![]() ২০১৪ সালে বিমানটি | |
দূর্ঘটনা | |
---|---|
তারিখ | ১২ মার্চ ২০১৮ |
সারমর্ম | রানওয়ে সারিবদ্ধকরণ ত্রুটি, সম্ভাব্য পাইলটের ত্রুটি |
স্থান | ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২৭°৪১′৩৮″ উত্তর ৮৫°২১′৩৯″ পূর্ব / ২৭.৬৯৩৮৯° উত্তর ৮৫.৩৬০৮৩° পূর্ব |
উড়োজাহাজ | |
বিমানের ধরন | বম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ –কিউ৪০০ |
পরিচালনাকারী | ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স |
আইএটিএ ফ্লাইট নম্বর | BS211 |
আইসিএও ফ্লাইট নম্বর | UBG211 |
কল সাইন | বাংলা স্টার ২১১ |
নিবন্ধন | এস২-এজিইউ[১] |
ফ্লাইট শুরু | শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা |
গন্তব্য | ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাঠমান্ডু |
যাত্রী | ৬৭[১] |
কর্মী | ৪[১] |
নিহত | ৫১[২] |
আহত | ২০ |
উদ্ধার | ২০ |
![]() | কারিগরি সমস্যার কারণে গ্রাফ এই মূহুর্তে অস্থায়ীভাবে অনুপলব্ধ রয়েছে। |
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ২১১ বিমানটি বাংলাদেশের ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলা বিমানের একটি আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট হিসেবে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। ১২ মার্চ ২০১৮ সালে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে (ইউটিসি +৫:৪৫) একটি বম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজে করে ফ্লাইটটি চালানোর সময় তা নেপালে অবতরণ করার সময় বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজটিতে মোট ৭১ জন আরোহী ছিল। যার মধ্যে ৫১ জন নিহত হয় ও ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়।[২][৩]
দূর্ঘটনায় পড়া বিমানটি একটি বোম্বার্ডি ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজ যার নিবন্ধন নম্বর এসটু-কিউ৪০০।[৪] এ উড়োজাহাজটি প্রথমে ২০০১ সালে স্কেনডেভিয়ান এয়ারলাইন্সের কাছে বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে উড়োজাহাজটি কিনে নেয় আর্গসবার্গ এয়ারলাইন্স এবং ২০১৪ সালে কিনে নেয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে এ উড়োজাহাজটি আরেকটি দূর্ঘটনায় পড়ে যা সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ঘটে। তবে সে দূর্ঘটনায় কোন হতাহত না হলেও উড়োজাহাজটির কিছু ক্ষতি হয়েছে যা ঠিক হওয়ার ৮ ঘণ্টার মধ্যেই গন্তব্যে পুনরায় চলাচল শুরু করে উড়োজাহাজটি।[৫]
আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট হিসেবে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৭ জন যাত্রী, ৪ জন বিমান ক্রু সবমিলিয়ে ৭১জন আরোহী নিয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে ১২ মার্চ ২০১৮ সালে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে (ইউটিসি +৫:৪৫) রওয়ানা দেয়।[৬]
ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টাওয়ার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শুরুতে রানওয়ে ০২-তে উড়োজাহাজ অবতরণের ছাড়পত্র দেয় কিন্তু বিমানের এয়ারক্রু রানওয়ে ২০-এ অবতরণের আবেদন জানান।[ক] পরে টাওয়ার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রানওয়ে ২০-এ উড়োজাহাজটি অবতরনের অনুমতি দেয়। এরপরে টাওয়ার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজের ক্রুদের তাদের অবতরনের হালনাগাদ জানতে চাইলে ক্রুদের পক্ষ থেকে জানানো হয় ‘‘আমি রানওয়ে ০২-তেই অবতরণ করতে চাই’’।[৭][৮]
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ফ্লাইটটি রানওয়ে ০২ স্পর্শ করে দুর্ঘটনায় পড়ার আগে। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, রানওয়েতে উড়োজাহজটি সঠিক নিয়মে অবতরণ করেনি।[৯] দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী জানিয়েছেন, "উড়োজাহাজটি অবতরনের সময়ের আচরণ ভিন্ন ছিল"। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড কর্মীরা জানান, উড়োজাহাজটি বিক্ষিপ্ত ভাবে বারবার বিভ্রান্তমূলক আচরণ করছিল।[১০] তারপরেও অবতরনের পরপরিই বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। [১০] এর পরেই পাশে থাকা একটি ফুটবল মাঠের পাশে বিধ্বস্থ হয়। বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী উল্লেখ করেছেন, উড়োজাহাজটি অবতরনের সময়ই বেশ ডানে বামে কাত হয়ে যাচ্ছিল এবং ভয়ঙ্কর শব্দ করছিল।[৯][১১] পরবর্তীতে উড়োজাহাজে আগুন ধরে যায় এবং ট্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে উড়োজাহাজটি ভেঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে যায়।[৯][১২]
দুর্ঘটনার পরেই আগুন নির্বাপন কর্মী এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন। উড়োজাহাজে লাগা আগুন বন্ধ করতে ১৫ মিনিট সময় লাগে আগুন নির্বাপন কর্মীদের।[১৩] ৩১ জন গুরুতর যখম যাত্রীকে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উদ্ধারকারী কর্মীরা দূর্ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষনিক ৮টি লাশ উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে উদ্ধারকার্যক্রমের মাধ্যমে আরো ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। দূর্ঘটনায় ৪৯ জন যাত্রী মারা যান যার মধ্যে ৪০ জন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। বাকি ৯ যাত্রীকে হাসাপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়।[৯][১০] দূর্ঘটনার পর প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়।[১৪]
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের এটিই প্রথম বড় সংখ্যক হতাহতের দুর্ঘটনা,[১৫] এবং বোম্বার্ডি ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজের মাধ্যমে ঘটিত হতাহতের মধ্যে দ্বিতীয় দুর্ঘটনা। এর আগে একই প্রতিষ্ঠানের উড়োজাহাজ কোলগান এয়ার ফ্লাইট ৩৪০৭ দুর্ঘটনায় পড়ে। [১৬] নেপালের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার ইতিহাসে এটি তৃতীয় বড় হতাহতের ঘটনা। এর আগে এমন দুর্ঘটনা ১৯৯২ সালে নেপালে হয়েছিল থাই এয়ারওয়েজ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ৩১১ এবং পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ২৬৮’র মাধ্যমে। [১৭][১৮] এটি নেপালে ২০১০-এর দশকে হওয়া ৮ম মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ১৭৯ জন মারা গেছেন।[১৯]
উড়োজাহাজটি ৬৭ জন যাত্রী এবং চারজন কর্মী নিয়ে যাত্রা করেছিল বলে প্রতিবেদন করা হয়। উড়োজাহাজের অধিনায়ক ছিলেন আবিদ সুলতান, যিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক পাইলট ছিলেন। সুলতানের ২২ বছর বিমান চালোনার অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি দুর্ঘটনায় বেঁচে যান কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই তার মৃত্যু হয়।[২০] উড়োজাহাজের সহকারী পাইলট ছিলেন পৃথুলা রশীদ[২০], তিনি বিমানটির প্রথম মহিলা পাইলট। অন্য দুটি কেবিন ক্রু সদস্য ছিলেন খাজা হোসেন মোহাম্মদ শফি ও শামীম আক্তার।
জাতীয়তা | যাত্রী | কর্মী | মোট |
---|---|---|---|
![]() |
৩৩ | ০ | ৩৩ |
![]() |
৩২ | ৪ | ৩৬ |
![]() |
১ | ০ | ১ |
![]() |
১ | ০ | ১ |
মোট | ৬৭ | ৪ | ৭১ |
দুর্ঘটনায় নিহত মোট ৫১ জনের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি, ২৪ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক।[২১]
দূর্ঘটনার পর তাৎক্ষনিক ভাবে দূর্ঘটনাস্থলে যান নেপালের প্রধানমন্ত্রী খাড়গা প্রসাদ শর্মা অলি এবং পুরো উদ্ধারকার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন।[২২] এ দূর্ঘটনার জন্য তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।[২৩]
নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে তদন্তে বাংলাদেশ ও বিমান প্রস্তুতকারী অংশগ্রহণ করছেন, তারা ফ্লাইট রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান। বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীর প্রতিবেদনও পাওয়া যায়। বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত কমিশন (এএআইআইসি) ৯ এপ্রিল তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয় যে বিমানটি রানওয়ের শুরুর থেকে ১,৭০০ মিটার (৫,৬০০ ফুট) নিচে স্পর্শ করেছিল।[২৪]