আল-মুআল্লিম আল-আউয়াল (প্রথম শিক্ষক)[১] ইবনে কামাল | |
---|---|
![]() Miniature of İbn Kemal[২] | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | শেমসদ্দীন আহমেদ ১৪৬৮ |
মৃত্যু | ১৪ এপ্রিল ১৫৩৬ | (বয়স ৪৯–৫০)
ধর্ম | ইসলাম |
যুগ | ১৫ শতক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
ধর্মীয় মতবিশ্বাস | মাতুরিদি[৩] |
প্রধান আগ্রহ | আকিদা, তাফসির, সুফিবাদ, হাদিস, ফিকহ, উসুলে ফিকহ, ইসলামি দর্শন, উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাস |
উল্লেখযোগ্য কাজ | তেভারিহ-ই আল-ই ওসমান ("দ্য ক্রনিকলস অব দ্য হাউস অব ওসমান") |
কাজ | ওলামা, ইতিহাসবিদ |
শেমসদ্দীন আহমেদ (১৪৬৮-১৫৩৪), যিনি তার ছদ্মনাম ইবনে কামাল বা কেমালপাসাজাদে ("কামাল পাশার পুত্র") নামে বেশি পরিচিত), ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের একজন ইতিহাসবিদ, শাইখুল ইসলাম, আইনজ্ঞ এবং কবি।[৪][৫]
ইবনে কামাল উসমানীয় সাম্রাজ্যের রুমেলিয়া প্রদেশের এডির্নের এক বিশিষ্ট সামরিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] যুবক বয়সেই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে, তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন এবং ১৫১৫ সালে এডির্নের একজন কাদি বা বিচারক হন।[৬] মায়ের দিক থেকে তিনি ছিলেন ইরানি।[৭] ধীরেধীরে তিনি একজন অত্যন্ত সম্মানিত পণ্ডিত হয়ে ওঠেন এবং উসমানীয় শাসক দ্বিতীয় বায়েজিদ তাকে একটি উসমানীয় ইতিহাস (তেভারিহ-ই আল-ই ওসমান, "দ্য ক্রনিকলস অফ দ্য হাউস অফ ওসমান") লেখার দায়িত্ব দেন। উসমানীয় সুলতান প্রথম সেলিমের শাসনামলে, ১৫১৬ সালে, তিনি আনাতোলিয়ার সামরিক বিচারক হিসাবে নিযুক্ত হন এবং উসমানীয় সেনাবাহিনীর সাথে মিশরে যান। সুলতান সুলাইমানের শাসনামলে তিনি শাইখুল ইসলাম, অর্থাৎ উলামাদের সর্বোচ্চ প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
উসমানীয় শাসনামলে হানাফি মাযহাবের আইন সংগ্রাহকদের মধ্যে ইবনে কামাল ছিলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।[৮]
তিনি তুর্কি, ফার্সি এবং আরবি ভাষায় প্রায় ২০০টি রচনা লিখেছেন। তার কাজের মধ্যে রয়েছে কুরআনের ব্যাখ্যা, হাদিস, ইসলামী আইন, দর্শন এবং ধর্মতত্ত্ব (কালাম), যুক্তিবিদ্যা, সুফিবাদ, নীতিশাস্ত্র, ইতিহাস, আরবি ও ফারসি ব্যাকরণ, সাহিত্যের উপর বেশ কিছু বই এবং দিওয়ান সম্পর্কিত ছোট একটি কবিতা।[৯]
তার সবচেয়ে বিখ্যাত সৃষ্টিকর্ম হচ্ছে ইতিহাস বিষয়ক রচনা তেভারিহ-ই-আল-ই ওসমান "দ্য ক্রনিকলস অব দ্য হাউস অব ওসমান"। এটি উসমানীয়দের শাসনামলের সবচেয়ে মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত। কারণ বইটি তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনামলেই লিখে গেছেন।[৬]
একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত হলেও তিনি একজন মহান পণ্ডিত এবং প্রতিভাবান কবিও ছিলেন। তিনি কুরআনের উপর অসংখ্য পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যাখ্যা, আইনশাস্ত্র, মুসলিম ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শনের উপর গ্রন্থ রচনা করেছেন। মিশরে থাকাকালীন তিনি মিশরীয় ঐতিহাসিক ইবনে তাগরিবিরদীর রচনাসমুহ আরবি থেকে অনুবাদ করেছেন। তিনি আরবীতেও লিখেছেন। আরবিতে লেখা দাক্কাইক আল-হকাইক "সত্যের সূক্ষ্মতা" তার একটি দার্শনিক কাজ। তার সেরা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে নিগারিস্তান "দ্য পিকচার গ্যালারি", যেটি ফার্সি ভাষায় এবং শেখ সাদির বুস্তান ও গোলেস্তানের আদলে লেখা। এখানে "ইউসুফ ও জুলেখা" কবিতাটি ইউসুফ ও পোটিফারের স্ত্রীর গল্পের পুনরুক্তি; এবং "সংগৃহীত কবিতা", প্রধানত গানের সমন্বয়ে গঠিত।
দর্শন ও ধর্মতত্ত্বে তিনি ছিলেন একজন মাতুরিদি ধর্মতত্ত্ববিদ-দার্শনিক যিনি ইবনে আরাবির কিছু মতামত অনুসরণ করতেন এবং সম্ভবত মোল্লা সদরার কিছু তত্ত্ব গ্রহণ করেছিলেন।[৯] তিনি ফিকহের হানাফি মাযহাবের একটি বিখ্যাত ইতিহাসও লিখেছেন যার নাম রিসালা ফি তাবাকাত আল-মুজতাহিদীন "আইনবাদীদের জীবনী সম্পর্কিত গ্রন্থ"।[১০]