ইতালীয় রন্ধনশৈলী

ঐতিহ্যবাহী পিৎজা মার্গারিটা নেপলস এর একটি রেস্তোঁরায় পরিবেশন করা হচ্ছে

ইতালীয় রন্ধনশৈলী (ইতালীয়: cucina italiana) ইতালির প্রতীকস্বরূপ। আদি সংস্কৃতির শিকড় হতে শতাব্দী ধরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ইতালীয় রন্ধনশৈলী উন্নত হয়ে এই পর্যায়ে এসেছে।[][][]

১৮শ শতাব্দীর পর, যে সময়ে নতুন বিশ্ব আবিষ্কার হয় এবং আলু,টমেটো,ক্যাপসিকাম, বিট এর পর প্রচুর পরিমাণে প্রচলন পরে রন্ধনশৈলী বেশ তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসে। ইতালীয় রন্ধনশৈলী তার আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের জন্য বেশ বিখ্যাত, বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ ইতালীয় উপদ্বীপের (Italian peninsula) মধ্যের বৈচিত্র্যে। এই রন্ধনশৈলী মূল আকর্ষণ তার স্বাদের বহুলতা এবং এটি সারা বিশ্বে বহুল প্রচলিত। এটি বিশ্বের বেশ কিছু রন্ধনশৈলীকে প্রভাবিত করেছে, বিশেষ করে আমেরিকার।

ইতালীয় রন্ধনশৈলী মূল বিশেষত্ব এর সরলতা, কেননা খাবারগুলো দুই থেকে থেকে চার ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। ইতালীয় খাবারগুলো মূলত খাবারের উপকরণের গুণগত মানের উপর নির্ভর করে করে, জাঁকজমক প্রস্তুতির উপর নয়। অঞ্চলভেদে উপকরণ ও খাবারের প্রকারভেদে ভিন্নতা দেখা যায়। অনেক ইতালীয় খাবার আঞ্চলিকভাবে প্রচলিত ছিল যা পরবর্তীতে প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

বহু শতাব্দী ধরে ইতালীয় রন্ধনশৈলী বিকশিত হয়েছে। এই রন্ধনশৈলীর প্রারম্ভ ৪র্থ খ্রিস্টপূর্ব হলেও ইতালির "দেশ" হিসাবে জন্ম উনবিংশ শতাব্দীতে। খাদ্য এবং সংস্কৃতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সে সময় তা ১ম খ্রিস্টপূর্ব সময়ের রন্ধন বিষয়ক বই এপিসিয়াস (Apicius) হতে জানা যায়। শতাব্দী ধরে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র, শাসক, উচ্চ পর্যায়ের পাচক, রাজনীতির উত্থান পতন এবং নতুন বিশ্ব আবিষ্কার খাদ্যের রন্ধনশৈলী বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। রোমান সম্রাজ্য পতনের পর থেকে ইতালীয় খাদ্য আবির্ভাব ঘটে ঠিক যখন বিভিন্ন শহর আলাদা হতে শুরু করল ও তাদের নিজেদের সংস্কৃতি গঠনে মনোযোগ দিল। বিভিন্ন রন্ধন কৌশল ও প্রস্তুতি দ্বারা বিভিন্ন রকম রুটি এবং পাস্তা তৈরি করা হতো । ইতালীর একেক অঞল দেখা যেত একেক ধরনের রন্ধনশৈলী । যেমনঃ মিলান(Milan-ইতালির উত্তরাঞ্চল) রিসটো(Risottos) এর জন্য, বোলোগনা(Bologna-ইতালির মধ্যাঞ্চল) টোরটোলিনি(Tortellini) এর জন্য আর নাপ্লেস(Naples-ইতালির দখিনাঞ্চল) পিজ্জা(pizza) ও স্পেগেডি এর জন্য বিখ্যাত।

প্রাচীনত্ব

[সম্পাদনা]

৪র্থ খ্রিস্টপূর্বে আরচেট্রেটাস(Archestratus) হলেন সর্বপ্রথম ইতালিয়ান রন্ধন বিষয়ক প্রসিদ্ধ লেখক। তিনি একজন গ্রীক সিসিলিয়ান(Greek Sicilian) ছিলেন এবং সিরাকুস(Syracuse) হতে আগত। তিনি একটি কবিতা লিখেছিলেন যা " উচ্চ গুনমান ও মৌসুমি " রান্নার উপকরণ সম্পর্কিত ছিল। তিনি বইয়ে উল্লেখ করেছিলেন খাবার কখনই অতিরিক্ত মসলা বা স্বাদবর্ধক উপাদান ব্যবহার নেতিবাচক দিক। তিনি মাছের সাধারনভাবে প্রস্তুতির প্রতিও গুরুত্ব আরপ করেছিলেন।

আরচেট্রেটাসের মত করে সাধারনভাবে খাদ্য তৈরি ধীরে ধীরে পরিত্যাক্ত হতে শুরু করে এবং দ্রুত রোমান সম্রাজের খাদ্যাভাস দ্বারা তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। ১ম খ্রিস্টাব্দে যখন "দো রে কুইনারিয়া"(De re coquinaria) প্রকাশিত হয় তখন তাতে ৪৭০ রকমের মশলা ও গাছড়া ব্যবহারের কথা পাওয়া যায়।সে সময় সিসিলিয়ানরা(Sicilian) পনির তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল। রোমানেরা সেকারণে গ্রীক রুটির কারিগরদের নিয়োগ দিত কারণ তারা রান্নার সময় যে রুটি ও পনীর ব্যবহার করত তা সিসিলি (Sicily) থেকে ক্রয় করত।

মধ্যযুগ

[সম্পাদনা]

রোমান ও অ্যাথেন্সের রন্ধন কৌশলের সাথে সিসিলির মিল থাকা তে অনেকে মনে করে সিসিলির রন্ধনশৈলীকে প্রথম প্রকৃত ইতালীয় রন্ধনশৈলী। ৯ম শতাব্দীতে আরববেরা সিসিলিতে আক্রমণ করলে সেখানে কাজুবাদাম, পুঁইশাক ও ভাতের প্রচলন শুরু করে। ১২ই শতাব্দীতে নরমান রাজা সিসিলিতে বসবাসরত মানুশদের লখ করে দেখন যে তারা ময়দা ও পানি দিয়ে লম্বা তারের মত কিছু তৈরি করে যাকে তারা বলে আত্রিয়া ( ) , যা পরবর্তীতে হয় ত্রি () । এখনও উত্তর অঞ্চলে স্প্যাগেডিকে "ত্রি" বলা হয়।

খাবার সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক ও অবকাঠামগত পরিবর্তন ব্যবহার করা হত, যেহেতু খাদ্য হিমায়িতকরনের কোনো উপায় ছিল না। মাছ-মাংশ ধোঁয়া, বরফ ব্যবহার করে বা শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হত। লবণাক্ত পানি বা লবণ ব্যবহার করে মাছ ও শূকরের মাংস সংরক্ষণ করত।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Italian Food"Life in Italy। ৮ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৭ 
  2. "The History of Italian Cuisine I"Life in Italy। ৩০ অক্টোবর ২০১৯। ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২০ 
  3. Thoms, Ulrike। "From Migrant Food to Lifestyle Cooking: The Career of Italian Cuisine in Europe Italian Cuisine"EGO (http://www.ieg-ego.eu) (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২০