ইমরে নাজ | |
---|---|
গণপ্রজাতন্ত্রী হাঙ্গেরির মন্ত্রিপরিষদের সভাপতি | |
কাজের মেয়াদ ৪ জুলাই, ১৯৫৩ – ১৮ এপ্রিল, ১৯৫৫ | |
পূর্বসূরী | মাচ্যাশ রাকোশি |
উত্তরসূরী | অন্দ্রাশ হেগেদ্যুশ |
কাজের মেয়াদ ২৪ অক্টোবর, ১৯৫৬ – ৪ নভেম্বর, ১৯৫৬ | |
পূর্বসূরী | অন্দ্রাশ হেগেদ্যুশ |
উত্তরসূরী | ইয়ানোশ কাদার |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কপোশভার, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি | ৭ জুন ১৮৯৬
মৃত্যু | ১৬ জুন ১৯৫৮ বুদাপেশত, গণপ্রজাতন্ত্রী হাঙ্গেরি | (বয়স ৬২)
জাতীয়তা | হাঙ্গেরীয় |
রাজনৈতিক দল | হাঙ্গেরীয় কম্যুনিস্ট পার্টি, হাঙ্গেরিয়ান ওয়ার্কিং পিপল’স পার্টি, হাঙ্গেরিয়ান সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | মারিয়া এগেত্যো |
ইমরে নাজ ([ˈimrɛ nɒɟ]; হাঙ্গেরীয়: Imre Nagy; জন্ম: ৭ জুন, ১৮৯৬-মৃত্যু: ১৬ জুন, ১৯৫৮) ছিলেন হাঙ্গেরির বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী হাঙ্গেরির মন্ত্রীপরিষদে দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৬ সালে অনুষ্ঠিত হাঙ্গেরির বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ায় সোভিয়েত হস্তক্ষেপে তার সোভিয়েত বিরোধী সরকারের পতন ঘটে। ফলশ্রুতিতে দুই বছর পর নাজের প্রাণদণ্ড কার্যকর হয়।
হাঙ্গেরির কপোশভার এলাকায় এক গ্রামীণ কৃষক পরিবারে নাজ্য জন্মগ্রহণ করেন। দশ বছর বয়সে তালা নির্মাণ ও মেরামতকারী শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে কাজে নেমে পড়েন। ইয়োঝেফ নাজ্য নামীয় বাবা খামারের ভৃত্য ও মা রোজালিয়া সাবো বিয়ের পূর্বে গৃহকর্মী ছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি যন্ত্রপ্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। এ সময়ে তিনি অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সেনাবাহিনীর নিবন্ধিত হয়ে পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্টে অংশ নেন। আহত অবস্থায় ১৯১৫ সালে রুশ সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী কর্তৃক বন্দী হন। অক্টোবর, ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে তাকে সাইবেরিয়ায় প্রেরণ করা হয়। সমাজতন্ত্রী হিসেবে সোভিয়েত নাগরিকের মর্যাদা লাভ করেন ও রেড আর্মিতে যোগদান করেন। ১৯২১ সালে নাজ্য হাঙ্গেরিতে ফিরে এসে সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেন। ১৯২৭ সালে গ্রেফতার বরণ করেন। কিন্তু মুক্ত হয়ে ১৯৩০ সালে মস্কোতে চলে যান ও পুনরায় কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। কৃষি গবেষণায় যুক্ত থাকেন তিনি। ১৯৩৬ সালে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন ও সোভিয়েত পরিসংখ্যান বিভাগে কাজ নেন। ১৯৮৯ সালে হাঙ্গেরীয় দলনেতা কারোয়ি গ্রোস গুজব ছড়ান যে তিনি সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থার চর ছিলেন, যা দ্বারা নাজ্যকে অমর্যাদাকরস্থানে নেয়ার চেষ্টা চালানো হয়।[১] অবশ্য প্রামাণ্য দলিল রয়েছে যে ঐ সময়ে মস্কোতে অবস্থানের সময় তিনি এনকেভিডি’র চর হিসেবে কাজ করেছেন ও নিরাপত্তা পুলিশের কাছে তার বিশ্বস্ততার প্রমাণ রয়েছে।[২]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৪৪ সালে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কর্তৃক বুদাপেশতে সেনাবাহিনী প্রেরিত হলে পুনরায় হাঙ্গেরি ফিরে আসেন।
হাঙ্গেরির প্রথম সমাজতান্ত্রিক সরকার ও প্রধানমন্ত্রী বেলা মিকলোশ দে দালনোকের শাসনামলে নাজ্য কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং বৃহৎ আকারে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত খামার কৃষকদের কাছে ফেরৎ দেন। জোলতান তিলদি’র পরবর্তী সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এ সময়ে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদেরকে বিতাড়নে সক্রিয় ভূমিকা নেন।[৩] এছাড়াও, সমাজতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় তিনি ১৯৪৭-১৯৪৯ মেয়াদকালে জাতীয় পরিষদের স্পিকারের দায়িত্বে ছিলেন।
সোভিয়েত নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তার হাঙ্গেরীয় জাতীয়তাবোধের কারণে মস্কোর সাথে মতানৈক্য ঘটে। ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্টালিন কৃষিখাতে তার এ ভূমিকা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয় মর্মে সমালোচনা করেন। এরপর নাজ্যকে পদচ্যুত করা হলেও একবছর পরই তিনি কার্যালয়ে ফিরে আসেন। ১৯৫৩ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মাতিয়াস রাকোসি’র পতন ঘটলে তিনি ক্ষমতারোহণ করেন। পরবর্তী দুই বছরে সোভিয়েত নেতা গিওর্গি মাকসিমিলিয়ানোভিচ মালেনকোভের সংক্ষিপ্ত শাসনামলে নাজ্য একীভূত খামারগুলোকে কৃষকদের মাঝে বিতরণের অণুমোদন পান। এ সময়ে তিনি সমাজতন্ত্রের নতুন বিষয় চালুর উদ্যোগ নেন। সোভিয়েত পলিটব্যুরো, হাঙ্গেরীয় কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ১৮ এপ্রিল, ১৯৫৫ তারিখে নাগিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে হয় এবং পলিটব্যুরো ও দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে বহিষ্কার করা হয়।
অক্টোবর, ১৯৫৬ সালে সোভিয়েত বিরোধী আন্দোলন শীর্ষে পৌঁছলে নাজ্য পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। জাতীয় বীরের মর্যাদায় আসীন হয়ে মুক্ত ও বহু-দলীয় নির্বাচন অণুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন ও হাঙ্গেরি থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহার করবেন। ১ নভেম্বর তিনি ওয়ারশ চুক্তি থেকে দূরে সরে আসার ঘোষণা দেন এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ন্যায় বৃহৎ শক্তিধর দেশের কাছে হাঙ্গেরিকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়ার আহ্বান জানান।[৪] এ সময়কালে এসেও নাজ্য মার্ক্সবাদের উপর বিশ্বাস রাখতেন। কিন্তু মার্ক্সবাদের দর্শনধারার সাথে তার চিন্তাধারার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তিনি মার্ক্সবাদকে বিজ্ঞানরূপে চিহ্নিত করলেও স্থির থাকবে না বলে ভাবতেন।[৫]
নভেম্বরে সোভিয়েত সেনাবাহিনী কঠোরহস্তে বিদ্রোহ দমন করে। নাজ্য ও তার সহচরেরা নিরাপত্তায় আশায় যুগোস্লাভ দূতাবাসে আশ্রয় নেন। জানোস কাদারের সহযোগিতার আশ্বাস স্বত্ত্বেও ২২ নভেম্বর তারিখে নাগিকে গ্রেফতার করে রোমানিয়ার স্নাগোভে নিয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে তাকে বুদাপেস্টে নিয়ে আসা হয় ও গোপন বিচারে হাঙ্গেরীয় জনগোষ্ঠীকে গণতন্ত্রের দিকে ধাবিত করার অভিযোগ আনা হয়। গোপন বিচারে তাকে দোষীসাব্যস্ত করে জুন, ১৯৫৮ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।[৬] মৃত্যুদণ্ডের পর জনসমক্ষে তা প্রকাশ করা হয়।[৭] ফিদর বার্লাৎস্কি’র বর্ণনা মোতাবেক জানা যায়, ক্রেমলিনে নিকিতা ক্রুশ্চেভ নাজ্য’র প্রাণদণ্ডকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর শিক্ষা হিসেবে পরিগণিত করেন।[৮]
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী ফিদেল পাফি |
কৃষিমন্ত্রী ১৯৪৪-১৯৪৫ |
উত্তরসূরী বেলা কোভাচ |
পূর্বসূরী ফেরেঙ্ক এরদেই |
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৪৫-৪৬ |
উত্তরসূরী লাজলো রাক |
পূর্বসূরী আরপদ সাবো |
জাতীয় পরিষদের স্পিকার ১৯৪৭-১৯৪৯ |
উত্তরসূরী কারোলি অল্ট |
পূর্বসূরী মাতিয়াস রাকোসি |
হাঙ্গেরীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৫৩-১৯৫৫ |
উত্তরসূরী আন্দ্রাস হেগেদাস |
পূর্বসূরী আন্দ্রাস হেগেদাস |
হাঙ্গেরীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৫৬ |
উত্তরসূরী জানোস কাদার |
পূর্বসূরী ইমরে হোরভাথ |
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৫৬ |
উত্তরসূরী ইমরে হোরভাথ |