হোসেইন মূলত একজন ধর্মযোদ্ধা ছিলেন; তার প্রধান হাতিয়ার ছিল তার শক্তিশালী কলম। এই উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য তার অঙ্গীকার সর্বাত্মক ছিল; পাকিস্তান আন্দোলন এবং এর মহান নেতাদের প্রতি তার আনুগত্য অপ্রতিহত এবং অটল ছিল। প্রত্যেক মহান যোদ্ধাদের মতো, তিনি সাহসিকতার সাথে এবং নিরলসভাবে লড়ে গেছেন। প্রত্যেক বিশিষ্ট সম্পাদকের মতো, তিনি ক্ষুদ্ধ এবং ভালোবাসা, ভয় এবং শ্রদ্ধা, প্রশংসা এবং ঠাট্টা পেয়েছেন. . . . আলতাফ হোসেইন ডন দিল্লীতে সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন এবং পাকিস্তানের বিপ্লবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রাণপণ নিমগ্ন ছিলেন। ফলে তার নিবন্ধসমূহ খুব শীঘ্রই মুসলিম লীগের দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ হয়ে সবথেকে গুরুত্ব পায়। তিনি আগ্রহের সাথে লিখে গেছেন, এবং বলহীন, স্বচ্ছতা এবং অধ্যবসায়ের সাথে যুক্তি দেখিয়েছেন। তার মাধ্যমে ডন, লীগের রাজনীতির দৃষ্টি বিন্দু হয়েছিল। এটা কায়েদের নিজ আশীর্বাদপুষ্ট ছিল এবং লিয়াকত আলী খানের মতো ব্যক্তিদের ছাড়া পরিচালিত হয়নি। আলতাফ হোসেইন স্বহস্তে একাই সকল কংগ্রেস সংবাদপত্রের সাথে লড়ে গেছেন এবং কংগ্রেস শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছেন।