ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ইয়ান মেকিফ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | মেনটোন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া | ৬ জানুয়ারি ১৯৩৫|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | দ্য কাউন্ট, স্পুটনিক, চাকার[১] | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | বামহাতি ফাস্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বোলার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২০৮) | ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫৭ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ৬ ডিসেম্বর ১৯৬৩ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৫৬/৫৭–১৯৬৩/৬৪ | ভিক্টোরিয়া বুশর্যাঞ্জার্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৫ জুন ২০১৯ |
ইয়ান মেকিফ (ইংরেজি: Ian Meckiff; জন্ম: ৬ জানুয়ারি, ১৯৩৫) ভিক্টোরিয়ার মেনটোন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৩ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত ছিলেন ‘স্পুটনিক' ডাকনামে পরিচিত ইয়ান মেকিফ।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে আঠারোটি টেস্টে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয় ইয়ান মেকিফের। ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৭ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।
দুইটি কারণে তিনি ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন। তবে, এর সাথে তার ক্রীড়াশৈলীর সম্পর্ক ছিল না। ১৯৬০ সালে জো সলোমনের বলে রান আউট হয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টাই টেস্টের উৎপত্তি ঘটান। ডিসেম্বর, ১৯৬৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট চলাকালে অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার কল এগার বল ঢিলাকৃতিতে ছোড়ার কারণে নো-বল ডাকেন ও রাগে-ক্ষোভে খেলা থেকে দূরে চলে যান।
১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। প্রথম মৌসুমে দূর্দান্ত খেলেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনে অস্ট্রেলিয়া দলের নতুন মুখ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
অভিষেক টেস্টে বোলিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন। খেলায় তিনি আট উইকেট পান। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে মেলবোর্নে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় খেলায় খ্যাতির শিখরে চলে আসেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৩৮ নিয়ে সফরকারীদেরকে ৮৭ রানে গুটিয়ে দেন ও অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন। তবে, ইংরেজ গণমাধ্যমসহ সাবেক খেলোয়াড়েরা অস্ট্রেলিয়ার জয়ে তার ঢিল ছোড়ার বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপন করে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দুই মৌসুমের চমৎকার ফলাফলের কারণে অস্ট্রেলীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার জন্যে পুনরায় আমন্ত্রণ জানায়। তবে, পূর্ববর্তী মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডের খেলায় দুইটি ভিন্ন খেলায় তাকে নো-বল শুনতে হয়। টেস্টে তার প্রথম ওভারেই আম্পায়ার এগার চারবার নো-বল ডাকেন। অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক রিচি বেনো তাকে আর বোলিং করার জন্যে আমন্ত্রণ জানাননি। এ খেলা শেষে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন তিনি। বলে ঢিল ছোড়ার বিষয়টি সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার, খেলোয়াড়, আম্পায়ারদের কাছে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে।
ভেরা ও ওয়াল্টার মেকিফ দম্পতির তিন সন্তানের দ্বিতীয় ছিলেন ইয়ান মেকিফ। ডন নামীয় জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ও মার্গারেট নাম্নী কনিষ্ঠা ভগ্নি ছিল। ভিক্টোরিয়ার মেনটোনের উপকণ্ঠে দক্ষিণ-পূর্ব মেলবোর্নে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন।[২] মেনটোন প্রাইমারি স্কুলে অধ্যয়ন শেষে মোডিয়ালক-চেলসী হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন।[২] ভাই-বোনেরা সকলেই উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালে খেলাধূলায় অংশ নিতেন। ডন ও ইয়ান অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, ফুটবল ও ক্রিকেট এবং মার্গারেট সফটবলে অংশ নিতেন। ভ্রাতারা ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে মেনটোন ক্রিকেট ক্লাবে খেলতেন। ইয়ান লেফট-আর্ম আনঅর্থোডক্স স্পিনার হিসেবে খেলতেন। ঐ প্রতিযোগিতায় প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যানদের উপর নিয়মতিভাবে প্রভাব বিস্তারে সক্ষমতা দেখান। মেনটোনে থাকাকালীন মাত্র ৪.৫০ গড়ে ২০০ উইকেট পেয়েছিলেন।[২] ১১ বছর বয়সে মেনটোনের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে খেলতে শুরু করেন।[৩]
১৯৫০ সালে অনুশীলনী খেলায় স্পিন বোলার হিসেবে ব্যর্থ হন। ফলে, ১৯৫১-৫২ মৌসুমের ভিক্টোরিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সাউথ মেলবোর্নের পক্ষে জেলা পর্যায়ে ফাস্ট বোলার হিসেবে আবির্ভূত হন।[২][৩][৪] খেলায় স্বীয় ভ্রাতা নাম প্রত্যাহার করে নিলে চতুর্থ একাদশের পক্ষে খেলতে শুরু করেন। পরের গ্রীষ্মে ১৭ বছর বয়সে বড়দের দলের সদস্য ছিলেন। প্রথম একাদশের অভিষেক মৌসুমে সাউথ মেলবোর্নের প্রথম চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ী দলের সদস্য হন।[৩] রিজার্ভে জাতীয় সেবায় অংশগ্রহণের কারণে কিছু সময় তার ক্লাব খেলোয়াড়ী জীবন বাঁধাগ্রস্ত হয়েছিল। ক্রিকেট প্রশাসকদের কাছ থেকে অনুরোধ বার্তা আসার ফলে সামরিক কর্তৃপক্ষ তরুণ খেলোয়াড়দেরকে সাপ্তাহিক ছুটিতে খেলার সুযোগ দিতো।[৫] ঐ সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারের অভাব পরিলক্ষিত হয়। দলীয় সঙ্গীর পরামর্শক্রমে নিখুঁততা ছাড়াই মেকিফ যতটুকু দ্রুতগতিতে বোলিং করা সম্ভব বোলিং করতে থাকেন। [৬]
১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার সদস্যরূপে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ইয়ান মেকিফের। দলীয় রান সংখ্যা ৭৭/৮ অবস্থায় ব্যাটিং করতে নামেন। অপরাজিত ১৯ রান তুলে দলকে ১৩১-এ নিয়ে যান। এর পূর্বে ৩/৪৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় দলকে ৩৪ রানে এগিয়ে দেন।[৭] পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক বব সিম্পসনকে শূন্য রানে ফেরৎ পাঠিয়ে প্রথম উইকেট পান। এরপর টেস্ট ক্রিকেটার ব্যারি শেফার্ড ও কেন মিউলম্যানকে আউট করেন।[৩][৮] দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ১১ রান তুলেন ও ০/৪০ পান। ঐ খেলায় তার দল চার উইকেটে পরাজিত হয়েছিল।[৭]
শেফিল্ড শিল্ডের নিজস্ব প্রথম মৌসুমে দূর্দান্ত খেলা উপহার দেন ইয়ান মেকিফ। ১৯৫৬ সালের বড়দিনের সময়কালে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে খেলেন তিনি।[৭] ঐ সময়ে এ দুটি রাজ্য অস্ট্রেলিয়ার সর্বাপেক্ষা শক্তিধর দলরূপে পরিচিতি লাভ করেছিল। তখন দল দুটি বিশটি শিল্ডের শিরোপার মধ্যে আঠারোটিতে নিজেরা ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। তন্মধ্যে, নিউ সাউথ ওয়েলস দল একাধারে নয়বার শিরোপা জয় করে নেয়।[৯] ঐ মৌসুমে কোন আন্তর্জাতিক খেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলটি পূর্ণাঙ্গ শক্তিমত্তার অধিকারী ছিল।[১০][১১]
ভিক্টোরিয়া দল প্রথম ব্যাটিংয়ে নামে। দলীয় সংগ্রহ ১৭৩/৭ থাকা অবস্থায় ৫৫ রান তুলে দলকে ২৪৪ রানে নিয়ে যেতে সক্ষমতা দেখান। এটিই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ইয়ান মেকিফের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল।[১১][১২] মেকিফ ৩/৬৫ পান। তন্মধ্যে, টেস্ট খেলোয়াড় বিল ওয়াটসন ও রিচি বেনো তার শিকারে পরিণত হলে নিউ সাউথ ওয়েলস দল ২৮১ রানে গুটিয়ে যায়।[৭][৮] ভিক্টোরিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে মেকিফ মাত্র ৮ রান তুলতে সমর্থ হন। প্রতিপক্ষকে ১৬১ রানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করলে তিনি ৪/৫৬ লাভ করেন। টেস্টের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জিম বার্ককে কট বিহাইন্ডে আউট করে দলটি ১৬০ রানে আউট হয়।[৮] এরফলে শিল্ডের ইতিহাসের প্রথম টাই খেলার সূচনা হয়।[১৩] ইনিংসের শুরুতে বার্ক আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান। অন্যদিকে, নিউ সাউথ ওয়েলসের অধিনায়ক ইয়ান ক্রেগ অসুস্থ ছিলেন। তবে, দলের সংগ্রহ ৭০/৭ থাকা অবস্থায় বিপর্যয় রুখতে মাঠে নামেন।[১১][১২] শেষ ইনিংসে ইয়ান মেকিফ টেস্ট খেলোয়াড় অ্যালান ডেভিডসন ও জনি মার্টিনের উইকেট তুলে নেন।[৮]
ভিক্টোরিয়ার পক্ষে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে ইয়ান মেকিফকে জানুয়ারি, ১৯৫৭ সালের শুরুতে নীল হার্ভে একাদশ বনাম রে লিন্ডওয়াল একাদশের মধ্যকার একমাত্র খেলার জন্যে মনোনীত করা হয়। বার্ষিকাকারে এ খেলাটিতে শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দেরকে যাচাই-বাছাই করে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হতো।[১৪] লিন্ডওয়াল একাদশ প্রথমে ব্যাটিং করে ৪২৮ রান তুলে। মেকিফ সর্বাপেক্ষা সফল বোলার ছিলেন। তিনি ৬/৭৫ পেলেও সতীর্থ বোলারেরা প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যানদের উপর প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হন। ৯৯ রানে টেস্ট ব্যাটসম্যান কেন ম্যাকে’কে বিদেয় করেন। এরপর বব সিম্পসন, নর্ম ও’নীলকে আউট করার পর গ্রেইম হোলকে মাঝারিসারি থেকে বিদেয় করেন।[৮][১৫] এরপর হার্ভে দলের সদস্যরূপে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে কার্যকরী ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন। ওয়ালি গ্রাউটের সাথে অষ্টম উইকেট জুটিতে ৭১ রান যুক্ত করে দলকে ৪১৯ রানে নিয়ে যান।[১৫] দ্বিতীয় ইনিংসে ০/১৮ বোলিং করলেও লিন্ডওয়াল একাদশ ১৮৮ রানে গুটিয়ে যায়। ১৯৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে হার্ভে একাদশ সাত উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয়।[৭]
ইয়ান মেকিফ তার উদ্বোধনী প্রথম-শ্রেণীর মৌসুমেই ২৩.৬৬ গড়ে ২৭ উইকেট পান। অস্ট্রেলীয় গ্রীষ্মে বোলিং গড়ে তিনি নবম সর্বোচ্চ উইকেটধারী হন। তবে, গড়ের দিক দিয়ে ঐ আট বোলারের তুলনায় শীর্ষে ছিলেন।[১৬]
১৯৫৬-৫৭ মৌসুম শেষে ফেব্রুয়ারি-মার্চ, ১৯৫৭ সালে টেস্টবিহীন নিউজিল্যান্ড গমন করেন।[৪] স্বাগতিক দলের ঐ সময় টেস্ট মর্যাদা ছিল। তবে, ট্রান্স-তাসমান প্রতিবেশী দলের দূর্বল শক্তিমত্তার কারণে অস্ট্রেলিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে।[১৭][১৮]
এ সফরের ফলে ১৯৫৬ সালে ইংল্যান্ড ও ভারত উপমহাদেশ গমনের পর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে পরিবর্তনের ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। বোলিং আক্রমণ পরিচালনা অনেকাংশেই বয়সে ন্যূহ, আঘাতগ্রস্ত ও দূর্বল খেলোয়াড়দের কাঁধে পড়ে। অস্ট্রেলিয়া দল একাধারে তিনবার অ্যাশেজ সিরিজে পরাজিত হয়েছিল।[১০] দেশে ফিরেই অধিনায়ক ইয়ান জনসন ও সহঃ অধিনায়ক কিথ মিলার অবসর গ্রহণ করেন।[১৯][২০] জনসন তখন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পছন্দের স্পিনার ছিলেন এবং কিথ মিলার ও ৩৫ বছর বয়সী রে লিন্ডওয়াল পূর্ববর্তী দশক থেকে নতুন বলের জুটি ছিলেন।[২১] পাশাপাশি, ফাস্ট বোলিং অল-রাউন্ডার রন আর্চার ১৯৫৬ সালের সফরে হাঁটুর আঘাত নিয়ে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন।[২২] অন্যদিকে, পেসার প্যাট ক্রফোর্ড তার বিবাহ-বিচ্ছেদের পর ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে কেবলমাত্র একটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[২৩] পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানের বিষয়ে দল নির্বাচকমণ্ডলী সজাগ হয়। তরুণদেরকে নিয়ে দল ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চালান। বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত টেস্ট খেলোয়াড়দেরকে বিশ্রামে পাঠানো হয়।[২৪] ইয়ান ক্রেগকে মাত্র ২২ বছর বয়সেই সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদা দেয়া হয়। ঐ সময়ে তিনি মাত্র ছয়টি টেস্ট খেলেন ও দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন না।[২৫]
নিউজিল্যান্ড সফরে তরুণ খেলোয়াড়দেরকে জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত হবার ক্ষেত্র তৈরী করে।[১৭][১৮] অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ইয়ান মেকিফের প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অভিষেক হয়। ওতাগোর বিপক্ষে ২/৪৬ ও ৩/২৫ নিয়ে দলকে ইনিংস ব্যবধানে জয়ী হতে সহায়তা করেন।[৭] নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম খেলায় ০/৪১ পান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। তবে, দ্বিতীয় খেলায় তাকে দলের বাইরে রাখা হয়। তৃতীয় খেলায় ৪/১২ ও ৫/৪৮ নিয়ে অকল্যান্ডের বিপক্ষে দলকে ইনিংস ব্যবধানে জয় এনে দেন।[৭]
চূড়ান্ত খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিজয়ী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নিউজিল্যান্ড দল প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে। ২৭.২ ওভারে ৪/২৮ নিয়ে স্বাগতিক দলকে ১৯৮ রানে গুটিয়ে ফেলতে সহায়তা করেন। সফরকারী দল ৩৫০/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করলে তাকে আর ব্যাট ধরার প্রয়োজন হয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে ২/১৭ পান। ১৬১ রানে নিউজিল্যান্ড দল গুটিয়ে গেলে ১০ উইকেটে জয় পায় ইয়ান ক্রেগের দল।[৭] ঐ সফর শেষে ১০.৮৫ গড়ে ২০ উইকেট পান তিনি।[৭] ফলশ্রুতিতে, বোলিং গড়ে দলের শীর্ষ বোলারে পরিণত হন।[২৬]
১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া দল দক্ষিণ আফ্রিকা যাবার কথা ঘোষণা করে। ক্ল্যারি গ্রিমেটের পর অস্ট্রেলীয় বোলারদের মধ্যে ২১২ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী রে লিন্ডওয়ালের নাম ঊহ্য রাখা হয়।[২৬][২৭] প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের এক মৌসুম পরই অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ পরিবর্তনের অংশ হিসেবে ইয়ান মেকিফকে দলের সদস্য করা হয়।[৪] অক্টোবরে দলটি দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করে।[৭] টেস্টের পূর্বে পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে, ২৬.২৫ গড়ে ১২ উইকেট পান তিনি।[৭]
চারজন বোলারের অন্যতম হিসেবে ইয়ান মেকিফের সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেক হয়। বড়দিনের ছুটির সময়ে জোহেন্সবার্গে ব্যাটিং উপযোগী পিচে তিনি খেলতে নামেন।[৭][২৮][২৯] লিন্ডওয়ালকে বাইরে রেখে নতুন প্রতিভাধর খেলোয়াড়দের নিয়ে অস্ট্রেলিয়া কিছুটা চাপের মুখে পড়ে। ১২ টেস্টে ৩৪.০৬ গড়ে কেবলমাত্র ১৬ উইকেট লাভকারী অ্যালেন ডেভিডসনের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নামেন।[৩০] অস্ট্রেলিয়ার অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণকে সামলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জ্যাকি ম্যাকগ্লিউ ও ট্রেভর গডার্ড ১৭৬ রান তুলেন। ৯০ রানে গডার্ডকে বোল্ড করে মেকিফ তার প্রথম টেস্ট উইকেট লাভ করেন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সফলতা এনে দেন। এরপর ম্যাকগ্লিউকে ১০৮ রানে বিদেয় করেন। পরবর্তীতে রাসেল এনডিন ও ৫০ রানে রয় ম্যাকলিনকে আউট করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দল ৪৭০ রানে অল-আউট হয়। ইয়ান মেকিফ ৫/১২৫ নিয়ে দলের সেরা উইকেট শিকারী হন। প্রধান পাঁচ ব্যাটসম্যানকেই তিনি বিদেয় করেছিলেন। সফরকারী দল ব্যাটিংয়ে নামে। ৩১৩/৮ থাকা অবস্থায় তিনি মাঠে নামেন। শতরানের অধিকারী রিচি বেনো’র সাথে ৪২ রানের জুটি গড়েন। অভিষেকে তিনি ১১ রান তুলেন। ক্রেগের দল ৩৬৮ রানের গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৩/৫২ পান। দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাকগ্লিউ তার শিকারে পরিণত হন। খেলাটি ড্র হয়েছিল।[৩১][৩২] চমৎকার সূচনার পর কেপ টাউনে দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসের শুরুতে আঘাতের কবলে পড়েন তিনি। এরপর তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস বিজয়ে কোনরূপ ভূমিকা রাখতে পারেননি।[৩১]
ডারবানে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট খেলা থেকে তাকে বিরত রাখা হয়। প্রায় এক মাস মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয় ইয়ান মেকিফকে। জানুয়ারি মাসের শেষদিকে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট ও বর্ডার দল নিয়ে গড়া সম্মিলিত দলের বিপক্ষে খেলায় অংশগ্রহণ করেন। প্রথম ইনিংসে ৬/২৯ পান। এটিই এ সফরে তার সেরা বোলিং সাফল্য ছিল। ফলশ্রুতিতে, পাঁচ টেস্টের গড়া ঐ সিরিজের শেষ দুই টেস্টে তাকে দলে রাখা হয়। চতুর্থ টেস্টে তার অভিষেক পর্বটি তেমন সাফল্যমণ্ডিত হয়। প্রথম ইনিংসে দুইটি ও দ্বিতীয় ইনিংসে একটি উইকেট পান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে একমাত্র ইনিংসে ২৬ রান তুলেছিলেন। সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ কঠিন অবস্থায় নিজের খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান তিনি। ৩২.০৯ গড়ে ১১টি টেস্ট উইকেট ও ১৮.৬৬ গড়ে ৫৬ রান তুলেন।[৩১]
পুরো সফরে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৩.০৯ গড়ে ৩৩টি উইকেট পান।[৭] এছাড়াও, ছয় বছর পরই তার খেলোয়াড়ী জীবনের অবসান হবে বলে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সিরিজের এক বছর বাদে দক্ষিণ আফ্রিকান টেস্ট আম্পায়ার বিল মারাইস মন্তব্য করেন যে, মেকিফ ও দলীয় সঙ্গী জিম বার্কের বিপক্ষে বল ছোড়ার দায়ে নো-বল ডাকার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।[৩৩] বিষয়টি টের পেয়ে ইয়ান ক্রেগ দুই বোলারকে প্রান্ত বদল করান।[৩৩]
১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল অস্ট্রেলিয়া গমন করে। এ সফরেই ইয়ান মেকিফ তার খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণালী শিখরে আরোহণ করেন।[৩৪] সফররত ইংরেজ দলের বিপক্ষে ভিক্টোরিয়ার সদস্যরূপে মৌসুম শুরু করেন। ৪/৬৯ ও ১/১৬ লাভ করলেও তার দল পরাজয়বরণ করে।[৭] ইংরেজ দলের টেস্ট ব্যাটসম্যানত্রয় - পিটার রিচার্ডসন, আর্থার মিল্টন ও রমন সুব্বা রাওকে আউট করেন তিনি। তন্মধ্যে, রিচার্ডসন দুইবার তার শিকারে পরিণত হয়েছিলেন।[৮]
টেস্ট দলের নেতৃত্বভার রিচি বেনো’র কাছ থেকে ইয়ান ক্রেগের কাছে চলে যায়। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে জোরপূর্বক খেলা থেকে দূরে চলে আসতে হয়। মেকিফও দলে নিজস্থান ফিরে পান।[৩৫] টেস্ট সিরিজ শুরুর পূর্বে ইংরেজ অল-রাউন্ডার ট্রেভর বেইলি ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মেকিফকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য ছুঁড়েন যে, অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বাজে বোলার হিসেবে দলে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি সফরকারীদেরকে খুব কমই প্রভাব ফেলতে পারবেন।[৩৬] তবে এ বক্তব্য প্রশ্নের মুখে পড়ে। বেনো পরবর্তী যুগে অস্ট্রেলিয়া দল বেশ ভালোভাবেই যাত্রা শুরু করে। ব্রিসবেনের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে অস্ট্রেলিয়া দল জয় তুলে নেয়। তিনি ৩/৩৩ ও ২/৩০ নিয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন।[৩১] মিল্টন, কলিন কাউড্রে ও অধিনায়ক পিটার মে’কে প্রথম দিনের শুরুতেই বিদেয় করে অস্ট্রেলিয়াকে খেলা ধরে রাখতে সাহায্য করেন।[৮][৩৭]
দ্বিতীয় টেস্টে ইয়ান মেকিফের ভূমিকা আরও শক্তরূপ ধারণ করে। ১৯৫৮ সালে নববর্ষের প্রাক্কালে মেলবোর্নে ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলাটি শুরু হয়। নিজ মাঠে দর্শকদের সম্মুখে এটিই তার প্রথম আন্তর্জাতিক খেলা ছিল। এছাড়াও, বল ছোড়ার অপবাদে নিয়ে সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা এখান থেকে শুরু হয়। খেলায় তিনি ও দলীয় সঙ্গী বামহাতি পেসার ডেভিডসন একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করেন। পতনকৃত ২০ উইকেটের মধ্যে ১৮টি তারা ভাগাভাগি করে নেন। ইংল্যান্ডের ইনিংসের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ডেভিডসনের ৬/৬৪ ও মেকিফের ৩/৬৯ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করা। তন্মধ্যে, তিনি ইংরেজ অধিনায়ক মে’কে ১১৩ রানে সুইং বলে বিদেয় করেন। বলটি ব্যাটসম্যানের প্রতিরক্ষা ভেঙ্গে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে।[৩৮] এরফলে, কাউড্রের সাথে শতরানের জুটির পতন ঘটি। ২৫৯ রানে ইংল্যান্ডের ইনিংস থমকে যায়। শেষ ছয় ইংরেজ ব্যাটসম্যান ৪৯ রান তুলেছিলেন। মেকিফ তাঁর এ সাফল্যকে[৩৮] খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা হিসেবে বর্ণনা করেন।[৩৯] এ ইনিংসে তিনি শূন্য রানে বিদেয় হন। তাসত্ত্বেও স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ৩০৮ রান তুলে ৪৯ রানে এগিয়ে যায়।[৭] দ্বিতীয় ইনিংসে পেসারদ্বয় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। বেনো’র এক ওভার বাদে উভয়ে অপরিবর্তিত অবস্থায় ৩২ ওভারেই ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দেন। মেকিফ ৬/৩৮ পান।[৩১][৩৪] স্থানীয় সমর্থকদের উদ্দীপনায়[৩৮] তিনি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রিচার্ডসনকে তিন রানে, এরপর বেইলি, টম গ্রেভেনি ও কাউড্রেকে দ্রুত বিদেয় করেন। এরপর ইংরেজ অধিনায়ককে দ্বিতীয়বার আউট করলে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৭১/৭ হয়। এরফলে মামুলি ৩৯ রানের লক্ষ্যমাত্রায় দুই উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে তাঁর দল।[৩৯] পেসারদ্বয় বেশ কয়েকটি কঠিন ক্যাচ তালুবন্দী করার বদান্যতায় সফলতা পেয়েছেন।[৪০] যৌথভাবে মে’র কট ডেভিডসন ও তারপর গ্রেভেনিকে সতীর্থ বামহাতি স্পিনারে বোলিংয়ে আউট করেন। এ ক্যাচগুলো সত্যিকার অর্থেই অবিশ্বাস্য ছিল।[৩৮]
২৪তম জন্মদিনের প্রাক্কালে খেলাটি শেষ হয়। কিন্তু, ইংরেজ সাংবাদিকদের কাছ থেকে মেকিফ ও সতীর্থদের বিপক্ষে বল ছোঁড়ার অভিযোগে অস্ট্রেলীয় উৎসব অনেকাংশেই ম্লান হয়ে যায়। মেলবোর্ন হেরাল্ডের সান্ধ্যকালীন সংস্করণে সাবেক ইংরেজ স্পিনার জনি ওয়ারডল মেকিফের বল ছোঁড়ায় ইংল্যান্ড অল-আউট হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।[৪১][৪২] ওয়ারডল বেশ কয়েকবার বাক্যের শুরুতে ‘আমি অভিযোগ করছি’ দিয়ে শুরু করেন।[৪৩] এর পরপরই ইংরেজ গণমাধ্যমে মেকিফ বিরোধী মন্তব্য প্রকাশ হতে থাকে। তন্মধ্যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে সুপরিচিত হ্যারল্ড লারউড বেশ সরগরম ছিলেন।[৪] দি ইভনিং নিউজ দাবী করে যে, মেকিফের বল নিক্ষেপের ধরন বেশ ধ্বংসাত্মকমূলক ছিল। অন্যদিকে, দি স্টারে উল্লেখ করা হয় যে, প্রাপ্ত উইকেটের কমপক্ষে দুইটি আউট স্পষ্টতঃই ঢিল ছোঁড়ার মতো।[৪১] সাবেক ইংরেজ স্পিনার ইয়ান পিবলস মন্তব্য করেন যে, মেকিফ ও গর্ডন রর্ক উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বল ঢিল ছুঁড়েছেন।[৪৪] অপরদিকে, সাবেক ইংরেজ পেসার আল্ফ গোভার দাবী করেন যে, বামহাতি পেসারদের কেউ বৈধভাবে বোলিং করেননি।[৪১] এতে উল্লেখ করেন যে, কোন একজন বোলারের এহেন কর্মকাণ্ডের ফলে ইংল্যান্ডের বিপর্যয় নিয়ে আসার জন্যে যথেষ্ট।[৪৫] অস্ট্রেলীয় লেখক জ্যাক পোলার্ড এ ধরনের লেখনিকে স্নায়ুযুদ্ধের শামিল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ইংরেজ সংবাদপত্রের প্রধান খবরে নিয়ে যায়।[৪৫]
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে বেইলির একমাত্র উইকেট পান। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে আঘাতের কারণে বোলিং করা থেকে বিরত থাকেন।[৩১] ফলশ্রুতিতে, চতুর্থ টেস্টে তিনি দলের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন।[৪৬] মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে মেলবোর্নে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টের পূর্ব-পর্যন্ত এক মাস ক্রিকেট খেলায় অংশ নেননি।[৭] ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞ পিটার মে ও টেড ডেক্সটারকে তিনি বিদেয় করেন। খেলায় তিনি বেশ সফল ছিলেন। ১৭.১৭ গড়ে ১৭ উইকেট দখল করে অস্ট্রেলিয়ার ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন।[১০][৩১] তার এ প্রচেষ্টা সিরিজে টেস্ট বোলিং গড়ে শীর্ষস্থানে নিয়ে যায়।[৪৭][৪৮] চতুর্থ টেস্টে রে লিন্ডওয়ালকে তার পরিবর্তে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয় ও বলতে শোনা গিয়েছিল যে, ‘আমিই সর্বশেষ সঠিকমানের বোলার।’[৪৯] প্রথিতযশা এ খেলোয়াড় পরবর্তী খেলাগুলোয় একত্রে খেলেছিলেন।[৪৯] তন্মধ্যে, পঞ্চম টেস্টও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৫০] নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে দুইটি শিল্ডের খেলায়ও তিনি সফলতা পান। প্রথম মোকাবেলায় খেলায় তিনি ১২৯ রান খরচায় পাঁচ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, টেস্ট ক্রিকেটার বার্ক, ও’নীল ও দুইবার ডেভিডসনকে আউট করেন।[৮] তাসত্ত্বেও, তার এ প্রচেষ্টা দলকে পরাজয়বরণ থেকে বিরত রাখতে পারেনি।[৭] ফিরতি খেলায় ১৬২ রানে সাত উইকেট পান। তন্মধ্যে, পাঁচজনই অস্ট্রেলীয় টেস্ট ব্যাটসম্যান ছিলেন।[৮] খেলায় ভিক্টোরিয়ার একচ্ছত্র প্রাধান্যতা লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ রানের জয়সূচক রান তোলার পূর্বেই বৃষ্টি আঘাত হানে ও ড্রয়ে পরিণত হয়।[৭]
১৯৫৯-৬০ মৌসুমের শুরুতে লিন্ডওয়াল ও বেনো একাদশের মধ্যকার টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে যাচাই-বাছাইয়ের খেলা আয়োজন করা হয়। লিন্ডওয়াল একাদশের সদস্যরূপে খেলায় ৯০ রান খরচায় চার উইকেট নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানে টেস্ট সফরে যাবার জন্যে মনোনীত হন।[৭][৩১] দেশত্যাগের পূর্বে মেকিফ তার নতুন বোলিং ভঙ্গীমা দেখান[৫১] ভারত কিংবা পাকিস্তানে বল ছোঁড়ার কারণে সর্বমোট পাঁচটি দেশের কাছ থেকে অভিযোগের পাত্রে পরিণত হননি।[৫২]
সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকায় ম্যাটিং পিচে কোন উইকেট পাননি। তাসত্ত্বেও, অস্ট্রেলিয়া দল জয় পেয়েছিল। লাহোরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে[৩১] তিন উইকেট পান। তন্মধ্যে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক হানিফ মোহাম্মদ ছিলেন।[৮] গত ৩৯ বছরের মধ্যে পাকিস্তানের মাটিতে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ জয় ছিল।[১০] তৃতীয় টেস্টের পূর্বে নিম্নমূখী রানের খেলায় প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে লড়েন। কোন ইনিংসই ১৪০ ওভারের বেশি খেলা হয়নি। খেলায় চার উইকেট পান ও দুইবার ব্যাট হাতে অপরাজিত ছিলেন। তিন উইকেট হাতে রেখে সফরকারী দল জয় পায়।[৭] করাচীতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে খেলতে পারেননি ও খেলাটি ড্রয়ে পর্যবসিত হয়।[৩১]
সফরের পরবর্তী পর্যায়ে দিল্লিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে অংশ নেন। প্রথম ইনিংসে ১/৫২ পান। এরপর ব্যাট হাতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ৪৫* রানের ইনিংস খেলেন। দলীয় সংগ্রহ ৪০২/৮ থাকা অবস্থায় লিন্ডসে ক্লাইন ও গর্ডন রোর্ককে সাথে নিয়ে দলকে ৪৬৮ রানে নিয়ে যান। এরফলে তার দল ৩৩৩ রানে এগিয়ে যায়।[৩১][৫৩] ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি কোন উইকেট পাননি। তাসত্ত্বেও, বেনো’র দল ইনিংস ও ১১৭ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নেয়।[৩১] কানপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। তবে, খুব কমই ভূমিকা রাখেন। স্পিন নির্ভর খেলায় জসু প্যাটেল ১৪ উইকেট পান। এরফলে, ভারত দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্টে জয়লাভে সক্ষমতা দেখায়।[৩১][৫৪] ভারত দল শেষ উইকেট লাভ করার সময় ইয়ান মেকিফ ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।[৩১] ভারতের মাটিতে প্রথম দুই টেস্টে মেকিফ কেবলমাত্র চান্দু বোর্দেকে দুইবার আউট করেছিলেন।[৮]
বোম্বের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের ড্র হওয়া তৃতীয় টেস্টে সর্বাপেক্ষা সফলতা লাভ করেন ইয়ান মেকিফ। ঐ টেস্টে ৪/৭৯ ও ৩/৬৭ পান। ১০৮ রানের মাথায় নরি কন্ট্রাক্টরকে বিদেয় করার মাধ্যমে পাঁচ উইকেটের চারটি তিনি দখল করেন। ফলে, ভারতের সংগ্রহ ১৯৯/৩ থেকে ২৪৬/৮-এ উপনীত হয় ও এক পর্যায়ে ২৮৯ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।[৫৫] দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুতলয়ে তিনটি উইকেট পান। বিনা উইকেটে ৯৯ রান থেকে ১১৬/৪ হয়। অবশ্য পরাজয় থেকে রক্ষা পায় ভারতীয় দল।[৫৫] বোর্দের উপর ইয়ান মেকিফ তার খবরদারী চালাতে থাকেন। উভয় ইনিংসেই তিনি চান্দু বোর্দেকে আউট করেন।[৮] শেষ দুই টেস্টে তিনি তেমন আহামরি খেলা উপহার দেননি। মাত্র তিন উইকেট পান। তাসত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া দল ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।[৭][১০] উপমহাদেশ সফরে ৩৫.৭৩ গড়ে ১৫ উইকেট ও ২৩.৩৩ গড়ে ৭০ রান তুলেন তিনি।[৩১]
সামগ্রিকভাবে বোর্দের উপরই তিনি সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। টেস্টগুলোয় অংশ নিয়ে পাঁচবার আউট করেন তিনি।[৮] অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে ইয়ান মেকিফ ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডের একমাত্র খেলায় অংশ নেন। খেলায় তিনি দশ উইকেট পান যা তার খেলোয়াড়ী জীবনের একমাত্র ঘটনা ছিল। ৫/৪১ ও ৫/৮৪ নিয়ে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলকে সহজ জয় এনে দেন। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ১৪১ রানে গুটিয়ে যায়। এর জবাবে ভিক্টোরিয়া দল ৪৩১ রান তুলে খেলায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।[৭] এছাড়াও, সাউথ মেলবোর্নকে আরও একবার জেলা পর্যায়ের শিরোপা লাভে সহায়তা করেন। মৌসুমে নিয়মিত খেলে শেষ খেলায় ফিটজরয়ের বিপক্ষে ৯/৫১ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এতে হ্যাট্রিকও ছিল। এ জয়ের ফলে সাউথ মেলবোর্ন সপ্তম স্থান থেকে পয়েন্ট তালিকায় চতুর্থ স্থানে চলে আসে ও সেমি-ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এরপর সেমি-ফাইনালে জয়লাভের পর ফাইনালে চলে যায়। পরবর্তীতে শিরোপা লাভ করে।[৫৬]
১৯৬০-৬১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষে খেলার জন্যে তাকে রাখা হয়নি। এ সময় তার খেলার মান দূর্বল পর্যায়ের ছিল ও পুণঃপুণ আঘাতে জর্জরিত ছিলেন।[৫৭] পায়ের গোড়ালীতে টান পড়ায় তার গতি কমে যায় ও উদ্বোধনী টেস্টে তা চোখে পড়ে।[৫৮][৫৯] প্রথম ও তৃতীয় টেস্টে অংশ নিয়ে ১১৭.০০ গড়ে মাত্র দুই উইকেট পান ও ৬.০০ গড়ে ১২ রান তুলেন।[৩১] কোন খেলায়ই সম্পূর্ণ সময় মাঠে অবস্থান করেননি। খেলাগুলোর দ্বিতীয় ইনিংসে আঘাত আরও বৃদ্ধি পায়।[৫৭] ফলশ্রুতিতে, বাদ-বাকী তিন টেস্ট থেকে তাকে দূরে রাখা হয়। কল এগারের চোখে মেকিফের বোলিংশৈলী যুৎসই। তিনি লক্ষ্য করেন যে, আম্পায়ার তার বোলিং ভঙ্গীমা কিছুটা পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেছেন।[৫২]
মৌসুমের শুরুতে ভিক্টোরিয়ার খেলায় ৪/৯০ পান ও সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নয় উইকেট জয়ে ভূমিকা রাখেন। কিন্তু, পরবর্তী খেলায় সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের বিপক্ষে ১২২ রান খরচায় দুই উইকেট পান। খেলায় তার দল ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়বরণ করে।[৭] তিনি অতিথি দলের পক্ষে ২৫২ রান তোলা রোহন কানহাই ও অধিনায়ক ফ্রাঙ্ক ওরেলের ৮২ রানের ইনিংস থামিয়ে দেন। দলটি ৪৯৩ রান তুলে।[৮] শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ২৪ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হন।[৬০] স্বাগতিক দল সনি রামাদিনের বিস্ময়কর স্পিনে মোহিত হয়ে যায়।[৬১] বল হাতে তেমন কিছু করতে না পারলেও ইয়ান মেকিফকে ব্রিসবেনের সিরিজের প্রথম টেস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ক্যারিবীয় দল প্রথম ব্যাটিংয়ে নামে। মেকিফের উপর চড়াও হয়। তার বোলিং থেকে ওভারপ্রতি সাত রানেরও বেশি তোলে। ১৮ ওভারে ১/১২৯ পান। সফরকারী দলটি ৪৫৩ রানে তাদের ইনিংস শেষ করে।[৬২] ১৩২ রান করা গ্যারি সোবার্সের একমাত্র উইকেটটি তিনি দখল করেন।[৭][৮] ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান প্রধানত মেকিফের উপর চড়াও হন ও দিনের সবচেয়ে বাজে বলে আউট হয়েছিলেন।[৬৩] লেগ সাইডে ফুল টস আকারে আসা বলে আঘাত করলে তা মিড-অন এলাকায় ফিল্ডারের তালুবন্দী হয়।[৬৩] দ্বিতীয় ইনিংসে চার ওভার বোলিং করেই মাঠের বাইরে চলে যান। তবে, ১৪ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অংশ নেন।[৭][৫৭] এ ইনিংসের কারণেই তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। চূড়ান্ত দিনের শেষদিকে নাটকীয়তায় ভরা খেলায় জয়ের জন্য শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার সাত রানের দরকার ছিল ও হাতে ছিল তিন উইকেট। চূড়ান্ত অধিবেশনে ডেভিডসন ও বেনো শতরানের জুটি গড়ে দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে আসেন ও জয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয়। উভয়েই অর্ধ-শতরানের কোটা অতিক্রম করেন। তবে, শেষ ওভারের পূর্ব বলে সরাসরি আঘাতে ডেভিডসনের রান আউট সফরকারীদের আশার বাণী শোনায়।[৬৪][৬৫] চূড়ান্ত ওভারে হুক মারার চেষ্টাকালে বেনো কট আউট হন। এ পর্যায়ে ইয়ান মেকিফ ওয়ালি গ্রাউটের সাথে ক্রিজে নামেন।[৬৪] তখন দলের দুই উইকেট হাতে ছিল ও ছয় বলে জয়ের জন্যে পাঁচ রানের প্রয়োজন পড়ে।[৬০][৬৫]
আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় ওভারের তৃতীয় বল মোকাবেলা করেন ও পরের বলে বাই রান পান। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান উইকেট-রক্ষক মেকিফকে রান নেয়া থেকে নিবৃত রাখার উদ্দেশ্যে স্ট্রাইকারবিহীন অপর প্রান্তে স্ট্যাম্পে আঘাত হানার চেষ্টা করেন। তখনও ব্যাটসম্যান বেশ কয়েক মিটার দূরে অবস্থান করছিলেন।[৬৬] গ্রাউট বলকে শূন্যে উড়িয়ে মারলেও দুই ফিল্ডারের মাঝামাঝি এলাকায় পড়ায় ড্রপ ক্যাচে পরিণত হয়। ফলে অস্ট্রেলীয়রা আরও একটি রান পায়। শেষ তিন বলে স্বাগতিক দলের প্রয়োজন পড়ে মাত্র তিন রান। মেকিফ ষষ্ঠ বল মোকাবেলা করেন। হাফ ভলি আকারের বলটি স্কয়ার লেগ অঞ্চলে প্রেরণ করেন।[৬০][৬৬] বলটি দৃশ্যতঃ বাউন্ডারি হিসেবে চার রানের জয়সূচক রানে পরিণত হবার সম্ভাবনা থাকলেও স্থবিরতাসূচক মাঠের কারণে এক মিটার পূর্বে থেমে পড়ে।[৬৭] গ্রাউট তৃতীয় রান নেবার চেষ্টা চালান। তবে, বেশ দূর থেকে নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত হেনে রান আউটের শিকার হন।[৬০]
শেষ দুই বল বাকী থাকতে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে লিন্ডসে ক্লাইন মাঠে নেমে উভয় দলের রান সমান থাকা অবস্থায় উভয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগে জয়সূচক রানের দিকে অগ্রসর হন। স্কয়ার লেগ অঞ্চলে তার সঙ্গী পাঠিয়ে দিয়ে দ্রুত রান নেবার চেষ্টা চালান।[৬০] তবে, এক মিটার দূরে থাকতেই জো সলোমনের হাতে থাকা বলটি সরাসরি স্ট্যাম্পে আঘাত হানলে টেস্টের ইতিহাসের প্রথম টাইয়ের সূচনা হয়।[৪][৩১][৬৫][৬৮] আম্পায়ার কল হয় মেকিফকে আউট ঘোষণা করেন। মেকিফ প্রসঙ্গে বলেন যে, বিষয়টি বেশ সহজতর ছিল। তিনি অনেক দূরে অবস্থান করছিলেন।[৬৭] পুরো স্টেডিয়ামে থাকা খেলোয়াড় ও দর্শকেরা রোমাঞ্চকর খেলাটি উপভোগ করেন। তবে, কেউ প্রকৃত রান সংখ্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এর পরই তারা উপলদ্ধি করেন যে, খেলাটি প্রথম টাই টেস্টের মর্যাদা পেয়েছে।[৬৮] শুরুতে মেকিফ ধারণা করেছিলেন যে, অস্ট্রেলিয়া পরাজয়বরণ করেছে ও এ ফলাফলে নিজেকে দোষীসাব্যস্ত করেছিলেন।[৬৫][৬৯]
আঘাতের কারণে দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিজয় সারথী হতে পারেননি। তৃতীয় টেস্টে মেকিফ দলে ফিরে আসেন। আবারও তিনি আক্রমণের শিকার হন। প্রথম ইনিংসে ১৩ ওভারে ১/৭৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।[৭] কনরাড হান্টের একমাত্র উইকেট দখল করেছিলেন তিনি।[৮] দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ ওভার পরই তিনি খেলার মাঠ থেকে চলে যান। এছাড়াও, ডেভিডসন আহত হলে মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফলশ্রুতিতে, সফরকারী দল সুবিধা পায়। বাদ-বাকী বোলারদেরকে তুনোধুনো করে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা আনে।[৭][১০][৫৭][৭০] ঐ সিরিজের বাদ-বাকী সময়ে তিনি আর আরোগ্য লাভ করতে পারেননি।[৭]
ক্রমাগত গোড়ালী ও পিঠের আঘাতের কারণে ঐ গ্রীষ্মে ৪০ গড়ে মাত্র ১৯টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পান।[৭১] কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে সেরা ৪/৩৯ পান। কোন খেলাতেই পাঁচ উইকেটের বেশি পাননি।[৭] চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে তিনি ৫/১৫৫ পান। সবগুলো উইকেটই টেস্ট ব্যাটসম্যানদের ছিল।[৮] অ্যাশেজ সফরের জন্য ইয়ান মেকিফকে নেয়া হয়নি। দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের ফলে দল নির্বাচকমণ্ডলীর তার বোলিং ভঙ্গীমা ও ইংল্যান্ডে আম্পায়ারদের সাথে বাক-বিতণ্ডার কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করে।[৭১] ক্রিকেটবোদ্ধাদের অভিমত, ১৯৫৯-৬০ মৌসুম থেকে তার নতুন বোলিং ভঙ্গীমা গ্রহণযোগ্য। তবে, এতে পেস কমে যায় ও কার্যকরহীন ছিল।[৭১]
পুনরায় টেস্ট দলে ঠাঁই পেতে ইয়ান মেকিফ তখনো আশাবাদী ছিলেন। ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডের খেলায় সাউথ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হন। ভিক্টোরিয়া দল ১৭৪ রানে গুটিয়ে যায়। তিনি ৪/৬৫ নিয়ে প্রথম ইনিংসে সাউথ অস্ট্রেলিয়াকে ১৪১ রানে থামিয়ে থেকে ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩/৭৬ নিয়ে দলকে জয় এনে দেন।[৭] মৌসুমের শুরুরদিকের খেলার ধরন অব্যাহত রেখে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা ১৭৯ রান খরচায় ৭ উইকেট নেন। তাসত্ত্বেও, দলকে পরাজয়বরণ করতে হয়েছিল।[৭][৭২] এ ধরনের সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করা সত্ত্বেও প্রথম টেস্টে ইয়ান মেকিফকে দলে ভেড়ানো হয়নি। আরও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি নিজেকে মেলে ধরার জন্যে। উদ্বোধনী টেস্টের পর ইংরেজ দল ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নেয়। খেলায় তিনি ৯০ রান খরচায় ৪ উইকেট পান। তবে, সফরকারী দল পাঁচ উইকেটে জয় পায়।[৭] তিনি রে ইলিংওয়ার্থ, জিওফ পুলার ও অ্যালেন স্মিথকে আউট করে দলকে চার রানে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেন। তবে, স্বাগতিক দলের দ্বিতীয় ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে গেলে টেড ডেক্সটারের দল ১৮০ রানের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই অতিক্রম করে।[৭][৮]
দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর পূর্বে মৌসুমের প্রথম দুই খেলার প্রথমটিতে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে খেলে ভিক্টোরিয়া দল। মেকিফ ৩/৩৩ পান। গ্রাহাম থমাস, বেনো ও মার্টিনকে আউট করে পূর্ববর্তী শিরোপাধারী দলকে ১৩২ রানে গুটিয়ে দেয় ভিক্টোরিয়া।[৭][৮] এর জবাবে ভিক্টোরিয়ার ইনিংসের শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩২ রান তুলেন তিনি। এরফলে তার দল ১৩৫ রানে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩/৭৩ পান। এ পর্যায়ে টেস্ট খেলোয়াড় সিম্পসন, ডেভিডসন ও বেনো তার শিকারে পরিণত হন এবং জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ হলে আট উইকেট হাতে রেখেই জয়ী হয় ভিক্টোরিয়া দল।[৭]
তাসত্ত্বেও, দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্য তাকে দলে ঠাঁই দেয়া হয়নি।[৭১] এরপর প্রথমবারের মতো কোন প্রতিযোগিতায় ঢিল ছোড়ার ঘটনায় মৌসুমটি আরও জঘন্য করে তোলে।[৭২] জানুয়ারি, ১৯৬৩ সালে অ্যাডিলেড ওভালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১৮ রানে ভিক্টোরিয়ার ইনিংস থেমে যায়। মেকিফ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদ্বয় - লেস ফাভেল ও কেন কানিংহামকে বিদেয় করেন।[৮] ১৯ রান খরচ করার পর নিজস্ব চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে জ্যাক কার্স নো-বল ডাকেন।[৭৩] এরপরও তিনি বোলিং করা অব্যাহত রাখেন। বাদ-বাকী বোলিং দৃশ্যতঃ বৈধ ছিল। খেলায় তিনি ৫/৮৪ পান। সাউথ অস্ট্রেলিয়া ৪০৮/৮ করে ইনিংস ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকরা মাত্র ১০৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করে। কিন্তু, নতুন বল হাতে নিয়ে ফাভেল, কানিংহাম ও নীল ড্যানসিকে বিদেয় করলে রানের লক্ষ্যমাত্রা দূরে সরে যেতে থাকে।[৭][৮] খেলায় তিনি ৩/২৫ পান। স্ট্যাম্প ফেলে দেয়ার পূর্ব-পর্যন্ত সাউথ অস্ট্রেলিয়া ৮৬/৭ করে ড্রয়ের পথে যেতে বাধ্য হয়।[৭][৭৩]
মেকিফ ৩/৫০ নিলেও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার কাছে সাত উইকেটে পরাজিত হয় তার দল। এরপর নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে সাত উইকেট হাতে থাকা সত্ত্বেও সময়ের অভাবহেতু ৩৪ রান দূরে থাকতে ড্র হয়ে যায়। খেলায় ১২১ রান খরচায় ৬ উইকেট পান তিনি।[৭] রাজ্যদলের দ্বিতীয় খেলায় ইংরেজ একাদশের মুখোমুখি হন। এটিই টেস্ট দলে খেলার সর্বশেষ সুযোগ ছিল। সফরকারীরা প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৭৫ রান তুলে। মেকিফ ৫/৯৩ পান। পুলার, পিটার পারফিট, ফ্রেড টিটমাস, ডেভিড অ্যালেন ও দলের ১৮৫ রানের ইনিংস সম্পন্নকারী টম গ্রেভেনি তার শিকারে পরিণত হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২/৪৭ পান। ব্যারি নাইট ও কেন ব্যারিংটনকে আউট করেন তিনি। ২৮৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করে ইংল্যান্ড দল। স্বাগতিক দল পরাজয়ের সমূহ সম্ভাবনায় থেকে মাঠে নামে। শেষদিকে নেমে ৩৮ রান তুলেন ও এক উইকেট বাকী থাকতেই খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।[৭][৮][৭৪] ব্যাটে-বলে এ ধরনের ধারাবাহিকতা প্রদর্শনসহ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সফলতা সত্ত্বেও পঞ্চম টেস্টে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।[৭] তার অনুপস্থিতির সুযোগে অস্ট্রেলিয়া দল ইংরেজদের ব্যাটিংয়ের কাছে মার খায় ও সিরিজে ১-১ ব্যবধানে শেষ হয়।[১০]
১৯৬২-৬৩ মৌসুমে ইয়ান মেকিফ শীর্ষস্থানীয় উইকেট শিকারীতে পরিণত হয়েছিলেন। ফলে, দল নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে তিনি অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত হননি।[৭১] এছাড়াও, তার বোলিং ভঙ্গীমার বিষয়টি অনেকাংশে দূরীভূত হয়। অন্যদিকে, ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে স্বদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট সিরিজ খেলার পূর্বে ডেভিডসনের অবসর গ্রহণ অস্ট্রেলিয়া দলে শূন্যতার সৃষ্টি করে।[৭৫] মেলবোর্নে মৌসুমের উদ্বোধনী খেলায় সাউথ ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলায় যথাক্রমে ১০২ রানে ৫ ও ১০৭ রানে ৬ উইকেট পান।[৭] তন্মধ্যে, টেস্ট ব্যাটসম্যান লেস ফাভেল, গ্যারি সোবার্স, কিথ স্ল্যাটার ও ব্যারি শেফার্ডের উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[৮] শেষের খেলায় ইনিংসে প্রথম পাঁচ—উইকেট নিয়ে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াকে ৫৪/৫-এ নিয়ে যান।[৭৬] তার এ প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভিক্টোরিয়া দল কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি।[৭] তবে, ব্যক্তিগত সফলতার প্রেক্ষিতে ইয়ান মেকিফকে ব্রিসবেনে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়।[৭৭]
ব্রিসবেন টেস্টটিকে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমে ব্যঙ্গ করে মেকিফের টেস্ট নামে উল্লেখ করা হয়। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে টেস্টটি শুরু হয়। অস্ট্রেলিয়া দল প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে। পিটার পোলকের হাতে বোল্ড হবার পূর্বে ইয়ান মেকিফ সাত রান তুলে দলে অবদান রাখেন।[৩১][৭৮] দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৩৫। মধ্যাহ্ন বিরতির পরপরই দক্ষিণ আফ্রিকা দল ব্যাট হাতে মাঠে নামে। স্ট্যানলি স্ট্রিট প্রান্ত থেকে গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জি তার প্রথম ওভারেই ১৩ রান দিয়ে ফেলেন।[৭৯] দ্বিতীয় ওভারে ইয়ান মেকিফ তার বোলিং করা শুরু করেন। ভালচার স্ট্রিট প্রান্তে তার বোলিং মোকাবেলা করেন ট্রেভর গডার্ড।[৮০] একই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যবস্থাপক কেন ভিলজোয়েন উইকেটের স্কয়ার অঞ্চলে ক্যামেরা স্থাপন করেন। বামহাতি পেসারের বোলিং ভঙ্গীমাকে ঘিরে দর্শকদের নিয়ে চলচ্চিত্রায়ণ করেন।[৭৯][৮১] স্কয়ার লেগ অঞ্চলে দণ্ডায়মান এগার চারবার নো-বল ডাকেন। এটিই সমগ্র খেলায় তার একমাত্র ওভার ছিল।[৮২] প্রথম বলটি আলতোভাবে করেন ও সম্মুখে পা রাখার কারণে নো-বল ডাকা থেকে মুক্তি পান। এর পরপরই নাটক শুরু হয়।[৭৯][৮১]
দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম ও নবম বলকে ঢিল ছোঁড়ার কারণে এগার নো-বল ডাকেন।[৮২][৮৩] তৃতীয় ও পঞ্চম বলের পর ফুল টসে গডার্ড চার রান করেন। বেনো তার ফাস্ট বোলারের সাথে পরামর্শের জন্যে এগিয়ে আসেন।[৮১] নবম বল শেষে মেকিফ ও বেনো একান্তে আলোচনা করেন ও বাদ-বাকী তিনি বল দৃশ্যতঃ স্বাভাবিক ছিল।[৭৯] এ পর্যায়ে দর্শকেরা হট্টগোল শুরু করে। এগারের বিপক্ষে চলে যায় ও বিপর্যস্ত বোলারের সহায়তায় এগিয়ে আসে।[৭২][৮৪] এরপূর্বে পাঁচ দেশে ইয়ান মেকিফের বোলিংয়ের ধরন অনুমতি পায়। ঐ দেশগুলোর চারটির বিপক্ষে টেস্ট খেলেছেন। পূর্বেকার পাঁচ খেলায় এগারও তার বোলিং অনুমোদন দিয়েছিলেন। তিনটি শিল্ডের খেলায় ও দুইটি টেস্টে ছিল। কোন বাঁধা বাদেই ঐ খেলাগুলোয় ভিক্টোরীয় ইয়ান মেকিফ ১১৯.১ ওভার বোলিং করেছিলেন। পরে এগার মন্তব্য করেন যে, ঐ সময়ে আমি যা দেখেছি কেবল তাই প্রয়োগ করেছি।[৮২] বেনো পেসারকে বোলিং আক্রমণ করা থেকে দূরে সরিয়ে আনেন ও মেকিফকে খেলায় আর বোলিং করাননি।[৮২] পরে তিনি বলে যে, ওভারটির বিষয়ে তার কোন মনে নেই। কেননা, তিনি সম্পূর্ণভাবে মনোবেদনায় বিমোহিত হয়ে পড়েছিলেন।[৭২]
মেকিফ তার একমাত্র ওভারটিতে গডার্ডের বাউন্ডারি ও নো-বল থেকে চার রানসহ মোট আট রান দিয়েছিলেন। সফরকারী দল ৩৪৬ রানে গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে মেকিফকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি। আবহাওয়া খেলায় প্রভাব ফেলে। অস্ট্রেলিয়া দল ১৪৪/১ করে ইনিংস ঘোষণা করে। দক্ষিণ আফ্রিকা দল ১৩/১ করা অবস্থায় খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।[৩১] ঐ এক ওভারের পর মেকিফের ভূমিকা কেবল ফিল্ডিং করার ক্ষেত্রে সীমিত হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে বেনোর বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে গডার্ডের ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন তিনি।[৮৪][৮৫]
খেলা শেষে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন ইয়ান মেকিফ।[৪] কিন্তু, তার বোলিং ভঙ্গীমা যে স্বাভাবিক ছিল তা আলোচনায় রয়ে যায়।[৮৬] ঐ দিনের খেলা শেষ হবার আধা ঘণ্টা পূর্বে দর্শকেরা আমরা মেকিফকে চাই বলে স্লোগান দিতে থাকলে দুই মিনিট পূর্বেই খেলা শেষ হয়ে যায়।[৮৪][৮৭] খেলা শেষ হলে দর্শকেরা মাঠে নেমে আসে ও ফাস্ট বোলারকে তাদের কাঁধে নিয়ে বীর হিসেবে ঘুরতে থাকে। তারা পুনরায় মাঠে এসে দুই সারি গঠন করে ও এগার মাঠ থেকে চলে আসাকালে বিদ্রুপবাণী ছুড়ে।[৮৪][৮৭] এ ঘটনার পর কুইন্সল্যান্ড পুলিশ আম্পায়ারকে নিরাপত্তা দানে এগিয়ে আসে ও মাঠ থেকে নিয়ে যায়।[৮৩] মাঠে পুলিশের উপস্থিতি পরিবেশ আরও উত্তপ্ত করে তোলে। দর্শকেরা হয়তোবা এগার কিংবা বেনোকে আক্রমণ করতে পারে।[৮০] মেকিফের নিজ শহর মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। হত্যার হুমকি থাকায় পুরো খেলায় পুলিশী নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।[৮৮]
অবসর গ্রহণের পর নো-বলের ঘটনায় নিবন্ধে তার নাম অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেছিলেন।[৮৯] তিনি বলেন যে, এগারের নো-বল ডাকা অনেকাংশে পিছনে ছোঁড়া মারার মতো ছিল।[৮৯] তবে, আম্পায়ারকে স্বচ্ছ ও ব্যক্তি হিসেবে তার মনোভাব প্রকাশকারী হিসেবে উল্লেখ করেন।[৮৯]
উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে হার্ডওয়ারে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন ইয়ান মেকিফ। মেনটোনে বসবাস করতে থাকেন। বিয়ে করার পর ভিক্টোরিয়ার বিউমারিস এলাকায় চলে যান।[৩][৯০] এ দম্পতির এক পুত্র ছিল।[৮৩] ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর এ পেসার বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন। [৪] পাশাপাশি, ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।[২][৮৫] ২০১১ সাল মোতাবেক বয়ার স্পোর্টস মিডিয়ায় জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ছিলেন ও ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে কাজ করতে থাকেন।[৯১] তবে, ব্রিসবেনের ঘটনার পর থেকে সামাজিক পর্যায়ের খেলায় অংশ নিতে অস্বীকার করে আসছেন।[৪২]
ফেডারেল লিগে মেনটোনের পক্ষে অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবলে অংশ নিয়েছেন। ১৯৫৬ সালে প্রিমিয়ারশীপের শিরোপা জয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা পালন করেন।[২] ঐ সময়ের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিযোগিতা হিসেবে ভিক্টোরিয়ান ফুটবল লিগে খেলার প্রস্তাবনা পান। তবে, ক্রিকেট খেলায় মনোনিবেশের লক্ষ্যে এ প্রস্তাবকে স্বাগতঃ জানাননি।[২] সর্বক্রীড়াবিদ হিসেবে ম্যানটোন ক্রিকেট ক্লাব থেকে ১৯২৮ ও ১৯৫৬ সালে লিও ও’ব্রায়ান এবং ইয়ান মেকিফ - এ দুজন টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ক্ষুদ্র স্তরের প্রতিযোগিতায় গল্ফ খেলায়ও অংশ নিয়েছিলেন। এ পর্যায়ে ভিক্টোরিয়া গল্ফ ক্লাবের অধিনায়কত্ব করেন।[৯১]