এই নিবন্ধটির একটা বড়সড় অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশই একটিমাত্র সূত্রের উপর নির্ভরশীল। (আগস্ট ২০২০) |
আলাউদ্দিন খিলজি | |||||
---|---|---|---|---|---|
সুলতান | |||||
![]() | |||||
রাজত্ব | ১৯ জুলাই ১২৯৬ - ৪ জানুয়ারি ১৩১৬ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ২১ অক্টোবর ১২৯৬ | ||||
পূর্বসূরি | জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি | ||||
উত্তরসূরি | শাহাবুদ্দিন ওমর | ||||
জন্ম | কালাত, আফগানিস্তান | ৪ জানুয়ারি ১২৬৬||||
মৃত্যু | ৪ জানুয়ারি ১৩১৬ দিল্লি | (বয়স ৫০)||||
সমাধি | |||||
পত্নীগণ | মালিকা ই জাহান | ||||
বংশধর | কুতবুদ্দীন মুবারক শাহ শাহাবুদ্দিন ওমর | ||||
| |||||
রাজবংশ | খিলজি রাজবংশ | ||||
পিতা | শিহাবুদ্দীন মাসুদ | ||||
ধর্ম | সুন্নি (ইসলাম) |
আলাউদ্দিন-খিলজি (শাসন কাল: ১২৯৬-১৩১৬) ছিলেন খিলজি বংশের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক। যিনি দিল্লিতে বসে ভারতীয় উপমহাদেশে খিলজি শাসন পরিচালনা করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন ভারতীয় ইতিহাসেও একজন আলেকজেন্ডারের মতো শক্তিশালী কারো কথা উল্লেখ করা থাকুক। তাই তিনি নিজেকে ২য় আলেকজেন্ডার (সিকান্দার-এ-সানি) হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেন এবং জুম্মাহর খুতবার আগের বয়ানে নিজের কৃতিত্ব বর্ণনার আদেশ দেন।
আলাউদ্দিন খিলজি ছিলেন খিলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন খিলজির ভাইপো এবং জামাতা। বীরভূমদেরকে পরাজিত করে জালালুদ্দিন খিলজি যখন দিল্লি দখল করে নেন, তখন আলাউদ্দিন খিলজিকে আমির-ই-তুজুখ বা উদ্যাপন মন্ত্রী পদ দেওয়া হয়। ১২৯১ সালে জালালুদ্দিন খিলজি তার ভাতিজা আলাউদ্দিন খিলজির হাতে কারা (কানপুরের নিকটবর্তী এক এলাকা) নামক অঞ্চলের শাসনভার তুলে দেন। ১২৯৬ সালে আলাউদ্দিন খিলজি বসিলা অবরোধ করে জালালুদ্দিন খিলজির কাছে থেকে আবাধ (উত্তর-প্রদেশ) দখল করেন। ১২৯৬ সালে দেবগিরি অবরোধ করেন এবং জালালুদ্দিনের বিপুল পরিমাণের সম্পদ দখল করে নেন। জালালুদ্দিনের মৃত্যুর পর তিনি দিল্লিতে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে জালালুদ্দিনের ছেলের কাছ থেকে মুলতান দখল করে নেন।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আলাউদ্দিন খিলজি দক্ষভাবে বেশ কিছু মঙ্গোলীয় অঞ্চলকে নিজের ভারতীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে অন্তর্গত করেন। তার কত গুলো সফল অভিযানের মাঝে বিখ্যাত অভিযান গুলো হলঃ (১২৯৭–১২৯৮) জারান-মাঞ্জুর (বর্তমান পাঞ্জাব এর কিছু এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল), শিবিস্থান (বিভক্ত পাকিস্তান) (শিবিস্থান-১২৯৮) কিলি (প্রাচীন দিল্লির একটি এলাকা) (১২৯৯), দেলি দিল্লি (১৩০৩), এবং উত্তর-প্রদেশ আম্রহা (১৩০৫)। ১৩০৬ সালে তার সৈন্যগণ মঙ্গোলীয়দের কাছ থেকে একটি সফল অভিযান শেষে রভি নদীর উপত্যকা দখল করে নেয় এবং সেই বছরই তারা মঙ্গোলীয়দের বিশেষ আবাসস্থান বর্তমানের আফগানিস্তান দখল করে নেয়। যে সকল সেনাপতি মঙ্গোলীয়দের বিপক্ষে দক্ষ হাতে সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তারা হলেন সেনা-অধ্যক্ষ জাফর খান (জাফর খান), সেনাপতি উলুগ খান (উলুগ খান) এবং একসময়ের গোলাম কিন্তু পরবর্তী সময়ের জেনারেল মালিক কাফুর।
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও আলাউদ্দিন দখল করে নিজের শাসনে নিয়েছিলেন, এগুলো হলঃ রাথাম্বোর (১৩০১), চিত্তুর (১৩০৩),মালওয়া (পাঞ্জাব) (১৩০৫), সিবানা (১৩০৮) এবং জালোর (১৩১১)। কতগুলো হিন্দু এলাকা দখল করার মাধ্যমে অভিযান গুলো শেষ করেন। অভিযান গুলোর মাঝে আছে পারামারাছ, ভগল, রনাস্থাম্বাপুরার সামানাস জালরি, গুইলাসের রাওয়াল এলাকা এবং জাবাপ্লাস। সেনাপতি মালিক কাফুর প্রাচীন ভিন্দাস এলাকার দক্ষিণে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করেন। দেবগিরি (১৩০৮), ভেরঙ্গল (১৩১০) থেকে বিপুল পরিমাণের সম্পদ জব্দ করে নিয়ে আসেন। তাঁর সৈন্যদের ভয়ে জাভাদা রাজা রামচন্দ্র, কাকাতিয়ার রাজা প্রতাপ রুদ্র এবং হয়সালার রাজা বাল্ললা চলে আসেন আলাউদ্দিন খিলজির করের অধীনে। সেনাপতি কাফুর আবার পাণ্ডু রাজ্য (১৩১১) অবরোধ করে বিপুল সম্পদ, হাতি এবং ঘোড়া লুট করেন।
সমসাময়িক ইতিহাসবিদরা আলাউদ্দিনের শৈশব সম্পর্কে খুব বেশি কিছু লেখেননি। ১৬শ / ১৭শ শতাব্দীর ইতিহাসবিদ হাজী-উদ-দবিরের মতে, রণথম্বোরে যাত্রা শুরু করার সময় আলাউদ্দিনের বয়স ছিল ৩৪ বছর (১৩০০-১৩০১)। এটি সঠিক বলে ধরে নিলে আলাউদ্দিনের জন্ম ১২৬৬–১২৬৭ সালে হতে পারে।[২] তার আসল নাম ছিল আলি গুরশপ। তিনি খলজি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান জালালউদ্দিনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শিহাবুদ্দিন মাসউদের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। তার তিন ভাই ছিল: আলমাস বেগ (পরে উলুগ খান), কুতলুগ তিগিন ও মুহাম্মদ।[৩]:৩২৬
শিহাবুদ্দিনের মৃত্যুর পর আলাউদ্দিনকে তার কাকা জালালউদ্দিন লালন-পালন করেন।[৩]:৩২১ আলাউদ্দিন ও তার ছোট ভাই আলমাস বেগ উভয়েই জালালউদ্দিনের মেয়েদের বিয়ে করেন। জালালউদ্দিন দিল্লির সুলতান হওয়ার পর আলাউদ্দিনকে আমির-ই-তুজুক (অনুষ্ঠানের মালিকের সমতুল্য) হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, অন্যদিকে আলমাস বেগকে আখুর-বেগ (ঘোড়ার মালিকের সমতুল্য) পদ দেওয়া হয়।[২]:৪১
আলাউদ্দিন খলজি খুব উচ্চাকাঙক্ষী শাসক ছিলেন । গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের মতো তিনিও বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতেন । কিন্তু কাজি আলা-উল-মূলকের পরামর্শে তিনি এই অসম্ভব পরিকল্পনা ত্যাগ করে সারা ভারত জুড়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন । বিশ্বজয়ের পরিকল্পনা ত্যাগ করলেও মুদ্রায় নিজেকে ‘দ্বিতীয় আলেকজান্ডার’ হিসাবে উল্লেখ করতেন ।
প্রথমে তিনি ভারতের গুজরাটের রাজা কর্ণদেব, রণ-থম্ভোরের রাজপুত নেতা হামির দেব , মেবারের রাজা রতন সিং ও মালবের অধিপতি মহ্লক দেবকে পরাজিত করেন । এরপর তিনি মলিক কাফুরের নেতৃত্বে দক্ষিণ ভারতে অভিযান প্রেরণ করেন । কাফুর দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র, বরঙ্গলের কাকতীয়রাজ প্রতাপ রুদ্র, দোরসমুদ্রের হোয়্সলরাজ তৃতীয় বল্লালকে পরাজিত করবার পর ভাতৃবিরোধের সুযোগ নিয়ে পান্ড্য রাজ্য অধিকার করেন । এরপর তিনি রামেশ্বরম পর্যন্ত অগ্রসর হন । আলাউদ্দিন খলজি অবশ্য দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি সরাসরি সাম্রাজ্যভুক্ত না করে সেখানকার রাজাদের মৌখিক আনুগত্য ও করদানের প্রতিশ্রুতি নিয়েই করদ রাজ্যে (কর ডাকে স্বীকৃত) পরিণত করেন । বিজেতা হিসাবে আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন দিল্লির সুলতানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ । স্যার উলসলে হেগের মতে, তার রাজত্বের সঙ্গে সঙ্গেই সুলতানি সাম্রাজ্যবাদের সুত্রপাত হয় । তার আমলেই প্রথম দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটে । বিজেতা হিসাবে অনেকে তাকে আকবরের সঙ্গে তুলনা করেন। আলাউদ্দিনের দৃঢ়তা ও তার অসীম সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধকৌশলের কারণে তিনি ইতিহাস বিখ্যাত হয়ে আছেন।