ইয়াহিয়া খান

ইয়াহিয়া খান
পাকিস্তানের ৩য় রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
মার্চ ২৫ ১৯৬৯ – ডিসেম্বর ২০ ১৯৭১
প্রধানমন্ত্রীনুরুল আমিন
পূর্বসূরীআইয়ুব খান
উত্তরসূরীজুলফিকার আলী ভুট্টো
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক
কাজের মেয়াদ
সেপ্টেম্বর ১৮ ১৯৬৬ – ডিসেম্বর ২০ ১৯৭১
পূর্বসূরীজেনারেল মুসা খান
উত্তরসূরীজেনারেল গুল হাসান খান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯১৭-০২-০৪)৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭
পাঞ্জাব প্রদেশ (ব্রিটিশ ভারত)
মৃত্যু১০ আগস্ট ১৯৮০(1980-08-10) (বয়স ৬৩)
পাকিস্তান রাওয়ালপিন্ডি, পাকিস্তান
রাজনৈতিক দলসামরিক
দাম্পত্য সঙ্গীফাকরা
সম্পর্কসঙ্গিনীগণ : আকলিম আখতার/জেনারেল রানি, নূরজাহান (পাকিস্তানি গায়িকা), শামীম (পূর্ব পাকিস্তান পুলিশের এসপি কে এন হুসেন এর স্ত্রী), তারানা (পাকিস্তানি অভিনেত্রী)। হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫০০ নারী প্রেসিডেন্ট হাউসে যাতায়াত করেছেন ১৯৭১ সালে। এঁদের প্রত্যেকে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নানাবিধ রাষ্ট্রীয় সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এঁদের মধ্যে আছেন জেনারেল নাসিম, হামিদ, লতিফ, খুদাদাদ, ইয়াকুব, রিয়াজ, পীরজাদা, মিয়া এবং আরও অনেকের স্ত্রীরা। এঁরা ছিলেন নিয়মিত দর্শনার্থী। আরও আছেন বেগম জুনাগড়, নাজলি বেগম, মিসেস জয়নব ১, মিসেস জয়নব ২, আনোয়ারা বেগম, ঢাকার শিল্পপতি লিলি খান, লায়লা মোজাম্মিল, ঝর্ণা বসাক/শবনম (বাংলাদেশী অভিনেত্রী), শাগুফতা নাগমা। এঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হয়নি, কিন্তু এঁরা অনেকেই প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অনেক অবৈধ সুযোগ আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সন্তানআলি, ইয়াসমিন
ধর্মমুসলমান

ইয়াহিয়া খান (ফেব্রুয়ারি ৪, ১৯১৭ – আগস্ট ১০, ১৯৮০) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সর্বাধিনায়ক, ও ১৯৬৯ হতে ১৯৭১ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও সামরিক শাসক ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার আদেশেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ইয়াহিয়া খান জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইয়াহিয়া ছিলেন অখণ্ড পাকিস্তানের সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি। ইয়াহিয়া ১৯৩৯ সালে দেহরাদুনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমী থেকে কমিশন পেয়েছিলেন বেলুচ রেজিমেন্টে[][][]

পূর্ব জীবন

[সম্পাদনা]

ইয়াহিয়া খানের জন্ম হয়েছিলো ১৯১৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব প্রদেশের চকওয়ালে। ইয়াহিয়া পাঠান বংশের লোক ছিলেন।[]

ইয়াহিয়ার বাবা ব্রিটিশ ভারতীয় পুলিশের একজন সদস্য ছিলেন। ইয়াহিয়া দেহরাদুনের কর্নেল ব্রাউন ক্যাম্ব্রিজ স্কুলে পড়েন এবং এরপর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, লাহোরে বিএতে ভর্তি হন, এবং এরপরেই তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৩৯ সালের ১ইমে ইয়াহিয়া ভারতীয় সামরিক একাডেমী থেকে ২য় লেফটেন্যান্ট হিসেবে বের হন মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে এবং ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১০ম বেলুচ রেজিমেন্টের ৪র্থ ব্যাটেলিয়নে নিয়োগ পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইয়াহিয়া ছিলেন ইউরোপে এবং ইতালীতে তিনি আটক হয়েছিলেন যদিও পরে পালিয়ে আসেন।

স্বাধীন পাকিস্তানে ইয়াহিয়া নবগঠিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের স্বাধীনতার বছর ১৯৪৭ সালেই; ইয়াহিয়া প্রথমে কোয়েটাতে স্টাফ কলেজে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ১৯৫১ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি ব্রিগেডিয়ার হয়েছিলেন। মেজর জেনারেল হিসেবে ইয়াহিয়া উপ প্রধান জেনারেল স্টাফ, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব, ৭ম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক, ১৪তম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক এবং এ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল ছিলেন; আর লেঃ জেনারেল হিসেবে শুধু উপ সেনা সর্বাধিনায়ক ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি

[সম্পাদনা]
হোয়াইট হাউজে রিচার্ড নিক্সন এর সাথে বৈঠকরত রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া

১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন রেডিও এবং টেলিভিশনে দেওয়া এক বার্তার মাধ্যমে এবং তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে দেশের অবস্থা সামাল দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন বলে বলেন। ইয়াহিয়া খান ঐদিন দুপুর দুইটায় আরেকটি রেডিও এবং টেলিভিশন বার্তায় নিজেকে দেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা দেন, ঐদিনই রাতে তিনি আবার শুধু রেডিওবার্তায় নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন। আইয়ুবের করে যাওয়া সকল সাংবিধানিক পরিবর্তন বাতিল সহ ইয়াহিয়া দেশে নতুন করে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেন।[] ১৯৬৯ সালের যে গণঅভ্যুত্থানের কারণে আইয়ুব পদত্যাগ করেছিলেন সেই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে ইয়াহিয়া বলেন,

আমি কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করবোনা, সবাইকে যার যার পদে রাখা হোক। (I will not tolerate any disorder, let everyone remain in his post.)

ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মির্জা নুরুল হুদাকে সরিয়ে মেজর-জেনারেল মোজাফফর উদ্দীনকে নিয়োগ করেন (এ পদে পরে লেঃ জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান নিয়োগ পান) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে সেনা মোতায়েন করা হয় যাতে ছাত্ররা আন্দোলন করতে না পারে। বাঙালিদের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নতুন ব্যাটেলিয়ন গঠনের কথাও ইয়াহিয়া সেনা সদর দপ্তরে বলেন।[] ১৯৬৯-১৯৭০ অর্থবছরে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ইয়াহিয়া নতুন বাজেট প্রণয়ন করেন যেটাতে অন্যান্য প্রদেশের চেয়ে ২.৮ শতাংশ বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয় যদিও এটা বাস্তবায়িত হয়নি। ইয়াহিয়ার নির্দেশ অনুযায়ী ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যেটাতে বাঙালি জাতীয়তাবাদী শেখ মুজিবুর রহমান জয়ী হন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো হতাশা প্রকাশ করে ইয়াহিয়াকে বলেন মুজিবকে যেন ক্ষমতা দেওয়া না হয়, কারণ তিনি ক্ষমতায় গেলে পাকিস্তান ভেঙে দেবেন। ইয়াহিয়া পশ্চিম পাকিস্তানের বহু রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে একমত হন যে মুজিবকে ক্ষমতা দেওয়া যাবেনা কারণ তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদী এবং ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ভারতের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে খণ্ডিত করার জন্য।[]

জেনারেল ইয়াহিয়া খান ছিলেন একাধারে রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, সশস্ত্র বাহিনী প্রধান, তথ্য এবং সম্প্রচার বিষয়ক মন্ত্রী, আইন এবং বিচার মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এছাড়া জেনারেল হামিদ খান কে তিনি সেনাপ্রধান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভাইস এ্যাডমিরাল সৈয়দ মুহাম্মদ আহসানকে অর্থমন্ত্রী এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন আর বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল নূর খানকে স্বাস্থ্য এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।[] 'ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল' নামের এক নতুন সভার সভাপতিত্ব করতেন ইয়াহিয়া, মেজর-জেনারেল গোলাম ওমর ছিলেন ইয়াহিয়া খানের প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা।[]

পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেন, যেটাতে লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ ঘটে। ইয়াহিয়া সরকার এ ভাষণ দেখে পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে আলোচনার জন্য সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে এক সভার আয়োজন করেন, যেখানে অধিকাংশ জেনারেল পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক হামলা করার বিষয়ে মত দেন, তারা সবাই বলেন যে পূর্ব পাকিস্তানের গুটি কয়েক ছাড়া সব বাঙালিই পাকিস্তানকে খণ্ডিত করতে চায় এবং এজন্যে তারা সশস্ত্র হচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছে, তাছাড়া ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ তাদের আছে এবং তারাও নাকি তাদেরকে সাহায্য করবে বলে বলেছে।[][]

ইয়াহিয়া ১৫ মার্চ ঢাকায় মুজিবের সঙ্গে আলোচনা চালাতে আসেন, তবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৯ম এবং ১৬তম পদাতিক ডিভিশনের সৈন্য বিমানযোগে ঢাকায় নামানোর ব্যবস্থা করেন আগেই, পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ-অনুশীলন করানোর নামে, সৈন্যরা শ্রীলঙ্কা রুট দিয়ে আসে কারণ ভারতের ওপর দিয়ে পাকিস্তানি উড়োজাহাজের উড়তে মানা ছিলো, যদিও তারা তাদের সঙ্গে ভারী অস্ত্র-শস্ত্র আনতে পারেনি এবং এগুলো পরে জাহাজে করে আনা হয়। ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঐ দিন রাত বারোটায় 'অপারেশন সার্চলাইট' নামের একটি সামরিক অভিযান ঢাকায় পরিচালনা করার আদেশ দিয়ে যান, যার উদ্দেশ্য ঢাকা থেকে সব বিদ্রোহী ছাত্র এবং আওয়ামী লীগের সদস্যদেরকে গ্রেফতার করা, এবং ঢাকার বাইরে সেনাবাহিনীতে কর্মরত সব বাঙালি সদস্যদেরকে গ্রেফতার করা।[১০]

অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার দায়িত্ব পান ৪র্থ কোরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট-জেনারেল টিক্কা খান, তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এর জায়গায় নিয়োগ দেয়া হয় ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে এবং 'অপারেশন সার্চলাইট' ২৫ মার্চ রাত ১২টার পরে টিক্কা খানের নির্দেশেই মূলত শুরু হয়। অপারেশন সার্চলাইট সামরিক অভিযানের ফলশ্রুতিতে বাঙালিরা সেনাবাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিবাহিনী নামের একটি বাহিনী গঠন করে যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।[১১] ইয়াহিয়া এপ্রিলের শুরুর দিকে মেজর-জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীকে (যিনি লাহোরে ১০ম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়কত্ব করছিলেন) লেফটেন্যান্ট-জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ইস্টার্ন কমান্ড কার্যালয়ে টিক্কার স্থলে তাকে অধিনায়ক নিযুক্ত করেন তবে টিক্কা গভর্নরের দায়িত্বে থেকে যান এবং সেপ্টেম্বরে পশ্চিম পাকিস্তানে বদলী হন।[১২]

বাঙালিরা মুক্তিবাহিনীতে ঢুকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই-এ লিপ্ত হয় যা তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি পায়। রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন মে'মাসে এবং ঐ দেশের রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনকে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে তার সেনাবাহিনী বিচ্ছিন্নতাবাদ-বিরোধী সামরিক অভিযানে লিপ্ত হয়েছে। যদিও জুলাই মাসে তিনি নিক্সনকে টেলিফোনে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদ বিরোধী সামরিক অভিযান এখন গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।[১৩] ১৯৭১ সালের নভেম্বরে ইয়াহিয়া ভারতের সঙ্গে পশ্চিম ফ্রন্টেও যুদ্ধ করার কথা ভাবেন, এবং ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিমান ঘাঁটির ওপর বোমা বর্ষণ করলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ জড়ানোর নির্দেশ তার দেশের তিন বাহিনীকে।[১৪]

ডিসেম্বর ১৯৭১ এর দ্বিতীয় সপ্তাহে ইয়াহিয়া বুঝে যান যে যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত, তাই তিনি ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক জেনারেল নিয়াজীকে ১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বললেও নিয়াজী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, যদিও দুইদিন পর তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে তার ৫ ডিভিশন সেনাসদস্য (প্রায় ৩০,০০০ সামরিক সদস্য) এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ বিষয়ক দলিলে স্বাক্ষর করেন।[১৫] ২০ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়ে দিয়ে যান।[১৬]

ইয়াহিয়ার অধীনস্থ ঊর্ধ্বতন জেনারেলগণ (১৯৭১)

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খানের অধীনে ১২ জন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং একজন পূর্ণ জেনারেল ছিলোঃ

  1. জেনারেল আব্দুল হামিদ খান - কার্যত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক
  2. লেঃ জেনারেল এসজিএমএম পীরজাদা - প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সামরিক আইন প্রশাসন সদর দপ্তর, রাওয়ালপিন্ডি
  3. লেঃ জেনারেল গুল হাসান খান - চীফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস), জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স (সেনাবাহিনী সদর দপ্তর)
  4. লেঃ জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন - মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স (এমজিও), জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স
  5. লেঃ জেনারেল মোঃ শরীফ - তুরস্কে নিযুক্ত সেন্টো দূত
  6. লেঃ জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী - অধিনায়ক, ইস্টার্ন কমান্ড, পূর্ব পাকিস্তান
  7. লেঃ জেনারেল এরশাদ আহমেদ খান, অধিনায়ক, ১ কোর
  8. লেঃ জেনারেল টিক্কা খান, অধিনায়ক, ২ কোর
  9. লেঃ জেনারেল বাহাদুর শের - ৪ কোর
  10. লেঃ জেনারেল আতিকুর রহমান - গভর্নর, পাঞ্জাব প্রদেশ
  11. লেঃ জেনারেল রাখমান গুল - গভর্নর, সিন্ধু প্রদেশ
  12. লেঃ জেনারেল কে এম আজহার - গভর্নর, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ
  13. লেঃ জেনারেল রিয়াজ হোসেন - গভর্নর, বেলুচিস্তান প্রদেশ

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

ইয়াহিয়া খান ১০ই আগস্ট, ১৯৮০ তারিখে রাওয়ালপিন্ডির সামরিক হাসপাতালে ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, তার হৃদরোগ ছিলো।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Story of Pakistan:Editorial। "Yahya Khan"June 1, 2003। Story of Pakistan Foundation। ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১২ 
  2. Malik, Anas। Political Survival in Pakistan: Beyond Ideology (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 9781136904196। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৬ 
  3. Berindranath, Dewan (২০০৬)। Private Life of Yahya Khan। New Delhi: Sterling Publsihers। পৃষ্ঠা 14। 
  4. http://storyofpakistan.com/yahya-khan/
  5. Ziring, Lawrence (১৯৮০)। Pakistan: The Enigma of Political Development। Dawson। পৃষ্ঠা 104। আইএসবিএন 0-7129-0954-0 
  6. PILDT। "The Evolution of National Security Council in Pakistan"Pakistan Institute of Legislative Development and Transparency.। PILDT। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৩ 
  7. Jaffrelot, Christophe (২০১৫)। The Pakistan Paradox: Instability and Resilience। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 226–227। আইএসবিএন 978-0190235185 
  8. Dr. GN. Kazi। "Pakistan's Smallest Cabinet"। Dr. GN. Kazi। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৪ 
  9. Peter R. Blood (১৯৯৬)। Pakistan: A Country Study। United States: Diane Publication Co.। আইএসবিএন 0788136313 
  10. Salik, Siddiq, Witness to Surrender, p90, আইএসবিএন ৯৮৪-০৫-১৩৭৩-৭
  11. Khanna, K. K.। Art of Generalship। Vij Books India Pvt Ltd। পৃষ্ঠা 176। আইএসবিএন 978-93-82652-93-9 
  12. Fair, C. Christine (২০১৪)। Fighting to the End: The Pakistan Army's Way of War। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 230–231। আইএসবিএন 978-0-19-989270-9 
  13. Bass 2013, পৃ. 7
  14. Suryanarayan, Venkateswaran (২০০৫)। Conflict Over Fisheries In The Palk Bay Region। Lancer Publishers। পৃষ্ঠা 65। আইএসবিএন 978-8170622420 
  15. Jones, Owen Bennett (২০০২)। Pakistan: Eye of the Storm। Yale University Press। আইএসবিএন 0-300-10147-3 
  16. Jalal, Ayesha (১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪), The Struggle for Pakistan: A Muslim Homeland and Global Politics, Harvard University Press, পৃষ্ঠা 181–, আইএসবিএন 978-0-674-74499-8 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]