আবূ ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম আল-আনসারী | |
---|---|
জন্ম | ১১৩ হিজরী / ৭৩১ খ্রিস্টাব্দ কুফা, ইরাক |
মৃত্যু | ৫ রবিউল আওয়াল ১৮২ হিজরী / ২৬ এপ্রিল ৭৯৮ খ্রি. বাগদাদ,ইরাক |
জাতীয়তা | ইরাকি |
পেশা | বিচারক, ফক্বীহ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | ফিক্বাহ এবং হাদীস |
আবু ইউসুফ[১] (জন্ম: ১১৩ হি/৭৩১ খ্রি. - মৃত্যু: ৫ রবিউল আওয়াল ১৮২ হি/২৬ এপ্রিল ৭৯৮ খ্রি.) ইমাম আবু হানিফার একজন শিষ্য এবং হানাফি মাযহাবের একজন ইমাম ছিলেন।[২][৩]
নাম-ইয়াকুব। উপনাম-আবু ইউসুফ। উপাধি- কাযিউল কুযাত। বংশধারা- ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম ইবনে সাদ ইবনে বাহির ইবনে মুয়াবিয়া বিন কুহাফা ইবনে নুফিল ইবনে সাদুস ইবনে আবদে মানাফ ইবনে ওসামা ইবনে সাহামাহ ইবনে সা’দ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কাদের ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে ইবনে ছা’লাবা ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে জায়েদ ইবনে আল-আওয়ায ইবনে বাজিলা আনসারী আল-বাজলি।[৪] সা’দ ঐ সাহাবী ছিলেন যিনি উহুদের যুদ্ধে যাওয়ার জন্য রাফে’ ইবনে খাদিজ এবং ইবনে ওমর নবী মুহাম্মদের কাছে এসেছিলেন কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ায় তাকে যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পরবর্তীতে খন্দক ও অন্যান্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ওমর ইবনে খাত্তাবের খেলাফতকালে কূফায় মৃত্যু বরণ করেন।[৫]
১১৩ হিজরী মুতাবেক ৭৩১ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের কুফায় জন্মগ্রহণ করেন।[৬][৭]
প্রাথমিক সমাপনীর পর তিনি ফিক্বাহকে পছন্দ করেছেন। প্রথমে তিনি আব্দুর রহমান ইবনে আবূ ই’লার ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। তারপর ইমাম আবূ হানীফার মজলিসে অংশগ্রহণ করে অনেকটা কাল তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার পরিবার অনেক দরিদ্র ছিলেন তাই তার পরিবার চাইতেন না শিক্ষাগ্রহণ করুক। ইমাম আবু হানীফা জানার পর তার খরচসহ তার পরিবারের সকল ব্যয়ভার বহন করতেন। ইমাম আবু ইউসুফ বলতেন-“আমাকে প্রয়োজনের কথা কখনো বলতে হতো না, সময়মতো উনি নিজেই টাকা পাঠিয়ে দিতেন, তাই আমাকে উপার্জন নিয়ে চিন্তা করতে হতো না।” [৬]
তিনি প্রচন্ড মেধার অধিকারী ছিলেন। তার ব্যাপারে অন্যান্য মনীষিদের উক্তি লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়- নূরুল আনওয়ারের লেখক মুল্লা জিউন বলেন- “তার বিশ হাজার মাওযু হাদীস মুখস্থ ছিল, তাহলে সহীহ হাদীস তা অনুমেয়” ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং শায়েখ আলী ইবনে মুদিনী বলেন: “ইমাম আবু হানীফার ছাত্রদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে যোগ্য ছাত্র ছিলেন।” তুলাইহা ইবনে মুহাম্মদ বলেন: “তিনি তার যমানার সবচেয়ে বড় ফক্বীহ ছিলেন।” দাউদ ইবনে রুশদ বলেন: “ইমাম আবু হানীফার যদি একটি ছাত্রই তৈরী করতেন তাহলেও তার গর্ব করার জন্য যথেষ্ট ছিল। ইমাম আবু ইউসুফের শুধু হাদীসের জ্ঞান ছিলো না বরং তাফসীর, মাগাযী, আরব্য ইতিহাস, সাহিত্য, ইলমে কালামসহ অন্যান্য জ্ঞানেও তিনি পূর্ন ছিলেন। তার মেধা তার সমকালীন অন্যান্যদের থেকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে দিয়ে ছিল। সমকালীন সকল উলামা তার জ্ঞানের গভীরতা এবং ফিক্বহের প্রখরতার স্বীকার করতেন”। ইমাম আবু হানীফা নিজে বলতেন,“আমার ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান অর্জন করেছে আবু ইউসুফ” [৮]
৭৮৩ খ্রীস্টাব্দে তিনি যখন বাগদাদে আসেন তখন খলিফা মুহাম্মদ আল-মাহদী ইবনে মানসুর তাকে বসরার বিচারক নিযুক্ত করেন। হাদী ইবনে মাহদী ইবনে মানসুরের যমানায়ও তিনি ঐ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। যখন খলিফা হারুনুর রশিদ ক্ষমতায় আরোহণ করেন তখন পুরো সাম্রাজ্যের কাযিউল কুযাত বা চিফ জাস্টিজ হিসেবে নিযুক্ত করেন।
তিনি বিচার কার্য, শিক্ষা প্রদান করার পাশাপাশি ইবাদত বন্দেগীতেও অনেক পাবন্দী ছিলেন। তিনি নিজে বলেন- “ইমাম আবু হানীফার দরবারে আমি উনত্রিশ বছর ছিলাম এবং কখনো ফজরের জামাআত মিস হয়নি।” বশির ইবনে ওলীদ বর্ণনা করেন-“ তার ইবাদত বন্দেগী, প্রার্থনা , তাক্বওয়া এতোটাই বেশি ছিল যে, কাযী ও মন্ত্রিত্ব থাকাকালীন সময়েও দুইশ রাকাআত নফল নামাজ পড়তেন”
তার ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মুহাম্মদ ইবনে হাসান শায়বানী, শফিক ইবনে ইবরাহীম বলখী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, বাশার ইবনে ওলীদ, মুহাম্মদ ইবনে সামাআ, মুআল্লা ইবনে মানসুর, বাশার ইবনে গিয়াছ, আলী ইবনে জা’দা, ইয়াহইয়া ইবনে মুনী’ ও অন্যান্য মুহদ্দিস ও ফোক্বাহায়ে কেরাম তার শিষ্য ছিলেন।
৫ রবিউল আওয়াল ১৮২ হিজরী/২৬ এপ্রিল ৭৯৮ খ্রি. বৃহস্পতিবার জোহরের সময় ইরাকের বাগদাদে ইনতেকাল করেন।
|তারিখ=
(সাহায্য)
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)