ইয়াকোবুস কর্নেলিয়ুস কাপ্টাইন | |
---|---|
জন্ম | Barneveld, নেদারল্যান্ড | ১৯ জানুয়ারি ১৮৫১
মৃত্যু | জুন ১৮, ১৯২২ | (বয়স ৭১)
জাতীয়তা | নেদারল্যান্ড |
মাতৃশিক্ষায়তন | ইউট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | ছায়াপথীয় ঘূর্ণনের প্রমাণ আবিষ্কার |
পুরস্কার | ব্রুস মেডেল (১৯১৩) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | জ্যোতির্বিজ্ঞান |
ইয়াকোবুস কর্নেলিয়ুস কাপ্টাইন (ওলন্দাজ ভাষায়: Jacobus Cornelius Kapteyn) (১৯শে জানুয়ারি, ১৮৫১ - ১৮ই জানুয়ারি, ১৯২২) একজন স্বনামধন্য ওলন্দাজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি মূলত আকাশগঙ্গা ছায়াপথের বিশদ বর্ণনা প্রদান এবং ছায়াপথের ঘূর্ণনের প্রমাণ আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত।
কাপ্টাইন নেদারল্যান্ডের বার্নেভেল্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন[১], ১৮৬৮ সালে সুপ্রাচীন ইউনিভার্সিটি অফ উট্রেখট-এ গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে যান। উট্রেখটে অভিসন্দর্ভের কাজ শেষ করার পর তিন বছর লেইডেন মানমন্দিরে কাজ করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অফ খ্রোনিঙেনে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও তাত্ত্বিক বলবিদ্যার প্রথম অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯২১ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এখানেই ছিলেন।
খ্রোনিঙেনে তখন কোন মানমন্দির ছিল না। তাই ১৮৯৬ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে তিনি ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডেভিড গিলের অধীনে পরিচালিত একটি জরিপ কাজে অংশগ্রহণ করেন। গিল উত্তমাশা অন্তরীপে স্থাপিত রয়েল মানমন্দিরের মাধ্যমে দক্ষিণ গোলার্ধের অনেকগুলো তারার ছবি তুলে আলোকচিত্র প্লেটে সংরক্ষণ করেছিলেন, কাপ্টাইনের কাজ ছিল সেই প্লেটগুলো পরিমাপ করা। এই যৌথ কর্মযজ্ঞের ফলেই প্রকাশিত হয়েছিল কেইপ ফটোগ্রাফিক ডুর্খমুস্টারুং নামের বিখ্যাত তারা তালিকা যাতে দক্ষিণ গোলার্ধের ৪৫৪,৮৭৫ টি তারার অবস্থান ও মান লিপিবদ্ধ আছে।
এই কাজ করতে গিয়েই ১৮৯৭ সালে তিনি বিখ্যাত কাপ্টাইন তারা আবিষ্কার করেন। তখন পর্যন্ত জানামতে এই তারার সরল গতিই ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯১৬ সালে অবশ্য এর চেয়ে বেশি সরল গতিসম্পন্ন তারা আবিষ্কৃত হয় যার নাম বার্নার্ডের তারা।
সে সময় বিশ্বাস করা হতো তারাদের সরল গতির কোন ধ্রুব নিয়ম নেই। ১৯০৪ সালে তারাদের সরল গতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েই কাপ্টাইন লক্ষ্য করেন তা দৈব নয়। তিনি বুঝতে পারেন, তারাদেরকে সম্পূর্ণ পৃথক দুটি স্রোতে ভাগ করা যায় যারা একে অপরের পুরো বিপরীত দিকে গতিশীল। পরে বোঝা গিয়েছিল কাপ্টাইনের পাওয়া এই ফলাফলের কারণ আমাদের ছায়াপথের ঘূর্ণন। তার গবেষণার সাহায্য নিয়েই পরবর্তীকালে সুইডেনের বের্তিল লিন্দব্লাদ এবং তার দেশের ইয়ান ওর্ট ছায়াপথীয় ঘূর্ণন (ছায়াপথের ভেতর তারাদের ঘূর্ণন বেগের বণ্টন) আবিষ্কার করেন।
১৯০৬ সালে ছায়াপথের বিভিন্ন দিকে তারার সংখ্য গণনার মাধ্যমে এর ভেতর তারাদের বণ্টন বোঝার একটি মহা পরিকল্পনা হাতে নেন। উদ্দেশ্য ছিল ২০৬টি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের সকল তারার আপাত মান, বর্ণালী ধরন, অরীয় বেগ ও সরল গতি নির্ণয় করা। এই মহাযজ্ঞ ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথম পরিসাংখ্যিক বিশ্লেষণ যাতে অনেকে একসাথে অংশ নিয়েছিল। এর সাথে যুক্ত ছিল চল্লিশটিরও বেশি মানমন্দির।
১৯১৩ সালে কাপ্টাইনকে জেমস ক্রেইগ ওয়াটসন মেডেল প্রদাণ করা হয়। এর পরপর ১৯২১ সালেই তিনি অবসর নেন। কিন্তু তার প্রাক্তন ছাত্র এবং সে সময় লেইডেন মানমন্দিরের পরিচালক উইলেম ডে সিটার এর অণুরোধে তিনি একসময় লেইডেন যান সেখানকার মানমন্দিরের মানোন্নয়নের জন্য।
তার জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন ছিল মহাবিশ্বের একটি সামগ্রিক মডেল প্রদাণ যা প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে। সে সময় অন্যান্য ছায়াপথ সম্পর্কে মানুষ খুব বেশি কিছু জানতো না। কাপ্টাইন আমাদের দ্বীপ মহাবিশ্বের সকল তারার অবস্থান ও গতি পর্যালোচনার পর প্রস্তাব করেন যে, এই দ্বীপ লেন্স আকৃতির যার কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে যেতে থাকলে ঘনত্ব কমতে থাকে। এই মডেলের নাম কাপ্টাইনের মহাবিশ্ব মডেল। মডেলটিতে আকাশগঙ্গার আকার অনুমান করা হয় ৪০,০০০ আলোকবর্ষ সূর্য যার কেন্দ্রের বেশ কাছেই (২০০০ আলোকবর্ষ দূরে) অবস্থিত। উচ্চ অক্ষাংশের জন্য মডেলটি সঠিক হলেও ছায়াপথের প্রধান তলে ঠিক ছিল না। উল্লেখ্য এই তলে আন্তঃনাক্ষত্রিক বিশোষণের কারণে অনেক তারাই দেখা যায় না। এজন্যই তিনি ছায়াপথের মূল চাকতির মডেল তৈরি করতে পারেননি।
১৯২২ সালে আমস্টারডামে কাপ্টাইন মৃত্যুবরণ করেন। এরও পরে সুইস-মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট ট্রাম্পলার বুঝতে পারেন আগে যত ভাবা হতো তার তুলনায় আন্তঃনাক্ষত্রিক লোহিতায়ন অনেক বেশি। এর ফলে আকাশগঙ্গার অণুমিত আকার বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১০০,০০০ আলোকবর্ষ। আর সূর্যকে ছায়াপথ কেন্দ্র থেকে ৩০,০০০ আলোকবর্ষ দূরে স্থাপন করা হয়।
কাপ্টাইনের অনবদ্য অবদানের স্মরণে খ্রোনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের নাম রাখা হয়েছে কাপ্টাইন ইনস্টিটিউট। খ্রোনিঙেন শহরের একটি রাস্তাও তার নামে রাখা হয়েছে, নাম জে সি কাপ্টাইনলান। এছাড়া আইজ্যাক নিউটন গ্রুপ অফ টেলিস্কোপ তার সম্মানে কানারি দ্বীপপুঞ্জের লা পালমা দ্বীপে স্থাপিত একটি দুরবিনের নাম রেখেছে ইয়াকোবুস কাপ্টাইন টেলিস্কোপ (জেকেটি)।