ইন্দিবর | |
---|---|
জন্ম | শ্যামলাল বাবু রাই ১ জানুয়ারি ১৯২৪ |
মৃত্যু | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স ৭৩)
পেশা | গীতিকার |
কর্মজীবন | ১৯৪৬-১৯৯৭ |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
ইন্দিবর নামে সুপরিচিত শ্যামলাল বাবু রাই (১ জানুয়ারি ১৯২৪ – ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭)[১] একজন ভারতীয় গীতিকার ছিলেন। তিনি ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকের হিন্দি চলচ্চিত্রের শীর্ষস্থানীয় গীতিকার ছিলেন।[২] তিনি চার দশকের অধিক সময়ের কর্মজীবনে তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে এক হাজারের অধিক গান লিখেছেন। তিনি অমানুষ (১৯৭৫) চলচ্চিত্রের "দিল অ্যায়সা কিসিনে না তোড়া" গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি হিমালয় কী গোদ মেঁ (১৯৬৫)-এর "এক তু না মিলা", সমঝোতা (১৯৭৩)-এর " সমঝোতা গমোঁ সে কর লো", রেশম কি ডোরি (১৯৭৪)-এর "বহনানে ভাই কি কলাই" ও তোহফা (১৯৮৪)-এর "প্যায়ার কা তোহফা তেরা" গানের জন্য আরও চারটি ফিল্মফেয়ারের মনোনয়ন লাভ করেন।
ইন্দিবর ১৯২৪ সালের ১লা জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম শ্যামলাল বাবু রাই। তিনি ঝাঁসি জেলার বরওয়া সাগরে বেড়ে ওঠেন। তিনি গীতিকার হিসেবে পেশাদার কর্মজীবন শুরু করতে মুম্বইয়ে পাড়ি জমান।[১]
ইন্দিবর ১৯৪৬ সালে ডাবল ফেস (১৯৪৬)-এর মধ্য দিয়ে প্রথম চলচ্চিত্রের গীত রচনার সুযোগ পান। এরপর তিনি 'বি' ও 'সি' শ্রেণির চলচ্চিত্রসহ যে কোন সুযোগ আসলে তা লুফে নিতেন। তার প্রথম আলোচিত সাফল্য আসে ১৯৫১ সালের মলহার চলচ্চিত্রের গান রচনার মধ্য দিয়ে। তিনি এই চলচ্চিত্রের "বড়ে আরমানো সে রাখ্খা হ্যায় বালাম তেরি কসম" গান রচনা করেন, যার সুর করেন রোশন।[১]
বাবুভাই মিস্ত্রীর সঙ্গীতধর্মী পারসমণি (১৯৬৩) চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম বড় নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীকান্ত-প্যায়ারেলাল সঙ্গীত পরিচালক যুগলের একত্রে কর্মজীবন শুরু হয়।[১] এই চলচ্চিত্রে মোহম্মদ রফির গাওয়া প্রণয়মূলক "রোশন তুমহি সে দুনিয়া" ইন্দিবরের লেখা স্মরণীয় একটি গান।[৩] এরপর সে সময়ের শীর্ষ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সঙ্গীত পরিচালকদের সাথে তার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তিনি হিমালয় কী গোদ মেঁ (১৯৬৫) চলচ্চিত্রের "এক তু না মিলা" গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে তার প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে মনোজ কুমারের সাথে তার যুগলবন্দি তৈরি হয়। তার সাথে তিনি উপকার চলচ্চিত্রে কাজ করেন। ইন্দিবরের গীতে কল্যাণজী-আনন্দজীর সুরারোপিত গভীর ভাবপ্রবণ ও দেশাত্মবোধক "কসমে ভাদে প্যায়ার ওয়াফা" গানটিতে মান্না দের কণ্ঠ ও প্রাণের অভিনয় চলচ্চিত্রটিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। একই বছর তিনি দিল নে পুকারা চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণাদায়ক "ওয়াক্ত করতা জো ওয়াফা" গান লিখেন।[৩] পরের বছর গোবিন্দ সরৈয়ার সরস্বতীচন্দ্রা (১৯৬৮) চলচ্চিত্রে তার রচিত আবেগপ্রবণ "চন্দন সা বদন", "ছোড় দে সারি দুনিয়া" ও "ম্যায় তো ভুল চলি বাবুল কা দেস" গানগুলো সমাদৃত হয়।[১] এই চলচ্চিত্রের জন্য সুরকার কল্যাণজী-আনন্দজী শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[৪] এই বছর রোশনের সুরে তার রচিত অনোখি রাত চলচ্চিত্রের "ও তাল নদী কে জল মেঁ" গানটি মুক্তির পর হিট হয় ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে।[৩]
মনোজ কুমারের পূরব অউর পশ্চিম (১৯৭০) চলচ্চিত্রে তার রচিত "দুলহন চলি", "কোই জব তুমহারা হৃদয় তোড় দে" গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া এই চলচ্চিত্রের দেশাত্মবোধক "হ্যায় প্রীত জহাঁ কি রীত সদা" গান লিখেন। এরপর সফর চলচ্চিত্রের মর্মস্পর্শী "জিন্দগি কা সফর" গান লিখেন।[৩] একই বছর তিনি মনমোহন দেসাইয়ের সচ্চা ঝুঠা চলচ্চিত্রের "মেরি প্যায়ারি বহেনিয়া বনেগি দুলহনিয়া" গান লিখেন, যা বিবাহের অনুষ্ঠানে বহুল ব্যবহৃত হয়। এছাড়া তিনি বিজয় আনন্দের জনি মেরা নাম চলচ্চিত্রে আপবিট ধারার "নফরত করনে ওয়ালোঁ কে", "পল ভর কে লিয়ে" ও "ও মেরে রাজা" গান লিখেন।[১] তিনি ১৯৭৩ সালের সমঝোতা চলচ্চিত্রের "সমঝোতা গমোঁ সে কর লো" গানের জন্য তার দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তিনি রেশম কি ডোরি (১৯৭৪) চলচ্চিত্রের "বহনানে ভাই কি কলাই" গানের জন্য তার তৃতীয় ফিল্মফেয়ারের মনোয়নয় লাভ করেন। পরের বছর অমানুষ (১৯৭৫) চলচ্চিত্রের দুঃখ ভারাক্রান্ত "দিল অ্যায়সা কিসিনে না তোড়া" গান লিখেন।[৩] শ্যামল মিত্রের সুরে কিশোর কুমারের গাওয়া গানটির জন্য ইন্দিবর শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৮০ সালে কুরবানী চলচ্চিত্রের জন্য গান লিখেন। কল্যাণজী-আনন্দজীর সুরারোপিত এই চলচ্চিত্রে তার রচিত "হাম তুমহে চাহতে হ্যায়", "ক্যায়া দেখতে হো", "লায়লা হো লায়লা" এবং বিদ্দুর সুরে নাজিয়া হাসানের গাওয়া "আপ জ্যায়সা কোই" গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। "আপ জ্যায়সা কোই" গানের জন্য নাজিয়া শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।[৫] পরের বছর প্রেম গীত (১৯৮১) চলচ্চিত্রে জগজিৎ সিংয়ের সুরকৃত ও গাওয়া "হোঠোঁ সে ছু লো তুম" তার রচিত অন্যতম প্রণয়মূলক একটি গান।[৩]
ডিস্কো বিট ও বাপ্পী লাহিড়ীর আগমনের পর ইন্দিবর কাব্য বাদ দিয়ে সময়ের সাথে তাল মিলাতে অর্থহীন গান লিখতে শুরু করেন। এই সময়ে জিতেন্দ্র, শ্রীদেবী, জয়া প্রদা, বাপ্পি লাহিড়ী ও ইন্দিবরের দক্ষিণী-ধারার যুগলবন্দী সৃষ্টি হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য গান হল হিম্মতওয়ালা (১৯৮৩)-এর "ন্যায়নো মেঁ সপনা" এবং তোহফা (১৯৮৪)-এর "প্যায়ার কা তোহফা তেরা"।[১] দ্বিতীয়োক্ত গানের জন্য তিনি তার পঞ্চম ও সর্বশেষ ফিল্মফেয়ারের মনোনয়ন লাভ করেন।
১৯৯০-এর দশকে কর্মজীবনের শেষ ভাগে তিনি রাকেশ রোশনের করন অর্জুন (১৯৯৫) ও কয়লা (১৯৯৭) চলচ্চিত্রের গান রচনা করেন।[১]
ইন্দিবর ১৯৯৭ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[৬]
বছর | পুরস্কার | বিভাগ | মনোনীত কর্ম | ফলাফল | সূত্র. |
---|---|---|---|---|---|
১৯৬৬ | ১৩তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ গীতিকার | "এক তু না মিলা" (হিমালয় কী গোদ মেঁ) | মনোনীত | [৭] |
১৯৭৪ | ২১তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | "সমঝোতা গমোঁ সে কর লো" (সমঝোতা) | মনোনীত | [৮] | |
১৯৭৫ | ২২তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | "বহনানে ভাই কি কলাই" (রেশম কি ডোরি) | মনোনীত | [৯] | |
১৯৭৬ | ২৩তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | "দিল অ্যায়সা কিসি নে না তোড়া" (অমানুষ) | বিজয়ী | [১০] | |
১৯৮৫ | ৩২তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | "প্যায়ার কা তোহফা তেরা" (তোহফা) | মনোনীত | [১১] |