ইজাবেল উপের | |
---|---|
ফরাসি: Isabelle Huppert | |
জন্ম | ইজাবেল আন মাদলেন উপের ১৬ মার্চ ১৯৫৩ প্যারিস, ফ্রান্স |
মাতৃশিক্ষায়তন | কোঁসের্ভাতোয়ার নাসিওনাল সুপেরিয়র দার দ্রামাতিক |
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৭১–বর্তমান |
কর্ম | পূর্ণ তালিকা |
দাম্পত্য সঙ্গী | রোনাল চাম্মা (বি. ১৯৮২) |
সন্তান | ৩; ললিতা চাম্মা |
আত্মীয় | কারোলিন উপের (বোন) |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
ইজাবেল আন মাদলেন উপের (ফরাসি: Isabelle Anne Madeleine Huppert, ফরাসি উচ্চারণ: [izabɛl yˈpɛʁ]; জন্ম: ১৬ই মার্চ, ১৯৫৩) হলেন একজন ফরাসি অভিনেত্রী। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অভিনেত্রী ফ্রান্স ছাড়াও ইতালি, রাশিয়া, মধ্য ইউরোপ ও এশিয়ায় অভিনয় করেছেন। ১৯৭১ সালে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। তিনি ১১০ এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৬টি মনোনয়ন ও ২টি জয় নিয়ে তিনি সর্বাধিক সেজার পুরস্কারে মনোনীত অভিনেত্রী। এছাড়া তিনি পাঁচটি লুমিয়ের পুরস্কার, একটি বাফটা পুরস্কার, তিনটি ইউরোপীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুটি বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, তিনটি কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, একটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন এবং একটি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। উপের ১৯৯৪ সালে অর্দ্র ন্যাশনাল দ্যু মেরিতের শ্যভালিয়ে এবং ২০০৫ সালে অফিসিয়ে উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ১৯৯৯ সালে লেজিওঁ দনরের শ্যভালিয়ে এবং ২০০৯ সালে অফিসার উপাধিতে ভূষিত হন। ২০২০ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে ২১শ শতাব্দীর সেরা অভিনয়শিল্পী তালিকায় দ্বিতীয় স্থান প্রদান করে।[১]
উপের ১৯৭৫ সালে আলোইস চলচ্চিত্রের জন্য তার প্রথম সেজার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং লা সেরেমোনি (১৯৯৫) ও এলা (২০১৬) চলচ্চিত্রের জন্য দুবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সেজার পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি দ্য লেসমেকার চলচ্চিত্রের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় নবাগত বিভাগে বাফটা পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ভায়োলেত নজিয়ে (১৯৭৮) ও দ্য পিয়ানো টিচার (২০০১) চলচ্চিত্রের জন্য দুবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, এবং স্টোরি অব ওম্যান (১৯৮৮) ও লা সেরেমোনি (১৯৯৫) চলচ্চিত্রের জন্য দুবার ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ভোল্পি কাপ জয় করেন। ফ্রান্সে তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল লুলু (১৯৮০), লা সেপারাসিওঁ (১৯৯৪), উইত ফেমা (২০০২), গাব্রিয়েল (২০০৫), আমুর (২০১২), এবং লাভেনিয়া (২০১৬)।
২০১৬ সালে উপের তার এলা চলচ্চিত্র দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি নাট্যধর্মী চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট পুরস্কার-সহ বেশ কিছু সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন, এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তার অভিনীত ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্রগুলো হল হেভেন্স গেট (১৯৮০), আই হার্ট হাকাবিস (২০০৪), দ্য ডিজঅ্যাপেয়ার্যান্স অব এলিনর রিগবি (২০১৩), লাউডার দ্যান বোম্বস (২০১৫), গ্রেটা (২০১৮), ফ্র্যাঙ্কি (২০১৯) এবং মিসেস হ্যারিস গোজ টু প্যারিস (২০২২)।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি উপের একজন দক্ষ মঞ্চ অভিনেত্রী। নয়টি মনোনয়ন নিয়ে তিনি সর্বাধিক মলিয়ের পুরস্কারে মনোনীত অভিনেত্রী। তিনি ২০১৭ সালে একটি সম্মানসূচক মলিয়ের পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর তিনি ইউরোপ থিয়েটার পুরস্কার অর্জন করেন।[২] ১৯৯৬ সালে ম্যারি স্টুয়ার্ট নাটক দিয়ে লন্ডন মঞ্চে এবং ২০০৫ সালে ৪.৪৮ সাইকোসিস নাটক দিয়ে নিউ ইয়র্ক মঞ্চে তার অভিষেক হয়। উপেরের উল্লেখযোগ্য মঞ্চ কর্মসমূহ হল নিউ ইয়র্ক মঞ্চে হাইনার মুলারের কোয়ার্টেট (২০০৯), সিডনি থিয়েটার কোম্পানির দ্য মেইডস (২০১৪) ও নিউ ইয়র্কে ফ্লোরিয়ান জেলারের দ্য মাদার (২০১৯)।
উপের ১৯৫৩ সালের ১৬ই মার্চ প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রেমন উপের একজন তালা প্রস্তুতকারী এবং মাতা আনিক (জন্মনাম: বিউ) একজন ইংরেজি ভাষার শিক্ষক। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে উপের সর্বকনিষ্ঠ। চলচ্চিত্র পরিচালক কারোলিন উপের তার বড় বোন। তার শৈশব কাটে ভিলা-দাভ্রেতে।[৩] তার পিতা ইহুদি ছিলেন এবং তার পরিবার অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির (বর্তমান প্রেসভ) এপের্জেস ও আলজাস-লোরেন থেকে ফ্রান্সে আসে।[৪] উপের তার মায়ের ক্যাথলিক বিশ্বাস অনুসারে বেড়ে ওঠেন।[৫][৬] তার মায়ের দিক থেকে কালো সয়েরদের একজন তার প্র-মাতামহ ছিলেন।[৭]
ছোটবেলায় তার মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি অভিনয় শুরু করেন এবং প্যারিসের কিশোরী তারকা হয়ে ওঠেন। তিনি পরবর্তীতে কোঁসেরভাতোয়ার অঁ রেইয়নমঁ দ্য রেজিওঁ দ্য ভের্সাইয়ে পড়াশুনা করেন, এবং সেখান থেকে তিনি অভিনয়ে পুরস্কার অর্জ করেন। এছাড়া তিনি কোঁসেরভাতোয়ার নাসিওনাল সুপেরিয়র দার দ্রামাতিকে পড়াশুনা করেন।[৮]
২০১২ সালে তার অভিনীত দুটি চলচ্চিত্র কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাল্ম দরের জন্য প্রতিযোগিতা করে: মাইকেল হানেকে'র আমুর এবং হং সাং-সু'র ইন অ্যানাদার কান্ট্রি। আমুর ছবিটি পাল্ম দর অর্জন করে।[৯]
২০১৬ সালে তিনি দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়, সেগুলো হল মিয়া হানসেন-লোভের থিংস টু কাম ও পল ভেরহোভেনের এল। থিংস টু কাম-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এবং এল-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনীয় হয় কান চলচ্চিত্র উৎসবে। তিনি এই দুটি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ন্যাশনাল সোসাইটি অব ফিল্ম ক্রিটিকস পুরস্কার, নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিকস সার্কেল পুরস্কার,[১০] ও লস অ্যাঞ্জেলেস ফিল্ম ক্রিটিকস সার্কেল অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার লাভ করেন। এলি ছবিতে তার কাজের জন্য তিনি আরও কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেন, সেগুলো হল গোল্ডেন গ্লোব,[১১] সেজার, গথাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম পুরস্কার ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট পুরস্কার। এছাড়া তিনি এই কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার ও ক্রিটিকস চয়েস চলচ্চিত্র পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
উপের বিবাহ করেননি। তিনি ১৯৮২ সাল থেকে লেখক, প্রযোজক ও পরিচালক রোনাল্ড চাম্মার সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত।[১২] চাম্মার সাথে তার তিন সন্তান রয়েছে। তন্মধ্যে লোলিতা চাম্মা একজন অভিনেত্রী, তার সাথে তিনি কোপাকাবানা (২০১০) ও ব্যারেজ (২০১৭)-সহ পাঁচটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[১৩] এর পূর্বে তিনি কয়েক বছর প্রযোজক দানিয়েল তোসকাঁ দ্যু প্লাঁতিয়ে'র সাথে বিবাহ বহির্ভূত বসবাস করতেন।[১৪][১৫]
উপের প্যারিসের রিপার্টরি প্রেক্ষাগৃহ ক্রিস্তিন সিনেমা ক্লাব ও একোলে সিনেমা ক্লাবের মালিক, যেগুলো পরিচালনা করেন তার পুত্র লোরেঞ্জো।[১৬][১৭]