ইয়েগিশ চ্যারেন্টস Եղիշե Չարենց | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ইয়েগিশ সোঘোমোনিয়ান ১৩ মার্চ ১৮৯৭ কারস, কারস ওবলাস্ট, রুশ সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | ২৭ নভেম্বর ১৯৩৭ ইয়েরেভান, সোভিয়েত আর্মেনিয়া | (বয়স ৪০)
পেশা | কবি, লেখক, অনুবাদক, সমাজকর্মী |
ভাষা | পূর্ব আর্মেনীয় |
জাতীয়তা | আর্মেনীয় |
দাম্পত্যসঙ্গী | ইসাবেলা চ্যারেন্টস |
ইয়েগিশ চ্যারেন্টস (আর্মেনীয়: Եղիշե Չարենց; মার্চ ১৩, ১৮৯৭ – নভেম্বর ২৭, ১৯৩৭) ছিলেন একজন আর্মেনীয় কবি, লেখক এবং সমাজকর্মী। বিংশ শতাব্দীর এই অনন্যসাধারণ কবি তার রচনায় এনেছেন বহু প্রসঙ্গ - তার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা, সামাজিক বিপ্লব এবং সবচেয়ে স্পষ্টভাবে আর্মেনিয়া ও আর্মেনীয়।[১] আর্মেনিয়ায় তাকে "বিশ শতকের প্রধান কবি" বলে স্বীকার করা হয়।[২]
গোড়ার দিকে সাম্যবাদের সমর্থনে চ্যারেন্টস যোগ দেন বলশেভিক পার্টিতে। কিন্তু ১৯৩০-এর দশকে স্টালিনের দমন-নিপীড়ন ও পরিশুদ্ধি অভিযান শুরু হলে তার মোহভঙ্গ হয়।
চ্যারেন্টস জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ সালে কারসে (পূর্ব আর্মেনিয়া, তৎকালীন রাশিয়ার অংশ)। তার নাম রাখা হয় ইয়েগিশ আবগারি সোঘোমোনিয়ান। তার পরিবার এসেছিল পারসিক আর্মেনিয়ার মাকু শহর থেকে, তারা কার্পেটের ব্যবসা করতেন। চ্যারেন্টস পড়ালেখা শুরু করেন একটি আর্মেনীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে আরেকটি রুশ কারিগরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখানে ১৯০৮ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত পড়েন।[১] তিনি বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতেন অধ্যয়নে। ১৯১২ সালে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তিফলিসের আর্মেনীয় সাময়িকী বাতানিতে।[৩] ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আলোড়ন, আর আর্মেনীয় গণহত্যার সময়, চ্যারেন্টস স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ককেশাস ফ্রন্টে যুদ্ধ করেন।
১৯১৫ সালে চ্যারেন্টসকে পাঠানো হয় তুরস্কের ভ্যান শহরে। সেখানে তিনি প্রত্যক্ষ করেন আর্মেনীয় জনগণের ওপর তুর্কি সৈন্যদের অত্যাচার আর তাদের ধ্বংস করে দেয়ার এই স্মৃতি যা অনপনেয়ভাবে উঠে এসেছিল তার কবিতায়। এক বছর পর তিনি রণাঙ্গন থেকে ফিরে আসেন; অধ্যয়ন শুরু করেন মস্কোর শানয়াভস্কি পিপল'স ইউনিভার্সিটিতে। গণহত্যা ও যুদ্ধের বিভীষিকা চ্যারেন্টসকে প্রচন্ড আতঙ্কিত করেছিল এবং তিনি বলশেভিক পার্টির তীব্র সমর্থকে পরিণত হন।
চ্যারেন্টস লাল ফৌজে যোগদান করেন এবং সৈনিক হিসেবে রুশ গৃহযুদ্ধে অংশ নেন, তৎকালীন সারিৎস (পরে স্তালিনগ্রাদ বা ভলগোগ্রাদ) এবং ককেশাসে। ১৯১৯ সালে তিনি আর্মেনিয়ায় ফিরে আসেন এবং বিপ্লবী কার্যক্রম চালাতে থাকেন। এক বছর পরে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আর্ট বিভাগের পরিচালক পদে কাজ শুরু করেন। তবে আবার তাকে অস্ত্র হাতে নিতে হয় তার সাথী আর্মেনীয়দেরই বিরুদ্ধে, যারা ১৯২১-এর ফেব্রুয়ারিতে সোভিয়েত শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। ১৯২০-২১ সালেই তিনি রচনা তার অনবদ্য কবিতাগুলোর একটি, আমি ভালোবাসি 'আর্মেনিয়া' নামের রৌদ্র-মধুর স্বাদ, স্বদেশের স্তুতিমূলক একটি গীতিকবিতা। সেবছর তিনি মস্কোতে ফেরেন ভ্যালেরি ব্রিউসভের প্রতিষ্ঠিত লিটারেচার অ্যানড আর্ট ইন্সটিটিউটে অধ্যয়ন করতে।
১৯২২-এর জুনে প্রকাশিত এক ইশতেহার "ডিক্লারেশন অফ দ্য থ্রি" স্বাক্ষর করেন চ্যারেন্টস, গেভর্গ অযাবভ ও আজাদ ভেশতুনি "প্রলেতারীয় আন্ত্রজাতিকতাবাদ"-এর সমর্থনে। ১৯২১-২২ সালে চ্যারেন্টস লেখেন "Amenapoem"(সকলের কবিতা) এবং "Charents-name", একটি আত্মজীবনীমূলক কবিতা। এরপর তিনি প্রকাশ করেন তার ব্যাঙ্গাত্মক উপন্যাস ল্যান্ড অফ নেইরি (আর্মেনিয়ার অপর নাম "নেইরি")। এটি বিপুল সফলতা পায় এবং লেখকের জীবিতাবস্থায় বহুবার পুনর্মুদ্রিত হয়। ১৯৩৪ সালের আগস্টে মাক্সিম গোর্কি তাকে উপস্থিত করেন সোভিয়েত লেখকদের প্রথম কংগ্রেস প্রতিনিধিদের সামনে, তার এই আমাদের নেইরির ভূমিসহ।
১৯২৭-৩০ সময়কালে লেখা চ্যারেন্টের কবিতাগুলোর সংকলন এপিক ডন প্রকাশিত হয় ইয়েরেভানে। বইটি তিনি তার প্রথম স্ত্রী আর্পেনিককে উৎসর্গ করেন।
সাময়িক পত্রিকায় অল্প কিছু কবিতা ছাড়া ১৯৩৪ সালের পর থেকে চ্যারেন্টস কোনো কিছু প্রকাশ করেননি (সেসময়, ১৯৩৫-এর ডিসেম্বরে স্ট্যালিন এক আর্মেনীয় প্রতিনিধির কাছে চ্যারেন্টসের খোঁজখবর নেন)।[৪]
১৯৩৬ সালের জুলাইতে যখন সোভিয়েত নেতা আগাসি খানজিয়েন নিহত হন, চ্যারেন্টস সাতটি সনেটের এক সিরিজ লেখেন। আর্মেনীয় সঙ্গীতশিল্পী কোমিতাস-এর মৃত্যুর পর তিনি রচনা করেন তার শেষদিকের এক মহৎ সৃষ্টি Requiem Æternam in Memory of Komitas (১৯৩৬)।[৫]
অভিনেত্রী এরস ভস্কানিয়ান চ্যারেন্টসের সাথে তার শেষ সাক্ষাৎ বিষয়ে বলেছেন:"He looked fragile but noble. He took some morphine and then read some Komitas. When I reached over to kiss his hand he was startled"।[৫] তার বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচারের চাপে এবং বৃক্কে পাথরসৃষ্ট শূলবেদনায় তিনি মর্ফিনে আসক্ত হয়ে পড়েন। তার মর্ফিন নেয়ায় ব্যবহৃত সূঁচটি তার জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
১৯৩৭ সালে তিনি স্ট্যালিনের পরিশুদ্ধি অভিযানের শিকার হন। "বিপ্লববিরোধী এবং জাতীয়তাবাদী কর্মকাণ্ড" করার অভিযোগে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়।[৬] তিনি জেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার সব বই নিষিদ্ধ করা হয়। তার তরুণ বান্ধবী রেজিনা গাজারিয়ান কিছু বই ও পান্ডুলিপি মাটির নিচে লুকিয়ে সংরক্ষণ করেন। স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর চ্যারেন্টসের মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়া হয়।
তার প্রথম স্ত্রী আর্পেনিক তের-এসভেদজেট্রিয়েন মারা যান ১৯২৭ সালে। ১৯৩১ সালে চ্যারেন্টস বিয়ে করেন ইসাবেলা কোদাবাশিয়ানকে। তাদের দুই মেয়ে আছে, অর্পানিক এবং অনাহিত।
চ্যারেন্টসের লেখা অনুবাদ করেছেন ভ্যালেরি ব্রিসোভ, আনা আখমাতোভা, বরিস পাস্তারনেক, আর্সেনি তার্কোভস্কি, লুই আরাগঁ এবং আরো অনেকে।
ইয়েরেভানে ১৭ ম্যাশটটস এভিনিউয়ে তার বাড়ি রূপান্তর করে জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। তার নামানুসারে আর্মেনীয় শহর চ্যারেন্টস্যাভন-এর নামকরণ হয়েছে।
১৯৫৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চ্যারেন্টসের সম্মানে ৪০ কোপেক মূল্যের একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ১৯৯৭ সালে আরেকটি ১৫০ আর্মেনীয় দ্রাম মূল্যের স্মারক ডাকটিকিট এবং ১০০ দ্রামের মুদ্রা প্রকাশ করে আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্র। নতুন আর্মেনীয় ১০০০ দ্রামের নোটের এক পিঠে মুদ্রিত হয়েছে চ্যারেন্টসের ছবি এবং তার কবিতার একটি প্রসিদ্ধ পঙ্ক্তি: (Armenian) "Ես իմ անուշ Հայաստանի արեւահամ բարն եմ սիրում" (আমি ভালোবাসি আর্মেনিয়ার রৌদ্র-মধুর স্বাদ)। পোপ ফ্রান্সিস ২০১৬ সালে তার আর্মেনিয়া সফরকালে চ্যারেন্টসের কবিতার এক স্তবক আবৃত্তি করেছেন।
চ্যারেন্টস সম্পর্কে প্রথম একক গ্রন্থ প্রকাশ করেন সাইমন হ্যাকোবিয়ান (১৮৮৮-১৯৩৭) ভিয়েনায় ১৯২৪ সালে। সেসময় চ্যারেন্টসের কবিতা নিয়ে আরো গবেষণা করেছেন পাওলো মেকেনসিয়ান, হার্তিয়ান সেরখেতিয়ান, টিগ্রেন হাখামিয়ান প্রমুখ। চ্যারেন্টসের মৃত্যুর পর তার লেখা এবং তাকে নিয়ে লেখা সব বই ১৭ বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৫৪ সালে এন. দাবাঘিয়ান (১৯৩০ এর দশকে যিনি চ্যারেন্টসেব বিরোধিতা করেছিলেন) প্রকাশ করেন একক-গ্রন্থ ইয়েগিশে চ্যারেন্টস। পরবর্তী দশকগুলোতে চ্যারেন্টসকে নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন হাকব সালাখিয়ান, সুরেন আঘাবাবিয়ান, গার্নিক আনাইয়ান, আলমাস্ত জাকারিয়ান, অনাহিত চ্যারেন্টস, ডেভিড গ্যাসপারিয়ান এবং আরো অনেকে।