শায়েখ আহমেদ দিদাত | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১ জুলাই ১৯১৮ |
মৃত্যু | ৮ আগস্ট ২০০৫ ভেরুলাম, কুয়াজুলু নাতাল, দক্ষিণ আফ্রিকা | (বয়স ৮৭)
সমাধিস্থল | ভেরুলাম কবরস্থান |
ধর্ম | ইসলাম |
দাম্পত্য সঙ্গী | হাওয়া দিদাত |
সন্তান |
|
পিতামাতা |
|
আখ্যা | সুন্নি |
পেশা |
|
স্বাক্ষর | |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
যার দ্বারা প্রভাবিত | |
যাদের প্রভাবিত করেন | |
পুরস্কার | আন্তর্জাতিক কিং ফয়সাল পুরস্কার (১৯৮৬) |
পেশা |
|
ওয়েবসাইট | Ahmed-Deedat.net |
কর্মজীবন | ১৯৪২–১৯৯৬ |
পরিচিতির কারণ | তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব |
আহমেদ হুসেইন দিদাত (গুজরাটি: અહમદ હુસેન દીદત; উর্দু: احمد حسین دیدات আরবি: احمد حسين ديدات), যিনি আহমেদ দিদাত নামেও পরিচিত (১১ জুলাই, ১৯১৮ - ৮ আগস্ট, ২০০৫) ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার একজন মুসলিম চিন্তাবিদ এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের একজন বক্তা।[১][৩] খ্রিষ্টান সুসমাচার প্রচারণাকারীদের সাথে অসংখ্য বিতর্ক এবং ইসলাম, খ্রিষ্টান ধর্ম এবং বাইবেল এর উপর তার ভিডিওর জন্য তিনি বেশি পরিচিত।
আন্তর্জাতিক ইসলাম ধর্মপ্রচারকারী প্রতিষ্ঠান, আইপিসিআই প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্মের উপর কিছু বহুল বিক্রিত পুস্তিকা লিখেন। ১৯৮৬ সালে, তিনি ৫০ বছর ধরে ধর্ম প্রচার করার জন্য কিং ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।[৪]
দিদাত ১৯১৮ সালে, ব্রিটিশ ভারতের বোম্বে প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভূক্ত সুরাট এর তাদকেশর শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[৫] তার জন্মের কিছু সময় পর তার পিতা দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যান। ৯ বছর বয়সে দিদাত ভারত ত্যাগ করে তার পিতার সাথে বর্তমান কুয়াজুলু-নাতালে বসবাস করতে যান। তার দেশ ত্যাগের কয়েক মাস পর তার মাতা মৃত্যুবরণ করেন। সেখানে তিনি তার অধ্যায়নের দিকে মনযোগ প্রদান করেন এবং ভিন্ন ভাষার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তার বিদ্যালয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন এবং ৬ ষ্ঠ শ্রেণি সম্পন্ন করার পূর্ব পর্যন্ত উত্তীর্ণ হন। কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে ১৬ বছর বয়সে তাকে বিদ্যালয় ত্যাগ করে কাজ করা শুরু করতে হয়।[৬]
১৯৩৬ সালে, আসবাবপত্র বিক্রেতা হিসেবে কাজ করার সময় তিনি একটি খ্রিষ্টান ধর্মের সম্মেলনে একটি খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকারী দলের সাথে পরিচিত হন, যারা মুসলিমদের খ্রিষ্টান ধর্মে ধাবিত করার চেষ্টা করার সময়ে অনেক সময়েই তারা ইসলাম ধর্মে ধাবিত করতে মুহাম্মাদ এর বিরুদ্ধে “তরবারি ব্যবহার করার” অভিযোগ করত। এ ধরনের অভিযোগ তাকে রাগান্বিত করে এবং তূলনামূলক ধর্মতত্ত্বে তার আগ্রহ সৃষ্টি করে।[২]
দিদার তার বন্ধুর বেসমেন্টে পড়ার জন্য কোনো কিছু অনুসন্ধানের সময় রহমতুল্লাহ কিরানভি এর লেখা ইযহারুল হক (অনুবাদ: সত্য উম্মেচন) নামক বইটি খুজে পান এবং তা থেকে তার ধর্ম বির্তকে আরো বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।[৭][৮] বইটিতে ভারতে প্রায় ১০০ বছর আগে খ্রিষ্টার ধর্মপ্রচারকারীদের চেষ্টার একটি ধারাবিবরণী ছিল। বইটি তার উপর জড়ালো প্রভাব ফেলে এবং তিনি একটি বাইবেল ক্রয় করেন এবং ধর্মপ্রচারের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা এবং বিতর্ক করেন, যাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি পূর্বে অক্ষম ছিলেন।[২]
তিনি নামক অন্য ধর্ম থেকে ইসলাম ধাবিত এক বাসিন্দার কাছ থেকে ইসলামিক অধ্যায়ন শিক্ষা গ্রহণ করেন। মি.ফেয়ারফ্যাক্স তার পাঠদানের জনপ্রিয়তা দেখে বাইবেল এবং কীভাবে খ্রিষ্টানদের কাছে ইসলাম প্রচার করতে হয় সে সংক্রান্ত একটি অতিরিক্ত পাঠদান শুরু করেন।[২] এর কিছু সময় পর দিদাতকে পাঠদান সভাটিকে থেকে বের করে দিতে হয়। এ পর্যায়ে দিদাত বাইবেল সম্পর্কে ভালোই জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং তিনি পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেন, যা তিনি তিন বছর ধরে চালিয়ে যান।[৯] দিদাত কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রশিক্ষণ নেননি।[১০]
দিদাত এর প্রথম ভাষণ ১৯৪২ সালে ডারবানের একটি সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয়, যার নাম ছিল “মুহাম্মদ: শান্তির বার্তাবাহক”।[১১]
তার প্রাথমিক ধর্ম প্রচারমূলক কাজের ক্ষেত্রে একটি সুবিধা হিসেবে ছিল জুমা মসজিদের নির্দেশিত সফর। বিশাল এবং সুসজ্জিত জুমা মসজিদ দক্ষিণ আফ্রিকার পর্যটনের জন্য জনপ্রিয় শহর ডারবানের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের বড় একটি অংশের উদ্দেশ্যে মধ্যাহ্নভোজন, বক্তৃতা এবং বিতরণের কার্যক্রম পরিকল্পনা করা হয়। এ পর্যটকদের অনেকের ইসলামের প্রথম দর্শন। দিদাত নিজেও প্রদর্শকদের একজন ছিল, যিনি পর্যটকদের আপ্যায়ন করেন এবং তাদের ইসলাম এবং ইসলামের সাথে খ্রিষ্টান ধর্মের সম্পর্কের বিষয়ে জানান।[১২]
১৯৪৯ সালে, দিদাত পাকিস্তানে পরিবার সহ চলে আসেন এবং সেখানে তিনি চকের কাছে ৩ বছর বসবাস করেন।[১৩] পাকিস্তান টেলিভিশনে তার একটি সাক্ষাৎকার অনুসারে, তিনি একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের একজন বড় সমর্থক।[১৩]
দিদাত এর কাছের বন্ধুদের মধ্যে ছিল গোলাম হুসেইন ভাঙ্কার এবং তাহির রাসূল, যাদের অনেকে “দিদাত এর কর্মজীবনের অপ্রকাশিত নায়ক” হিসেবে অভিহিত করে।[৬]
১৯৫৭ সালে, তারা ৩ জন ইসলামের উপর অনেক বই মুদ্রণ এবং নতুন ইসলাম গ্রহণ করা মুসলিমদের জন্য পাঠদান শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামিক প্রচার কেন্দ্র পতিষ্ঠা করেন।[১৪] পরবর্তী বছর, দিদাত দক্ষিণ নাতালে অবস্থিত শহরে দান হিসেবে গ্রহণ করা ৭৫ হেক্টরের এক খন্ড জমিতে একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন।[১৫] আপিসিতে মানুষের অংশ্রগহণ এবং তহবিলের অভাবে সেটি বিফল হয় এবং ১৯৭৩ সালের মুসলিম যুব আন্দোলন সেটি দখল করে নেয়। দিদাত তারপর ডারবানে ফিরে এসে সেখানে আইপিসির কার্যক্রম প্রসারিত করেন।[২]
১৯৮০ প্রথম দিকে আহমেদ দিদাতের কাজ দক্ষিণ আফ্রিকার বাহিরে পরিচিতি পেতে শুরু করে। ১৯৮৬ সালে, দাওয়ার ক্ষেত্রে তার ইসলামিক কাজের জন্য তাকে কিং ফয়সাল পুরস্কার প্রদান করা হলে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করেন।[২] এটিকে কেন্দ্র করে তিনি ৬৬ বছর বয়সে কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী বক্তৃতা সফর করতে থাকেন।
অপরদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনচেতা মুসলিম দলগুলো কাছ থেকে শক্ত সমালোচনার সম্মখীন হন, যাদের মতে, তিনি ইসলামকে ভূলভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং খ্রিষ্টান, হিন্দু, ইহুদি এবং জেইন সহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী মানুষের প্রতি অসহনশীল। ১৯৮৬ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম ডাইজেস্ট এর কয়েকটি মাসিক সংস্করণ (জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর) সম্পূর্ণভাবেই দিদাত এর মতের এবং তার “বিভিন্ন বিপদজনক কাজের” সমালোচনা করতে ব্যাস্ত ছিল।[১৬]
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস এবং কার্যক্রমের সমালোচক হিসেবে “ফ্রোম হিন্দুজম টু ইসলাম” (১৯৮৭) প্রকাশিত হলে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়।[২] দিদাত অন্যদের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার হিন্দুদের তাদের বিভিন্ন দেবতা ও দেবীর কাছে প্রার্থনা করার জন্য এবং সহজেই খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার জন্য সমালোচনা করেন।[১৭] তখন পর্যন্ত হিন্দু এবং খ্রিষ্টানরা তার বক্তৃতার দক্ষতা এবং যুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করত। কিন্তু, বর্তমানে তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তার অন্যান্য ধর্মের উপর আক্রমণের সমালোচনা করতে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য মুসলিম সংগঠনের সাথে সম্মিলিত হয়।[১৭] এর ২ বছর পর, দিদাত তার “আরব এন্ড ইসরাইয়েল - কনফ্লিক্ট অর ক্যানসিলিয়েশন” প্রকাশ করলে ইহুদিরাও তার সমালোচনা করা শুরু করে।[২]
১৯৮৮ সালে, সালমান রুশদি কাল্পনিক কীর্তি, দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশিত হলে, দিদাত রুহুল্লাহ খোমেইনী এর সালমান রুশদি মৃত্যুদন্ডের ফতোয়া সমর্থন করেন। তার মতে, রুশদি “একজন ভণ্ড এবং তার ব্যাক্তিত্ব বিধার্মিক। তাকে ক্ষমা করা উচিৎ নয়”।[১৮]
অস্ট্রেলিয়ায় তার শেষ সফরে তার জনপ্রিয়তার কারণে নিউ সাউথ ওয়েল্স এর আইনসভা পরিষদের সদস্য, ফ্রাঙ্কা আরেনা তার বক্তব্যে এ নিম্নোক্ত মতব্যটি করতে বাধ্য হন:
অবশ্যই, জাতিগত দ্বন্দের অন্যান্য শিকারদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান, যাদের দেখতে অন্যরকম, যেমন যেসব নারীরা মুসলিম পোষাক পরিধান করেন। আমি এ ধরনের আক্রমণের নিন্দা জানানোর সাথে অস্ট্রেলিয়ায় ধর্মীয় ঘৃণার বীজ বপন করতে আগত মুসলিমদের দ্বারা খ্রিষ্টানদের উপর হওয়া আক্রমণগুলোরও নিন্দা জানাচ্ছি। এই ক্ষেত্রে, আমি ইসলামিক ধর্ম প্রচারক, আহমেদ দিদাতকে নির্দেশ করছি, যিনি গুড ফ্রাইডেতে বাইবেল এর বিরোধিতা করতে লিপ্ত হন এবং ধার্মীয় ঘৃণা প্ররোচিত করেন। আমি সম্পূর্ণভাবে বাক স্বাধীনতার পক্ষে, কিন্তু আমাদের নেতাদের কিছুটা বিচারবুদ্ধি প্রদর্শন করতে হবে এবং সর্বোপরি, সকল দর্শন এবং বিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া আহমেদ দিদাত এর মতো মানুষদের ছাড়াই চলতে পারবে। আমি জানি না যে, তিনি কেন অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন এবং গুড ফ্রাইডেতে সিডনি টাউন হলের সামনে বড় একটি জন সম্মেলনে খ্রিষ্টান ধর্মকে অবজ্ঞা করতে এমন দ্বন্দ্ববাদী উপায় বেছে নেন। আমি অবশ্যই এ ধরনের কাজকে সমর্থন করি না।[১৯]
১৯৯৬ সালের মে মাসের ৩ তারিখে, স্ট্রোক এ তার মস্তিষ্ককাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে তিনি কাধের নিচ থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন, যার ফলে তিনি খাদ্য গ্রহণ এবং কথা বলার ক্ষমতা হারান।[২০] তাকে রিয়াদে কিং ফইসাল হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে তিনি সম্পূর্ণভাবে সজ্ঞানে ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি চোখের নাড়াচড়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে শিখেন, যে পদ্ধতিতে তিনি তার প্রতি পড়ে শোনানো অক্ষরের প্রতি সাড়া দিয়ে একটি চার্ট ব্যবহার করে শব্দ এবং বাক্য তৈরি করেন।[২০]
তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় তার স্ত্রী, হাওয়া দিদাত এর যত্নে তার বাড়িতে বিছানায় শুয়ে থেকে এবং অন্যদের দাওয়া (ইসলাম প্রচার) কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রেরিত করে জীবনের শেষ ৯ বছর অতিবাহিত করেন। তিনি সমর্থকদের শত শত পত্র পান এবং স্থানীয় এবং বিদেশ থাকা আসা সমর্থকরা তাকে দেখতে এবং ধন্যবাদ জানাতে আসেন।[২০]
২০০৫ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখে কুয়াজুলু-নাতাল এর ভেরুলাম এর ট্রেভেনেন রাস্তায় তার বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভেরুলাম কররস্থানে তাকে কবর দেওয়া হয়।[২১] হাওয়া দিদাত ২০০৬ সালের আগস্ট মাসের ২৮ তারিখে ৮৫ বছর বয়সে তার বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।[২২] তার জানাজার নামাজের ইমাম হিসেবে ছিলেন ইসমাইল ইবনে মুসা মেঙ্ক।[২৩]
গোলফ দেশগুলোর অনুদানে দিদাত প্রধান বিষয়গুলোকে উপর কেন্দ্র করে এক ডজনের অধিক বড় আকারের পুস্তিকা প্রকাশ করেন।[১০] তার অধিকাংশ বক্তৃতা এবং বিতর্ক এই বিষয়গুলোর উপরই।[২৪] বিভিন্ন সময়ে এবং স্থানে একই বিষয়ের উপর প্রদত্ত তার একাধিক বক্তৃতার ভিডিও রয়েছে। এ ধরনের বক্তৃতাগুলোর নাম-
প্রথম কিং ফয়সাল পুরস্কার লাভের পর, তার মধ্য প্রাচ্যের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি তার জনপ্রিয় পুস্তিকাগুলো নিয়ে ৪টি সংযোজিত পুস্তিকা তৈরি করার অনুমতি লাভ করেন। তার বই, “দ্য চয়েস: ইসলাম এন্ড ক্রিশ্চিয়ানিটি” ১০,০০০ টি সংস্করণ প্রাথমিকভাবে ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়।[৩৪] এই বইটি ১৯৯০ এর দশকে জনপ্রিয় ছিল এবং উত্তর আমেরিকা জুড়ে বিভিন্ন ধর্ম প্রচার প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে পাওয়া যেত। পরবর্তীকালে, কয়েকটি ছাপাখানা আরো সংস্করণ মুদ্রণ করতে চাইলে, মধ্য প্রাচ্য জুড়ে বিভিন্ন ছাপাখানায় ২ বছরে বইটির ২,৫০,০০০ সংস্করণ মুদ্রণ করা হয়।
পরবর্তীতে, বইটির দ্বিতীয় খন্ড, “দ্য চয়েস: ভলিউম ২” প্রকাশিত হয়, যাতে দিদাত এর আরো ছয়টি পুস্তিকা ছিল। দিদাত আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী এর “দ্য হলি কুরআন ট্রান্সলেশন” এর ধারাভাষ্য এবং বিবৃত বিষয়সূচি সহ একটি দক্ষিণ আফ্রিকায় মুদ্রিত সংস্করণের প্রচারণা করতেন। এটি সাধারণ মানুষের নিকট স্বল্প মূল্যে বিক্রি করা হয় এবং দিদাত তার বিভিন্ন বক্তৃতায় এই বইটির কথা উল্লেখ করেন।
দিদাত “আল কুরআন: দ্য আল্টিমেট মিরেকল” নামক একটি পুস্তিকা তৈরি করেন, যেখানে তিনি অ্যারিজোনায় বসবাসকারী মিশরীয় কম্পিউটার গবেষক, রাশাদ খালিফা এর প্রচলন করা “১৭ সংখ্যাটির” তত্ত্ব উল্লেখ করেন। রাশাদ খালিফা সম্পূর্ণ হাদীস প্রত্যাখ্যান সহ কিছু বিতর্কিত বিশ্বাস প্রকাশ করলে এই পুস্তিকাটি তুলে নেওয়া হয়।[৩৫]
বিশেষজ্ঞ ব্রাইয়েন লিঙ্কইন এর মতে, “দিদাত এর দাওয়া ছিল এক বিশেষ ধরনের। সুফিবাদ বা শিয়া ধর্ম সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু বলেননি এবং কোনো ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করেননি (যদিও তিনি নাইজেরিয়ায় এ ধরনের প্রচেষ্টার সমর্থক ছিলেন)। বরং, তার সকল প্রচেষ্টা খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারকারীদের প্রতিহত করা এবং মুসলিমদের খ্রিষ্টানদের আক্রমণ সম্পর্কে সচেতন করা। তাই, তার জনপ্রিয়তা ইসলামিক বিজ্ঞান রপ্ত করার জন্য নয়, কিন্তু বাইবেল এর পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের জন্য। যেমন, একজন নাইজেরীয় দিদাত এর সম্পর্কে বলেন যে, তিনি বক্তৃতা শিল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মুসলিমের চোখ খুলে দিয়েছেন। তার ইংরেজি ভাষার জ্ঞান, বিতর্কের দক্ষতা এবং ধর্মগ্রন্থের উপর দক্ষতা তাকে তার বইয়ের লক্ষ লক্ষ পাঠক এবং ভিডিও এর দর্শকদের কাছে প্রিয় করে তুলেছে, যার (বই এবং ভিডিওগুলোর) অধিকাংশই পৃথিবীব্যাপী বিনামূল্যে পাঠানো হয়। তার কর্তৃত্বের উৎস ভিন্ন, মুসলিমদের গ্রন্থের পরিবর্তে খ্রিষ্টানদের গ্রন্থের উপর দক্ষতা এবং আরবি এর চেয়ে ইংরেজি এর উপর অধিক দক্ষতা ছিল তার।”[১০]
তার দাওয়া কেন্দ্র, আইপিসিআই বিন লাদেন পরিবারের কাছ থেকে অনুদান পেত এবং তার সাথে ওসামা বিন লাদেন এর সাক্ষাত হয় বলে শোনা যায়, যাকে তিনি ইতিবাচকভাবে বর্ণনা করেন।[৩৬]
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক অধ্যয়নের শিক্ষক লোইস ভি. জে. রিজিয়ন এর মতে, দিদাত এর বিতর্ক এবং লেখা ধর্ম ভিত্তিক মতবাদের একটি উদাহরণ।[৪]
মুসলিম বিশেষজ্ঞ, ফরিদ এসাক এর সমালোচনায় তাকে মির কাহান এবং এবং জেরি ফারওয়েল এর মতো মৌলবাদীদের সাথে তলিনা করে লিখেন-[৩৭]
দিদাত এর হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদি বিরোধী ভিডিওটেপগুলো থেকে অন্যদের সম্পর্কে যা জানার সব জানা হয়ে গেছে এবং আমাদের তা নিয়ে সমস্যা নেই। নিশ্চই কখেনো কখনো প্রশ্ন জাগে যে প্রভূর কাছে পরিচয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ, যে আমাদের বিশ্বাস অনুসারে পরিচয়ের অন্তরালে এবং আমাদের মনকে দেখেন। এই প্রশ্নগুলোর দিকে না গিয়ে আমরা "জানার" মধ্যে পিছিয়ে এসে আশ্রয় নিই। আমরা দিদাত এর আরেকটা টেপের কথা উল্লেখ করলাম।[৩৭]
স্টিফেন রোথ ইন্সটিটিউট ফর স্টাডি অব কনট্যাম্পরারি এন্টি-সেমিটিজম এন্ড রেসিজম কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তাকে “ইহুধি বিরোধি” বলে আখ্য করেছে।[৩৮] ১৮৮৪ সাল থেকে ফ্রান্সে তার বই বিক্রয় এবং বন্টন নিষিদ্ধ এবং সেখানে বইগুলোকে ইহুদি বিরোধী, প্রচন্ড পশ্চিমা বিরোধী এবং জাতিগত ঘৃণা প্রকাশ করে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।[৩৯]
তার পুত্র এবং সমর্থকদের মতে, তিনি বাক স্বাধীনতা এবং কথোপকথনের সমর্থক ছিলেন এবং কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুলকাদের তায়োব এর মতে, তিনি শুধুমাত্র খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারকদের প্রতি তার প্রতিক্রিয়া এমন একটি উপায়ে প্রকাশ করেছেন যা ভালো বা খারাপ কোনোটিই নয়, তবে এটিতে মনযোগ প্রদান করা দরকার ছিল।[৩][৩]