লেখক | ডক্টর সুস |
---|---|
মূল শিরোনাম | Yertle the Turtle and Other Stories |
দেশ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | ইংরেজি |
ধরন | শিশু সাহিত্য |
প্রকাশিত | ১৯৫০-৫১ (রেডবুক) ১৯৫৮ (র্যান্ডম হাউজ) |
ইয়ার্টল নামের কচ্ছপ ও অন্যান্য গল্প (ইংরেজিঃ Yertle the Turtle and Other Stories) একটি ইংরেজি ভাষায় রচিত চিত্রপুস্তক সঙ্কলন। সঙ্কলনটির লেখক থিওডোর সুস গাইসল, যিনি “ডক্টর সুস” ছদ্মনামে বহুল পরিচিত। র্যান্ডম হাউজ এপ্রিল ১২, ১৯৫৮-এ বইটি প্রথম প্রকাশ করে, এবং এটি ডঃ সুস লিখেন তাঁর নিজস্ব শৈলীতে যার নাম অ্যানাপেস্টিক টেট্রামিটার (anapestic tetrameter)। যদিও এতে তিনটি ছোট গল্প রয়েছে, তথাপি এটি এর প্রথম গল্প “ইয়ার্টল নামের কচ্ছপ” (Yertle the Turtle) এর জন্যই বেশি পরিচিত। গল্পটিতে পুকুরের রাজা ইয়ার্টল তার প্রজাদের উপর দাঁড়িয়ে চাঁদ ছাড়িয়ে আকাশ ছুঁতে চান, কিন্তু সবার নিচে থাকা কচ্ছপটি ঢেকুর গিললে রাজা পড়ে গিয়ে কাদায় মাখামাখি হন এবং সেই সাথে পতন হয় তার রাজত্বের।
বইটিতে “ঢেকুর” (burp) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা তখনকার দিনে অমার্জিত বলে গণ্য হতো। তথাপি এটি ১ মিলিয়নের (১০ লক্ষ) বেশি কপি বিক্রি হয়। ২০০১ সালে বইটি পাবলিশার্স উইকলির সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত শিশুদের বই এর তালিকায় ১২৫ নম্বরে স্থান পায়।
গল্পটি পুকুরের রাজা ইয়ার্টল নামের একটি কচ্ছপকে ঘিরে। ইয়ার্টল তার রাজত্ব নিয়ে খুশী ছিল না। তাকে বসতে হতো একটি ছোট পাথরের সিংহাসনে। সে সিদ্ধান্ত নিল তার রাজত্বকে প্রসারিত করার। তাই, সে অন্যান্য কচ্ছপদের হুকুম দিল তার নিচে গাদা হতে যাতে সে একে একে সবার উপরে উঠতে পারে এবং অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পারে তার রাজত্ব প্রসার করার লক্ষ্যে। কিন্তু, গাদা হওয়া কচ্ছপরা সবাই খুব ব্যথা পাচ্ছিল এবং সবচেয়ে বেশি ব্যথা পাচ্ছিল ম্যাক নামে কচ্ছপটি যে ছিল সবার নিচে। ম্যাক ইয়ার্টলের কাছে একটু বিশ্রাম চাইলে সে তাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলল। তারপর ইয়ার্টল সিদ্ধান্ত নিল আরো বেশি কচ্ছপ এই গাদায় যোগ করতে যাতে সে আরো দূরে দেখতে পারে। ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত ও প্রচন্ড ব্যথায় ভুগতে থাকা ম্যাক দ্বিতীয়বারের মত বিশ্রাম চাইল। কিন্তু, আবারো ইয়ার্টল তাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলল। তারপর ইয়ার্টল দেখল তার উপর দিয়ে রাতের আকাশে চাঁদ উঠছে। তখন সে খুব খেপে গেল কারণ সে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে তার মত রাজার উপরে কিছু থাকতে পারে, এবং সে আরো কচ্ছপকে ডাকল তার গাদায় যোগ দিতে। কিন্তু, তার হুকুমের আগেই ম্যাক ঠিক করল অনেক হয়েছে সে আর সহ্য করতে পারছে না। সে একটা ঢেকুর তুলল। ঢেকুরের ফলে গাদার কচ্ছপরা পড়ে যেতে লাগল এবং সবার উপরে থাকা রাজ ইয়ার্টল পুকুরে পড়ে কাদায় মাখামাখি হয়ে গেল। সিংহাসনহীন রাজা হয়ে গেলে “কাদার রাজা” এবং সেই সাথে সব কচ্ছপরা হয়ে গেল মুক্ত।
দ্বিতীয় গল্পটি একটি মেয়ে পাখি গার্ট্রুড ম্যাকফাযকে ঘিরে। গার্ট্রুডের শুধু একটি সাধারণ পাখার লেজ, তাই সে লোলা লী লু-কে ঈর্ষা করে কারণ লোলার আছে দু’টি পাখার লেজ। তাই সে তার কাকা ডক্টর ডেইকের শরণাপন্ন হয় কীভাবে তার লেজ বড় করা যায় তা জানতে। তার ডাক্তার কাকা তাকে জানায় যে তার লেজ বড় করার প্রয়োজন নেই কারণ তার তার প্রজাতীর জন্য ঠিকই আছে। এটা শুনে লোলা ভীষণভাবে ক্ষেপে যায়। তখন ডাক্তার ডেইক উপায়ন্তর না দেখে তাকে জানায় কোথায় সে বেরী ফল পেতে পারে, যা খেলে তার লেজ বড় হবে। গার্ট্রুড বেরী খুঁজে পায় এবং প্রথম বেরীটি খাওয়ার পর তার লেজ ঠিক লোলা লুর লেজের সমান হয় যায়। তারপর লোভ তার উপর এসে ভর করে। এখন সে লোলাকেও ছাড়িয়ে যেতে চায়, তাই সে গাছের সবগুলো বেরীই খেয়ে ফেলে। এর ফলে তার লেজ এক বিশাল আকৃতি ধারণ করে। পাখার ওজনে সে আর উড়তে পারে না, এমনকি দৌড়াতে কিংবা হাঁটতেও পারে না। সে খুব ভয় পায় এবং পাহাড়ের উপরে বসে চিৎকার করতে থাকে। তার কাকা তার চিৎকার শুনে অন্যান্য পাখিদের ডেকে তাকে উদ্ধার করতে পাঠায়। সব পাখিরা মিলে তাকে বয়ে বাসায় নিয়ে আসে এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে তার লেজের পাখাগুলি একে একে ছুটিয়ে ফেলে। এতে সে খুব ব্যথা পায়। যদিও এখন তার লেজে শুধু একটি পাখাই আছে, এটাই তার জন্য যথেষ্ট কারণ এখন সে আরো বুদ্ধিমান।[১]
তৃতীয় এবং শেষ গল্পটি একটি খরগোশ ও একটি ভালুককে ঘিরে। তারা দু’জনেরই গর্ব যে তারা সবচেয়ে উন্নতমানের পশু ক্রমান্বয়ে তাদের শ্রবণ এবং ঘ্রাণ ক্ষমতার জন্য। কিন্তু, তাদের দু’জনকেই খর্ব করে একটি কেঁচো যে বলে যে সে সারা পৃথিবী দেখতে পায়, এবং সে তার পাহাড়ের উপর দেখতে পায় একটি খরগোশ ও একটি ভালুককে যাদের সে অভিহিত করে “সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় দুই বোকা” হিসেবে।
“ইয়ার্টল নামের কচ্ছপ” এর অনুরূপ একটি কচ্ছপের গাদার ছবি প্রথম প্রকাশিত হয় মার্চ ২০, ১৯৪২ তারীখে নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে প্রকাশিত পি এম নামে একটি খবরের কাগজে, যেখানে ডঃ সুস একজন ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনকারী (cartoonist) হিসেবে কাজ করতেন। ছবিটিতে দেখা যায় দু’টি কচ্ছপের গাদা ইংরেজি বর্ণমালার ‘ভি’ (V) আকৃতি গঠন করতে চেষ্টা করছে। কচ্ছপগুলি ভর করে ছিল “কালক্ষেপণকারী “ নামে একটি বড় কচ্ছপের উপরে এবং ছবির নিচে ক্যাপশন ছিল “আপনি কচ্ছপ দিয়ে কখনো একটি প্রকৃত ভি বানাতে পারবেন না!”[২]
সুস জানান যে “ইয়ার্টল” চরিত্রটি প্রতিনিধিত্ব করে হিটলারকে কারণ ইয়ার্টল ছিল পুকুরের অত্যাচারী রাজা এবং তার আশেপাশের জায়গা দখলে প্রতিফলিত হয় জার্মানিতে হিটলারের শাসন এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উপর তার হামলার ঘটনা।[৩][৪] যদিও সুস নৈতিকতা নিয়ে গল্প শুরু না করার ব্যপারে মত পোষণ করেছেন, এবং বলেছেনঃ “শিশুরা নৈতিকতার আগমণ দেখতে পায় অনেক দূর থেকে” এবং “প্রত্যেকটি গল্পেরই একটি অন্তর্নিহিত নৈতিকতা থাকে,” তিনি আরো বলেন যে তিনি ছিলেন “খুবই বিধ্বংসীমনা।“[৫][৬] “ইয়ার্টল নামের টার্টল” কে অনেকেই ব্যাখ্যা করেছেন “স্বৈরাচারের পতন”,[৭] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ,” এবং “বিধ্বংসী কর্তৃত্ববাদী শাসন” হিসেবে।[৮][৯]
২০০৩ সালে জন মিলার নামে এক সাংবাদিক ইয়ার্টলকে ইরাকের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসানের সাথে তুলনা করেন, এবং বলেন, “গল্পটির শেষ লাইনগুলো সাদ্দাম হোসেনের উপর প্রযোজ্য, যেমন এক সময় প্রযোজ্য ছিল ইউরোপিয়ান ফ্যাসিবাদিদের উপর।“[১০]
অতি সম্প্রতি কৌতুকাভিনাতে জন স্টুয়ার্ট ইয়ার্টলের সাথে মার্কিন সিনেটর মিচ ম্যাককনেলের ঐক্ষিক মিলের কথা জনসমক্ষে প্রচার করেন।[১১]
প্রকাশনার আগে ঢেকুর (burp) শব্দটির ব্যবহারও ছিল একটি সমস্যা। সুস এর মতে ঢেকুর শব্দটি ব্যবহার করা যাবে কিনা এব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে র্যান্ডম হাউজের কয়েকজন প্রকাশক এবং এর সভাপতি আলচনায় বসেন, কারণ এর আগে কেউ শিশুদের বইয়ে ঢেকুর শব্দটি ব্যবহার করেননি।[১২] তথাপি, প্রকাশকদের সন্দেহের পরেও বইটি খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে, এবং পাবলিশার্স উইকলির মতে ২০০১ সালে জনপ্রিয়তার দিক থেকে বইটি যুক্ত্ররাষ্ট্রে বিক্রিত শিশুদের বইয়ের মধ্যে ১২৫ নম্বরে স্থান পায়, যা বিক্রি হয় এক মিলিয়ন কপি।[১৩]
সুস বইটি উৎসর্গ করেন স্যাগমাস্টার পরিবারকে (Sagmaster family), তিনি জোসেফ স্যাগমাস্টারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জোসেফ তাঁর প্রথম স্ত্রী হেলেন পামারের সাথে সুসের পরিচয় করিয়ে দেন যখন তাঁরা দু’জনই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছিলেন। স্যাগমাস্টার এক সময় বলেছিলেন, “দুজনকে পরিচয় করিয়ে দেয়াটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে আনন্দদায়ক অনুপ্রেরণ।“[১৪]
যদিও ইরার্টল নামের কচ্ছপ ও অন্যান্য গল্প কখনও অভিযোজিত হয়নি, বইয়ের কিছু চরিত্র অন্যান্য মাধ্যমে দৃশ্যমান। ১৯৯৬-১৯৯৭ টেলিভিশন ধারাবাহিকে ইয়ার্টল চরিত্রটি দেখা যায়। ১৯৯৪ সালের ছায়াছবি ইন সার্চ অফ ডক্টর সুস এ গল্পটিকে একটি গীতিনাট্যে রূপান্তর করা হয়।
১৯৯২ সালে পরিচালক রে মেসেকার গল্পটিকে একটি এনিমেশন ছবিতে রূপান্তরিত করেন এবং এতে কাহিনীকথন করেন অভিনেতা জন লিথগাও।[১৫]
১৯৮৫ সালে রেড হট চিলি পেপার্স তাদের দ্বিতীয় এলবাম ফ্রিকি স্টাইলি-তে একটি গান যোগ করেন যার নাম ছিল “ইয়ার্টল নামের টার্টল”।
১৯৬১ সালে আর সি এ ক্যামডেন রেকর্ডস ইয়ার্টল নামের টার্টল ও অন্যান্য গল্প নামে একটি রেকর্ড প্রকাশ করেন, যার এ সাইডে ছিল বইয়ের ৩টি গল্প এবং বি সাইডে ছিল “বার্থলোমিও এবং উবলেক”।[১৬]
|তারিখ=
(সাহায্য)
|তারিখ=
(সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)