ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন ব্যবস্থা হাজার হাজার দ্বীপপুঞ্জ এর অর্থনৈতিক সংস্থানের উপর ভিত্তি করে সময়ের সাথে একটি সুস্থিত রূপ নিয়েছে এবং এর ২০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার বিস্তৃতি মূলত এর প্রধান দ্বীপ জাভাকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে।[১]
সাধারণত একটি দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় দেশের সকল পরিবহন মাধ্যম-ই ভূমিকা রাখে এবং এগুলো নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক না হয়ে সাধারণত পরিপূরক হয়। সড়কব্যবস্থা বরাবরই অন্যতম প্রধান, ২০০৮ সালে দেশের সড়কব্যবস্থার মোট দৈর্ঘ্য দাড়ায় ৪৩৮,০০০ কিলোমিটার (২৭২,০০০ মাইল)। রেলব্যবস্থায় জাভা ও সুমাত্রায় চারটি অসংযুক্ত রেলপথ রয়েছে যা মূলত বাল্ক পণ্য পরিবহনের জন্য এবং দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য নিবেদিত।
অর্থনৈতিক সমন্বয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য সমুদ্র পরিবহন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি প্রধান দ্বীপে অন্তত একটি উল্লেখযোগ্য বন্দর নগরী থাকায় এই ব্যবস্থাটি যথেষ্ট উন্নত। অভ্যন্তরীণ নৌপথের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম এবং পূর্ব সুমাত্রা এবং কালিমানতান অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। বিমান পরিবহন এর কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য, বিশেষত যেখানে সড়ক বা নৌপথ পরিবহনের অভাব রয়েছে। এটি একটি বিস্তৃত দেশীয় এয়ারলাইন নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত যেখানে সমস্ত বড় শহরগুলিতে বিমানের মাধ্যমে পৌঁছানো যায়।
ইন্দোনেশিয়া একটি বিস্তৃত দ্বীপপুঞ্জ এর সমষ্টি হওয়ার কারণে, সামুদ্রিক জাহাজ চলাচল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ সরবরাহ করে। প্রচলিত ব্যবহারের নৌযানগুলির মধ্যে রয়েছে বড় বড় মালবাহী জাহাজ, বিভিন্ন ফেরি, যাত্রী জাহাজ, মৎস্যবাহী জাহাজ ও ছোট মোটর চালিত নৌযান। চিরাচরিত কাঠের জাহাজ পিনিসি এখনও ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে আন্তঃদ্বীপজাত মালবাহী পরিষেবা হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পিনিসির প্রধান ঐতিহ্যবাহী বন্দরগুলি হল জাকার্তায় সুন্দা কেলাপা এবং মাকাসার এর পাওতেরে বন্দর।
স্বল্প ব্যবধানের ফেরি পরিষেবাগুলি নিকটবর্তী দ্বীপপুঞ্জগুলির মধ্যে সমুদ্র অতিক্রম করে, বিশেষত সুমাত্রা থেকে জাভা হয়ে লেজার সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত। সুমাত্রা, জাভা, এবং বালির মধ্যে ব্যস্ত ক্রসিংগুলিতে, একাধিক ফেরি প্রতিদিন চব্বিশ ঘণ্টা চলমান থাকে। সুমাত্রা ও মালয়েশিয়ার মধ্যবর্তী মালাক্কা সমুদ্র এর উপরে এবং সিঙ্গাপুর ও কাছাকাছি ইন্দোনেশীয় দ্বীপগুলির যেমন বাটাম এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ফেরি পরিষেবা রয়েছে।
যাত্রীবাহী জাহাজের একটি নেটওয়ার্ক বিশেষত দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব অংশে আরও দূরবর্তী দ্বীপগুলির সাথে দীর্ঘ সংযোগ রক্ষা করে। জাতীয় শিপিং লাইন পেলনি, দুই থেকে চার সপ্তাহের ব্যপ্তি সারা দেশে বন্দর গুলিতে যাত্রী পরিষেবা সরবরাহ করে। এই জাহাজগুলি সাধারণত দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে দীর্ঘ দূরত্ব সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল উপায়ে সরবরাহ করে। এখনও ছোট ছোট ব্যক্তিগতভাবে চালিত নৌকা দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে পরিষেবা সরবরাহ করে।
কিছু দ্বীপে, বড় বড় নদীগুলি একটি মূল পরিবহন ব্যবস্থা সরবরাহ করে। কালিমানতান এ নদীগুলির উপর দিয়ে চলমান বড়নৌকাগুলি বহু অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে পৌঁছানোর একমাত্র উপায়।
ইন্দোনেশিয়ায় ২১,৫৭৯ কিলোমিটার নৌপথ রয়েছে (২০০৫ সালের হিসাবে), যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকটি কালিমানতানে, সুমাত্রা এবং পাপুয়ায় এক-চতুর্থাংশ করে রয়েছে। নৌপথগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কারণ এই দ্বীপগুলির নদীগুলি মাঝারি আকারের জাহাজ রাখতে যথেষ্ট প্রশস্ত নয়। তাছাড়াও, কালিমানতান এবং পাপুয়া জাভার মতো উন্নত দ্বীপ নয়।[২] বর্তমানে দীর্ঘতম নৌপথের দেশগুলির মধ্যে ইন্দোনেশিয়া সপ্তম স্থানে রয়েছে।[৩]
প্রধান বন্দর এবং পোতাশ্রয়গুলির মধ্যে রয়েছে বিটুং, সিলাক্যাপ, সাইরেবোন, জাকার্তা, কুপাং, পালেমবাং, সেমারাং, সুরাবায়া এবং মাকাসার। বন্দরগুলি বিভিন্ন ইন্দোনেশিয়া বন্দর কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত হয়, যা I হতে IV এর মাধ্যমে সংখ্যাযুক্ত চারটি রয়েছে। দেশের পশ্চিমে I এবং পূর্বে IV। জাকার্তার তানজুং প্রিয়োক বন্দর ইন্দোনেশিয়ার ব্যস্ততম বন্দর,যা ৫২ লাখ টিইইউ আদান-প্রদান করে।.[৪] একটি দ্বিখণ্ডিত "নতুন তানজুং প্রিয়ক" সম্প্রসারণ প্রকল্প বর্তমানে চলছে, যা ২০২৩ সালে পুরোপুরি চালু হলে বিদ্যমান বার্ষিক সক্ষমতা তিন গুণ হবে। ২০১৫ সালে, কৌশলগত উত্তর সুমাত্রার কুয়ালা তানজুং বন্দর এর ভিত্তি খনন সম্পন্ন হয়েছে। এটি প্রতি বছরে ৫ লাখ 'টিইইউ' ধারণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে,[৫] এটি জোহরের তানজুং পেলেপা বন্দর ছাড়িয়ে যাবে এমনকি সিঙ্গাপুর বন্দর এর সাথে প্রতিযোগিতাও করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।[৬]
ইন্দোনেশিয়ার রাস্তায় যানবাহনের জন্য বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ব্যবহৃত হয়। সড়ক ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত বেশিরভাগ জায়গায় বাস পরিষেবা বিদ্যমান। প্রধান শহরগুলির মধ্যে বিশেষত সুমাত্রা, জাভা এবং বালিতে স্টপেজ ও সরাসরি দুধরনের পরিষেবাই হয়; চূড়ান্ত গন্তব্য না হওয়া পর্যন্ত অনেক পরিষেবা কোনও স্টপ ছাড়াই চলাচল করে। আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং ছোট শহরগুলির মধ্যে বেশিরভাগ পরিষেবা হিসেবে মিনিবাস বা মিনিভ্যান(অ্যাংকুট) রয়েছে। বাস এবং ভ্যানও শহরগুলির মধ্যে পরিবহনের প্রাথমিক মাধ্যম। প্রায়শই এগুলি শেয়ার ট্যাক্সি হিসাবে চালিত হয়।
অনেক শহরগুলিতে ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি ট্যাক্সি হিসাবে কয়েকরকম পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। কোপাজা বাস এবং জাকার্তায় আরও পরিশীলিত ট্রান্সজাকার্তা বাস র্যাপিড ট্রানজিট, যা বিশ্বের দীর্ঘতম বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ব্যবস্থা, যা প্রায় ২৩০.৯ কিলোমিটার (১৪৩.৫ মাইল) চলাচল করে[৭] এবং প্রতিদিন ৪,৩০,০০০ যাত্রী বহন করে (২০১৬ সালের হিসাব)[৮] যোগাকার্তা, পালেমবাং, বান্দুং, ডেনপাসার, পেকানবাড়ু, সেমারাং, মাকাসার এবং পাদাং এর মতো অন্যান্য শহরেও বিআরটি ব্যবস্থা রয়েছে আলাদা লেন ছাড়াই। অনেক শহরে বিভিন্ন ধরনের মোটর চালিত অটোরিকশা(বাজাজ) রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় বেকাক নামে পরিচিত সাইকেল রিকশা গুলি শহরের রাস্তাগুলিতে নিয়মিত দর্শনীয় এবং সস্তা পরিবহন সেবা সরবরাহ করে। যানজট সৃষ্টি করার জন্য তাদের দোষও দেওয়া হয়েছে এবং ফলস্বরূপ, ১৯৭২ সালে এটিকে জাকার্তার বেশিরভাগ জায়গা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[৯] কয়েকটি শহরে ঘোড়া টানা গাড়ি পাওয়া যায়।
ইন্দোনেশিয়ানদের ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতার কারণে বিশেষত বড় শহরগুলিতে, ব্যক্তিগত গাড়ি গুলি বেশি সাধারণ হয়ে উঠছে। তবে গাড়ীর পরিমাণ ক্রমবর্ধমান নতুন রাস্তা নির্মাণের পরিমাণকে যথেষ্ট হতে দিচ্ছে না, এর ফলে বড় শহরগুলিতে বিশেষত জাকার্তায় প্রায়শই যানজট হয়, যা প্রায়শই মহাসড়কেও ঘটে। জাকার্তায় বিশ্বের অন্যতম খারাপ ট্র্যাফিক জ্যাম রয়েছে।[১০]
ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ২,৮৩,১০২ কিলোমিটার (১,৭৫,৯১১ মাইল) পাকা মহাসড়ক এবং ২,১৩,৫০৫ কিলোমিটার (১,৩২,৬৬৬ মাইল) কাঁচা মহাসড় (২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী) রয়েছে।[১১] এএইচ২ হাইওয়েটি ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম প্রধান মহাসড়ক। অন্যটি হল সুমাত্রার এএইচ২৫। ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি মহাসড়ক রয়েছে, এর মধ্যে কয়েকটি জাতীয় রুট (২৫ টি, বর্তমানে কেবল জাভা এবং আংশিকভাবে সুমাত্রাতে) রয়েছে এবং তাদের কয়েকটি টোল রোড। ইন্দোনেশিয়ার প্রথম টোল রোডটি জাগোরাউই টোল রোড, যা ১৯৭৮ সালে খোলা হয়েছিল।[১২] রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো এর অধীনে টোল রোডের নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে, তার মেয়াদকালে ৫8৮ কিলোমিটার (৩৫৩ মাইল) টোল রাস্তা চালু হয়েছিল, যা পূর্বের রাষ্ট্রপতিদের চেয়ে বেশি ছিল।[১২] সর্বাধিক ব্যয়বহুল সিপুলারাং টোল রোড যা জাকার্তা এবং বান্দুং কে সিক্যাম্পেক এবং পূরওয়াকার্তা-র মাধ্যমে সংযুক্ত করে।
ইন্দোনেশিয়াও ২০১২ সাল থেকে ধীরে ধীরে একটি ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম (আইটিএস) চালু করেছে। আইটিএস ইন্দোনেশিয়া ২ এপ্রিল ২০১১ সালে তৈরি হয়।[১৩]
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় রুটগুলি বেশিরভাগ প্রধান শহরগুলির মধ্য দিয়ে যায় এবং এগুলি শহরকেন্দ্রগুলির মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ করার জন্য নকশাকৃত। তারা টোল রোডের বাইরে প্রধান আন্তঃনগর রুট হিসাবে কাজ করে। একই সময়ে বিশাল ট্র্যাফিক পরিচালনা করার সাথে সাথে একটি জাতীয় রুটের ট্রাক পরিবহনের যোগ্য হতে হবে। জাভাতে জাতীয় রুট সংখ্যাযুক্ত, এবং জাভার বাইরের জাতীয় রুট সংখ্যাযুক্ত নয়। কিছু শহরে, এমনকি জনাকীর্ণ জেলাগুলিতে, আন্তঃনগর ট্র্যাফিককে এড়িয়ে শহরের প্রবেশের জন্য প্রায়শই বাইপাস বা রিং রোড তৈরি করা হয় জাতীয় রুট হতে।
জাকার্তা ইনার রিং রোড থেকে জাকার্তা আউটার রিং রোড পর্যন্ত সড়কপথের ডিকেআই জাকার্তা অংশ ব্যতীত বাকি সড়কগুলির জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দায়বদ্ধ। ট্র্যাফিক পরিচালনা করতে অক্ষমতার কারণে একটি জাতীয় রুট সংশোধন করা যেতে পারে, এটির পরিচালনা সাধারণত প্রদেশকে দেওয়া হয়।
তানজুং বেনোয়া থেকে বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দর থেকে সেরানগান পর্যন্ত টোল রোড, পুরোপুরি প্রত্যক্ষ লাইনে (বাঁকানো নয়) ১২.৭ কিলোমিটার এবং মোটরসাইকেলের লেনেও সজ্জিত। বালিতে অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলন শুরুর প্রায় এক সপ্তাহ আগে টোল রোডটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ এ খোলা হয়েছে।[১৬]
ইন্দোনেশিয়ার বেশিরভাগ রেলপথ জাভা তে অবস্থিত, যা যাত্রী এবং মাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। রেলপথ কেরেতা আপি ইন্দোনেশিয়া পরিচালনা করে। জাভা আন্তঃ-শহর রেল ব্যবস্থা জাকার্তা মহানগর অঞ্চল এবং সুরবায়ায় স্থানীয় যাত্রী রেল পরিষেবা দ্বারা পরিপূরক। জাকার্তায়, যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা (কেরেটা কমিউটার ইন্দোনেশিয়া) দিনে ৮,৮৫,০০০ যাত্রী বহন করে।[১৭] এছাড়াও, জাকার্তায় একটি গণ র্যাপিড ট্রানজিট ব্যবস্থা নির্মাণাধীন রয়েছে এবং বর্তমানে জাকার্তায় লাইট রেল ট্রানজিট ব্যবস্থাও নির্মাণাধীন রয়েছে।[১৮][১৯] সুমাত্রায় চারটি পৃথক রেলপথ রয়েছে: একটি আকেহ তে(যা ২০২০-এর দশকে শেষ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে), একটি উত্তর সুমাত্রায় , পশ্চিম সুমাত্রায় আরেকটি এবং দক্ষিণ সুমাত্রা ও লাম্পুংয় এ চূড়ান্ত একটি। ট্রান্স-সুলাওয়েসি রেলপথ নির্মাণের প্রভাব হিসাবে দক্ষিণ সুলাওয়েসি-র বাররু এলাকায় রেল নেটওয়ার্ক রয়েছে, যদিও এই নেটওয়ার্কটি এখনও ব্যবহার করা হয়নি।[২০] ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অংশে কোনও রেলপথ নেই, যদিও কালিমানতান[২১] এবং সুলাওয়েসিতে[২২] নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে। একটি উচ্চ-গতির রেল (এইচএসআর) নির্মাণের পরিকল্পনা সরকার ২০১৫ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল, যেটি ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। আশা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে রাজধানী জাকার্তা বান্দুং এর সাথে সংযুক্ত হবে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার (৮৭ মাইল) দূরত্ব আয়ত্বে এনে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়ায় এর সম্ভাব্য সম্প্রসারণের জন্যও পরিকল্পনাসমূহ উল্লেখ করা হয়েছিল।[২৩]
২০১৩ সালের হিসাবে, ইন্দোনেশিয়ায় ঘনীভূত পদার্থের ১,০৬৪ কিমি (৬৬১ মাইল), ঘনীভূত / গ্যাস পদার্থের ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল), গ্যাসের ১১,৭০২ কিমি (৭,২৭১ মাইল), তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের ১১৯ কিলোমিটার (৭৪ মাইল), তেলের ৭,৭৬৭ কিমি (৪,৮২৬ মাইল), তেল/গ্যাস/জলের ৭৭ কিমি (৪৮ মাইল), পরিশোধিত পণ্যের ৭২৮ কিমি (৪৫২ মাইল), এবং জলের ৪৪ কিমি (২৭ মাইল) পাইপলাইন রয়েছে।[২৪]
ইন্দোনেশিয়ার বিমান পরিবহন ব্যবস্থা পুরো দ্বীপপুঞ্জজুড়ে হাজার হাজার দ্বীপ সংযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসাবে কাজ করে। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জের দেশ, পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৫,১২০ কিলোমিটার (৩,১৮১ মাইল) এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে ১,৭৬০ কিমি (১,০৯৪ মাইল) বিস্তৃত[২৫] ও ১৩,৪৬৬ দ্বীপ নিয়ে[২৬] যার মধ্যে ৯২২ টি তে স্থায়ীভাবে মানুষ বসবাস করে আসছে।[ক] আনুমানিক ২৫ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি লোকের জনসংখ্যা এটিকে বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল দেশে পরিণত করেছে এবং মধ্যবিত্তদের অবস্থার উন্নতির কারণে, সাম্প্রতিক দশকে স্বল্প মূল্যের পরিবহন এর মূল্য বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে, অনেক দেশীয় ভ্রমণকারী স্থল ও সমুদ্র পরিবহন বাদ দিয়ে দ্রুত এবং আরও আরামদায়ক বিমান ভ্রমণ বেছে নিয়েছে।[২৭] বিমান ভ্রমণের জন্য ইন্দোনেশিয়া ব্যাপকভাবে উদীয়মান বাজার হিসাবে বিবেচিত। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ইন্দোনেশীয় বিমানের যাত্রী সংখ্যা ২,৭৪,২১,২৩৫[২৮] থেকে বেড়ে ৯,৪৫,০৪,০৮৬[২৯] হয়েছে অর্থাৎ তিনগুণ বেড়েছে।[২৯]
তবে, ইন্দোনেশিয়ান বিমান ব্যবস্থায় নিরাপত্তার ইস্যুটি অবিরাম সমস্যা হিসাবে অব্যাহত রয়েছে।[২৭] বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার বিমান পরিবহন ব্যবস্থাকে বিশ্বের স্বল্পতম নিরাপদ খ্যাতি দিয়েছে।[৩০] ইন্দোনেশিয়ার বিমান চলাচল অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যার মধ্যে রয়েছে দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ, পুরানো এবং প্রায়শই অবহেলিত অবকাঠামো, মানবিক ত্রুটি, খারাপ আবহাওয়া, দাবানলের আগুনের কারণে কুয়াশার সমস্যা এবং আগ্নেয়গিরি দ্বারা আগ্নেয়গিরির ছাই ছড়ানোর ফলে আকাশ পরিবহন ব্যাহত হওয়া।[৩১][৩২][৩৩]
ইন্দোনেশীয় বিমানবাহিনী-র ৩৪,৯৩০ জন কর্মী রয়েছে ২২৪ বিমানের জন্য, তাদের মধ্যে ১১০ টি যুদ্ধ বিমান রয়েছে। ইন্দোনেশীয় বিমান বাহিনী সমগ্র দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে অসংখ্য সামরিক বিমান ঘাঁটি এবং সামরিক বিমান চালিয়েছে এবং পরিচালনা করছে।[৩৪]
আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সমিতি (আইএটিএ) পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০৩৪ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম বিমান ভ্রমণ বাজারে পরিণত হবে।[৩৫] ২০৩৪ সালের মধ্যে প্রায় ২৭ কোটি যাত্রী ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং এর মধ্যে বিমানযাত্রার পূর্বাভাস রয়েছে।[৩৫]
২০১৩ অবধি, ইন্দোনেশিয়ায় ৬৭৩ টি বিমানবন্দর রয়েছে, এর মধ্যে ১৮৬ টির রানওয়ে পাকা এবং ৪৮৭ টির কাঁচা রানওয়ে রয়েছে। ২০১৩ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় ৭৬ টি হেলিপোর্ট রয়েছে। জাকার্তার সোকারণো–হাট্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের আকাশ পরিবহনের প্রধান কেন্দ্র এবং সেইসাথে দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দরের ভূমিকা পালন করে। ২০১০ সাল থেকে এটি সুবর্ণভূমি এবং চাঙ্গি বিমানবন্দরকে ছাড়িয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যস্ততম বিমানবন্দর হয়ে উঠেছে। ২০১৭ সালে, ৬ কোটি ২১ লাখ যাত্রী নিয়ে এটি বিশ্বের ১৭ তম ব্যস্ত বিমানবন্দর হয়ে উঠেছে।[৩৬] ২০১৬ সালে তৃতীয় টার্মিনাল সহ একটি সম্প্রসারণ সম্পন্ন হওয়ার পরে, তিনটি টার্মিনালের মোট ক্ষমতা এক বছরে ৪ কোটি ৩০ লাখ যাত্রী বেড়েছে। এক বছরে ৬ কোটি ৭০ লাখ যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রথম এবং দ্বিতীয় টার্মিনালগুলিকে সংস্কার করা হবে।[৩৭]
ইন্দোনেশিয়ায়, ২২ টি বাণিজ্যিক এয়ারলাইন রয়েছে যেগুলি ৩০ টিরও বেশি যাত্রী বহন করে এবং ৩২ টি বাণিজ্যিক এয়ারলাইন যা ৩০ বা তার চেয়ে কম যাত্রী পরিবহন করে, পাশাপাশি চার্টার্ড এয়ারলাইনসও রয়েছে।[৩৮][৩৯] কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ইন্দোনেশিয়ান এয়ারলাইন্সের মধ্যে রয়েছে গারুডা ইন্দোনেশিয়া, যা ইন্দোনেশিয়ার সরকারী মালিকানাধীন পতাকাবাহী বিমান। লায়ন এয়ার, যা বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম স্বল্প ব্যয়বহুল বিমান সংস্থা। শ্রীয়িজাওয়া এয়ার, বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম বিমান ইন্দোনেশিয়া এয়ারএশিয়া, যা মালয়েশিয়াভিত্তিক এয়ারএশিয়া এর ইন্দোনেশিয়ান শাখা।[৪০]
মুদিক বা পুলাং কাম্পুং একটি ক্রিয়াকলাপ, যা দ্বারা অভিবাসী বা অভিবাসী কর্মীদের বড় ছুটির দিনে বা তার আগে, বিশেষত লেবারান(ঈদ-উল-ফিতর)[৪১] এর সময় নিজ শহরে বা গ্রামে ফিরে আসাকে বোঝায়। যদিও এটি বেশিরভাগ ইন্দোনেশীয় নগর কেন্দ্রগুলিতে হয়, মূলত বৃহত্তর জাকার্তা-র ক্ষেত্রে এটি বেশি লক্ষণীয় হয়। লক্ষ লক্ষ জাকার্তার মানুষ বিভিন্ন পরিবহন, ট্রেন স্টেশন, বিমানবন্দর এবং এছাড়াও হাইওয়ে, বিশেষত ট্রান্স-জাভা টোল রোড এবং জাভার উত্তর কোস্ট রোড এর মাধ্যমে শহর ছেড়ে দেয়।[৪২] ২০১৭ সালে এটি অনুমান করা হয়েছিল যে বার্ষিক মুদিক ভ্রমণকারী লোকের সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছেছিল।[৪৩] ট্রেন এবং বিমান এর টিকিটের চাহিদা সাধারণত ঈদের এক বা দুই মাস আগে বেড়ে যায়, প্রস্থানের খুব চাহিদাপূর্ণ দিনের জন্য টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। কিছু সংস্থাগুলি চাহিদা বাড়ার সাথে মোকাবিলা করার জন্য অতিরিক্ত ফ্লাইট যুক্ত করতে বা বৃহত্তর বিমান পরিচালনা করতে পারে।[৪৪] ইন্দোনেশিয়ান ট্রেন অপারেটর কেরেতা আপি ইন্দোনেশিয়া সাধারণত চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত ট্রেনের ভ্রমণের প্রস্তাব দেয় বা আরও বেশি বগি নিয়ে দীর্ঘতর ট্রেনের প্রবর্তন করে।[৪৫] আন্তঃনগর এবং আন্তঃরাজ্য বাসগুলির বেসরকারী অপারেটররা এই সময়ের মধ্যে সাধারণত টিকিটের বেশি দাম নেন। লক্ষ লক্ষ বাস, গাড়ি এবং মোটরসাইকেল রাস্তাঘাট এবং মহাসড়কগুলিকে জ্যাম করে প্রতি বছর কয়েক কিলোমিটার ট্র্যাফিক জ্যামের কারণ হওয়ায় এর প্রভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।[৪৬][৪৭]