ইউয়াসা ইয়োশিকো | |
---|---|
জন্ম | কিয়োটো, জাপান | ৭ ডিসেম্বর ১৮৯৬
মৃত্যু | ২৪ অক্টোবর ১৯৯০ টোকিও, জাপান | (বয়স ৯৩)
পেশা | লেখক, অনুবাদক |
ধরন | রুশ সাহিত্যের অনুবাদ |
ইউয়াসা ইয়োশিকো (湯浅 芳子, ৭ ডিসেম্বর ১৮৯৬ – অক্টোবর ২৪, ১৯৯০) ছিলেন জাপানের শোওয়া যুগের একজন রুশ ভাষাবিদ এবং রুশ সাহিত্যের জাপানি অনুবাদক।
জাপানের কিয়োতো প্রিফেকচারের কিয়োটো শহরের একটি ধনী বণিক পরিবারে ইয়োশিকো ইউয়াসার জন্ম হয়।[১] ১৭ বছর বয়সে তিনি জাপান মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি প্রস্তুতিমূলক বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়ে রুশ সাহিত্যের পণ্ডিত শো আকেবোমুর অধীনে রুশ সাহিত্য এবং রুশ ভাষা অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৯১৫ সালে তিনি লেখক তোশিকো তামুরার কাছে ভক্ত হিসেবে একটি চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে দুজনের মধ্যে যোগাযোগ ও বন্ধুত্বের সূচনা হয়।[২] তামুরা তার "মিডরিরো" (জাপানি: 緑色, অর্থ "সবুজ") লিখতে ইউয়াসার বেশিরভাগ চিঠি ব্যবহার করেছিলেন।[২] দেশপ্রেমিক নারী সমিতির সাময়িকী "আইকোকু ফুজিন"-এর (জাপানি: 愛国婦人; দেশপ্রেমিক নারী) সম্পাদক হিসাবে কাজ করার সময়, তিনি রুশ সাহিত্যের অনুবাদ এবং দেশবাসীকে এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। ২৪ বছর বয়সে তিনি সেই কিতামুরায় নামক একজন গেইশার সাথে একত্রবাস শুরু করেন।[১]
টোকিওতে চলে আসার পর তিনি বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকেও আকৃষ্ট হন। সেসময় ইয়াকো নোগামির মাধ্যমে বামপন্থী নেতৃস্থানীয় মহিলা সর্বহারা সাহিত্য আন্দোলনের ঔপন্যাসিক চুজো ইউরিকোর (অন্য নাম মিয়ামোতো ইউরিকো) সাথে তার পরিচয় ও পরে ঘনিষ্টতা হয়। ১৯২৪ সালের চুজোর সাহে তার স্বামীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর দুই নারী ইয়োশিকো ও চুজো একসাথে থাকতে শুরু করেন। ১৯২৭ থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত দুজনে একসাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ করেন। সেখানে তারা রুশ ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন করার পাশাপাশি বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সের্গেই আইজেনস্টাইনের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। এছাড়াও তিনি মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরীক্ষক হন এবং চেখভ এবং গোর্কির উপর অধ্যয়ন করেন।[৩] এই সময়টি ইউরিকো লেখা "নোবুকো" (জাপানি: 伸子), "ফুতাৎসু নো নিওয়া" (জাপানি: 二つの庭; দুটি উদ্যান), এবং "দোহিও" বা "মিচিশিরুবে" (জাপানি: 道標; সাইনপোস্ট) বইয়ে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।
জাপানে ফিরে আসার পর তিনি জাপানি ভাষায় বিভিন্ন রুশ ও সোভিয়েত সাহিত্যের অনুবাদের প্রবর্তন করে সেগুলো প্রকাশ করতে থাকেন। একবিংশ শতাব্দীতেও তার এই অনুবাদগুলো জনপ্রিয়।
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি এক বছরের জন্য নারী গণতান্ত্রিক ক্লাবের দাপ্তরিক সংবাদপত্র "ফুজিন মিনশু শিনবুন"-এর (জাপানি: 婦人民主新聞; নারী গণতান্ত্রিক সংবাদপত্র) প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪]
১৯৭৮ সালে জীবনের শেষ দিকে, ইউয়াসা তার কাছে থাকা চুজো ইউরিকোর চিঠিগুলি সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছিলেন। এটি ইউয়াসার সমগ্র রচনা প্রকাশিত হওয়ার আগে ইউরিকোর কাজের উপর গবেষণাকে আরও গভীর করতে অবদান রেখেছিল।
ইয়োশিকো সমকামী ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে ইউয়াসা একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, "লেসবিয়ান" (রেজুবিয়ান/ レズビアン) শব্দটি তার জন্য প্রযোজ্য।[৫] চুজোর পাশাপাশি লেখিকা তামুরা তোশিকো সহ কয়েকজন মহিলার সাথে তার সম্পর্ক ছিল। তবে সর্বহারা লেখক এবং জাপান কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মিয়ামোতো কেনজির সাথে চুজো ইউরিকোর বিয়ে হওয়ার ফলে তার সাথে ইয়োশিকোর একত্রবাস বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে তাদের মধ্যে আর "গভীর সম্পর্ক" ছিল না। চুজো পরে ইউয়াসার সাথে তার সম্পর্কের বিষয়ে লিখেছিলেন তাদের সম্পর্ক বিবাহিত দম্পতির মতোই ছিল এবং বলেছেন, আমাদের মানসিক জীবন অত্যন্ত জটিল ছিল।[৬]
জীবনের শেষ অবধি বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তি অর্থাৎ কোনো পুরুষের সাথে তার কখনও রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল না। জাকুচো সেতৌচির কোকু নো হিতো (জাপানি: 孤高の人; নিঃসঙ্গ মানুষ) অনুসারে তিনি অবিবাহিত হিসাবেই পুরো জীবন কাটান। অবিবাহিত জীবনে তিনি নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। জীবনের শেষদিকে তার প্রকৃত সঙ্গি ছিলেন সুরু ইয়ামাহারা। তিনি ছিলেন লেখক কাজুও ওজাকির স্ত্রীর স-বোন।
শেষ বয়সে তিনি হামামাতসুর একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন।[৭] একই বছরের অক্টোবরে ৯৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর তার কৃতিত্বকে স্মরণ করার লক্ষ্যে "ইয়োশিকো ইউয়াসা পুরস্কার" প্রবর্তন করা হয়। বিদেশী নাটকের অনুবাদ বা ছায়া অবলম্বনে রচনা এবং অভিনয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
ইয়োশিকোর মৃত্যুর আট মাস আগে, হিতোমি সাওয়াবে তার সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন। এর উপর ভিত্তি করে তিনি, "ইউরিকো, দসভিদানিয়া: ইউয়াসা ইয়োশিকো নো সেইশুন" (জাপানি: 百合子、ダスヴィダーニヤ 湯浅芳子の青春, ইউরিকো, বিদায়: ইয়োশিকো ইউয়াসার যৌবন) লিখেন। বইটিতে ইউরিকোর সাথে তার সম্পর্কসহ তার জীবনের অর্ধেক সম্পর্কে বিশদ বিবরণ ছিল।[৮]
১৯৯৭ সালে জাকুচো সেতৌচি 'কোকু নো হিতো' বা নিঃসঙ্গ মানুষ নামে ইউরিকো সম্পর্কে একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন। ২০০৮ সালে ইউরিকোর সাথে তার আদানপ্রদান করে চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালে সাচি হামানোর পরিচালনায় মিয়ামোতো (চুজো) ইউরিকোর সাথে ইয়োশিকোর সমকামী সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে জীবনীনির্ভর চলচ্চিত্র ইউরিকো, দসভিদানিয়া (জাপানি: 百合子、ダスヴィダーニヤ, রুশ: Юрико, До Свидания) মুক্তি পায়।
|1=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)百合子、ダスヴィダーニヤ : 湯浅芳子の青春। 文藝春秋। ১৯৯০-০২-২৫। 1-311। আইএসবিএন 4-16-344080-1। অজানা প্যারামিটার |1=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)