ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
আস-সালামু আলাইকুম (আরবি: ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ) আরবি ভাষায় একটি অভিবাদনসূচক বাক্যাংশ, যার অর্থ "আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক"। সাধারণত মুসলিমরা ধর্মীয় অভিবাদনসূচক বাক্য হিসেবে এই বাক্যটি ব্যবহার করে থাকে।[১] এছাড়া অন্যান্য ধর্মের আরবি ভাষাভাষীরাও (যেমন: আরব খ্রিষ্টান[২]) এটি ব্যবহার করে থাকে। কথোপকথনে, প্রায়ই এই বাক্যাংশের প্রথম অংশ (অর্থাৎ সালাম অনু. শান্তি) একজন ব্যক্তিকে অভিবাদন জানাতে ব্যবহৃত হয়। শুভেচ্ছার সাধারণ প্রতিক্রিয়া হলো "ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম" (وَعَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ অনু. 'আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক')। সম্পূর্ণ বাক্যাংশটি হলো "আস-সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু" (ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ)।
এটি উল্লেখ্য যে, ‘আস্-সালাম’ (ٱلسَّلَامُ) আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম নাম এবং জান্নাতের নাম সমূহের মধ্যে একটি জান্নাতের নাম। এই রীতিটি বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও বিশেষ জনপ্রিয় এবং বাঙালি সমাজে সম্ভাষণের প্রধান নিজস্ব ভঙ্গি।
ٱل আল/আস=সুনির্দিষ্ট/টি (পদাশ্রিত নির্দেশক, ইংরেজি the এর সমার্থক), سَّلَامُ সালাম(উ) = শান্তি, (عَلَ(يْ আলা(ই) = উপরে, كُمْ কুম = তোমাদের।
وَ ওয়া = এবং, عَلَيْكُمُ আলা(ই)কুম = তোমাদের উপর, ٱلسَّلَامُ আল/আস-সালাম = শান্তিটি।
অভিব্যক্তিটি সাধারণত দ্বিতীয় পুরুষের বহুবচন পুংলিঙ্গ ব্যবহার করে, এমনকি যখন একজন ব্যক্তিকে সম্বোধন করতে ব্যবহৃত হয়। এটিকে উপযুক্ত এনক্লিটিক সর্বনাম বেছে নেওয়ার মাধ্যমে সংশোধন করা যেতে পারে পুরুষ এবং স্ত্রীলিঙ্গ একবচন, দ্বৈত রূপ, বা স্ত্রীলিঙ্গ বহুবচনে একজন ব্যক্তিকে সম্বোধন করার জন্য। সংযোজনগুলি নিম্নরূপ (দ্রষ্টব্য: কুরআনীয় আরবি বা শাস্ত্রীয় আরবি-এর প্রমিত উচ্চারণ নিয়ম অনুসারে, প্রতিটি শব্দের শেষ সংক্ষিপ্ত স্বরবর্ণটি পৌসা বা বিরতিতে উচ্চারিত হয় না):
লিঙ্গ | অভিবাদন | প্রতিক্রিয়া |
---|---|---|
একবচন বহুবচন |
ٱلسَّلَامُ عَلَيْكَ | وَعَلَيْكَ ٱلسَّلَامُ |
[as.sa.laː.mu ʕa.laj.ka] | [wa.ʕa.laj.ka‿s.sa.laː.mu] | |
আস-সালামু আলাইকআ | ওয়া ʿআলাইকা স-সালামউ | |
একবচন বহুবচন |
ٱلسَّلَامُ عَلَيْكِ | وَعَلَيْكِ ٱلسَّلَامُ |
[as.sa.laː.mu ʕa.laj.ki] | [wa.ʕa.laj.ki‿s.sa.laː.mu] | |
আস-সালামু ʿআলাইকই | ওয়া ʿআলাইকি স-সালামউ | |
দ্বৈত লিঙ্গ-নির্বিশেষে |
ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمَا | وَعَلَيْكُمَا ٱلسَّلَامُ |
[as.sa.laː.mu ʕa.laj.ku.maː] | [wa.ʕa.laj.ku.maː‿s.sa.laː.mu] | |
আস-সালামু ʿআলাইকুমা | ওয়া ʿআলাইকুমা স-সালামউ | |
বহুবচন পুরুষ |
ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ | وَعَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ |
[as.sa.laː.mu ʕa.laj.kum] | [wa.ʕa.laj.ku.mu‿s.sa.laː.mu] | |
আস-সালামু ʿআলাইকুম | ওয়া ʿআলাইকুমু স-সালামউ | |
Plural Feminine |
ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُنَّ | وَعَلَيْكُنَّ ٱلسَّلَامُ |
[as.sa.laː.mu ʕa.laj.kun.na] | [wa.ʕa.laj.kun.na‿s.sa.laː.mu] | |
আস-সালামু ʿআলাইকুন্নআ | ওয়া ʿআলাইকুন্না স-সালামউ |
একটি তৃতীয়-পুরুষ প্রকরণ, ʿআলাইহি আস-সালাম, "তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক", এটি প্রায়শই মুহাম্মাদ এবং অন্যান্য পবিত্র ব্যক্তিত্ব ছাড়া অন্য নবীদের জন্য মুসলমানদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়, যেমন ফেরেশতা।
হাদিস অনুযায়ী আল্লাহ সর্বপ্রথমে প্রথম মানব আদম (আঃ) কে সালামের শিক্ষা দেন। আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত আছে যে নবি মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করে বলেন, যাও ফেরেশতাদের দলকে সালাম দাও এবং তোমার সালামের কি উত্তর দেয় মন দিয়ে শুন। এটিই হবে তোমার আর তোমার সন্তানদের জন্য সালাম। সে অনুযায়ী আদম গিয়ে বলেন, "আস্সালামু আলাইকুম" (অৰ্থ: আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। ফেরেশতারা উত্তর দেন, "ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রহমাতুল্লাহি" (অৰ্থ: আপনাদের উপর শান্তি এবং আল্লাহর দয়া বর্ষিত হোক)। এক্ষেত্রে ফেরেশতারা রাহমাতুল্লাহ শব্দটি বৃদ্ধি করেন।[৩]
অন্যান্য নবিদের জীবনে সালামের প্রচলন ছিল। ইব্রাহিম (আঃ) এর ক্ষেত্রে, কুরআনে বলা হয়েছে:
এবং অবশ্যই আমার ফেরেশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের নিকট এসেছিল। তারা সালাম জানায়। তিনিও ‘সালাম’ দেন।[৪]
সালাম দেয়া সুন্নাত। কুরআনে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন যে,
হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।[৫]
হাদিসে অন্যের গৃহে গিয়ে তিনবার সালাম দিতে বলা হয়েছে এবং অনুমতি প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। অনুমতি নাদিলে চলে আসতে বলা হয়েছে।[৬]
কোনো গৃহে প্রবেশের সময় সালাম দেওয়া সুন্নাহ। আল্লাহ্ কুরআনে উল্লেখ করেন,
﴿فَإِذَا دَخَلۡتُم بُيُوتٗا فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ تَحِيَّةٗ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةٗ طَيِّبَةٗۚ ٦١ ﴾ [النور: ٦١] অনুবাদ: তবে তোমরা যখন কোনো গৃহে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজদের উপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কৃপাপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ।[৭]
আনাস হতে বর্ণিত, মুহাম্মাদ বলেন,
«يا بني إذا دخلت على أهلك فسلم يكن بركة عليك وعلى أهلك» رواه الترمذي، وقال حديث حسن. অনুবাদ: হে বৎস! তুমি যখন গৃহে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দাও। তা তোমার জন্য ও তোমার পরিবার পরিজনের জন্য বরকত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।[৮]
আনাস হতে আরো বর্ণিত, মুহাম্মাদ বলেন,
«إذا خرج الرجل من بيته فقال بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة إلا بالله يقال له هديت وكفيت ووقيت وتنحى عنه الشيطان» رواه الترمذي، و حسنه والنسائي وابن حبان في صحيحه.
بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة إلا بالله
অনুবাদ: যখন কোনো ব্যক্তি গৃহ থেকে বের হওয়ার সময় এ দোআ পাঠ করে, তাকে বলা হয়, তোমাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, তোমাকে বাঁচানো হয়েছে। আর শয়তান তার থেকে দূর হয়ে যায়।[৯]
আবু মালিক আল-আশআরী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
«إذا ولج الرجل بيته فليقل: اللهم إني أسألك خير المولج وخير المخرج بسم الله ولجنا وبسم الله خرجنا وعلى الله ربنا توكلنا ثم ليسلم على أهله» حديث حسن.
«اللهم إني أسألك خير المولج وخير المخرج بسم الله ولجنا وبسم الله خرجنا وعلى الله ربنا توكلنا»
অনুবাদ: যখন কোনো ব্যক্তি গৃহে প্রবেশ করে, সে যেন এ দোআ পাঠ করে- হে আল্লাহ! তোমার নিকট উত্তম বাসস্থান চাই এবং উত্তম বের হওয়া চাই। হে আল্লাহ! আমরা আল্লাহর নামে প্রবেশ করলাম এবং আল্লাহর নামে বের হলাম। হে আমাদের রব আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। তারপর সে তার পরিবার-পরিজনকে সালাম দেবে।[১০]
আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত, মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
«لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا أو لا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم» رواه مسلم. অনুবাদ: তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ "ঈমানদার" হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ "ঈমানদার" হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর।[১১]
কোনো জমায়েতকে সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে সালাম শব্দটি "মারেফা" (السلام) বা "নাকিরা" (سلام) উভয় প্রকারে ব্যবহার করা যাবে। কারণ, হাদিসে উভয় প্রকারের ব্যবহার প্রমাণিত আছে। আল্লামা ইবনুল বান্না বলেন, সম্ভাষণের সালাম নাকিরা হবে, আর বিদায়ী সালাম মারেফা হবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সভা থেকে ফিরে যাওয়ার সময়, সালাম দেয়া মুস্তাহাব। কারণ আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত, মুহাম্মাদ বলেন,
«إذا انتهى أحدكم إلى المجلس فليسلم فإذا أراد أن يقوم فليسلم فليست الأولى بأحق من الآخرة» অনুবাদ: যখন তোমরা কোনো সভায় গিয়ে পৌছবে তখন তুমি সালাম দেবে। আর যখন তুমি সভা শেষ করে মজলিস থেকে উঠে দাঁড়াবে, তখনও সালাম দেবে। প্রথম সালাম শেষের সালাম থেকে অধিক গুরুত্ব বহন করে না।[১২]
জমায়েতের মধ্য হতে যে কোনো একজনের সালাম দেয়া দ্বারা সুন্নাহ আদায় হয়ে যাবে। উত্তম হলো জামাতের সবাইকে সালাম দেয়া। কারণ, হাদিসে বলা হয়েছে
«أفشوا السلام بينكم» অনুবাদ: তোমরা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে সালামকে প্রসার কর।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আর যে সব ক্ষেত্রে সালাম দেয়া মাকরু, সে সব ক্ষেত্রগুলোকে আল্লামা গাজ্জি উল্লেখ করেন-
যাদের সালাম দেয়া মাকরুহ নিম্নে তাদের আলোচনা করা হল, এরা ছাড়া বাকী যাদের সাথে তোমার দেখা হবে, তাদের সালাম দেয়া সুন্নাহ ও বৈধ। সালাতরত ব্যক্তি, কুরআন পাঠকারী, আল্লাহকে স্বরণকারী, হাদিস পাঠদানকারী, খুতবাদানকারী এবং যারা খুতবা শুনায় মগ্ন [তাদের সালাম দেয়া মাকরুহ]। ফিকহ (আইনশাস্ত্র) নিয়ে আলোচনাকারী, বিচারক যিনি বিচার কার্যে ব্যস্ত [তাকেও সালাম দেয়া মাকরুহ]। আর যারা ফিকহ নিয়ে গবেষণা করছে তাদেরও তোমরা সালাম দেয়া হতে বিরত থাক, যাতে তারা উপকৃত হয়। মুয়াজ্জিন, একামত দানকারি ও পাঠদানকারীদের সালাম দেয়া মাকরুহ। অনুরূপভাবে অপরিচিত যুবতী নারী, [যাদের সালাম দেয়াতে অশান্তির আশঙ্কা থাকে] তাদের সালাম দেয়া কোনো ক্রমেই উচিত নয়(হারাম)। যারা দাবা খেলায় মগ্ন তাদের ও তাদের মত লোকদের সালাম দেয়া মাকরুহ। আর যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন [তাদের সালাম দেয়া যাবে না]। অমুসলিম ও নগ্ন লোককে সালাম দেবে না, মল-মুত্র লিপ্তদের সালাম দেয়া হতে বিরত থাকবে। অনুরূপভাবে খাওয়ায় ব্যস্ত [লোককে সালাম দেবে না], তবে যদি তুমি ক্ষুধার্ত হও এবং জান যে লোকটি তোমাকে ফিরিয়ে দেবে না। অনুরূপভাবে শিক্ষক যিনি পাঠদানে দেয়ায় ব্যস্ত। মনে রাখবে এই হল, শেষ ব্যক্তি বাকীদের সালাম দেয়াতে তুমি উপকার লাভ করবে।[১৩]
আগে সালাম দেয়া সুন্নাহ। কারণ, আবু উমামাহ হতে হাদিস বর্ণিত তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
«إن أولى الناس بالله من بدأهم بالسلام» অনুবাদ: নিশ্চয় আল্লাহর নিকট উত্তম ব্যক্তি সে যে মানুষকে আগে সালাম দেয়।[১৪]
বাচ্চাদের সালাম দেয়া মুস্তাহাব। আনাস হতে বর্ণিত,
عن أنس أنه مر على صبيان فسلم عليهم وقال: «كان رسول الله يفعله» متفق عليه
অনুবাদ: আমি বাচ্চাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করি এবং তাদের সালাম দেই। মুহাম্মাদ (সাঃ)-ও অনুরূপ করতেন।[১৫]
যখন কোনো এক দল লোক কোনো বসা ব্যক্তি বা বসা লোকদের সভা উপস্হবে, তখন সে প্রথমে তাদের সালাম দেবে। কারণ মুহাম্মাদ বলেন,
«والمار على القاعد» অনুবাদ: আর যখন কোনো ব্যক্তি দেয়ালের ওপাশ থেকে সালাম দেয়, তখন তার নিকট সালাম পৌছার পর, উত্তর দেয়া ওয়াজিব।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
নারীদের সালাম দেয়া পুরুষদের পরস্পরের সালামের মতই কোনো পার্থক্য নাই। একজন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে মুসাফাহা করা মুস্তাহাব, অনুরূপভাবে একজন নারী অপর নারীর সাথে মুসাফাহা করা মুস্তাহাব। আবু খাত্তাব বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন,
“قلت لأنس: أكانت المصافحة في أصحاب رسول الله قال: نعم” অনুবাদ: আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে মুসাফাহা করার প্রচলন ছিল কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, জ্বি, ছিল।[১৬]
বারা ইবনে আজিব হতে বর্ণিত, মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
«ما من مسلمين يلتقيان فيتصافحان إلا غفر لهما قبل أن يفترقا» رواه أبو داود. অনুবাদ: যখন দুইজন মুসলিম একত্র হবে এবং একে অপরের সাথে মুসাফাহা করে তখন তারা উভয় বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে আল্লাহ্ তাদের উভয়কে ক্ষমা করে দেন।[১৭]
যে ব্যক্তি আগে সালাম দেবে, তার জন্য মুস্তাহাব হলে, সে বলবে- «ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ» (আসসালামু আলাইকুম)। সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করবে। যদিও উপস্থিত ব্যক্তি একজন হয়। আর সালামের উত্তর দাতা এ বলে উত্তর দেবে: وَعَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ، (ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহ) সালামের উত্তরে واو العطف উল্লেখ করবে। আর মনে রাখবে, সালাম দেয়ার সময় কেউ যদি ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আসসালামু আলাইকুম) এবং উত্তর দেয়ার সময় শুধু وَعَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ. (ওয়া-আলাইকুমুস সালাম) বলে, তাতে সালাম আদায় হয়ে যাবে। যখন কোনো একজন মুসলিমকে সালাম দেয়া হল, তারপর তার সাথে যতবার দেখা হবে, ততবার সালাম দেবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কারণ, হাদিসে সালামকে প্রসার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
«أفشوا السلام بينكم» অনুবাদ: তোমরা সালামের প্রসার কর।[১৮]
যখন দুই সাক্ষাতকারী পরস্পর সালাম দেয় এবং পরস্পরের সালাম শুনতে পায়, তখন উভয়ের উপরই সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়। আবু হুরাইরা বলেন,
«إذا لقي أحدكم أخاه فليسلم عليه، فإن حالت بينهما شجرة أو جدار أو حجر ثم لقيه فليسلم عليه» رواه أبو داود، وحديث المسيء وتقدم. অনুবাদ: যখন তোমরা তোমাদের কোন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত কর, তাকে সালাম দাও। যদি তোমাদের উভয়ের মাঝে কোন গাছ কিংবা পাথর বা দেয়াল বিচ্ছিন্নতা ঘটায়, তারপর আবার দেখা হয়, তাহলে আবারও সালাম দাও।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সালামের উত্তর দেয়া ফরযে কিফায়াহ। যদি উপস্থিত লোক একজন হয়, তবে তাকেই সালামের উত্তর দিতে হবে। কারণ, আল্লাহ্ বলেন,
﴿وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٖ فَحَيُّواْ بِأَحۡسَنَ مِنۡهَآ أَوۡ رُدُّوهَآۗ ٨٦ ﴾ [النساء: ٨٦] অনুবাদ: আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে।[১৯]
আলী ইবনে আবি তালিব বলেন,
«يجزي عن الجماعة: إذا مروا أن يسلم أحدهم ويجري عن الجلوس أن يرد أحدهم» رواه أبو داود. অনুবাদ: যখন কোনো জমায়েত অতিক্রম করে, তখন তাদের থেকে যে কোন একজনের সালাম যথেষ্ট হবে এবং কোন সভা হতে যে কোন একজন সালামের উত্তর দিলে তা সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে।[২০]
আর যখন কোনো ব্যক্তি দূর থেকে চিঠির মাধ্যমে অথবা দূতের মাধ্যমে কাউকে সালাম দেয়, তখন তার নিকট সালাম পৌছার পর সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। তবে মুস্তাহাব হল, দূতকেও সালাম দেয়া এবং এ কথা বলা, وعليك وعليه السلام (তোমার উপর ও তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। কারণ, হাদিসে বর্ণিত, নবি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নিকট একজন ব্যক্তি এসে বলল,
أبي يقرؤك السلام فقال: «عليك وعلى أبيك السلام».
অনুবাদ: আমার পিতা আপনাকে "সালাম" দিয়েছে। এ কথা শোনে মুহাম্মাদ বললেন, আপনার এবং আপনার পিতার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলকে বলা হল, অমুক আপনাকে সালাম দিয়েছে। তখন তিনি বললেন, তোমার উপর ও তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
যদি কোনো ব্যক্তি বধিরকে সালাম দেয়, তখন মুখে বলবে এবং হাতে ইশারা করবে। আর বোবা ব্যক্তির সালাম দেয়া ও উত্তর দেয়া উভয়টি ইশারা দ্বারা হবে। কারণ, তার ইশারা কথার স্থলাভিষিক্ত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]