মিয়াঁ আসগর হুসাইন দেওবন্দী | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৬ অক্টোবর ১৮৭৭ |
মৃত্যু | ৮ জানুয়ারি ১৯৪৫ | (বয়স ৬৭)
সমাধিস্থল | রান্দের, সুরাট, গুজরাত |
ধর্ম | ইসলাম |
অঞ্চল | ভারত |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
মুসলিম নেতা | |
এর শিষ্য | ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কি, মিয়াঁ মুন্নে শাহ |
যাদের প্রভাবিত করেন |
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
![]() |
আসগর হুসাইন দেওবন্দী (মিয়াঁ সাইয়িদ আসগর হুসাইন নামেও পরিচিত) (১৬ই অক্টোবর ১৮৭৭ - ৮ জানুয়ারী ১৯৪৫) একজন ভারতীয় সুন্নি ইসলামী পণ্ডিত ছিলেন । তিনি হাজী ইমদাদউল্লাহ মুহাজিরে মক্কির শিষ্য ছিলেন। তিনি আজমগড়ে মাদ্রাসাতুল ইসলাহের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।[১]
মিয়া আসগর হুসাইনের পূর্বপুরুষরা বাগদাদ থেকে ভারতে এসেছিলেন এবং আবদুল কাদির জিলানির বংশধর ছিলেন। শাহজাহানের যুগে সায়্যিদ গোলাম রসুল তার পরিবারসহ ভারতে চলে এসেছিলেন। তাকে দেওবন্দের শাহী মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তার দুই ছেলে, গোলাম নবী ও গোলাম আলী। উভয় ভাই শাহ আমিরুল্লাহর কন্যা বিবাহ করেছিলেন।
সাইয়িদ গোলাম আলীর তিন মেয়ে ও দুই ছেলে ছিল। বড় ছেলে আলম মীর ছিলেন মিয়া আসগর হুসাইনের দাদা। আলম মীর শাহ হাফিজুল্লাহর মেয়ে আজিমুন নিসাকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের একটি কন্যা, ওয়াজিহন-নিসা এবং একজন পুত্র ছিল। যার নাম মুহাম্মদ হাসান। তিনি মিয়া আসগর হুসাইনের পিতা। মুহাম্মদ হাসান দু'বার বিবাহ করেছিলেন, প্রথমে মরিয়াম-উন-নিসার সাথে। তিনি একজন সন্তান জন্ম দেন। তার এক পুত্র, সাইয়্যিদ খুরশিদ এবং একটি কন্যা, মাসুম-উন-নিসা। মরিয়মুন-নিসার মৃত্যুর পরে, মুহাম্মদ হাসান তার বোন নসিবুন-নিসাকে বিয়ে করেছিলেন, [ক] [খ] তার এক পুত্র, আসগর হুসাইন।
মিয়া আসগর হোসেন ১৮৭৭ সালের ১৬ই অক্টোবর দেওবন্দে সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হাসান এবং নাসিবুন নিসা বিনতে সাইয়্যেদ মনসুব আলীর ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন।
তার প্রদত্ত নাম ছিলে আসগর হুসাইন। তার নাসব ( বংশধারা ) হল: সাইয়্যেদ আসগর হুসাইন ইবনে সাইয়িদ শাহ মুহাম্মদ হাসান ইবনে সাইয়িদ শাহ আলম মীর ইবনে সাইয়িদ গোলাম আলী ইবনে সাইয়্যিদ গোলাম রসুল বাগদাদী ইবনে সাইয়িদ শাহ ফকিরুল্লাহ বাগদাদী ইবনে সাইয়্যেদ আযম সানী ইবনে সাইয়্যিদ নাজর মুহাম্মদ ইবনে সাইয়্যিদ সুলতান মুহাম্মদ ইবনে সাইয়্যেদ আযম মুহাম্মদ ইবনে সাইয়িদ আবু মুহাম্মদ ইবনে সাইয়িদ কুতুবুদ্দীন ইবনে সাইয়িদ বাহাউদ্দীন ইবনে সাইয়িদ জামালউদ্দিন ইবনে সাইয়িদ কুতুবুদ্দীন ইবনে সাইয়িদ দাউদ ইবনে মুহিউদ্দিন আবু আবদুল্লাহ ইবনে সাইয়িদ আবু সালেহ নসর ইবনে সাইয়িদ আবদুর রাজ্জাক ইবনে আবদুল কাদির জিলানী ।
আট বছর বয়সে তিনি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ওরফে মিয়াঁজি মুন্নে শাহ এর অধীনে পড়াশোনা শুরু করেন এবং তার পিতার কাছ থেকে কুরআন অধ্যয়ন করেন এবং তারপরে তার কাছ থেকে ফারসি পড়া শুরু করেন। পরে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হন। ফার্সি শ্রেণিতে তিনি মুহাম্মদ শফি দেওবন্দীর পিতা মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিনের কাছ থেকে ফার্সি পড়াশোনা করেন। তিনি মাওলানা মনজুর আহমদের কাছ থেকে গণিত অধ্যয়ন করেন। তিনি প্রথম অবস্থান নিয়ে ফারসি শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এবং মুয়াত্তা মালিক গ্রন্থ উপহার হিসেবে লাভ করেন। মিয়া আসগর ১৭ বা ১৮ বছর বয়সে দারুল উলূম দেওবন্দের আরবি ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু ২০ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ সালে তার পিতা মারা যান। তিনি প্রায় এক বছর ধরে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং পৈত্রিক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেছিন।
মাহমুদ হাসান দেওবন্দীর অনুরোধে মিয়া আসগর ১৮৯৬ সালের ১ এপ্রিল আবার দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হন এবং আরবি ক্লাসে অধ্যয়ন শুরু করেন। তিনি সহিহ আল-বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে আত-তিরমিযী এবং সুনান আবু দাউদ মাহমুদ হাসান দেওবন্দীর নিকট পড়াশোনা করেছেন। তার অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন আজিজুর রহমান উসমানী এবং গোলাম রসুল বাঘভী। তিনি ১৩২০ হিজরিতে স্নাতক হন এবং মাহমুদ হাসান দেওবন্দী এবং হাফিজ মুহাম্মদ আহমদের কাছ থেকে তার সনদ লাভ করেন। [২]
তিনি তাসাউউফে ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মাক্কীর শিষ্য ছিলেন । [৩][৪]
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে স্নাতক শেষ করার পরে তিনি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দারুল উলুমের অফিস বিভাগে কর্মরত ছিলেন। অতঃপর তার শিক্ষক মাহমুদ হাসান দেওবন্দী এবং হাফিজ মুহাম্মদ আহমদ তাকে প্রধান শিক্ষকের পদে জৌনপুরের আটলা মসজিদের মাদ্রাসায় প্রেরণ করেন এবং তিনি সেখানে সাত বছর দায়িত্ব পালন করেন। এরই মধ্যে ১৯০৮ সালে ১৩২৭ হিজরিতে তিনি আজমগড়ের সরাই মীরে মাদ্রাসাতুল ইসলাহের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। [৫] তাকে দারুল উলূম দেওবন্দে ডাকা হয় এবং দারুল উলূমের আল-কাসিম জার্নালের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্পাদক ছিলেন মাওলানা হবিবুর রহমান। তাঁকে দারুল উলূম দেওবন্দে সুনান আবু দাউদের পাঠদানের ভার অর্পণ করা হয় এবং তিনি জালালাইন ও দুররে মুখতারের মতো তাফসীর ও ফিকহের বইও পড়াতেন। [২][৪] তার উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে মুহাম্মদ শফি দেওবন্দী,[৬] মনজির আহসান গিলানি । [৭] এবং মুফতি নাসিম আহমেদ ফরিদী। তিনি তার পৈতৃক মাদ্রাসা পুনরায় চালু করেন যা বাবার মৃত্যুর পর থেকে বন্ধ ছিল। মাদ্রাসাটি পরে তার পুত্র সাইয়্যিদ বিলাল হুসেন মিয়া (মৃত্যু: ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০) -এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আসে এবং বর্তমানে মাদ্রাসা আসগরিয়া কাদিম নামে পরিচিত। এর ঐতিহাসিক নাম দারুল মুসাফিরীন, মাদ্রাসা তালিমুল কুরআন।
আসগর হুসাইন উর্দু ভাষায় প্রায় ত্রিশটি বই লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে:
দারুল উলূম দেওবন্দে ছাত্রাবস্থায় তিনি মুশতাক হুসাইনের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। তার দুই পুত্র, মিয়া আক্তার এবং মিয়া বিলাল হুসাইন এবং এক কন্যা, ফাহমিদা। [গ]
মিয়াঁ আসগর হুসাইন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে ১৯৪৫ সালের ৮ ই জানুয়ারী (২২ মোহাররম ১৩৬৪ হিঃ ) মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সমাহিত করা সুরাতের রানডারে। [২][৪]