ইবনে হাজিব | |
---|---|
জন্ম | ৫৭০হিজরি আছনা, মিশর |
মৃত্যু | ৬৪৬ হিজরির শাওয়াল মাসের ১৬ তারিখ[১][২] |
অন্যান্য নাম | উসমান,আবু আমর |
পরিচিতির কারণ | মুহাদ্দিস, মুফতি, দার্শনিক, অলংকার শাস্ত্রবিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ, সুফিতত্ত্ববিদ |
ইবনে হাজিব বা ইবনুল হাজিব ( আরবি ابن الحاجب ইংরেজি Ibn Hajib ) একাধারে একজন স্বনামধন্য মুফাসসির, মুহাদ্দিস, মুফতি, দার্শনিক, অলংকার শাস্ত্রবিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ, সুফিতত্ত্ববিদ এবং যুগ শ্রেষ্ঠ আরবি ব্যাকরণবিদ । আরবি ব্যাকরণে যারা স্বীয় শ্রেষ্ঠতম অবদান রেখে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম । বিভিন্ন বিষয়ে তিনি অনবদ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন । তবে ইলমে নাহু বা আরবি ব্যাকরণ শাস্ত্রের ক্ষেত্রে আল কাফিয়া নামক গ্রন্থ রচনা করে তিনি খ্যাতি লাভ করেন এবং অদ্যাবধি সেই কৃতিত্বের আসনে তিনি সমুজ্জ্বল ।
নাম - উছমান, কুনিয়ত- আবু আমর, উপাধি- জামাল উদ্দিন ।
পিতার নাম- ওমর । তার সম্মানিত পিতা আমির ইজ্জুদ্দিন মুসাক সালাহির গৃহাধ্যক্ষ ছিলেন । গৃহাধ্যক্ষ বা দারোয়ানকে আরবিতে ' হাজিব ' বলা হয় । এ কারণে তিনি ' ইবনুল হাজিব বা ইবনে হাজিব '(দ্বার রক্ষকের ছেলে) নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যান । যুগ শ্রেষ্ঠ এই আরবি ব্যাকরণবিদের পূর্ণ নামঃ আল্লামা জামাল উদ্দিন আবু আমর উসমান ইবনে উমর । তার বংশ পরিক্রমা হল- জামাল উদ্দিন আবু আমর ইবনে ওমর ইবনে আবু বকর ইবনে ইউনুস আদ্দুয়াইনি আল মিশরি আল মালিকি ।[৩]
তিনি মিশরের সায়িদ-এ আ'লা'র আমলে কাওসিয়ায় ' আছনা ' নামক ছোট্ট বস্তিতে ৫৭০ হিজরির শেষের দিকে জন্ম গ্রহণ করেন ।[৪]
প্রাথমিক শিক্ষার্জন করেছেন কায়রোতে । পবিত্র কুরআন মজিদ সম্পূর্ণ মুখস্থ করার পর ইমাম সাত্বিবী (রহ)-এর নিকট কিরাত বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন । সাত ক্বারির পঠনরীতি অণুপাতে ইলমে ক্বিরাত শেষ করেন ইমাম আবুল জুদ-এর নিকট । এরপর শেখ আবুল মনসুর আবয়ারি ও ইমাম ইবনুল বেনা প্রমুখের কাছ থেকে তিনি শরয়ি আইন শাস্ত্রসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জনে সক্ষম হন ।
ইবনে হাজিব শিক্ষকদের সংস্পর্শ থেকে সামান্য সময়ের জন্যেও দূরে থাকতে চাইতেন না । অধিকাংশ সময় শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইয্যুদ্দিন ইবনে আবদুস সালাম (রহ্)-এর দরবারে উপস্থিত থেকে তার ফয়েজ ও বরকত লাভে ধন্য হতেন । শিক্ষার্জনে তার এই অণুরাগ পরবর্তীতে তাকে সফলতার শীর্ষে এনে দাঁড় করায় । তৎকালীন বাদশাহ ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে একবার ইবনে হাজিবের শিক্ষক শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইয্যুদ্দিন ইবনে আবদুস সালাম (রহ্)-কে বন্দী করার হুকুম দেন । যথারীতি কারাগারে বন্দী করা হয় । ইবনে হিজাব এ অবস্থায় তার শিক্ষার্জন ও ফয়েজ-বরকত লাভের সংস্পর্শকে পরিত্যাগ করতে চান নি । গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় তিনি তার শিক্ষকের সাথে স্বেচ্চায় কারাবরণ করেন ।[৫]
ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লিকান বলেছেন- ইবনে হাজিব আমার নিকট যাওয়া আসা করতেন । আরবি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন দুর্বোদ্ধ কঠিন বিষয়ে তার কাছে প্রশ্ন করলে তিনি বিচক্ষ্মনতার সাথে এর জবাব দিতেন । ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লিকান তার প্রখর ধীশক্তির প্রশংসায় বলেছেন,- کان من احسن خلق اللہ ذھنا - অর্থাৎ তিনি ছিলেন আল্লাহর সৃষ্টবস্তুর মধ্যে উতকৃষ্ট মেধাবী । তিনি একবার নৌকা যোগে সফর করছিলেন । এক সফর সঙ্গীর স্ব-রচিত একটি কিতাবের পান্ডুলিপি তিনি চেয়ে নিয়ে পড়ছিলেন । মনোযোগ দিয়ে এর আদ্যোপান্ত পাঠ করেন । বেশ কিছু অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য এতে রয়েছে দেখে তিনি তা নদিতে ফেলে দিলেন । কিতাবের পান্ডুলিপির লিখক ব্যাথিত হয়ে বাদশার দরবারে ইবনে হাজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন । ইবনে হাজিবকে তলব করা হলঃ এই ব্যক্তির কয়েক বছরের কষ্টার্জিত স্ব-লিখিত গ্রন্থের পান্ডুলিপি! আপনার এরকম করার কোন কারণ আমার বুঝে আসছেনা । আপনি তাকে খুশি করুন । বাদশার জিজ্ঞাসাবাদের পর ইবনে হাজিব তার স্মৃতির পাতা থেকে খাতার পাতায় হুবহু লিখে দিলেন সম্পূর্ণ গ্রন্থের-পান্ডুলিপিটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ।[৬]
তিনি ৬১৭ হিজরিতে দামেশ্কে যান । সেখানে জামে মসজিদে মালিকিয়া কোণায় তিনি শিক্ষাদানে মনোনিবেশ করেন । দামেশ্ক ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘ দিন ধরে তিনি শিক্ষা প্রদান করেন । পরে ৬৩৮ হিজরিতে স্বীয় উস্তাদ শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইয্যুদ্দিন ইবনে আবদুস সালাম সহ তিনি মিসরে আসেন । সেখানে 'মাদরাসায়ে ফাজিলিয়া '-এর মধ্যে অধ্যক্ষ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন । এরপর আলেকজান্দ্রিয়ায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি আমরণ বসবাস করেছিলেন ।[৭][৮]
কবিতার প্রতি তার ঝোক ছিল । লেখালেখির পাশা পাশি তিনি কাব্য চর্চা করতেন । তার বিখ্যাত গ্রন্থ ' আল কাফিয়া ' গদ্যে রচনা করার পর এটাকে তিনি আবার কাব্যে রুপান্তর করেন । কাব্য গ্রন্থটির নাম হল ' আল ওয়াফিয়া '।[৮]
আল্লামা ইবনে হাজিব (রাহ) মাজহাবগত ইমাম মালেকের অনুসারী ছিলেন ।[৫][৯]
তিনি ৬৪৬ হিজরির শাওয়াল মাসের ১৬ তারিখ ; কোন কোন গ্রন্থকার শাওয়ালের ২৬ তারিখ বলেও উল্লেখ করেন ।[১][২] আলেকজান্দ্রিয়ায় মৃত্যু বরণ করেন ।
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "ReferenceD" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে