আশরাফ আলী থানভী (১৯ আগস্ট ১৮৬৩ – ২০ জুলাই ১৯৪৩; উর্দু: اشرف علی تھانوی) ছিলেন একজন দেওবন্দি আলেম, সমাজ সংস্কারক, ইসলামি গবেষক এবং পুরোধা ব্যক্তিত্ব।[৩] তিনি ভারতের থানা ভবনের নিবাসী হওয়ার কারণে তার নামের শেষে "থানভী" যোগ করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশ ও এর বাইরের অসংখ্য মানুষ তার কাছ থেকে আত্মশুদ্ধি এবং তাসাওউফের শিক্ষা গ্রহণ করার কারণে তিনি "হাকীমুল উম্মত" (উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক) উপাধিতে পরিচিত। মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারের জন্য তিনি দাওয়াতুল হক নামক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[৪][৫][৬][৭][৮][৯]
আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে / রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরীতে ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। গোলাম মোর্তজা পানিপথীর নির্দেশক্রমে নবজাতকের নাম রাখা হয় "আশরাফ আলী"। তার বাবার নাম ছিল আবদুল হক। তিনি সাহাবী উমরের বংশের লোক ছিলেন আর তার মাতা ছিলেন ছিলেন সাহাবী আলীর বংশের। থানভী ভাইবোনদের মাঝে সকলের বড় ছিলেন। শৈশবে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি মাকে হারান।[১০]
শৈশবে তিনি হাফেয হোসাইন আলীর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করেন। নিজ গ্রামে ফতেহ মুহাম্মদ থানভীর কাছে ফার্সি ও আরবি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে আশরাফ আলী ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। পাঁচ বছর পর ১৯ বছর বয়সে তিনি দেওবন্দের শিক্ষা সমাপ্ত করেন। দারুল উলুম দেওবন্দে তিনি হাদীস, তাফসীর, আরবী সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম যুগের শিক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদের মাঝে তিনি অন্যতম। এরপর তিনি মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত (কুরআন পাঠ সম্পর্কিত একটি বিদ্যা) ও তাজবীদের (কুরআনের শব্দসমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করার বিদ্যা) শিখেন।[১][২]
১৩০০ হিজরীতে থানভী কানপুরেরফয়যে আম মাদ্রাসায় মাসিক ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার জ্ঞানের কারণে তার উপাধি দেয়া হয় বাহরুল উলুম (জ্ঞানের সাগর)।[১]
পরবর্তীতে তিনি কানপুর শহরের পটকাপুর মহল্লায় জামেউল উলূম মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস ও প্রধান পরিচালকের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি ১৪ বছর শিক্ষকতা করেন এবং এই মাদ্রাসা থেকে উনার ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন মাওলানা ইসহাক বর্ধমানী এবং মাওলানা হাবীবুল্লাহ চাটগামী।[২]
পরবর্তীতে ১৩১৫ হিজরীতে হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর পরামর্শে তিনি থানাভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেই ইসলাম প্রচার, আত্মশুদ্ধি,তাসাওউফ ও রচনার কাজ করে যান।[২]
১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী/ জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে আশরাফ আলী থানভী থানাভবনে মৃত্যুবরণ করেন।[১০] সেদিন সোমবার ছিল। তার জানাযার নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা যফর আহমেদ উসমানী। থানাভবনেই ইশকে বাযান নামক কবরস্তানে জামেন শহীদের মাযারের পাশে তাকে দাফন করা হয়।[১][২]
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী: হিজ ভিউস অন রিলিজিয়নস এন্ড মোরাল ফিলসফি এন্ড তাসাউফআইএসবিএন৯৭৮৮১৭১৫১২৬৯০: পাকিস্তানের সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ আলী খাজার ইংরেজি ভাষায় রচিত একটি প্রামাণ্য জীবনীগ্রন্থ, যাতে বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত ভারতীয় আলেম আশরাফ আলী থানভীর জীবন-কর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। লেখক এই গ্রন্থে তাসাউফ, নীতিশাস্ত্র ও ধর্ম নিয়ে থানভীর বিস্তারিত চিন্তাধারা তুলে ধরেছেন।
দ্য লাইফ এন্ড টিচিং অফ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীআইএসবিএন৯৭৮-৮১৭৪৩৫১১১১: ভারতীয় অধ্যাপক ও গবেষক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর ইংরেজি ভাষায় রচিত আশরাফ আলী থানভীর একটি অনবদ্য জীবনীগ্রন্থ, যা সর্বপ্রথম ১৯৯৭ সালে ভারত থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
তিনি সারা জীবনে ছোট-বড় ৩৪৫ টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলোর মাঝে অন্যতম হলো ফিকহ বিষয়ক গ্রন্থ বেহেশতী জেওর (স্বর্গের অলংকার), যা ভারতীয় উপমহাদেশের সাধারণ মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তার রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআন (কুরআনের ব্যাখ্যা) সুপরিচিত। তিনি জাতির কল্যাণের জন্য তার সকল গ্রন্থের স্বত্ব উন্মুক্ত রেখেছেন।[১০] তার রচিত গ্রন্থের তালিকা:
আগলাতুল আউয়াম (জনসাধারণের মাঝে প্রচলিত ভুল)
আদাবুল মু'আশারাত
আপনে ঈমান কি হিফাজাত কিজিয়ে (নিজের ঈমান রক্ষা করুন)
আমালে কুরআনী (কুরআনের আমল)
আল-তাকাশশুফ আন মুহিম্মাত আল-তাসাওউফ
আশরাফিয়া খুতবা
আশরাফুত তাফসীর
আশরাফুল জওয়াব
ইছলাহুন নিসওয়ান
ইছলাহুল মুসলিমীন
ইমদাদুল ফাতাওয়া
ইসলাম মে পরদা কি আহমিয়াত (ইসলামে পর্দার গুরুত্ব)
ইসলামী জিন্দেগি কি চার আহাম উসুল (ইসলামি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ চার মূলনীতি)