ইউরোপকেন্দ্রিকতা বলতে ইউরোপীয় বা পশ্চিমা সভ্যতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এমন এক পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝায় যা পশ্চিমা সভ্যতাকে বিশ্বের অপরাপর সভ্যতার উপর প্রাধান্য দেয়। এই কেন্দ্রিকতার সঠিক ক্ষেত্রটি অবশ্য সুনির্ধারিত নয়। এটি সমগ্র পশ্চিমা বিশ্ব থেকে শুরু করে কেবল ইউরোপ মহাদেশ বা আরও সংকীর্ণভাবে শুধুমাত্র পশ্চিম ইউরোপকে নির্দেশ করে। ইতিহাসের ক্ষেত্রে পরিভাষাটি প্রয়োগ করা হলে এটি ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের অন্যান্য রূপগুলির প্রতি কৈফিয়তমূলক অবস্থানকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হতে পারে।[১] ইউরোপকেন্দ্রিকতা পরিভাষাটির ব্যবহার সত্তর দশকের শেষ দিকে শুরু হলেও ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত এর খুব একটা প্রচলন দেখা যায় নি। এই সময়ে পরিভাষাটি প্রায়শই বিউপনিবেশায়ন এবং শিল্পায়িত দেশগুলোর দ্বারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে উন্নয়ন এবং মানবিক সহায়তার প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
‘ইউরোপকেন্দ্রিক’ শব্দটি ১৯২০ এর দশক থেকেই বিভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে।[২] বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বিউপনিবেশায়ন এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রসঙ্গে এই শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[৩] পরিচয়ের রাজনীতিতে আদর্শিক পরিভাষা হিসাবে শব্দটির ইংরেজি ব্যবহার আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বর্তমান ছিল।[৪] ১৯৭০ এর দশকে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক কমিশনের আফ্রিকা বিষয়ক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের তৎকালীন পরিচালক মার্ক্সবাদী মিশরীয় অর্থনীতিবিদ সামির আমিন একটি স্বতন্ত্র আদর্শ বুঝাতে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।[৫] আমিন পরিভাষাটি বিশ্বব্যাপী নির্ভরশীল পুঁজিবাদী উন্নয়ন ধারণার বিকাশের প্রেক্ষিতে ব্যবহার করেছিলেন।