ইয়াশা (ভিন্ন উচ্চরণেঃ ইয়াশের, ইআশা, ইয়াশাক, জাযাক, যাশাগ, মঙ্গোলিয়ান ভাষায়: Их засаг, ইহি যাশাগ) হলো সম্রাট চেঙ্গিজ খান কর্তৃক তৈরিকৃত একটি গোপনীয় আইনের বিধি। “ইয়াশা” শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয় "আদেশ" বা "সরকারি নির্দেশ"।
"ইআশা" ( Yasa) বা "ইয়াশা" (Yassa) উভয়ই শব্দই মঙ্গোলিয়ান এবং তার্কিশ ভাষায় প্রচলিত। মঙ্গোলিয়ান ক্রিয়া পদ "যাশ-" (zas-) অথবা "ইআশ-" (yas-)", যার অর্থ "আদেশ প্রদান করা" (to set in order) থেকে এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। "স্রেগ যাসাখ" (Tsereg zasakh) একটি প্রবাদ যেটি সাধারণত পুরাতন মঙ্গোলিয় রচনা, যেমন “গোপন ইতিহাস”এ দেখা যায়, যার দ্বারা "সৈন্যদের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা" (to set the soldiers in order) বুঝায় যা প্রকৃত অর্থে যুদ্ধের পূর্বে সৈন্যদের অগ্রগমণকালীন প্রদান করা হয়। বর্তমান কালে মঙ্গোলিয়ান সরকারের সর্বোচ্চ কার্যনির্বাহী সংস্থাকে "যাসাগ-ইন গাজার" (Zasag-in gazar) নামে অভিহিত করা হয়, যার অর্থ "যাসাগের স্থান", অর্থ্যাৎ, "আদেশ প্রদানের স্থান"। কুইং রাজত্বকালীন মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের স্থানীয় প্রাদেশিক গভর্নরকে বলা হতো যাসাগ। যাসাগ-ইন গাজার নামে পরিচিত স্থানীয় অফিস প্রথম অবস্থায় একটি আদালত হিসেবে কাজ করে যাতে সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্ত থাকে। মঙ্গোলিয়ানদের নিকট "যাসাগ্লাখ" (zasaglakh) অর্থ "শাসন করা" (to govern)। তার্কিশ ভাষায় "ইআশ-" (yas-) ক্রিয়াটি, যার অর্থ "ছড়িয়ে পড়া" (to spread), সম্ভবতঃ উইঘুর তুর্কিতেই এর আদি উৎপত্তি এবং উইঘুর তুর্কিদের দ্বারা প্রথমে ব্যবহৃত হয়েছে।[১]
ইয়াশার নির্দেশাবলীগুলি বিস্তৃত ও নির্দিষ্ট বলে মনে করা হয়, যদিও মঙ্গোলিয়ান ভাষায় কোনো লিপিবদ্ধ বা বিধিবদ্ধ হুকুম পাওয়া যায়নি। ম্যাকরিজি, ওয়ার্টং এবং ইবনে বতুতা সহ আরও অন্যান্য অনেকের লিখায় এর উল্লেখ রয়েছে। উপরন্তু, এই নির্দেশনার লিপিগুলি কোরিয়াতেও আবিষ্কৃত হয়েছে।
এই আইনসমূহের কোন প্রমাণক সরাসরি না-পাওয়ায় বিভিন্ন উৎস হতে নির্দেশাবলী সংগ্রহ করে হ্যারল্ড ল্যাম্ব (১৯২৭) তার “Genghis Khan: The Emperor of All Men” গ্রন্থে কয়েকটির উল্লেখ করেছেনঃ
চেঙ্গিস খানের তৃতীয় পুত্র এবং দ্বিতীয় মহান খান ওগেদাই খান তার পিতার আদেশ ও অধ্যাদেশের ক্রমাগত বৈধতা নিশ্চিত করতে বৃহৎ ইয়াসাকে পূর্বসূরীদের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে ঘোষণা করে তাতে তার নিজের নির্দেশনা যোগ করেন। ওগেদাই পোশাক সংক্রান্ত নিয়ম, সামরিক পরিষদ কুরুলটাইসের আচার বিধিবদ্ধ করেন। তার পরবর্তী দুই উত্তরাধিকারীও ইয়াশার ঐতিহ্য অনুসরণ করে।
সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মঙ্গোলরা তাদের এলাকার জন্য উপযুক্ত আরও আইন যোগ করতে শুরু করে।
আধুনিক তার্কিশ ভাষায় (বর্তমানে তুরস্কে ব্যবহৃত), "আইন" শব্দটি ইয়াসা এবং এর বিশেষণ "আইনি" হল ইয়াসাল। তুরস্কের সংবিধান সহ সকল সংবিধানের জন্য ব্যবহৃত শব্দটি হলো আনাইআশা ("মূল-আইন")।